আত্মার সৎ গুণসমূহ

আত্মার সৎ গুণসমূহ

আত্মশুদ্ধি ইসলাম প্রতিদিন সংস্কৃতি

আত্মার সৎ গুণসমূহ দশটি

আত্মার প্রথম গুণ : তওবা
আত্মার দ্বিতীয় গুণ : খওফ বা খোদা-ভীতি
আত্মার তৃতীয় গুণ : যুহদ বা দুনিয়া বিমূখতা
আত্মার চতুর্থ গুণ : সবর বা ধৈর্যশীলতা
আত্মার পঞ্চম গুণ : শোকর বা কৃতজ্ঞতা
আত্মার ষষ্ঠ গুণ : ইখলাস বা খালেস নিয়্যত
আত্মার সপ্তম গুণ : তাওয়াক্কুল বা আল্লাহর উপর নির্ভর করা
আত্মার অষ্টম গুণ : আল্লাহ তা‘আলা ও রাসূলের মুহাব্বত
আত্মার নবম গুণ : তকদীরের প্রতি সন্তুষ্টি
আত্মার দশম গুণ : মৃত্যু চিন্তা

আত্মার সৎ গুণসমূহ এর বিস্তারিত বিবরণ

নিম্নোক্ত অন্তরের ১০টি মৌলিক গুণ অর্জন করার দ্বারা অন্যান্য গুণাবলী অর্জন করা সহজ হয়ে যায়।

 আত্মার প্রথম গুণ : তওবা

তওবা যার অর্থ আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন করা। আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেছেন,

یٰۤاَیُّهَا  الَّذِیْنَ  اٰمَنُوْا تُوْبُوْۤا  اِلَی اللهِ تَوْبَۃً  نَّصُوْحًا

“হে মুসলমানগণ! তোমরা আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন কর আন্তরিকভাবে।” -সূরা তাহরিম- ৮

আল্লাহ তা‘আলা আরো ইরশাদ করেন,

اِنَّ اللهَ یُحِبُّ التَّوَّابِیْنَ وَیُحِبُّ الْمُتَطَهِّرِیْنَ

“নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা তওবাকারী ও পবিত্রতা অর্জনকারীদেরকে পছন্দ করেন।’’  -সূরা বাকারা-১২২

হাদীস শরীফেও এরূপ বর্ণিত আছে- “কেউ তওবা করলে আল্লাহ তা‘আলা তাতে কিরূপ আনন্দিত হোন, তা তোমরা নিম্নের উদাহরণ দ্বারা বুঝতে পারবে। যেমন, কোনো এক ব্যক্তি ঘটনাক্রমে এক জনমানবহীন মরুভূমিতে গিয়ে উপস্থিত হল। পরে তার আরোহণের জন্তুটিও খাদ্য এবং পানীয়সহ কোথায় নিরুদ্দেশ হয়ে গেল। লোকটি তা খুঁজতে খুঁজতে পরিশ্রান্ত হয়ে পড়ল। এমতাবস্থায় সে বাহন ব্যতীত দুর্গম মরু-প্রান্তর অতিক্রম করে বাইরে আসতে পারবে না, অধিকন্তু সেখানে পড়ে থাকলেও খাদ্য পানীয় বিহীন তার মৃত্যুবরণ করতে হবে। লোকটি এই চিন্তা করতে করতে হতাশ হয়ে পড়লো। অবশেষে ক্ষুধা ও তৃষ্ণায় অবসন্ন হয়ে একটি বৃক্ষের ছায়ায় শুয়ে পড়ল এবং অল্পক্ষণেই ঘুমিয়ে পড়লো। অতঃপর হঠাৎ ঘুম থেকে উঠে দেখল, তার আরোহণের উটটি খাদ্যসম্ভারসহ তার শিয়রে দাঁড়িয়ে আছে। এরূপ নিরাশার আঁধারে আশার আলো দেখতে পেয়ে তখন ওই লোকটির যেরূপ আনন্দের সীমা থাকবে না, তদ্রুপ কোনো বান্দা পাপ থেকে দ্বীনের পথে প্রত্যাবর্তন করলে এবং খাঁটি মনে তওবা করলে আল্লাহ তা‘আলা তদপেক্ষা অধিক খুশি হয়ে থাকেন। -মুসলিম শরীফ : ৪৯৩৮

আত্মার দ্বিতীয় গুণ : খওফ বা আল্লাহভীতি

দুনিয়ার মুহাব্বত যেমন সকল গুনাহ’র মূল, আল্লাহ পাকের ভয়ও তেমনি সকল নেকীর মূল। খোদা-ভীরু লোকদের জন্য আল্লাহ তা‘আলা বিদ্যা-বুদ্ধি, দয়া-মায়া, সুপথ-প্রদর্শন, অল্পেতুষ্টি প্রভৃতি সৎস্বভাবসমূহ দান করেন। যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করেন, সমস্ত জিনিসই তাকে ভয় করে থাকে।

আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন, “কারও মধ্যে দুইটি ভয় একত্র হবে না” অর্থাৎ ইহকালে অন্তরে আল্লাহর ভয় পোষণ করলে পরকালে ভয় থাকবে না।

আত্মার তৃতীয় গুণ : যুহদ বা দুনিয়া বিমুখতা

আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেছেন,

وَ لَا تَمُدَّنَّ عَیْنَیْکَ اِلٰی مَا مَتَّعْنَا بِهٖۤ اَزْوَاجًا مِّنْهُمْ زَهْرَۃَ الْحَیٰوۃِ  الدُّنْیَاۙ لِنَفْتِنَهُمْ فِیْهِ ؕ وَ رِزْقُ رَبِّکَ خَیْرٌ وَّ اَبْقٰی

“হে আমার রাসূল! তাদেরকে পরীক্ষার জন্যে আমি পার্থিব যে ধন-সম্পদ দিয়ে রেখেছি, তৎপ্রতি দৃকপাতও করো না। কেননা আপদ-বিপদে জড়িত করার উদ্দেশ্যেই তাদেরকে এই সমস্ত দিয়েছি। তোমার প্রতিপালকের দানই সর্বোৎকৃষ্ট এবং স্থায়ী। -সূরা ত্বহা-১৩০

ধার্মিকদের জন্যই এই উৎকৃষ্ট স্থায়ী দান রক্ষিত আছে, সুতরাং ধর্মহীনদের অভিশপ্ত ও অস্থায়ী ধনসম্পদে প্রলুব্ধ হওয়া নিতান্ত বুদ্ধিহীনতার পরিচয়।

আত্মার চতুর্থ গুণ : সবর বা ধৈর্যশীলতা

কুরআনে পাকে বহু স্থানে ধৈর্যধারণের তাকিদ ও ফযীলত বর্ণিত হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে,

اِنَّ اللهَ مَعَ الصَّابِرِيْنَ

“নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক ধৈর্য ধারণকারীদের সাথে আছেন।” -সূরা বাকারা-১৫৩

وَبَشِّرِ الصَّابِرِيْنَ

“ধৈর্য ধারণকারীদেরকে সুসংবাদ দান করুন।” -সূরা বাকারা-১৫৫

يَاۤاَيُّهَا اَّلذِيْنَ اٰمَنُوْا اصْبِرُوْا

“হে ঈমানদারগণ! ধৈর্যধারণ কর।” -সূরা আলে ইমরান-১৯৯

কুরআনে পাকে ৭০ স্থানে ধৈর্য ও সহনশীলতার তাকীদ ও ফযীলত এসেছে। মুসীবতে সবর ও সুখে শোকর মুমিনের জন্য উভয় অবস্থায়ই উপকারী। কোনো অবস্থাতেই তার কোনো ক্ষতি নাই। তবে শর্ত হলো, শরীয়তের পরিসীমার ভিতরে থাকতে হবে।

হাদীসে পাকে আছে, “মুমিনের ব্যাপারটি বড়ই বিচিত্র। আর এটা শুধু মুমিনেরই একক বৈশিষ্ট্য। কারণ, যখন মুমিন সুখ-শান্তি ভোগ করে তখন আল্লাহ তা‘আলার কৃতজ্ঞতা আদায় করে যা তার জন্য মঙ্গলজনক। আর যদি কষ্ট মুসীবতে পতিত হয় তখন ধৈর্যধারণ করে সেটাও তার জন্য মঙ্গলজনক।’’ -মুসনাদে আহমাদ

মুহিউস সুন্নাহ হযরতওয়ালা হারদূঈ রহ. বলেন, ইবাদত দুই প্রকার।

১ম. এমনসব ইবাদত যা আদায়ের জন্য সময় নির্দিষ্ট রয়েছে।

২য়. এমনসব ইবাদত যেগুলোর জন্য নির্ধারিত কোনো সময় নাই; বরং সব সময়েই তা আদায় করা যায়। যেমন, সবর ও শুকর অর্থাৎ ধৈর্যধারণ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ। এগুলোর জন্য নির্ধারিত কোনো সময় নেই। অবস্থা ভেদে হুকুম বর্তায়। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, কোনো অবাঞ্চিত বা অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতির সম্মুখীন হলে আমাদের কর্তব্য সবর করা। আর যদি মনের চাহিদা মোতাবিক কাজ হয়, তখন কর্তব্য হচ্ছে শুকরিয়া আদায় করা। মোট কথা ধৈর্য ও কৃতজ্ঞতা হল সার্বক্ষণিক ইবাদত। কেননা ধৈর্যের সম্পর্ক হচ্ছে মনের বিপরীত অবস্থার সাথে। এমনি কৃতজ্ঞতার সম্পর্ক হচ্ছে মনের চাহিদা মোতাবেক অবস্থার সাথে। সুতরাং চাই মনের চাহিদা মোতাবেক অবস্থা হোক বা এর বিপরীত অবস্থা হোক, সর্বাবস্থাতেই ধৈর্য ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশে সচেষ্ট হওয়া উচিত।

সবরের তিনটি স্তর

১. ইবাদতের প্রতি অটল থাকা।

আল্লাহর বিধান ও নির্দেশ সুন্দরভাবে আদায় করা। নফস যতোই কষ্টকর মনে করুক না কেন। যেমন, শীতকালে ফজরের সময় অযূ করা ও জামাতে হাজির হওয়া।

২. গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা।

গুনাহ যা আল্লাহপাক নিষেধ করেছেন, তা যতোই চিত্তাকার্ষক ও মজাদার হোক না কেন এবং যতোই মন ভুলানো হোক না কেন তাকে বর্জন করতে হবে এবং নফসের বিরোধিতার কষ্ট সহ্য করে নিতে হবে। সুন্দরী সুশ্রী বেগানা মহিলা ও দাড়ি বিহীন বালকদের প্রতি দৃষ্টিপাত করা থেকে দৃষ্টিকে হেফাযত করতে হবে। হাদীসে পাকে কু-দৃষ্টি থেকে হেফাযতের বিনিময়ে ঈমানের মাধুর্য ও ঈমানের সাথে মৃত্যুর সুসংবাদ দেয়া হয়েছে।

৩. বিপদে ধৈর্যধারণ করা।

৪. মুসীবতের প্রারম্ভে ধৈর্যধারণ করা।

বিপদ মুসীবতে ধৈর্যধারণ করা। আত্মনিয়ন্ত্রণহারা না হওয়া এবং মুসীবতের সময় নিজে আল্লাহর শানে বেয়াদবীমূলক আচরণ প্রকাশ না করা। এসবই সওয়াবের কাজ।

আত্মার পঞ্চম গুণ : শোকর বা কৃতজ্ঞতা

মহান আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন,

لَئِنْ شَكَرْتُمْ لَأَزِيْدَنَّكُمْ وَلَئِنْ كَفَرْتُمْ اِنَّ عَذَابِيْ لَشَدِيْدٌ

“তোমরা যদি আমার কৃতজ্ঞতা আদায় কর, তবে অবশ্যই আমি তোমাদেরকে আরো বেশি নিআমত প্রদান করব। পক্ষান্তরে যদি    তোমরা না শুকরী কর তাহলে নিশ্চয় আমার শাস্তি ভীষণ ভয়াবহ।” -সূরা ইব্রাহীম :৭

যেসব অবস্থা মানুষের মনের অনুকূল ও পছন্দনীয়, সে সব অবস্থায় শুকর আদায়ের পন্থা কয়েকটি-

১. এটা নিজ ক্ষমতায় অর্জিত মনে না করে আল্লাহ তা‘আলার খাস অনুগ্রহের দান মনে করা।

২. আল্লাহপাকের দান পেয়ে খুশি প্রকাশ করা।

৩. অবস্থাকে নিজের হক মনে না করে নিজ পজিশন ও মর্যাদা অপেক্ষা ওই দানকে অতিরিক্ত ও অধিক মনে করা।

৪. আল্লাহপাকের দান পেয়ে মনে ও মুখে কালিমাতুশ শুকর “আলহামদুলিল্লাহ” বেশি বেশি বলে আল্লাহ পাকের প্রশংসা করা।

৫. নিআমতকে আল্লাহর হুকুমের বিপরিত কাজে খরচ না করে মহান আল্লাহর আরও অধিক তাবেদারী এবং মানুষের উপকারের দিকে মনযোগ দেয়া। এই উপায়ে শুকুর আদায় করা। আল্লাহ তা‘আলার প্রদত্ত নি‘আমত তাঁরই অনুগত বান্দা হিসেবে ভোগ করা।

আত্মার ষষ্ঠ গুণ : ইখলাস বা খালেস নিয়্যত

নিয়্যতের মধ্যে ইখলাস থাকতে হয়। ইখলাসের পরিপক্ক অবস্থাকেই ‘সিদক’ বলা হয়। আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন,

وَ مَاۤ  اُمِرُوْۤا  اِلَّا لِیَعْبُدُوا اللهَ مُخْلِصِیْنَ لَهُ  الدِّیْنَ

“তাদেরকে কেবল হুকুম করা হয়েছে যে, তারা আল্লাহ তা‘আলার ইবাদত করবে, অন্য দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে তাঁরই জন্য দ্বীন বিশুদ্ধকারীরূপে”। -সূরা বায়্যিনাহ : ৫

রাসূলে কারীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-

اِنَّ اللهَ لَا يَنْظُرُ اِلٰى صُوَرِكُمْ  وَلَا اِلٰى اَمْوَالِكُمْ وَلٰكِنْ يَّنْظُرُ اِلٰى قُلُوْبِكُمْ وَاَعْمَالِكُمْ

“আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের চেহারা ও ধন সম্পদের দিকে লক্ষ্য করেন না। বরং তিনি লক্ষ্য করেন তোমাদের নিয়্যত ও আমলের দিকে।”

ইখলাসের সারকথা হলো আমল দ্বারা কেবল আল্লাহ তা‘আলার নৈকট্য ও তার সন্তুষ্টি লাভকে লক্ষ্যবস্তু বানানো। মাখলুকের সন্তুষ্টি বা নিজের ব্যক্তিগত কোন চাহিদাকে এর সাথে মিশ্রিত হতে না দেওয়া। নিয়্যতের উপর আমলের ফলাফল নির্ভর করে।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন,

اِنَّمَا الْاَعْمَالُ بِالنِّيَّاتِ

“নিয়্যতের উপরই আমলের ফলাফল নির্ভর করে।”

আত্মার সপ্তম গুণ : তাওয়াক্কুল বা আল্লাহর উপর নির্ভর করা

আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেছেন,

وَعَلَى اللهِ فَلْيَتَوَكَّلِ الْمُوْمِنُوْنَ

“আল্লাহর উপরই মুসলমানগণের ভরসা রাখা কর্তব্য।” -সূরা ইবরাহীম-১১

আরও ইরশাদ করেন,

وَمَنْ يَتَوَكَّلْ عَلَى اللهِ فَهُوَ حَسْبُهُ

“যারা আল্লাহর উপর ভরসা রাখে, আল্লাহই তাদের সকল কাজের জন্য যথেষ্ট।” -সূরা ত্বালাক-৩

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন,

لَوْ اَنَّكُمْ تَوَكَّلُوْنَ عَلَى اللهِ حَقَّ تَوَكُّلِهِ لَرَزَقَكُمْ كَمَا يَرْزُقُ الطَيْرَ تَغْدُوخِمَاصًا وَتَرُوْحُ بِطَانًا

“তোমরা যদি আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল কর, তিনি তোমাদেরকে পাখিদের ন্যায় রিযিক দিবেন। পাখিরা সকালে খালি পেটে বের হয়, সন্ধ্যায় পূর্ণ উদরে ঘরে ফিরে আসে।”

বাস্তবিক আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল করলে তিনি আমাদের ধারণার বাইরের স্থান থেকে রিযিক দিয়ে থাকেন।

আত্মার অষ্টম গুণ : আল্লাহ তাআলা ও রাসূলের মুহাব্বত

আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেছেন,  وَيُحِبُّوْنَه يُحِبُّهُمْ 

“আল্লাহ নেক বান্দাদেরকে ভালোবাসেন, নেক বান্দাগণও আল্লাহকে ভালোবাসেন।” Ñসূরা মায়িদাহ-৫৪

হযরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন,

لَايُوْمِنُ اَحَدُكُمْ حَتّٰى اَكُوْنَ اَحَبَّ اِلَيْهِ مِنْ وَّالِدِه وَوَلَدِه وَالنَّاسِ اَجْمَعِيْنَ

“যতক্ষণ পর্যন্ত তোমাদের হৃদয়ে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি সমস্ত জিনিসের চেয়ে বেশি ভালোবাসা না হয়, ততক্ষণ তোমাদের ঈমান পূর্ণ হবে না।”

হযরত আবূ বকর রাযি. বলেন,  “যে একবার আল্লাহর মুহাব্বতের স্বাদ পেয়েছে, দুনিয়ার প্রতি তার অনুরাগ থাকতেই পারে না।”

আত্মার নবম গুণ : তকদীরের প্রতি সন্তুষ্টি

আল্লাহ তা‘আলা মুসলমানদের সম্পর্কে বলেন,

رَضِيَ اللهُ عَنْهُمْ وَرَضُوْا عَنْهُ

“আল্লাহ তাদের উপর সন্তুষ্ট, তারা আল্লাহর উপর সন্তুষ্ট।” -সূরা মায়িদাহ-১৯

রাসূলে মাকবূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, “যখন আল্লাহ তা‘আলা কোনো বান্দাকে নিজের প্রিয়পাত্র করতে চান, তাকে কোনো দুঃখ-কষ্টে পতিত করে পরীক্ষা করে দেখেন, সে অদৃষ্টের উপর সন্তুষ্ট কিনা। অদৃষ্টের উপর সন্তুষ্ট হলেই তাকে বন্ধুরূপে নির্বাচিত করেন।”

আত্মার দশম গুণ : মৃত্যুচিন্তা

যে সমস্ত জিনিস আল্লাহপাকের নৈকট্য লাভে সহায়ক, মৃত্যুচিন্তা তন্মধ্যে অন্যতম। মৃত্যুর কথা স্মরণ করলেই দুনিয়ার মুহাব্বত দূর হয়ে যায় এবং ক্রমশ আল্লাহর মুহাব্বত অন্তরে স্থান পেতে থাকে।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

اَكْثِرُوْا ذِكْرَهَاذِمَ الْلَذَّاتِ يَعْنِى الْمَوْتَ

“দুনিয়ার আমোদ প্রমোদ ধ্বংসকারী মউতের কথা বেশি পরিমাণে   স্মরণ কর।” -তিরমিযী শরীফ

হযরত আয়েশা রাযি. একদিন রাসূলুুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জিজ্ঞাসা করলেন “ইয়া রাসূলাল্লাহ! হাশরের দিন শহীদগণের সঙ্গে আর কোনো সম্প্রদায় উঠবে কি? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হ্যাঁ যারা দিবা-রাত্রি বিশবার মৃত্যুকে স্মরণ করে, তারাঁও শহীদদের দলে উঠবে। অন্য এক বর্ণনায় আছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, মৃত্যুর মতো এমন উত্তম পথ প্রদর্শক আর নেই।” অর্থাৎ মৃত্যুর কথা স্মরণ করলেই মানুষ উত্তম নসীহত পেতে পারে।


আত্মার রোগসমূহ এ সম্পর্কে জানতে ক্লিক করুন

মাহে জিলহজ্ব ও কুরবানীর ফযীলত করণীয় ও বর্জনীয় || রাহে সুন্নাত ব্লগ

উলামায়ে কেরাম : মর্যাদা, দা‌য়িত্ব ও কর্তব্য

কুরআনুল কারিমের কথা প্রবন্ধটি পড়তে ক্লিক করুন
আরো জানতে ভিজিট করুন আমাদের ওয়েব সাইট রাহে সুন্নাত ব্লগ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *