ইমাম রবী‘আহ আর-রাঈ (রহ.)-এর মহিয়সী মা

ইমাম রবী‘আহ আর-রাঈ (রহ.)-এর মহিয়সী মা

ইসলাম প্রতিদিন

ইমাম রবী‘আহ আর-রাঈ (রহ.)-এর মহিয়সী মা

ইমাম মালিক (রহ.)-এর বিশিষ্ট উস্তায রবী‘আহ আর-রাঈ (রহ.) একজন উচ্চস্তরের মুহাদ্দিছ ছিলেন। ইমাম মালিক (রহ.)-এর মত মহান ইমামের যখন উস্তায, তখন তিনি যে কত বড় ব্যক্তি হবেন সহজেই অনুমেয় ইতিহাস পাঠে জানা যায়, তাঁর পিতা মদীনা মুনাওয়ারায় অবস্থান করতেন।

তিনি সবে বিবাহ করেছেন। এরই মধ্যে জিহাদের ডাক আসে । সুতরাং তিনি তাতে সাড়া দিয়ে গৃহ ত্যাগ করেন। রণক্ষেত্র খুব কাছে ছিল না । মদীনা মুনাওয়ারা থেকে বহু দূরে, হাজারও মাইলের ব্যবধানে ।

জানা কথা সেকালে জাহাজ বা রেলগাড়ি ছিল না। ফলে দূর পথ অতিক্রম করতে দীর্ঘ সময় লেগে যেত। যাহোক, তিনি জিহাদে শামিল হলেন কিন্তু আল্লাহ তা’আলার ইচ্ছা, যুদ্ধ শেষ হতে না হতে অন্য এক জরুরি প্রয়োজন দেখা দেয় । সেই প্রয়োজন শেষ হতে না হতে আরেক প্রয়োজন ।

এভাবে প্রায় পঁচিশ বছর পর্যন্ত তাকে বাইরে কাটাতে হয় । পঁচিশ বছর পরে যখন মদীনা মুনাওয়ারায় ফিরে আসেন এবং নিজ বাড়ির সম্মুখে পৌঁছলেন, দেখেন কি- এক সুদর্শন যুবক তাঁর দরজা থেকে বের হয়ে আসছে। তাঁর অবাক লাগল, আমার গৃহে এই অপরিচিত যুবক কে? আমি তো স্ত্রীকে একা রেখে গিয়েছিলাম! কঠিন স্বরে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কে? সে আওয়াজে যুবকেরও মেজায বিগড়ে গেল।

কাজেই রুক্ষ্ম স্বরেই তার জবাব দিল। এভাবে দু’জনের মধ্যে কথা কাটাকাটি শুরু হয়ে গেল। আওয়াজও তীব্র হতে থাকল । সে আওয়াজ পৌছে গেল ঘরের ভেতরে । গৃহিণীর অনুভব হল, ঘরের সামনে কাদের মধ্যে যেন ঝগড়া লেগে গেছে । তিনি কাছাকাছি এগিয়ে গেলেন । দেখতে পেলেন, সেই যুবক এবং এক আগুন্তকের মধ্যে কথা কাটাকাটি চলছে। আওয়াজ শুনে তিনি চিনে ফেললেন, আগুন্তক আর কেউ নয়, তার স্বামী। যিনি বহুদিন হয়েছে গৃহ ত্যাগ করেছিলেন।

তিনি আগুন্তককে বললেন, জনাব! এই যার সাথে তর্ক হচ্ছে, সে আপনারই ছেলে । এবার পিতা-পুত্র একে অন্যকে জড়িয়ে ধরলেন। খুব কাঁদলেন ।

যাহোক, হযরত রবীআহ (রহ.) তাঁর বাড়িতে ফিরে আসলেন । তিনি সবকিছুর খোঁজখবর নিতে লাগলেন। এভাবে তাঁর অনুপস্থিতিতে তাদের কিভাবে দিন কেটেছে, তারও খোঁজ নিলেন। খোঁজ নিতে গিয়ে স্ত্রীকে জিজ্ঞেস করলেন- আমি বাড়ি থেকে যাওয়ার সময় তোমাকে খরচা হিসেবে ত্রিশ হাজার দীনার দিয়ে গিয়েছিলাম, তাতে কি তোমাদের এতদিন চলেছে? স্ত্রী বললেন যে, হাঁ, আপনাকে এর হিসাব দিচ্ছি।

ইত্যবসরে নামাযের সময় হয়ে যায়। মসজিদে নববী তো কাছেই। স্ত্রী বললেন, আপনি নামায পড়ে আসুন, আপনাকে জানাচ্ছি ত্রিশ হাজার টাকা কোথায় খরচ হয়েছে। তিনি নামায পড়তে গেলেন। নামায শেষে দেখেন, বহু লোক এক ব্যক্তিকে ঘিরে বসে আছে। সেকালে মসজিদে নববীতে যিনি হাদীছের দরস দিতেন, তার মাথায় রুমাল থাকত, যে কারণে চেহারা বোঝা যেত না। তো রুমালে চেহারা ঢাকা এক ব্যক্তি বসে বসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের পবিত্র হাদীছ পড়ছে আর লোকে তা শুনছে এবং লিখছে। 

তিনি একের পর এক হাদীছ বলে যাচ্ছেন আর ছাত্রগণ তা লিখছে। দীর্ঘক্ষণ পর যখন দরস শেষ হল, তিনি কাছে এগিয়ে গেলেন। দেখেন কি, দরসদাতা যে তাঁরই যুবক পুত্র! তার বুকের ভেতর আনন্দের বান ছুটল ।

তিনি সে আনন্দ নিয়ে ঘরে ফিরলেন। স্ত্রীকে বললেন, তুমি তো ছেলেকে এমন জায়গায় পৌঁছে দিয়েছ যে, সারা দুনিয়ার লোক তার কাছে এসে ইলমে দ্বীন শিখছে । স্ত্রী বললেন, আপনি না ত্রিশ হাজার টাকা রেখে যাওয়ার কথা বলেছিলেন? এবার তার হিসাব নিন। আপনি দু’টি আমানত রেখে গিয়েছিলেন। একটি ছিল আমার উদরে, আরেকটি ছিল ত্রিশ হাজার দীনার। আমি একটি আমানত অপর আমানতের পরিচর্যায় ব্যয় করেছি। এমনভাবে তাকে গড়ে তুলেছি, যার সুফল আজ মসজিদে নববীতে আপনি দেখে এসেছেন। আজ চারদিকে আপনার পুত্রের সুখ্যাতি। বিশাল তার হাদীছের দরস । সারা জগতের লোক এসে তার কাছে হাদীছ শিখছে।

এই যুবকেরই নাম রাবী’আহ আর-রাঈ (রহ.)। জগদ্বিখ্যাত ইমাম মালিক ইবন আনাস (রহ.) তাঁরই ছাত্র ।
আজ লোকে রাবী’আহ আর-রাঈ (রহ.)-এর নাম জানে । মুখে মুখে তাঁর জ্ঞান-গরিমার চর্চা । কিতাব-পত্রে তাঁর গুণ-মাহাত্ম্যের আলোচনা । কিন্তু যেই মা তার জন্য ত্যাগ স্বীকার করেছেন, রাতের পর রাত জেগেছেন এবং সর্বপ্রকার কষ্ট-ক্লেশ সহ্য করে তাকে তৈরি করেছেন, তার সম্পর্কে কতজন জানে?

নারীর অবদান

রাবী’আহ আর-রাঈ (রহ.)-এর জ্ঞান-গরিমা দ্বারা উম্মত যে উপকার লাভ করেছে, লক্ষ করলে দেখা যায় এর পিছনে তাঁর মায়ের বিশাল ভূমিকা । মায়ের আমলনামায়ও তার সমপরিমাণ সওয়াব লেখা হবে, ইনশাআল্লাহ।

এই ছিল আমাদের মহিয়সী নারীগণ । তারা এই উম্মতের জন্য বড় বড় ‘ইমাম’-এর জন্ম দিয়েছেন। আমরা আমাদের ইতিহাসে এমন কত নারীর কথা পাই, যারা বিনা ওযূতে তার শিশুকে কখনও দুধ পান করাননি, যাতে তার ধন উন্নত আখলাক নিয়ে গড়ে ওঠে। যে মায়েরা আমাদের ইতিহাসের নায়কদের জন্ম দিয়েছেন, খোদ তাদের তালীম-তারবিয়াতও উপযুক্ত পরিবেশেই সম্পন্ন হয়েছিল। তাদের ব্যক্তি গঠনের জন্যও প্রয়োজনীয় যত্ন নেওয়া হয়েছিল। তারই ফলে তারা এমন জাতি জন্মানোর যোগ্য হয়ে উঠেছিলেন ।

আরো জানতে ভিজিট করুন আমাদের ওয়েব সাইট রাহে সুন্নাত ব্লগ

যে মহিলা বে-পর্দা চলতে অভ্যস্ত তার জন্যও পর্দা আবশ্যক

বিবাহের পর কনে তুলে নেওয়ার আগে পর্দা রক্ষা করা কি জরুরী?

ডাক্তারের সামনে শরীর উন্মুক্ত করার শরয়ী বিধান কী?

রমযানুল মোবারক : অফুরন্ত কল্যাণের ভাণ্ডার

https://youtu.be/JzUwd-EUYW0

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *