কুরআনে কারীমের তিলাওয়াত শ্রবণে রহমত

কুরআনে কারীমের তিলাওয়াত শ্রবণে রহমত

আদাবে কুরআন কুরআন ও সুন্নাহ

কুরআনে কারীমের তিলাওয়াত শ্রবণে রহমত

পবিত্র কুরআনের তিলাওয়াত যেমন রহমতের কারণ, তেমনি তার শ্রবণ দ্বারাও রহমত লাভ হয়ে যায়। যে ব্যক্তি কুরআন মাজীদ পাঠ করে, সে তার পাঠ দ্বারা যে সওয়াব পায়, অনুরূপ সওয়াব শ্রোতার জন্যও রয়েছে। তাছাড়া মনের প্রশান্তি লাভের পক্ষেও কুরআন পাক শ্রবণ এক সাক্ষাত রহমত। পবিত্র কুরআন বলছে—

وَاِذَا قُرِئَ الْقُرْاٰنُ فَاسْتَمِعُوْا لَهٗ وَاَنْصِتُوْا لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُوْنَ

‘যখন কুরআন শরীফ পড়া হয়, তখন তা মনোযোগ দিয়ে কোনো এবং চুপ থাক, যাতে তোমাদের প্রতি রহমত হয়।’ —সূরা আ‘রাফ, আয়াত : ২০৪

এ আয়াতের প্রতি লক্ষ্য করেই বলা হয়ে থাকে, মহান আল্লাহর রহমত সর্বাপেক্ষা বেশি অভিমুখী থাকে সেই ব্যক্তির প্রতি, যে অন্যের মুখে কুরআন মাজীদের তিলাওয়াত শোনে। যে ব্যক্তি মনোযোগ সহকারে কুরআন শরীফের তিলাওয়াত শ্রবন করে, কুরআন তার অন্তরে গভীরভাবে রেখাপাত করে। তাতে তার মন নরম হয়, অন্তর বিগলিত হয়। মনের সেই বিগলন ও কোমলতা আল্লাহভীরু ব্যক্তির অঙ্গ—ছাপিয়ে যায়। সে হয়ে ওঠে কোমলতার এক বাস্তব প্রতিচ্ছবি।

কুরআনে ইরশাদ হয়েছে-

اَللهُ نَزَّلَ اَحْسَنَ الْحَدِيْثِ كِتَابًا مُّتَشَابِهًا مَّثَانِىَ تَقْشَعِرُّ مِنْهُ جُلُوْدُ الَّذِيْنَ يَخْشَوْنَ رَبَّهُمْ ثُمَّ تَلِيْنُ جُلُوْدُهُمْ وَقُلُوْبُهُمْ اِلٰى ذِكْرِ اللهِ

‘আল্লাহ নাযিল করেছেন উত্তম বাণী- এমন এক কিতাব, যার বিষয়বস্তুসমূহ পরস্পর সুসামঞ্জস্য, (যার বক্তব্যসমূহ) পুনরাবৃত্তিকৃত। যারা তাদের প্রতিপালককে ভয় করে এর দ্বারা তাদের শরীরে রোমাঞ্চিত হয়। তারপর তাদের দেহ—মন বিগলিত হয়ে আল্লাহর স্মরণে ঝুঁকে পড়ে। —সূরা যূমার, আয়াত : ২৩

আমরা এ বিগলনের সাক্ষাত পাই হাবশার বাদশাহ নাজ্জাশীর দরবারে। যখন সেখানে হযরত জা‘ফর ইবনে আবু তালিব রাযি. পবিত্র কালাম তিলাওয়াত করে শুনান, রাজাসহ দরবারীগণ তার প্রবল প্রভাবে বিভোর হয়ে ওঠে। খৃষ্টানদের একদল প্রতিনিধির সামনে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন পবিত্র বাণী পাঠ করেন, তখন তাদের উপর তার কী প্রভাব পড়েছিল, কুরআন নিজেই তার সাক্ষ্য দেয়-

وَإِذَا سَمِعُوا مَا أُنْزِلَ إِلَى الرَّسُولِ تَرَى أَعْيُنَهُمْ تَفِيضُ مِنَ الدَّمْعِ مِمَّا عَرَفُوا مِنَ الْحَقِّ يَقُولُونَ رَبَّنَا آَمَنَّا فَاكْتُبْنَا مَعَ الشَّاهِدِينَ () وَمَا لَنَا لَا نُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَمَا جَاءَنَا مِنَ الْحَقِّ وَنَطْمَعُ أَنْ يُدْخِلَنَا رَبُّنَا مَعَ الْقَوْمِ الصَّالِحِينَ

‘এবং রাসূলের প্রতি যে কালাম নাযিল হয়েছে তারা যখন তা শোনে, তখন দেখবে তাদের চোখসমূহকে, তা থেকে অশ্রম্ন প্রবাহিত হচ্ছে, যেহেতু তারা সত্য চিনে ফেলেছে। তারা বলে, হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা ঈমান এনেছি। সুতরাং সাক্ষ্যদাতাদের সাথে আমাদের নামও লিখে নিন। আর আমরা আল্লাহ এবং যে সত্য আমাদের প্রতি নাযিল হয়েছে তাতে কেন ঈমান আনব না, অথচ আমরা প্রত্যাশা করি আমাদের প্রতিপালক আমাদেরকে সৎকর্মশীলদের অন্তভুর্ক্ত করবেন?’ -সূরা মায়িদা, আয়াত : ৮৩—৮৪

প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেও অন্যের মুখে তিলাওয়াত শুনতেন এবং শুনা পছন্দ করতেন। এক রাতে হযরত আবু মুসা আশ‘আরী রাযি. পবিত্র কুরআন তিলাওয়াত করছিলেন। প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গভীর মনোযোগের সাথে তা শোনতে থাকেন। পরেরদিন তিনি হযরত আবু মুসা রাযি.—কে এই বলে উৎসাহ দান করেন যে- لَوْ رَأَيْتَنِىْ وَاَنَا اَسْتَمِعُ لِقِرَائَتِكَ الْبَارِحَةَ

‘গতরাতে আমি তোমার কুরআন তিলাওয়াত শুনছিলাম। তুমি যদি তা দেখতে!’ —মুসলিম শরীফ

একদিন তিনি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাযি.—কে বললেন, আমাকে কুরআন পড়ে শুনাও। হযরত ইবনে মাসউদ রাযি. বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনাকে পড়ে শুনাব, অথচ এ কুরআন আপনার প্রতিই নাযিল হয়েছে! তিনি বললেন, আমি অন্যের মুখে তিলাওয়াত শুনতে ভালোবাসি।

হযরত ইবনে মাসউদ রাযি. বললেন—

فقرأت عليه سورة النساء حتى جئت الى هذه الاية ﴿فَكَيْفَ اِذَا جِئْنَا مِنْ كُلِّ اُمَّةٍ بِشَهِيْدٍ وَّ جِئْنَا بِكَ هٰۤؤُلَاءِ شَهِيْدًا﴾ قال حسبك الان فالتفت اليه فاذا عيناه تذرفان ـ

আমি তাঁর সামনে সূরা নিসা পাঠ করলাম। যখন এ আয়াত পর্যন্ত পৌঁছলাম—

فَكَيْفَ اِذَا جِئْنَا مِنْ كُلِّ اُمَّةٍ بِشَهِيْدٍ وَّ جِئْنَا بِكَ هٰۤؤُلَاءِ شَهِيْدًا

সুতরাং (তারা ভেবে দেখুক)-সেই দিন (তাদের অবস্থা) কেমন হবে, যখন আমি প্রত্যেক উম্মত থেকে একজন সাক্ষী উপস্থিত করব এবং (হে নবী), আমি তোমাকে ঐসব লোকের বিরুদ্ধে সাক্ষীরূপে উপস্থিত করব?’ —সূরা নিসা, আয়াত : ৪১

তখন বললেন, ব্যস, এবার ক্ষান্ত হও। আমি তাঁর দিকে ফিরে তাকালাম। দেখি তাঁর দু’চোখ থেকে অশ্রম্ন ঝড়ছে।’ —বুখারী, মুসলিম

এসব ঘটনা প্রমাণ করে কুরআন শুনার দ্বারা মন নরম হয়। মনের কোমলতা রহমতেরই প্রকাশ। হাদীস শরীফ থেকে জানা যায়, কোমল মন আল্লাহর রহমতের পাত্র। কঠোর প্রাণ রহমত থেকে বঞ্চিত থাকে। সেই বঞ্চনা থেকে বেঁচে থাকার জন্য মনকে নরম করে তোলা অপরিহার্য আর কুরআন মাজীদের তিলাওয়াত শুনা তার অব্যর্থ ঔষধ।

কুরআন মাজীদের আদবসমূহ

পদমর্যাদার মাপকাঠি হলো পবিত্র কুরআন

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বরাবর প্রেরীত চি‌ঠির ব্যাখ্যা PDF ডাউনলোড করতে ক্লিক করুন

আল্লাহর আইন শাশ্বত ও চিরন্তন

মহানবী জগতের আদর্শ মহামানব। ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ

মানব জাতির মুক্তি ও কামিয়াবী সুরাতুল আসরের ৪ মূলনীতির আলোকে ব্যবস্থা গ্রহণ করা আবশ্যক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *