কুরআন মাজীদ

কুরআন মাজীদ শিক্ষার প্রচার-প্রসারে মাদরাসা দাওয়াতুল হক দেওনার বহুমুখি কর্মসূচি

ইতিহাস ও জীবনী ইসলাম প্রতিদিন প্রবন্ধ

কুরআন মাজীদ শিক্ষার প্রচার-প্রসারে মাদরাসা দাওয়াতুল হক দেওনার বহুমুখি কর্মসূচি

মুহিউস সুন্নাহ হযরত মাওলানা শাহ আবরারুল হক হারদুঈ রহ. এর বিশিষ্ট খলীফা হযরত মাওলানা মুফতী মুহাম্মদ উবাইদুল্লাহ হাফিজাহুল্লাহ বিগত ১৯/০২/২০১০ ঈসায়ী সনে মাদরাসা দাওয়াতুল হক, দেওনার বার্ষিক মাহফিলে এসে সকাল বেলা মাদরাসায় পায়চারী করতে করতে বলেছিলেন ‘‘আল্লাহ তাআলা কিছু দিনের মধ্যে দেওনার জন্য মানুষকে দেওয়ানা করে দিবেন।’’ আল্লাহ তা‘আলা মুফতী সাহেবের এ কথাকে আজ বাস্তবে রূপ দিয়েছেন। তাই দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে সর্বস্তরের মানুষ আত্নার পরিশুদ্ধির জন্য মাদরাসা দাওয়াতুল হক দেওনায় ছুটে আসছে। সকলের চেহারা যেন সাক্ষ্য দিচ্ছে, তারা আজ হেদায়েতের মারকায খুজে পেয়েছে। বাস্তবেই এ মাদরাসায় না এসে কেউ এ মাদরাসা সম্পর্কে ধারণা অর্জন করতে পারবে না। এ মাদরাসায় প্রবেশের সাথে সাথে সুন্নাতে নববীর পরশে মনের মধ্যে এক ধরণের নুরাণী আভার স্বাধ অনুভুত হয়। সুন্নাতে নববীর বেমিছাল এ মারকায তার কার্যক্রম চার দেয়ালের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখেনি। মানুষের জিন্দেগীকে কিভাবে বন্দেগীতে পরিণত করা যায়? এ ফিকিরে সর্বদা ব্যাকুল থাকেন এ মাদরাসার মহাপরিচালক, মুহিউস সুন্নাহ হারদুঈ রহ. এর বিশিষ্ট খলীফা খাদেমুস সুন্নাহ অধ্যক্ষ মুহাম্মদ মিজানুর রহমান চৌধুরী হাফিজাহুল্লাহ। যার অক্লান্ত মেহনত ও সাধনার ফলে এ মাদরাসা আজ দীনের বহুমূখী কার্যক্রমের মারকাযে পরিণত হয়েছে। হযরতওয়ালা হাফিজাহুল্লাহ এর চিন্তা চেতনা কোন এক কেন্দ্রিক নয়। সর্ব বিষয়ে সর্বদিকেই রয়েছে তার তীক্ষ্ন নজরদারী। আমার দেখা এক দিনের ঘটনার দ্বারাই এর কিঞ্চিত নমুনা আঁচ করা যায়।

গত ১৯ রমযান যোহরের নামাযে দাড়ালে পশ্চিম দেয়ালের সাথে অগোছালোভাবে রাখা কুরআনে কারীমের রেহালগুলোর প্রতি হযরত ওয়ালা হাফিজাহুল্লাহ এর নজর পড়লে হযরতের চেহারা মুবারক বিবর্ণ হয়ে যায়। নামাযের পর হযরতওয়ালা উপস্থিত সকলকে লক্ষ করে বললেন ‘‘আপনারা কেউ কুরআনে মাজীদের যের যবর শিখছেন, কেউ হরফ মশ্ক করছেন, কেউ কারী হয়েছেন, কেউ আলেম হয়েছেন। কিন্তু মনে রাখতে হবে কুরআন মাজীদের আযমত ও মহব্বত অন্তরে না থাকলে এগুলো কোন কাজে আসবে না। কুরআনের আসন হচ্ছে রেহাল, রেহালগুলোর বেহাল অবস্থা হলে কুরআনের প্রতিই অসম্মান প্রদর্শণ করা হয়। কুরআনের প্রতি আযমত ও মহব্বত আমাদের অন্তরে না থাকাতেই আমরা আজ অবহেলিত ও দূর্দশাগ্রস্থ। নিজে ক্বারী সাহেব, মৌলভী সাহেব হয়ে বসে থাকলে মানুষ সম্মান করবে না; বরং সম্মান পেতে হলে সর্বসাধারণের ভিতরে কুরআনের আযমত ও মহব্বত সৃষ্টি করতে হবে। সকল মুসলমানকে কুরআন তিলাওয়াত শিখানোর পদক্ষেপ নিতে হবে। তাহলেই লোকেরা কুরআনের ধারক বাহকদেরকে ইয্যত করতে শিখবে। মসজিদে তিলাওয়াত করা একটি সতন্ত্র সুন্নাত। আফসুস! আজ মসজিদে তিলাওয়াতের পরিবেশ খুব কমই নজরে পড়ে। মসজিদে কুরআনে কারীম পরিত্যক্ত অবস্থায় থাকে। কোথাওবা তালাবদ্ধ অবস্থায় আছে আর কোথাও বা অযত্নে অবহেলায় গিলাফ বিহীন পড়ে আছে। মসজিদ মাদরাসাগুলো হলো দ্বীনের পাওয়ার হাউজ। মসজিদ মাদরাসা সমূহে যদি তিলাওয়াতের আমল থাকতো তাহলে সর্ব সাধারণের মধ্যে এর গুরুত্ব থাকতো। আজ কুরআন মাজীদের আয়াত যত্রতত্র ব্যবহার করা হচ্ছে। পোষ্টারে, দাওয়াতকার্ডে, প্রচারপত্রে সর্বত্র বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম লিখা হয় এবং এগুলো রাস্তাঘাট সহ যত্রতত্র পড়ে থাকে, অথচ তা কুরআনের একটি আয়াত। এ বিষয়ে অনেক মৌলবী সাহেবরাও গাফেল।

আজ কাল মাদরাসার মুদাররিসগণ পড়ানোকেই নিজেদের দায়িত্ব মনে করেন। কিন্তু দরসের মধ্যেই নিজেদেরকে সীমাবদ্ধ রাখলে মাদরাসা চলে না। তালীমের পাশাপাশি তরবিয়ত না থাকলে ছাত্রদের আমলী জিন্দেগী গঠন হয় না। দাওয়াতুল মাদরাসা তালীম ও তরবিয়তের একটি প্রকৃষ্ট উদাহরণ। পরিবারের একজন অভিভাবক যেভাবে সকল কাজের তদারকি করেন তদ্রুপ একজন উস্তাদও মাদ্রাসার অভিভাবক, তাই সব বিষয়ে তার খেয়াল থাকতে হবে।

আজকাল মানুষ নিজের ছেলেকে মাদ্রাসায় ভর্তি করে হাফেয, আলেম বানায় কিন্তু নিজে নামায পড়ে না, দাঁড়ি রাখে না, পর্দা করে না, ঘরে টেলিভিশন, ভি. সি. আর. রাখে অথচ এ ব্যাপারে খুব কম মাদরসাওয়ালারাই ফিকির করে। একজন ছাত্র যখন তার ঘরের পরিবেশকেই দ্বীনের প্রতিকুল পায় তখন সে কিভাবে দ্বীনদার হবে? এজন্য আমাদের মাদরাসায় ছাত্র ভর্তির সময় অভিভাবকের উপস্থিতি বাধ্যতামূলক করেছি। আমি তো বলি আমরা শুধু ছাত্রকেই ভর্তি করি না, অভিভাবককেও ভর্তি করি। আলহামদুলিল্লাহ এ বৎসর এ পর্যন্ত ৭০/৮০ জন অভিভাবক নিয়মিত নামায পড়া ও সুন্নাত পরিমাণ দাঁড়ি রাখা সহ সুন্নাতী জিন্দেগী পালনের ওয়াদা করেছেন।’’

শাইখে দেওনার মতো প্রত্যেক মাদরাসা কর্তৃপক্ষ, মসজিদের আইম্মায়ে কিরাম যদি উম্মতের এ দরদ ও ফিকির নিয়ে কাজ করেন তাহলে আশা করা যায় পথহারা এ উম্মত আবার পথের দিশা পাবে।

আমাদের মাদরাসায় যেসকল কার্যক্রম নিয়মিত পরিচালিত হয় তম্মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু বিষয় নিম্নে তুলে ধরা হলো-

১. মাদরাসার ছাত্র ও উস্তাদগণকে দীনের জিম্মদার হিসেবে গড়ে তোলা।

এ মাদরাসার একজন ছাত্র পড়ালেখাকেই তার দায়িত্ব মনে করে না; বরং পড়ালেখার সাথে সাথে নিজেকে ও নিজের চার পাশকে পরিচ্ছন্ন রাখা, খিদমাতে খালকে নিজেকে নিয়োজিত করা, নিজের মাকাম সম্পর্কে সচেতন থাকার পাশাপাশি সুন্নতি জিন্দেগী বানানোর প্রচেষ্টায় লিপ্ত থাকে। উস্তাদগণ শুধু পাঠদানের মধ্যে নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখেন না; বরং মাদরাসার সকল কাজে অংশ গ্রহণের পাশাপাশি নিজের ও উম্মতের ইসলাহের জন্য কাজ করেন।

২. বিভিন্ন মহল্লায় নুরাণী মাদরাসা ও সাবাহী মক্তব প্রতিষ্ঠা করা।

সাবাহী মক্তব হচ্ছে শিশুদের দ্বীনী শিক্ষার মূল বুনিয়াদ। তাই দাওয়াতুল হক মাদরাসার তত্তাবধানে আশপাশের বিভিন্ন মহল্লায় ইমাম নিয়োগ এবং সাবাহী মক্তব পরিচালনা করা হয়। এ মাদরাসার অধীনে কয়েকটি শাখা মাদরাসা রয়েছে।

৩. বিভিন্ন মহল্লায় বয়স্ক কুরআন শিক্ষা কোর্স চালু করা।

বিভিন্ন মহল্লায় বয়স্ক লোকদের নিয়ে ৩০/৪০ দিনের কুরআন শিক্ষা কোর্স চালানো হয়। এ কোর্স সমুহের উস্তাদগণ মাদরাসায় থাকেন এবং মাদরাসার পক্ষ থেকে তাদের যাবতীয় সুবিধাদী প্রদান করা হয়।

৪. এসএসসি/ দাখিল এবং এইচ, এস, সি/ আলিম পরীক্ষা সমাপনকারী ছাত্রদের জন্য কুরআন শিক্ষা কোর্স।

এসএসসি/ দাখিল এবং এইচ,এস,সি/ আলিম পরীক্ষা সমাপনকারী ছাত্রদের জন্য ৩০ দিন ব্যাপি কুরআন শিক্ষা কোর্স রয়েছে। এতে ইংলিশ মিডিয়াম ও এন, জিও মিশনারীদের চক্রান্তের কবলে পড়ে যেসব শিক্ষার্থীরা শিশুকালে কুরআন শিক্ষা থেকে বঞ্চিত ছিল তাদের জন্য কুরআন শিক্ষার এক মহা সুযোগ সৃষ্টি হয়। এছাড়া যখনই কোন লোক ১/২ দিন থাকার জন্য দেওনা মাদরাসায় আসে তখনই তাকে কুরআন সহীহ করার জন্য ক্বারী সাহেবদের নিকট পাঠিয়ে দেয়া হয়, চাই তিনি আলেম হন বা সাধারণ ব্যক্তি হন। কুরআনের সার্বক্ষনিক তালীম এ যেন আসহাবে সুফ্ফার এক প্রতিচ্ছবি।

৫. প্রতি রমযান মাসে মাদরাসায় বিভিন্ন স্তরের কুরআন শিক্ষা কোর্স।

সকল মানুষের মাঝে কুরআনের আযমত ও মহব্বত সৃষ্টির জন্য প্রতি রমযান মাসে মাদরাসায় বয়স্ক কুরআন শিক্ষা কোর্স, এবং আলেম ও মাদরাসা ছাত্রদের জন্য বিশেষ কেরাত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়, যাতে সকলেই সহীহভাবে কুরআন শিক্ষা করতে পারে।

উক্ত বিশেষ কোর্স পরিচালনা করেন দারুল উলূম দেওবন্দের সাবেক প্রধান ক্বারী শাইখুল কুররা আল্লামা আবুল হাসান আজমী হাফিজাহুল্লাহ এবং দারুল উলূম দেওবন্দের বর্তমান প্রধান ক্বারী হযরত মাওলানা ক্বারী সাইয়্যিদ ইরশাদ হাফিজাহুল্লাহ। প্রতি বৎসর ২৫ শাবান থেকে ২৫ রমযান পর্যন্ত এই বিশেষ কোর্সটি পরিচালিত হয়।

৬. সার্বক্ষনিক ইসলাহী ও তরবিয়তি কার্যক্রম।

মানুষের ইসলাহের (আত্নশুদ্ধি) জন্য এখানে সার্বক্ষনিক খানকাহী নেযাম রয়েছে। আত্নশুদ্ধির উদ্দেশ্যে যে কেউ এখানে আসলে তার থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয় এবং ইসলাহের জন্য ইসলাহী মুরব্বী নিয়োজিত থাকেন।

৭. দাওয়াত ও তাবলীগ।

সর্বসাধারণের মধ্যে দ্বীনের দাওয়াতের জন্য পার্শ্ববর্তী মহল্লায় সাপ্তাহিক গাশ্ত,বিভিন্ন ছুটিতে ২৪ঘন্টা/৩দিনের জন্য জামাত পাঠানো হয়।

৮. মেয়েদের দ্বীনী শিক্ষার ব্যবস্থা।

মাদরাসার তত্বাবধানে অনাবাসিক বালিকা মাদরাসার কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এছাড়াও দীনের প্রচার ও প্রসারে আরও নানাবিধ কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।

দেশের প্রতিটি মাদরাসাকে এভাবে দ্বীনের একেকটি মারকায হিসেবে গড়ে তুলতে পারলে ইনশাআল্লাহ আমাদের সমাজের অবস্থা পরিবর্তন ও শান্তিময় সমাজ প্রতিষ্ঠা হবে বলে আশা করি। আল্লাহ আমাদের সহায় হোন।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বরাবর প্রেরীত চি‌ঠির ব্যাখ্যা PDF ডাউনলোড করতে ক্লিক করুন

আল্লাহর আইন শাশ্বত ও চিরন্তন

মহানবী জগতের আদর্শ মহামানব। ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ

মানব জাতির মুক্তি ও কামিয়াবী সুরাতুল আসরের ৪ মূলনীতির আলোকে ব্যবস্থা গ্রহণ করা আবশ্যক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *