ইসালামের হকসমূহ

ইসলামের হকসমূহ । The rights of Islamic law #Rahe_Sunnat_Blog

ইবাদত ইসলাম প্রতিদিন মুআশারাত সংবাদ
ইসলামের হকসমূহ

ইসলামের হকসমূহ

ইসলামী শরীয়ত ও বিবেক-বুদ্ধি উভয় দৃষ্টিকোণ থেকে এ কথা প্রমাণিত যে, আমাদের কাছে কিছূ হক ও কর্তবের বিষয় দাবী করা হয়েছে। তন্মধ্যে কতক রয়েছে আল্লাহ তাআলার হক, আর কতক রয়েছে বান্দার হক। বান্দার হকসমূহের মধ্যে কিছু রয়েছে দীনি হক আর কিছু রয়েছে দুনিয়াবী হকসমূহের মধ্যে কিছু আত্মীয়-স্বজনের সাথে, কিছু সাধারণ (অপরিচিত) লোকজনের সাথে আর কিছু বিশেষ লোকদের সাথে সম্পর্কিত। আরও কিছু হক রয়েছে সাধারণভাবে সকল মুসলমানের প্রতি, কিছু সমপর্যায়ের লোকদের প্রতি।

আল্লাহ তাআলার হক

সর্বপ্রথম বান্দার উপর আল্লাহর হক বর্তায়। যিনি বিভিন্ন ধরনের অনুগ্রহ ও অনুকম্পার দ্বারা  বান্দাকে সৃষ্টি করেছেন ও বেঁচে থাকার তৌফিক দান করেছেন। পথভ্রষ্টতা থেকে বের করে হেদায়াতের  পথে এনেছেন এবং হেদায়াতের উপর টিকে থাকার বিনিময়ে বহু নেয়ামত দানের আশা দিয়েছেন। বান্দার উপর আল্লাহর হক নিম্নরূপঃ

১. আল্লাহর সত্তা ও গুনাবলী সম্পর্কে কুরআন ও হাদীসের বর্ণনা অনুযায়ী বিশ্বাস স্থাপন করা।

২. আকীদা, আমল, লেন-দেন ও চারিত্রিক বিষয়সমূহ তার সন্তুষ্টির আলোকে গ্রহণ করা ও তাঁর অপছন্দনীয় বিষয়সমূহ বর্জন করা।

৩. তাঁর সন্তুষ্টি অর্জন ও তাঁর প্রতি শ্রদ্ধাবোধকে অন্য সকলের সন্তুষ্টি ও ভালবাসার উপর প্রাধান্য দেওয়া।

৪. কারো সাথে ভালবাসা বা বিদ্বেষ অথবা কারো সহযোগিতা করা বা না করা সব কিছুই আল্লাহ তা’আলার সন্তুষ্টির জন্য করা ।

ফেরেশতাদের হক

১. তাদের অস্তিত্বের বিশ্বাস করা ।

২. তাদেরকে মা’সুম বা গুনাহ হতে পবিত্র মনে করা ।

৩. তাদের নামের সাথে আলাইহিস সালাম বলা ।

৪. দুর্গন্ধযুক্ত খাদ্য আহার করে মসজিদে গেলে অথবা বায়ু  নির্গত করলে ফেরেশতাদের কষ্ট হয় , বিধায় এ সব কর্ম না করা এসাড়া
অন্যান্য যে সব বস্তু দ্বারা তাদের কষ্ট বা ঘৃনা হয় তা না করা । যেমন ফটো টানানো , বিনা প্রয়োজনে কুকুর পোষা , মিথ্যা বলা , অলসতা করে ফরজ গোসল করতে বিলম্ব করা,শরীয়ত সম্মত প্রয়োজন ব্যতীত উলঙ্গ হওয়া যদিও নির্জনে।

নবীদের হক 

আল্লাহ তা‘আলার সত্তা ও গুনাবলী এবং তাঁর পছন্দ ও অপছন্দনীয় বিষয়সমূহের জ্ঞান আমরা নবীদের মাধ্যমেই লাভ করেছি। ফেরেশতারা তাঁদের কাছে ওহী (ঐশী বাণী) এনেছেন, যার দ্বারা অনেক দুনিয়াবী লাভ-লোকসানের কথাও জানা গেছে। এ ছাড়া বহু ফেরেশ্তা আমাদের কল্যাণ কাজে নিয়োজিত। আল্লাহ তা‘আলার নির্দেশ অনুসারে তাঁরা সে কাজ পালন করে যাচ্ছেন। এ আলোকে নবী ও ফেরেশ্তাদের হকও আল্লাহ তা‘আলার মধ্যে শামিল হয়ে গেছে; বিশেষ ভাবে সরওয়ারে আলম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এহসান ও অনুগ্রহ আমাদের প্রতি সবচেয়ে বেশী । তাই তাঁর সম্পর্কে আমাদের কর্তব্য ও আমাদের প্রতি তাঁর হক অনেক বেশী। কিছু কর্তব্য নিম্নে উল্লেখ করা হলঃ

১. তাঁর নুবুওয়াত ও রিসালাতের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা।

২. সকল বিধি-বিধানে তাঁর আনুগত্য করা ।

৩. তাঁর প্রতি শ্রদ্ধাবোধ ও ভালবাসাকে অন্তরে জাগরুক রাখা।

৪. তাঁর প্রতি দরূদ পাঠ করা ।

ইসলামের হকসমূহ পর্ব ২

ইসলামের হকসমূহ
ইসলামের হকসমূহ

সাহাবা ও আহলে বায়তের হক

রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে সাহাবায়ে কেরাম ও আহলে বায়তের দুনিয়াবী ও ধর্মীয় উভয় দিক থেকে সর্ম্পক রয়েছে, এ কারণে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হকের মধ্যে তাদের হকও অর্ন্তভূক্ত আছে এবং তা নিম্নরূপঃ

১. তাদের আনুগত্য করা।
২. তাদেরকে ভালবাসা।
৩. তাদের কে আদেল(ন্যায়পরায়ন ও সত্যের মাপকাঠি) বিশ্বাস করা।
৪. তাঁদের সাথে ভালবাসা স্থাপনকারীদেরকে ভালবাসা এবং তাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষনকারীদের সাথে বিদ্বেষ পোষণ করা।

উলামা ও মাশায়েখদের হক

উলামায়ে কেরাম ও পীর বুর্জুগানেদ্বীন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উত্তরাধিকারী ও স্থলাভিষিক্ত। এ কারণে তাদের হকও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হকের মধ্যে শামিল আছে এবং তা নিম্নরূপঃ

১. ফুকাহা,মুজাতাহিদীন, মুহাদ্দিসীন, দ্বীন শিক্ষাদানকারী পীর বুজুর্গ ও ধর্মীয় গ্রন্থ প্রণেতাদের জন্য দু‘আ করা।

২. শরীয়ত মুতাবেক তাদের অনুসরণ করা।

৩. যারা জীবত আছেন, তাদেরকে ভালবাসা এবং শ্রদ্ধা করা। বিদ্বেষ না রাখা ও বিরোধিতা না করা।

৪. সমর্থ ও প্রয়োজন অনুসারে তাদেরকে হাদিয়া পেশ করা।

মেহমানের হক

মেহজবানের (গৃহকর্তার) উপর মেহমানের কিছু হক আছে, যেমন-

১. আগমনের সময় হাস্যোজ্জ্বল মুখে অভ্যর্থনা জানানো। বিদায়ের সময় অন্ততঃ বাড়ীর গেট পর্যন্ত সংগে যাওয়া।

২. তার জরুরত ও আরামের প্রতি লক্ষ্য রাখা।

৩. বিনয় ও নম্রতার সাথে ব্যবহার করা এবং নিজ হাতে তার খেদমত করা।

৪. খাওয়া-দাওয়া কমপক্ষে একদিন (মাধ্যম পর্যায়ের) ভাল আয়োজন করা। এত বেশিও না যাতে নিজের ক্ষতি হয়, আবার কমও না যাতে কৃপনতা প্রকাশ পায়। অন্ততঃ তিনদিন তার মেহমানদারী করা- এটা তার পাওনা হক। তারপরও যদি মেযবান আতিথিয়তা করে তবে তা তার এহসান হবে। মেহমানের জন্যও অধিক অবস্থান করে বা অযথা ফরমায়েশ করে অথবা বাড়ীওয়ালার থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থাপনায় দখল দিয়ে মেযবানকে কষ্ট দেওয়া উচিত হবে না।

বন্ধু-বান্ধবের হক

কুরআনে মজীদে বিশেষ বন্ধু-বান্ধবকে ঘনিষ্ঠতম আত্মীয়-স্বজনদের সাথে উল্লেখ করা হয়েছে। তাদেরও কিছু হক আছে, যথা-

১. যার সাথে বন্ধুত্ব করবে তার আকীদা-আমল, লেন-দেন, আখলাক-চরিত্র উত্তম রূপে যাচাই করে নিতে হবে। উল্লেখিত বিষয়ে উপযুক্ত পেলে বন্ধুত্ব করবে। নতুবা দুরে থাকা বাঞ্ছনীয়। অসৎসঙ্গ থেকে বেঁচে থাকার জোর তাকিদ এসেছে। অভিজ্ঞতা ও প্রত্যক্ষ দশর্নেও এর ক্ষতিসমূহ উপলব্দি করা যায়। উপযুক্ত পাত্র পেলে বন্ধুত্ব করতে বাধা নেই, বরং সত্যিকার বন্ধুত্ব বড় সুখকর হয়।

