আদব নং -৮
তারতীলের সাথে তিলাওয়াত
তারতীলের সাথে তিলাওয়াত করা সুন্নত। আল্লাহ তা‘আলা বলেন—
وَرَتِّلِ الْقُرْاٰنَ تَرْتِيْلًا
‘আর কুরআনকে ধীরস্থিরভাবে সুস্পষ্ট করে তিলাওয়াত করুন।’ —সুরা মুযযাম্মিল
আবু দাউদ শরীফে হযরত উম্মে সালমা রাযি. থেকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম—এর তেলাওয়াতের পদ্ধতি সম্পর্কে বর্ণনা এসেছে যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অত্যন্ত স্পষ্টভাবে প্রতিটা হরফ বুঝিয়ে বুঝিয়ে পড়তেন।
হযরত আনাস রাযি.—কে হযরত কাতাদা রাযি. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম—এর তিলাওয়াত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন-
كَانَ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَمُدُّ مَدًّا, ثُمَّ قَرَأَ بِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ, يَمُدُّ بِبِسْمِ اللهِ وَيَمُدُّ بِالرَّحْمٰنِ وَيَمُدُّ بِالرَّحِيْمِ
‘নবী আলাইহিস সালাম টেনে টেনে (মদসহ) পড়তেন। অতঃপর তিনি (আনাস রাযি.) ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম’ পড়ে শুনালেন। এবং الله، الرحمن، الرحيم —কে মদ সহকারে লম্বা করে পড়লেন।’
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাযি.—কে এক ব্যক্তি বলল, আমি এক রাকাতে ‘মুফাসসালে’র একটি সূরা পড়ি। তিনি বললেন, তবে কি কবিতা পাঠের মতো দ্রুত তিলাওয়াত করো? (তিনি তার দ্রুতগতিতে পড়ার উপর বিস্মিত হয়ে বললেন) এমন অনেক লোক আছে, যারা তিলাওয়াত করে ঠিক; কিন্তু তা তাদের গলার হাড্ডি অতিক্রম করে না। (অর্থাৎ অন্তরে কোনো প্রভাব পড়ে না।) হ্যাঁ, যদি কুরআন অন্তরে পৌঁছে সেখানে গেঁথে যায় তবেই উপকার হয়। —সহীহ মুসলিম
অন্য এক বর্ণনায় রয়েছে-হযরত ইবনে মাসউদ রাযি. বলেন, তোমরা একে (কুরআন) নষ্ট খেজুরের মতো ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ো না কিংবা কবিতার মতো গতিময় ছন্দেও পড়ো না। বরং এর যেখানে বিনয়ের কথা আছে সেখানে থামো এবং তা দিয়ে হৃদয়কে আন্দোলিত করো। আর সূরার সমাাপ্তিতে পেঁৗছা যেন তোমাদের করো লক্ষ্য না হয়। —ইবনে আবি শাইবা
মুহাযযাব গ্রন্থে আছে- وَاتَّفَقُوْا عَلٰى كَرَاهَةِ الْاِسْرَاِع
‘অতিরিক্ত দ্রুততার সাথে তিলাওয়াত মাকরূহ হওয়ার ব্যাপারে আলেমগণ একমত পোষণ করেছেন।’
হযরত ইবনে আব্বাস রাযি. থেকে বর্ণিত-
لِاَنْ اَقْرَأَ سُوْرَةً اُرَتِّلُهَا اَحَبُّ اِلَىَّ مِنْ اَنْ اَقْرَأَ الْقُرْاٰنَ كُلَّهٗ
‘তারতীল সহকারে একটি মাত্র সূরা তিলাওয়াত করা আমি অধিক পছন্দ করি, দ্রুততার সাথে (তারতীলবিহীন) পুরো কুরআন পড়া থেকে।’
তারতীল বা ধীরস্থিরে তিলাওয়াত করা মুস্তাহাব। এজন্য যে, পাঠকারী কুরআনে কারীমের অর্থ ও উদ্দেশ্যে চিন্তা—ভাবনা করবে। তাছাড়া থেমে থেমে পড়ার মধ্যে শ্রদ্ধা ও সম্মান প্রকাশ পায়। প্রভাবান্বিত করার ক্ষেত্রেও অধিক কার্যকরী। একারণেই অনারবীদের জন্যও তারতীলের সাথে তিলাওয়াত করা মুস্তাহাব।
মুহাক্কিক ইবনুল জাযারী রহ. বলেন, এ ব্যাপারে মতপার্থক্য রয়েছে যে, তারতীলের সাথে অল্প পরিমাণ তিলাওয়াত করা উত্তম, না দ্রুততার সাথে অধিক পরিমাণ তিলাওয়াত করা উত্তম?
কেউ কেউ বলেন, দ্রুততার সাথে অধিক পরিমাণ তিলাওয়াত উত্তম। কারণ, এতে পঠিত শব্দের আধিক্যের কারণে সওয়াবের পরিমাণও বেশী হবে। এ অভিমতের সমর্থনে তারা হযরত ইবনে মাসউদ রাযি. এর এই হাদীসটি পেশ করেন-
قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَنْ قَرَأَ حَرْفًا مِّنْ كِتَابِ اللهِ فَلَهٗ بِه حَسَنَةٌ وَالْحَسَنَةُ بِعَشْرِ اَمْثَالِهَا
‘রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি কুরআনে পাকের একটি হরফ তিলাওয়াত করবে তাকে এমন একটি নেকী দেওয়া হবে যা দশটি নেকীর সমান’।
কিন্তু মুহাক্কিক নশর বলেন-
وَالصَّحِيْحُ بَلِ الصَّوَابُ مَا عَلَيْهِ مُعَظَّمُ السَّلَفِ وَالْخَلَفِ وَهُوَ اَنَّ التَّرْتِيْلَ وَالتَّدَبُّرَ مَعَ قِلَّةِ الْقِرَاءَةِ اَفْضَلُ مِنَ السُّرْعَةِ مَعَ كَثْرَتِهَا لِاَنَّ الْمَقْصُوْدَ مِنَ الْقُرْاٰنَ فَهْمُهٗ وَالتَّفَقُّهُ فِيْه وَالْعَمَلُ بِه وَتِلَاوَتِه وَحِفْظِه وَسِيْلَةِ اِلٰى فَهْمِ مَعَانِيْه
‘সঠিক ও ভারসাম্যপূর্ণ অভিমত সেটাই, যা পূর্ববর্তী ও পরবর্তী অধিকাংশ আলেমগণ ব্যক্ত করেছেন। তা হল এই যে, হদর বা দ্রুততার সাথে অধিক পরিমাণ তেলাওয়াতের তুলনায় তারতীল বা ধীরস্থিরে অল্প পরিমাণ তিলাওয়াত উত্তম। কেননা কুরআনের প্রকৃত উদ্দেশ্য হল বাস্তবিক অর্থ অনুধাবন ও অভ্যন্তরীণ নিগূঢ় রহস্যের উপর প্রজ্ঞা অর্জন। সাথে সাথে কুরআনে বর্ণিত বিধানাবলীর উপর আমল। তিলাওয়াত বা মুখস্থকরণ মূলত কুরআনিক অর্থ অনুধাবনের একটি মাধ্যম।’
উপরোক্ত অভিমতের সমর্থনে হযরত ইবনে মাসউদ রাযি. ও ইবনে আব্বাস রাযি. এর বর্ণনা পেশ করা হয়। (যা ইতিপূর্বে আলোচিত হয়েছে।)
তারতীলের সাথে পড়ার চূড়ান্ত পর্যায় হচ্ছে এই যে, প্রতিটা আয়াতকে তার চাহিদা অনুযায়ী তিলাওয়াত করবে। অর্থাৎ যেখানে ধমকি, ভয় ও শাস্তির ওয়াদা রয়েছে, সে আয়াত তেলাওয়াতের সময় কণ্ঠস্বর ভারী ও গাম্ভীর্যপূর্ণ করবে। যেখানে আল্লাহর মহত্ত্ব—বড়ত্ব আলোচিত হয়েছে সেগুলোকে শ্রদ্ধাবনত কণ্ঠে তিলাওয়াত করবে। যেন উচ্চারণভঙ্গিতেই আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব ও শান—শওকত বহিঃপ্রকাশ ঘটে।
পদমর্যাদার মাপকাঠি হলো পবিত্র কুরআন
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বরাবর প্রেরীত চিঠির ব্যাখ্যা PDF ডাউনলোড করতে ক্লিক করুন
মহানবী জগতের আদর্শ মহামানব। ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ
মানব জাতির মুক্তি ও কামিয়াবী সুরাতুল আসরের ৪ মূলনীতির আলোকে ব্যবস্থা গ্রহণ করা আবশ্যক