আযমতে কুরআন : কুরআনে কারীম সর্বপ্রকারে রহমত
কুরআন শরীফ সর্বপ্রকারে রহমত। এর শব্দমালাও রহমত এবং এর অর্থ ও মর্মও রহমত। এমনিভাবে রহমত এ পঠন-পাঠন, শ্রবণ, অনুসরণ এবং এর সংগে যে-কোনও রকমের সংশ্লিষ্টতা।
একমাত্র কুরআনই এমন এক গ্রন্থ, যার কেবল শব্দমালাও মানুষের জন্য অশেষ কল্যাণময়। এর প্রতিটি হরফে একটি করে নেকী পাওয়া যায় এবং সে নেকীকে দশগুণে বৃদ্ধি করা হয়। এ ছওয়াব যেমন বুঝে পড়লে লাভ হয়, তেমনি না বুঝে পড়লেও লাভ হয়। এটা বান্দার প্রতি আল্লাহ তা‘আলার কত বড়ই না করুণা যে, যেই ছওয়াব ও পূণ্যের অধিক্যের বদৌলতে আখেরাতে মুক্তিলাভ হবে এবং অর্জিত হবে উচ্চ থেকে উচ্চতর মর্যাদা, কেবল কুরআন পাঠের বিনিময়েও তিনি বান্দাকে তা দান করে থাকেন। এমনকি এর জন্য অর্থ-মর্ম বোঝারও কোনও শর্ত আরোপ করেননি। অর্থ ও মর্ম বাড়তি ছওয়াব ও তার স্বতন্ত্র মহিমা তো আপন স্থানে আছেই এবং কুরআন নাযিলের মূল উদ্দেশ্য চরিতার্থের জন্য তার অপরিহার্যতাও এক অনঃস্বীকার্য বিষয়, কিন্তু সরাসরি তাতে সংশ্লিষ্ট থাকা এবং তার লক্ষমাত্রায় উপনিত হতে পারাটা খুব সহজসাধ্য ব্যাপার নয়। এর জন্য যে মেহনত-সাধনা ও অধ্যাবসায় দরকার, উম্মতের একটা অংশবিশেষের পক্ষেই তাতে অবর্তীণ হওয়া সম্ভব এবং অংশবিশেষের জন্য তা জরুরিও বটে, কিন্তু ছওয়াবের ব্যাপারটাকে অর্থ বোঝার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা হয়নি। তা রাখা হলে সিংহভাগ মানুষই তা লাভে বঞ্চিত থাকত। মেহেরবান আল্লাহ সেই বঞ্চনা থেকে আমাদের রক্ষা করেছেন। তিনি কেবল শব্দপাঠকেই ইবাদত ও ছওয়াবের মহিমা দান করেছেন। কারও অর্থ জানা থাকুক বা নাই থাকুক, সর্ববস্থায়ই কুরআন তিলাওয়াত একটি ছওয়াবের কাজ। এটা নামাযেরও এক গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। আল্লাহ তা‘আলা তাঁর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে লক্ষ্য করে আদেশ করেন-
اُتْلُ مَا اُوْحِىَ اِلَيْكَ مِنَ الْكِتَابِ وَاَقِمِ الصَّلٰوةَ
‘(হে নবী!) ওহীর মাধ্যমে তোমার প্রতি যে কিতাব নাযিল করা হয়েছে, তা তিলাওয়াত কর ও নামায কায়েম কর।’ সূরা আনকাবুত- ৪৫
আযমতে কুরআন সম্পর্কে আরও ইরশাদ করেন- وَرَتِّلِ الْقُرْاٰنَ تَرْتِيْلًا
‘এবং ধীর-স্থিরভাবে স্পষ্টরূপে কুযরআন তিলাওয়াত কর।’ সূরা মুয্যাম্মিল-০৪
সাধারণভাবে মু’মিনদের লক্ষ করে বলা হয়েছে- فَاقْرَءُوْا مَا تَيَسَّرَ مِنَ الْقُرْاٰنِ
‘সুতরাং কুরআনের যতটুকু (পড়া তোমাদের জন্য) সহজ হয় ততটুকু পড়’ সূরা মুয্যাম্মিল-২০
অর্থাৎ নামায আদায় করার জন্য কুরআন মাজীদ থেকে কিছু না কিছু পড়তেই হবে। জগতের কোটি কোটি মুসলিম তাদের সর্বাপেক্ষা বড় ইবাদত নামাযের ভেতর কুরআন মাজীদ তিলাওয়াত করছে। ইসলামের সূচনাকাল থেকে অদ্যাবধি তিলাওয়াত করে যাচ্ছে। আরবগণ তিলাওয়াত করছে। অনারব মুসলিমগণও তিলাওয়াত করছে। যারা কুরআন মাজীদের অর্থ বুঝতে পারে, তারাও নামাযে কুরআন পড়ছে আর যারা তা বুঝতে পারে না, তারাও পড়ছে। সকলের পাঠই ইবাদত হিসেবে গণ্য হচ্ছে এবং সকলেই এর দ্বারা ছওয়ার অর্জন করছে। কুরআন ও হাদীছের সুস্পষ্ট ও স্বাভাবিক ভাষ্যের কারণে সকলেই বিশ্বাস করছে অর্থ না বোঝা সত্তে¡ও এ সৌভাগ্য সকলের অর্জিত হয়ে যাচ্ছে। এ নিয়ে কখনও কারও মনে সন্দেহ জাগেনি এবং কেউ কখনও এ সম্পর্কে প্রশ্ন তোলেনি। বস্তুত এটা কুরআনের অবারিত রহমত যে, তার পাঠের মাধ্যমে ছওয়াব অর্জনের জন্য অর্থ বোঝার শর্ত আরোপ করা হয়নি। ফলে মু’মিন মাত্রই কুরআন তিলাওয়াতকে তার জীবনের পরম সৌভাগ্য বলে বিশ্বাস করে। আল্লাহ-প্রেমিকগণ নামাযের বাইরেও প্রতিদিন কুরআন মাজীদ থেকে কিছু না কিছু অবশ্যই তিলাওয়াত করে থাকে। তারা তাদের শিশুদেরকে সর্বপ্রথম যা শেখানো জরুরী মনে করে, তা কুরআন মাজীদেরই তিলাওয়াত। ফলে দ্বীনসচেতন এমন কোনও মুসলিম পাওয়া যাবে না, যে কুরআন মাজীদ পড়তে পারে না। এটা কুরআন পাঠের মাধ্যমে ছওয়াব লাভের এই অবারিত সুযোগ থাকারই সুফল।

“আল কুরআনের আদব” বিষয়ে পড়তে ক্লিক করুন “কুরআনুল কারিমের কথা” প্রবন্ধটি পড়তে ক্লিক করুন আরো জানতে ভিজিট করুন আমাদের ওয়েব সাইট রাহে সুন্নাত ব্লগ