২. নিজের জান-মাল তার জন্য ব্যয় করতে কৃপণতা করবে না।

৩. মনের ইচ্ছার বিরুদ্ধে কোন কাজ তার থেকে প্রকাশ পেলে মাফ করে দিবে। ঘটনাক্রমে মনোমালিন্য দেখা দিলে তৎক্ষণাৎ সম্পর্ক ঠিক করে নিবে। সাধারণ ব্যাপাকে জটিল ও দীর্ঘ হতে দিবে না।

৪. বন্ধুত্ব হিত কামনায় ক্রুটি করবে না। সুপরামর্শদানে কৃপনতা দেখাবে না এবং বন্ধুর পরামর্শও আন্তরিকভাবে শ্রবণ করবে। বাস্তবায়ন যোগ্য হলে গ্রহণও করা চাই। এখানে উল্লেখ্য যে, আমাদের দেশে পালকপুত্রকরণের যে প্রথা প্রচলিত আছে, যাতে পালকপুত্রকে সকল ক্ষেত্রে আপন সন্তানতুল্য মনে করা হয় শরীয়তের দৃষ্টিতে এটা ভিত্তিহীন।পালকপুত্র বন্ধু-বান্ধবের মতই। যেহেতু তার সাথে সম্পর্কের কিছুটা গভীরতা রয়েছে, তাই তাকে বন্ধুত্বের বিধানে আনা যায়। কিন্তু উত্তরাধিকার ইত্যাদি সে পাবে না। কেননা, উত্তরাধিকার ইচ্ছাধীন বস্তু নয় যে, যাকে ইচ্ছা ওয়ারিশ বানাবে আর যাকে ইচ্ছা বহ্চিত করবে।

এ থেকে এটাও প্রমাণিত হয় যে, মৃত্যুর সময় কোন সন্তান সম্পর্কে এ উক্তি করা যে, অমুককে মিরাস বা উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত করা হোক শরীয়তের দৃষ্টিতে এটা অন্যায় ও গর্হিত কাজ। কেননা উপরে উল্লেখ করা হয়েছে যে, উত্তরাধিকার সুত্রটা মানুষের ইচ্ছাধীন বিষয় নয়।

প্রতিবেশীর হক

সাধারণ মুসলমানের ছাড়া যাদের মধ্যে বিশেষ গুণ রয়েছে বা যাদের সাথে বিশেষ সম্পর্ক রয়েছে তাদের হক আরো বেড়ে যাবে। যেমন প্রতিবেশি। প্রতিবেশী সম্পর্কে অধিক দায়িত্বসমূহের মধ্যে রয়েছেঃ

১. সদাচরণ করা ও তার উপকার করা।

২. তার পরিবারের ইজ্জত-আবুর প্রতি লক্ষ্য রাখা।

৩. সময় সুযোগমত প্রতিবেশীকে উপহার দেওয়া। প্রতিবেশী অভাবগ্রস্ত হলে তাকে অন্ন দেয়ার ব্যপারে বিশেষভাবে যতœবান হওয়া।

৪. তাকে কষ্ট না দেওয়া। ছোট খাটো ব্যাপার নিয়ে কথা বাড়াবাড়ি না করা। প্রতিবেশীর কষ্ট দুর করার নিমিত্ত শরীয়ত তার জন্য হককে শুফ‘আ এর বিধান দিয়েছে।

আলেমগণ লিখেছেন, বাড়ীতে থাকাকালীন যেমন প্রতিবেশী হয়ে থাকে তেমনি ভ্রমণেও প্রতিবেশী হয়। অর্থাৎ ভ্রমণ সাথী পুরো ভ্রমণের সাথী হোক বা আংশিক ভ্রমণের সাথী হোক হাদীসে একজনকে ‘জারে মাকাম’(স্থায়ী প্রতিবেশী) অন্যজনকে ‘জারে বাদিয়া’(ভ্রাম্যমান প্রতিবেশী বা ক্ষণস্থায়ী প্রতিবেশী) বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। ভ্রমণসাথীর  হকও বাড়ীর পার্শ্বস্থ প্রতিবেশীর হকের ন্যায়।

সারকথা ভ্রমণ-সাথীর আরামকে নিজের আরামের উপর প্রাধান্য দিবে। কেউ কেউ যানবাহনে ভ্রমণ-সাথীর সংগে (সিট ও জানালা ইত্যাদি ছোট খাটো ব্যাপার নিয়ে) ঝগড়া করে; এটা অত্যন্ত হীনমন্যতার পরিচয়।

ইসলামের হকসমূহ সম্পর্কে আরো জানতে ভিজিট করুন আমাদের সাইট রাহে সুন্নাত ব্লগে।

———————————————————————————————————————————–
কুরআনুল কারিমের কথা প্রবন্ধটি পড়তে ক্লিক করুন
আরো জানতে ভিজিট করুন আমাদের ওয়েব সাইট রাহে সুন্নাত ব্লগ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *