Question-and-answer

একই মাযহাবের অনুসরণ করা জরুরি কেন?

জানা-অজানা

একই মাযহাবের অনুসরণ করা জরুরি কেন?

প্রশ্ন : যখন চার মাযহাব অর্থাৎ হানাফী, শাফেয়ী, মালিকী, হাম্বলী সকল মাযহাবই সত্য ও নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাতের উপর প্রতিষ্ঠিত। তাহলে সমস্ত মানুষ প্রত্যেক মাযহাবের উপর এক সাথে কেন আমল করতে পারবে না? এ ব্যাপারে অনেকের বক্তব্য হলো : মাযহাবের ইমামগণ মুসলমানদেরকে পরস্পর বিভক্ত করে ফেলেছে। তাই মুসলমানরা ঐক্যবদ্ধ থাকার জন্য সকল মাযহাবের উপর আমল করা উচিত। নতুবা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এক সুন্নাতের উপর আমল করতে গিয়ে অন্য সুন্নাত ছুটে যাচ্ছে। অথচ প্রত্যেক মুসলমানের উচিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতিটি সুন্নাতের উপর আমল করা।

হানাফী মাযহাবের অনুসারীগণ শাফী মাযহাবের সুন্নাতকে ছেড়ে দেয় আর শাফী মাযহাবের অনুসারীগণ হানাফী মাযহাবের সুন্নাতকে ছেড়ে দেয়, এমনিভাবে মালিকী ও হাম্বলী মাযহাবের অনুসারীদের ঠিক একই অবস্থা। কুরআন—হাদিসের আলোকে এই বিষয়ে শরয়ী সমাধান জানতে চাই?

দ্বিতীয় প্রশ্ন হলো : নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের যুগে কোনো মাযহাব ছিল না, তাহলে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পর মাযহাব কীভাবে সৃষ্টি হয়েছে?

ঐসব সুন্নাত যা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের যুগে ছিল, তা আমাদের নিকট সেভাবে কেন পেঁৗছেনি? নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের যুগের পর এই মাযহাবসমূহ চালু হওয়ার উদ্দেশ্য ও কারণ কী জানতে চাই?

উত্তর :
১. প্রত্যেক ব্যক্তি একই সাথে সমস্ত মাযহাবের উপর আমল করতে না পারার কারণ হলো : ইসলামের প্রথম যুগে মন্দের চেয়ে কল্যাণের অধিক্য ছিল।

ধর্মের মধ্যে ব্যাপকভাবে নফসানিয়্যাতের প্রভাব ছিল না। প্রত্যেক ব্যক্তি নিজের বড়দের কাছে ভালো উদ্দেশ্যে মাসআলা জিজ্ঞেস করত ও তার উপর আমল করত। চায় তা মন মতো হোক বা না—হোক। কিন্তু পরবর্তীতে এ অবস্থার অবনতি ঘটে। মানুষের অবস্থা এমন হয়ে গেল যে, একটি মাসআলা একজন আলেম থেকে জিজ্ঞেস করার পর যদি তার উপর আমল করা নিজের কাছে কঠিন মনে হতো, তাহলে তা আবার দ্বিতীয় আলেমের কাছে জিজ্ঞেস করত। অতঃপর যা নিজের কাছে সহজ মনে হতো, তার উপর আমল করত। শুধু এতটুকুই নয়, বরং প্রত্যেক মাসআলার ব্যাপারে এই চিন্তা থাকে যে, কোথাও থেকে সহজ সমাধান পাওয়া যায় কি—না। একপর্যায়ে লোকটি সত্যের সন্ধানী না হয়ে, অন্তরের কু—প্রভৃতির অনুসারী হয়ে যায়।

এ পদ্ধতি অবলম্বন করার কারণে অনেক সময় বড় ধরনের ক্ষতি হয়ে যায়। যেমন : কোনো ব্যক্তি অযু অবস্থায় নিজের স্ত্রীর গায়ে কোনো প্রকার আড়াল ছাড়া স্পর্শ করল, এ ব্যাপারে শাফেয়ী মাযহাবের কোনো আলেম বলল, অযু ভেঙে গেছে, তাই অযু দ্বিতীয়বার করতে হবে। তখন এ ব্যক্তি উত্তরে বলল, আমি ইমাম আবু হানিফা (রহ.) তাকলিদ করি, তাঁর ব্যাখ্যা অনুযায়ী এর কারণে অযু ভাঙবে না। বরং এই অযু দ্বারা নামাজ পড়া জায়েয হবে।

আবার সে যদি বমি করে আর হানাফী মাযহাবের কোনো আলেম যদি বলে তোমার অযু ভেঙে গেছে, তাই দ্বিতীয় বার অযু করতে হবে। কেননা, ইমাম আবু হানিফা (রহ.) এর ব্যাখ্যা অনুযায়ী বমি করার কারণে অযু নষ্ট হয়ে যায়। তখন সে জাওয়াব দিল, আমি তো ইমাম শাফয়ী (রহ.)—এর তাকলিদ করি, তার নিকটে বমি অযু ভঙ্গকারী নয়। তাই এই অযু দিয়ে নামাজ জায়েয হবে।

এখন যদি এ ব্যক্তি এমতাবস্থায় নামাজ আদায় করে, তাহলে তার নামাজ হানাফী ও শাফেয়ী কোনো মাযহাব অনুযায়ীই সঠিক হবে না।

এটাকেই ‘তালফিক’ বলা হয়। অর্থাৎ একই ইবাদতে বিপরীতমুখী দুই মাযহাবের উপর আমল করা, যা উম্মতের সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী অগ্রহণযোগ্য ও নাজায়েয।

প্রকৃতপক্ষে এই পদ্ধতি অবলম্বন করার দ্বারা : ইমাম আবু হানিফা (রহ.) এর তাকলিদও হয় না, ইমাম শাফী (রহ.)—এর তাকলিদও হয় না। বরং এটা শুধু নফসের অনুসরণ করা ছাড়া অন্য কিছু নয়। যা শরীয়তে সম্পূর্ণ নিষেধ। তা ছাড়া এর ফলশ্রম্নতিতে আল্লাহর পথ থেকে ছিটকে পড়া ছাড়া আর কিছুই নয়।

যেমন আল্লাহ তায়ালা বলেছেন :
وَ لَا تَتَّبِعِ الْهَوٰی فَیُضِلَّكَ عَنْ سَبِیْلِ اللّٰهِ ؕ
অর্থ : তুমি নফসের অনুসরণ করো না। তা তোমাকে আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত করে দেবে।

সেজন্য জরুরি হলো : শুধু একজন ইমামেরই তাকলিদ করা। কেননা, কুরআনে কারীমে ইত্তেবাকে (অনুসরণ করাকে) ‘ইনাবতের’ মনোনিবেশের) সাথে ‘মারবুত’ (সংযুক্ত) করেছেন। যেমন আল্লাহ্ তায়ালা বলেছেন- وَّ اتَّبِعْ سَبِیْلَ مَنْ اَنَابَ اِلَیَّ ۚ
অর্থ : যে আমার অভিমুখী হয়, তার পথ অনুসরণ করবে।

এর ভিত্তিতে সমষ্টিগতভাবে যদি ইমাম আবু হানিফা (রহ.)—এর ব্যাপারে এই ধারণা হয় যে, তার ইজতেহাদ কুরআন—হাদিসের সাথে বেশি সামঞ্জস্যপূর্ণ। সেজন্য তার তাকলিদ অবলম্বন করল, এমনিভাবে যদি কোনো ব্যক্তি ইমাম শাফেয়ী, ইমাম মালেক বা ইমাম আহমদ (রহ.)—এর ব্যাপারে এ ধারণা হয় যে, তার ইজতেহাদ কুরআন—হাদিসের সাথে বেশি সামঞ্জস্যপূর্ণ। তাহলে সে ঐ ইমামের তাকলিদ করল।

সুতরাং তার জন্য জায়েয হবে না নিজের ইমামকে ছেড়ে যখন মনে চায়, তখন অন্য ইমামের মাযহাবের উপর আমল করা। কেননা, এর মধ্যে ‘তালফিক’ হয়ে যাচ্ছে এবং নফসের কু—প্রভৃতির অনুসরণ করা হচ্ছে। যার ফলাফল হলো : সত্য থেকে দূরে সরে যাওয়া এবং পথভ্রষ্টতায় পতিত হওয়া।

এই চার ইমাম মুসলমানদেরকে বিচ্ছিন্ন করেনি। বরং তাদের মাযহাবের কারণে উম্মতের মাঝে প্রশস্ততার পথ উন্মোচিত হয়েছে। তাই কল্যাণ চার মাযহাবের মধ্যেই রয়েছে। যদি এই চার মাযহাব ছাড়া প্রত্যেক ব্যক্তিকে স্বাধীনতা দেয়া হয়, তাহলে মুসলমান হাজারো দলে বিভক্ত হয়ে যাবে। প্রত্যেকে সহজ সন্ধানী ও নফসের গোলাম হয়ে যাবে এবং প্রত্যেক মাযহাব থেকে সহজ সহজ মাসআলা—মাসায়েল তালাশ করে এর উপর আমল করবে। যার ফলে ধর্ম একটি ঠাট্টার বস্তুতে পরিণত হবে।

তাছাড়া মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের যতগুলো সুন্নাত আছে, চার মাযহাবের কারণে সবগুলো এক সাথে আমল হচ্ছে। যদি লোকেরা চার মাযহাব ছেড়ে শুধু এক মাযহাবের উপর আমল করতে শুরু করে, তাহলে সে অবস্থায় শুধু একটি সুন্নাতের উপর আমল করা সম্ভব হতো, সে ক্ষেত্রে নিশ্চয় অন্যান্য সুন্নাতসমূহ ছুটে যেত।

উদাহরণস্বরূপ : মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আমল থেকে ‘রফয়ে ইয়াদাইন’ করা এবং ‘রফয়ে ইয়াদাইন’ না করা উভয়টিই হাদিস দ্বারা প্রমাণিত।

চার মাযহাব হওয়ার কারণে কিছু লোক ‘রফয়ে ইয়াদাইনের’ হাদিসের উপর আমল করে আর কিছু লোক ‘রফয়ে ইয়াদাইন’ না করার হাদিসের উপর আমল করে। এভাবেই উভয় সুন্নাতের উপর একই সময় সারা পৃথিবীতে আমল হচ্ছে। যদি সকলেই একই মাযহাবের উপর আমল করে, এ অবস্থায় যদি ‘রফয়ে ইয়াদাইনের’ হাদিসের উপর আমল করা হয়, তাহলে ‘রফয়ে ইয়াদাইন’ না করার সুন্নাত একেবারেই ছুটে যাবে। আর যদি ‘রফয়ে ইয়াদাইন’ না করার হাদিসের উপর আমল করা হয়, তাহলে ‘রফয়ে ইয়াদাইন’ করার সুন্নাত একেবারেই ছুটে যাবে।

মোটকথা : একাধিক মাযহাব হওয়াটা মুসলিম উম্মাহর জন্য কল্যাণ করই বটে।

(১) মাযহাবের উপর অটল থেকে মুসলমানেরা পথভ্রষ্টতা থেকে আত্মরক্ষা করতে পারবে। যেমন : আল্লামা শাহ ওলীউল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলভী (রহ.) বিভিন্ন কারণে বিস্তারিতভাবে এটা প্রমাণ করেছেন যে, সমস্ত ফিতনা—ফাসাদ থেকে বাঁচা এবং পরিপূর্ণ নিরাপত্তা একই ইমামের মাযহাব মানার মধ্যেই রয়েছে।
তিনি বলেছেন-
إعلم أن في الأخذ بهذه المذاهب الأربعة مصلحة عظيمة و في الإعراض عنها مفسدة كبيرة.
জেনে রাখা উচিত : এই চার মাযহাব মেনে নেয়ার মধ্যে বড় কল্যাণ নিহিত রয়েছে। আর সকল মাযহাব থেকে একেবারে বিমুখ হয়ে যাওয়ার মধ্যে বড়ই ফিতনা রয়েছে।

(২) এই মাযহাবসমূহ সৃষ্টি হওয়ার কারণ হলো : অনেক মাসআলায় নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে দুটি মতামত বর্ণনা করা হয়েছে। যেমন : রফয়ে ইয়াদাইন এবং তরকে রফয়ে ইয়াদাইন দুটিই নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণিত আছে। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উভয় আমল সাহাবায়ে কেরাম (রাযি.) পরবর্তী লোকদের কাছে বর্ণনা করেছেন। তখন অনেক তাবিঈন হযরাত ঐ দলিলের ভিত্তিতে যা তাদের নিকট বেশি গ্রহণযোগ্য ছিল ‘রফয়ে ইয়াদাইন’—কে গ্রহণ করেছেন। এমনিভাবে অনেক তাবিঈন হযরাত ‘তরকে রফয়ে ইয়াদাইন’—কে গ্রহণ করেছেন ।

এ ছাড়া সাহাবায়ে কেরামদের মধ্যেও অগণিত মাসআলায় মতপার্থক্য ছিল। তাদের মধ্যে পরস্পর মতপার্থক্যের অসংখ্য উদাহরণ হাদিসের কিতাবে বিদ্যমান রয়েছে। আল্লামা শাহ ওলীউল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলভী (রহ.) সাহাবায়ে কেরামদের মতপার্থক্যের কিছু নমুনা উল্লেখ করেছেন।
و قد كان في الصحابة و التابعين و من بعدهم من يقرأ البسملة و من لا يقرأ
অর্থ : সাহাবায়ে কেরাম, তাবিঈন ও তাদের পরবর্তীকালে অনেকে নামাজের মধ্যে বিসমিল্লাহ উচ্চ আওয়াজে পড়তেন এবং অনেকে নিম্ন আওয়াজে পড়তেন।

অনেকে বমি করার পর অযু করতেন এবং অনেকে অযু করতেন না, অনেকে আগুন দ্বারা রান্না করা জিনিস খাওয়ার পর অযু করতেন এবং অনেকে অযু করতেন না। চার মাযহাবের ইমামগণ যেহেতু সাহাবায়ে কেরাম ও তাবিঈন হযরতদের জ্ঞান এবং দূরদর্শিতার উপর আস্থা রেখেছেন এবং তাঁদের মতামত, নিয়ম—নীতিকে গ্রহণ করেছেন, তাই চার ইমামের মধ্যেও মাসআলা—মাসায়েলের ব্যাপারে মতপার্থক্য সৃষ্টি হয়েছে।

যখন ইসলামের ভৌগোলিক সীমারেখা প্রশস্ত হয়েছে, তখন এমন কিছু নতুন নতুন মাসআলা—মাসায়েল সৃষ্টি হয়েছে, যেগুলোর স্পষ্ট কোনো সমাধান কুরআন—হাদিসে উল্লেখ ছিল না। এ ধরনের মাসআলা—মাসায়েলগুলোকে ইমামগণ ইজতেহাদের মাধ্যমে সমাধান করেছেন এবং জায়েয—নাজায়েযের রায় দিয়েছেন। যেহেতু ইলম, জ্ঞান ও ইজতেহাদি যোগ্যতার মধ্যে পার্থক্য হওয়া একটি প্রকৃতিগত বিষয়। সেজন্য তাদের ইজতেহাদি সিদ্ধান্তের মধ্যেও মতপার্থক্য হয়েছে এবং এই এখতেলাফের ভিত্তি এখলাসের উপর ছিল, সেজন্য তা দূষণীয় নয়। বরং পছন্দনীয় ও রহমতের কারণও বটে। যেহেতু মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন-
إِخْتِلَافُ أُمَّتِىْ رَحْمَةٌ.
অর্থ : আমার উম্মতের ‘ইখতেলাফ’ অর্থাৎ মতপার্থক্য রহমতস্বরূপ।

হাদিস শরীফে যে ইখতেলাফকে রহমত বলা হয়েছে, তার সঠিক উদ্দেশ্য হলো : সাহাবা এবং ইমামদের ইখতেলাফ। যেহেতু এই চার ইমামের শাগরিদের সংখ্যা বেশি ছিল, তাই শাগরিদগণ নিজেদের উস্তাদের ইলমকে লেখালেখির মাধ্যমে সংরক্ষণ করে সারা পৃথিবীতে পেঁৗছে দিয়েছেন। সেজন্য উলামায়ে কেরাম যখন লোকদের মধ্যে আমানতের খিয়ানত দেখতে পেল, তখন তারা এই চার ইমামের মাযহাব মান্য করাকে ‘ওয়াজিব’ অর্থাৎ বাধ্যতামূলক করে দিলেন এবং এই সিদ্ধান্তের উপর ‘ইজমায়ে উম্মাহ’ অর্থাৎ উম্মাতের ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়।

এভাবেই এই মাযহাবসমূহ অস্তিত্ব লাভ করেছে, যা প্রকৃতপক্ষে কুরআনের আয়াত, মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কথা ও কাজ, সাহাবায়ে কেরামের নমুনা এবং শরয়ী ইজমা—কিয়াসের উপর সু—প্রতিষ্ঠিত। মুজতাহিদ ইমামগণ আল্লাহ তায়ালার পাঠানো শরীয়ত ও মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সমস্ত সুন্নাতকে পরিপূর্ণ আমানতদারীর সাথে উত্তম পদ্ধতিতে উম্মাতের কাছে পেঁৗছে দিয়েছেন। এই ইমামগণ সমস্ত উম্মাতের উপর দয়া করেছেন যে, তারা নিজেদের শরীর, মন ও মেধা বাজি রেখে শরীয়তের বিধানাবলিকে শরয়ী দলিলের মাধ্যমে লিপিবদ্ধ করেছেন এবং আমাদের জন্য দ্বীনের উপর চলার পথ অতি—সহজ করে দিয়েছেন।

আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে সমস্ত উম্মতের পক্ষ থেকে যথাযথ উত্তম প্রতিদান দান করুন ! আমিন।
فقط والله تعالي أعلم
(আল্লাহ তায়ালা সবচেয়ে ভালো জানেন)।

সমাধানে :
আল্লামা মুফতী জয়নুল ইসলাম কাসেমী ইলাহাবাদী
মুফতী, দারুল উলুম দেওবন্দ, ভারত।

উল্লিখিত ফাতোয়ার ব্যাপারে দারুল উলুম দেওবন্দের শাইখুল হাদিস আল্লামা মুফতী সাঈদ আহমাদ পালনপুরী (দা.বা.)—এর
অভিমত

আলহামদুলিল্লাহ! সমাধানটি পূর্ণাঙ্গ ও যথাযথ হয়েছে। ইমামদের তাকলিদ শুধু তিন প্রকার মাসআলার মধ্যে করা হয় এবং এই তিন প্রকার মাসআলায় তাকলিদ করা ছাড়া কোনো উপায়ও নেই, বাকি শরীয়তের মধ্যে কোনো ইমামের তাকলিদ করা হয় না, শুধু আল্লাহ ও তাঁর রাসূলেরই আনুগত্য করা হয়। ফিক্বহার ঐ তিন প্রকার মাসায়েল শতকরা বিশ ভাগ মাত্র। কিন্তু সেগুলো পৃথকভাবে লিপিবদ্ধ করা হয়নি। বরং পূর্ণ ফিক্বাহ এক সাথে লেখা হয়েছে এবং এই তিন প্রকার মাসআলার ভিত্তিতে ফিক্বহে হানাফী, শাফেয়ী ইত্যাদি বলা হয়। অবশিষ্ট আশিভাগ মাসায়েল আহলে হক্বদের ফিক্বাহসমূহের মধ্যে অভিন্ন মাসায়েল।

তিন প্রকার মাসায়েল হলো এই যে :
কখনো নস্ (কুরআন—হাদিস) বোঝার ক্ষেত্রে মতপার্থক্য সৃষ্টি হয়।

ক. কোন আয়াত বা কোন হাদিস দ্বারা কী উদ্দেশ্য? এ ব্যাপারে আয়িম্যায়ে মুজতাহিদীনদের মধ্যে মতপার্থক্য হয়ে যায়। একজন ইমাম বলে : এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো এটা। অপরজন বলেন, এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো ঐটা এবং আরবি ভাষার দৃষ্টিতে উভয়টাই উদ্দেশ্য হওয়ার সম্ভাবনা আছে। সুতরাং এ ক্ষেত্রে নির্ধারিত ইমামের তাকলিদ করা ছাড়া কোনো উপায় নেই এবং এসব (পরস্পরবিরোধী মতপার্থক্যের) ক্ষেত্রে এক সাথে দুই ইমামের তাকলিদ করাও সম্ভব নয়।

খ. কখনো নাসেখ—মানসুখ নির্দিষ্ট করার বিষয়ে মতপার্থক্য হয়ে থাকে। অর্থাৎ কোন বর্ণনাটি পূর্বের এবং কোন বর্ণনাটি পরের, এ বিষয়টি নির্ধারণ করার ক্ষেত্রে ইমামদের মতপার্থক্য হয়ে থাকে। সুতরাং এ ক্ষেত্রে ইমামের তাকলিদ করা ছাড়া কোনো উপায় নেই।

গ. কখনো ইস্তেম্বাতি (গবেষণামূলক) মাসআলায় মতপার্থক্য হয়। সে ক্ষেত্রে উসূলে ফিক্বহ (ফিক্বহের মূলনীতি)—কে সামনে রেখে, নস (কুরআন—হাদিস) থেকে গবেষণা করে মাসআলা বের করতে হয়। সুতরাং ইস্তেম্বাতের (গবেষণার) মধ্যে মতপার্থক্য হয়ে যায়। সুতরাং এ ক্ষেত্রে ইমামগণের তাকলিদ ছাড়া কোনো উপায় নেই। এই তিন প্রকার বিষয়ের উদাহরণসমূহ আমার লিখিত কিতাব ‘ইলমী খোতবাৎ’ প্রথম খণ্ড ৯৬ পৃ. মধ্যে বিস্তারিতভাবে উল্লেখ রয়েছে। যদি প্রশ্নকারী এ কথাগুলো বুঝে নেয়, তাহলে তার সকল প্রশ্নের নিরসন হয়ে যাবে।

লেখেছেন
আল্লামা মুফতী সাঈদ আহমাদ পালনপুরী
শাইখুল হাদিস, দেওবন্দ।

আরো জানতে ভিজিট করুন আমাদের ওয়েব সাইট রাহে সুন্নাত ব্লগ

মুমিন ও মুসলমান হওয়ার বিষয়টি বিশ্বাস করা কি জরুরী ?

ঘুরাফেরা করণার্থে মহিলাদের বাইরে যাওয়া

যে মহিলা বে-পর্দা চলতে অভ্যস্ত তার জন্যও পর্দা আবশ্যক

বিবাহের পর কনে তুলে নেওয়ার আগে পর্দা রক্ষা করা কি জরুরী?

ডাক্তারের সামনে শরীর উন্মুক্ত করার শরয়ী বিধান কী?

https://youtu.be/JzUwd-EUYW0

তথ্যসূত্র :
عَنْ عُمَرَ بْنِ الخَطَّابِ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: خَيْرُ النَّاسِ قَرْنِي، ثُمَّ الَّذِينَ يَلُونَهُمْ، ثُمَّ الَّذِينَ يَلُونَهُمْ، ثُمَّ يَفْشُو الكَذِبُ حَتّٰى يَشْهَدَ الرَّجُلُ وَلَا يُسْتَشْهَدُ
অর্থ : হযরত ওমর (রাযি.) থেকে বর্ণিত, নবী কারীম সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : উত্তম লোক হলো আমার যুগের লোক অতঃপর এর পরবর্তীগণ অতঃপর এর পরবর্তীগণ, অতঃপর মিথ্যার প্রসার ঘটবে, এমনকি এক ব্যক্তি সাক্ষ্যপ্রধান করবে অথচ তার নিকট সাক্ষ্য চাওয়া হবে না। সুনানে তিরমিজী হাদিস নং ২৩০৩

. সূরা সোয়াদ আয়াত—২৬।
১. সূরা লোকমান আয়াত—১৫।

عَنْ سَالِمٍ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ: ্রرَأَيْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا افْتَتَحَ الصَّلَاةَ يَرْفَعُ يَدَيْهِ حَتّٰى يُحَاذِيَ مَنْكِبَيْهِ، وَإِذَا رَكَعَ، وَإِذَا رَفَعَ رَأْسَهُ مِنَ الرُّكُوعِগ্ধ ، وَزَادَ ابْنُ أَبِي عُمَرَ فِي حَدِيثِهِ: ্রوَكَانَ لَا يَرْفَعُ بَيْنَ السَّجْدَتَيْنِ.
অর্থ : হযরত ছালেম তার পিতা থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেছেন : আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে দেখেছি, তিনি যখন নামাজ শুরু করতেন, যখন রুকু করতেন এবং যখন রুকু থেকে তার মাথা উঠাতেন, তখন দুই হাত কাঁধ পর্যন্ত উঠাতেন। আর দুই সেজদার মাঝখানে হাত উঠাতেন না। (সুনানে ইবনে মাযাহ হাদিস নং ৮৫৮ সহিহ বুখারীসহ অন্যান্য কিতাবেও এই অর্থে হাদিস উল্লেখ রয়েছে)।

عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ مَسْعُودٍ: أَلَا أُصَلِّي بِكُمْ صَلَاةَ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ؟ فَصَلَّى، فَلَمْ يَرْفَعْ يَدَيْهِ إِلَّا فِي أَوَّلِ مَرَّةٍ
অর্থ : হযরত ইবনে মাসউদ (রাযি.) থেকে বর্ণিত : তিনি বলেন আমি কি তোমাদেরকে নিয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেভাবে নামাজ পড়েছেন ঐভাবে নামাজ পড়ব না? অতঃপর তিনি নামাজ পড়লেন, কিন্তু তিনি প্রথমবার (তাকবিরে তাহরিমার সময়) ব্যতীত আর হাত উঠালেন না। সুনানে তিরমিজী হাদিস নং ২৫৭ বাবু রাফয়িল ইদাঈনে ইনদার রুকু।

فالمذهب للمجتهدين سرÑألهمه الله تعالي العلماء و جمعهم عليه من حيث يشعرون أو لا يشعرون (الإنصاف)
অর্থ : ইমামদের মাযহাব মান্য করার মধ্যে রহস্য নিহিত রয়েছে, যা আল্লাহ তায়ালা আলেমদের অন্তরে ঢেলে দিয়েছেন। এবং বোধ—অবোধ ভাবে সমস্ত উম্মাহকে এ ব্যাপারে ঐকম্যত করে দিয়েছেন।

আল্লামা শাহ ওলীউল্লাহ মোহাদ্দেসে দেহলভী (রহ.) এর মাজমুআ রেসালা ওয়াল মাকালাত নামক কিতাবের ৩৮২ নং পৃষ্ঠা থেকে আল ইনসাফ কিতাবে উল্লেখ করেছেন।

. আকদুল জিদ ১৩ পৃ. আল—মাতবায়াতুস্ সালাফিয়্যা, আল—কাহেরা।
. হুজ্জাতুল্লাহিল বালেগা খণ্ড ১ পৃ.৩৪২। দারু ইয়াহইয়াইল উলুমুদ্দীন, লেবানন।
. জামিয়ুল আহাদিস্ লিস্ সুয়ুতী হাদিস নং ৮৭৪ এর ব্যখ্যায় লেখেন:—

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *