কুরআন মাজীদের মহব্বতে ফুলশয্যা কবর
মুন্সী রহমত আলী একজন সাধারণ শিক্ষিত লোক। সাধারণ পেশার মানুষ হলেও তিনি ধার্মিক। লোকেরা তাকে বুযূর্গ মনে করে। তিনি দেওবন্দ এলাকায় এক অফিসে কর্মচারী পোস্টে কাজ করেন। প্রতিদিন তাকে নানুতা এলাকা অতিক্রম করে দেওবন্দ আসতে হত। একদিনের কাহিনী। তিনি অফিসে যাওয়ার পথে দেখলেন, এক গ্রামে বহু লোকের ভিড়। এত লোকসমাবেশ দেখে মুন্সী রহমত আলীও দাঁড়ালেন। দেখলেন, একটি জানাযার জন্য সকলে অপেক্ষা করছে।
মুন্সী রহমত আলীকে দেখে খুশি হয়ে লোকেরা বলল, আপনি জানাযার নামায পড়ান। রহমত আলী জানাযার ইমামতি করতে প্রস্তুত নন। তিনি বারবার অস্বীকৃতি জানালেন। ইতিমধ্যে মৃতের বাড়ি থেকে সংবাদ এল, মুন্সী রহমত আলী যেন জানাযার নামায পড়ান। মাইয়েত মৃত্যুর পূর্বে ওসিয়্যত করে গেছেন যে, মুন্সী রহমত আলীই তার জানাযার নামায পড়াবেন। সবাই অবাক। তিনি তো ঘটনাক্রমে এখানে এসেছেন।
রহমত আলী যাচ্ছিলেন তার কর্মক্ষেত্র অফিসে। নেকীর প্রতি আগ্রহ তাকে যে কোনো নেক কাজে অংশ গ্রহন করাত। তিনি ভাবলেন, এই জানাযা যার, নিশ্চয় তিনি কোনো মহান ব্যক্তি এবং আল্লাহওয়ালা। সুতরাং কিছু সময় তার সাথে অতিবাহিত করি। হয়ত এটা আমার জন্য সৌভাগ্য বয়ে আনবে। এসব ভাবতে ভাবতে তিনি জানাযার পিছন পিছন কবরের পাশে উপস্থিত হলেন। এবং নিজেই কবরে লাশ রাখার জন্য নামলেন। সুন্নত অনুযায়ী দাফন শেষ করলেন। অবশেষে তিনি অফিসে রওনা হলেন।
কিন্তু ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস। মুন্সী রহমত আলী অফিসের গেটে পেঁৗছে দেখেন, তার অফিসের পরিচয়পত্র নেই। পকেটসহ এদিক—সেদিক ভালোভাবে খুঁজলেন। পেলেনই না।
পরিচয়পত্র না থাকায় তিনি অফিসে ঢুকতে না পেরে ভীষণ চিন্তিত হলেন। কারণ চাকরীর ব্যাপার। তাছাড়া টানাটানির সংসার। চাকরী ছুটে গেলে তিনি বিপদে পড়বেন। তিনি মনে করার চেষ্টা করলেন। বাসা থেকে পরিচয়পত্রটি নিয়েই বের হয়েছিলেন, কিন্তু এখন কেন নেই, তা নিশ্চিত করে মনে করতে পারছেন না। ধারণা করলেন, যখন কবরে লাশ রাখার জন্য নেমেছিলেন তখন সম্ভবত পড়ে গেছে। ধারণা ধীরে ধীরে প্রবল হয়ে উঠল। তিনি কবরস্থানে ফিরে আসলেন। উপস্থিত সকলকে বললেন, ভাইয়েরা! কিছুক্ষণ পূর্বে যে লোকটিকে দাফন করা হয়েছে, তার কবরে আমার অজান্তে একটি মূল্যবান জিনিস অফিসের পরিচয়পত্র পড়ে গেছে। যা অত্যন্ত জরুরী। দয়া করে আমার সঙ্গে আসুন। কবর খুঁড়ে আমি জিনিসটি বের করে নেই।
মুন্সী রহমত আলীর কথা কেউ অমান্য করল না। তিনি ভালো মানুষ হিসাবে পরিচিত এবং তিনিই এই জানাযা নামায পড়িয়েছিলেন এবং কবরে নেমে দাফনের কাজ সম্পন্ন করেছেন। এখন বিশেষ প্রয়োজনে কবর খুলতে চান। উপস্থিত সকলে কবরের চতুর্ষ্পার্শ্বে ভিড় করে দাঁড়াল।
রহমত আলী কবরের মাটি সরালেন। মাটি সরিয়ে তিনি লাশের কাফনের কাছে পেঁৗছে দেখলেন, কবরে ভিতরে গোলাপ ফুলে পরিপূর্ণ। সুবহানাল্লাহ! কবরে গোলাপ ফুল এবং ফুলের ঘ্রাণে তিনি তার পরিচয়পত্রের কথা ভুলে গেলেন। চাকরির গুরুত্বের বিষয়টি আর মনেও এল না। বরং কবর ঠিক করে তিনি সোজা লোকটির পরিবারের কাছে দেঁৗড়ে গেলেন। জিজ্ঞেস করলেন, আম্মাজান! মেহেরবানী করে বলুন! আপনার স্বামীর কী আমল ছিল? তিনি কী আমল করতেন? আমাকে বলুন!
বৃদ্ধা স্ত্রী আজীব কথা বললেন। তিনি বললেন, আমার স্বামী অশিক্ষিত ছিলেন। জেনারেল অক্ষর জ্ঞান এমনকি ধমীর্য় অক্ষর জ্ঞানও তার ছিল না। কিন্তু আল্লাহ তা‘আলার মহব্বত ছিল তার হৃদয়ে ভরপুর। আল্লাহ তা‘আলার কালাম কুরআন শরীফ তিনি পড়তে জানতেন না। শুধু কয়েকটি সূরা তার মুখস্থ ছিল। এছাড়া কোনো শিক্ষা—দীক্ষা তার ছিল না। পবিত্র কুরআন দেখে দেখেও তিনি পড়তে পারতেন না। অথচ কুরআন শরীফের মহব্বত ছিল তার অন্তরে সীমাহীন। কুরআনের ভালোবাসায় ছিল অন্তর পরিপূর্ণ। বিবাহের ৪৫ বছরে তাকে আমি একটি কাজ প্রতিদিন করতে দেখেছি। একদিনও ব্যতিক্রম দেখিনি। প্রতিদিন সকালে তিনি ফজরের নামায পড়ে কুরআন শরীফ নিয়ে বসতেন। কুরআন শরীফ সামনে রাখতেন। অত্যন্ত ভক্তি ও সম্মানের সাথে কুরআন শরীফ খুলতেন এবং কুরআন শরীফের লাইনগুলোর উপর আঙ্গুল রেখে লাইন বরাবর সামনে বাড়াতেন আর বলতেন, হে আল্লাহ! তুমি এটাও সত্য বলেছ। তুমি এটাও সত্য বলেছ। তুমি এটাও সত্য বলেছ। তুমি এটাও সত্য বলেছ।
পদমর্যাদার মাপকাঠি হলো পবিত্র কুরআন
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বরাবর প্রেরীত চিঠির ব্যাখ্যা PDF ডাউনলোড করতে ক্লিক করুন
মহানবী জগতের আদর্শ মহামানব। ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ
মানব জাতির মুক্তি ও কামিয়াবী সুরাতুল আসরের ৪ মূলনীতির আলোকে ব্যবস্থা গ্রহণ করা আবশ্যক