আদব নং—৯
গভীর চিন্তা ও ধ্যান—খেয়াল
চিন্তার খোরাক ও গবেষণার উৎস হিসেবে আল্লাহ তা‘আলা কুরআন কারীমকে অবতীর্ণ করেছেন। যাতে মানুষ চিন্তা—ফিকির করে (আল্লাহ পর্যন্ত পেঁৗছে যায়)। আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন-
کِتٰبٌ اَنْزَلْنٰهُ اِلَیْکَ مُبٰرَكٌ لِّیَدَّبَّرُوْۤا اٰیٰتِهٖ وَ لِیَتَذَکَّرَ اُولُوا الْاَلْبَابِ
‘এটি একটি বরকতময় কিতাব, যা আমি আপনার প্রতি অবতীর্ণ করেছি। যাতে মানুষ এর আয়াত সমূহে গভীরভাবে চিন্তা করে। এবং বুদ্ধিমানগণ যেন উপদেশ গ্রহণ করে।’ —সূরা সোয়াদ, আয়াত : ২৯
কুরআনের ব্যাপারে চিন্তা—গবেষণা না করা মহান আল্লাহর কাছে অপছন্দনীয়। তিনি বলেন-
اَفَلَا یَتَدَبَّرُوْنَ الْقُرْاٰنَ اَمْ عَلٰی قُلُوْبٍ اَقْفَالُهَا
‘তবে কি তারা কুরআনে গভীরভাবে চিন্তা করে না। নাকি তাদের অন্তর সমূহ তালাবদ্ধ রয়েছে?’ —সূরা মুহাম্মদ, আয়াত: ২৪
হযরত আলী রাযি. বলেন-
لَا خَيْرَ فِىْ قِرَاءَةٍ لَا تَدَبُّرَ فِيْهَا
‘চিন্তা—ভাবনাহীন তেলাওয়াতে প্রকৃত অর্থে কোনো উপকার নেই।’
(অর্থাৎ, উপদেশ হাসিল না হওয়ার কারণে তা উপকার শূণ্য। যদিও প্রতি হরফ তেলাওয়াতের বিনিময়ে দশটি সওয়াব পাওয়া যাবে।)
হযরত হাসান বসরী রাহ. বলেন, তোমাদের পূর্বেকার লোকেরা (সাহাবা রাযি.) কুরআনকে আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত পত্র মনে করতেন। রাতের বেলায় কুরআনে চিন্তা—গবেষণা করে দিনের বেলায় তা বাস্তবায়িত করতেন। অর্থাৎ কর্মে পরিণত করতেন।
হযরত ইবরাহিম আল খাওয়াস রহ. বলেন, অন্তরের চিকিৎসা হচ্ছে চারটি।
قِرَاءَةُ الْقُرْاٰنِ بِالتَّدَبُّرِ, وَخَلَاءِ الْبَطْنِ, وَقِيَامِ اللَّيْلِ, وَالتَّضَرُّعِ عِنْدَ السَّحْرِ, وَمُجَالَسَةِ الصَالِحِيْنَ
‘চিন্তা—গবেষণা করে কুরআন তিলাওয়াত, অল্প ভোজন, রাত্রিকালীন নফল নামাজ, রাতের শেষ প্রহরের মিনতী ও সৎ লোকের সাহচর্য।’
এখন কথা হচ্ছে, তাদাব্বুর বা চিন্তা—গবেষণা বলতে কী বুঝানো হয়েছে?
(‘তাদব্বুর’ এর সারমর্ম হল, উপদেশ গ্রহণের মনোবাসনায় পূর্ণ ধ্যান—খেয়ালের সাথে তিলাওয়াত করা। একান্ত অনুগত গোলামের মতো। যে তার মালিকের সামনে তার—ই নির্দেশনামা পাঠ করছে।’)
আল্লামা সুয়ূতী রহ. বলেন, মুখে যে শব্দ উচ্চারিত হয়, অন্তরে এর অর্থ অনুধাবন করে আয়াতের প্রকৃত মতলব বা উদ্দেশ্য বুঝা। সকল বিধি—নিষেধ ভেবে চিন্তে এই বিশ্বাস করা যে, সকল বিধানই অবশ্য পালনীয় ও কল্যাণকর। চিরন্তন ও শাশ্বত। কুরআনের বিধান ও শিক্ষা কোনো স্থান কাল বা জনগোষ্ঠীর মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। অতপর অতীতের সকল ত্রুটি—বিচ্যুতির জন্য ওজর পেশ করে আল্লাহ পাকের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা। রহমতের আয়াত পাঠের সময় আনন্দিত হওয়া ও রহমত প্রাপ্তির দুআ করা। পক্ষান্তরে আজাবের আয়াতসমূহ তিলাওয়াতের সময় ভীত হয়ে আল্লাহ পাকের কাছে আশ্রয় কামনা করবে। আল্লাহ তা‘আলার পবিত্রতা ও মহত্ত্ব সম্বলিত আয়াত পাঠের সময় তার শ্রেষ্ঠত্ব বর্ণনা করবে। এবং দুআর আয়াত তিলাওয়াতের সময় বিনীতভাবে মহান আল্লাহর কাছে নিজের প্রয়োজন পেশ করবে।
অধিক ধ্যান—খেয়ালের জন্য কোনো কোনো আয়াত বারংবার পূনরাবৃত্তি করে পড়াতে অসুবিধা নেই। নাসাঈ ও মুসনাদে আহমাদে হযরত আবু যর রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক রাতে নামাযে নিম্নোক্ত আয়াতটি সকাল পর্যন্ত তিলাওয়াত করেছেন।
اِنْ تُعَذِّبْهُمْ فَاِنَّهُمْ عِبَادُكَ, وَاِنْ تَغْفِرْلَهُمْ فَاِنَّكَ اَنْتَ الْعَزِيْزُ الْحَكِيْمُ
‘যদি আপনি তাদেরকে আযাব দেন, তবে তো তারা আপনারই বান্দা। আর যদি আপনি তাদেরকে ক্ষমা করে দেন তাহলে আপনি মহা—পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।’
পূর্বেকার উলামাদের এমন অনেকেই ছিলেন, যারা এক আয়াতকেই বার বার তিলাওয়াত করতেন। যাতে ধ্যান—খেয়ালের গভীরে পেঁৗছার পাশাপাশি চিন্তা—গবেষণার মাধ্যমে প্রত্যেক বার নতুন নতুন সূক্ষ্ম রহস্য উদঘাটন করা সম্ভব হয়।
পদমর্যাদার মাপকাঠি হলো পবিত্র কুরআন
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বরাবর প্রেরীত চিঠির ব্যাখ্যা PDF ডাউনলোড করতে ক্লিক করুন
মহানবী জগতের আদর্শ মহামানব। ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ
মানব জাতির মুক্তি ও কামিয়াবী সুরাতুল আসরের ৪ মূলনীতির আলোকে ব্যবস্থা গ্রহণ করা আবশ্যক