কুরআন মাজীদ শিক্ষা করা ও শিক্ষা দেওয়ার ফযীলত
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
خَيْرُكُمْ مَنْ تَعَلَّمَ الْقُرْاٰنَ وَعَلَّمَهٗ
‘যে কুরআন শরীফ শিক্ষা করে এবং শিক্ষা দেয় সে—ই তোমাদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা শ্রেষ্ঠ।’ বুখারী শরীফ
মুসলিম শরীফে আছে-
اَفَلَا يَغْدُوْا اَحَدُكُمْ اِلٰى الْمَسْجِدِ فَيَتَعَلَّمُ مِنْ كِتَابِ اللهِ اٰيَتَيْنِ خَيْرٌ لَّهُ مِنْ نَاقَتَيْنِ وَثَلَاثٌ خَيْرٌلَّهُ مِنْ ثَلِاثٍ وَاَرْبَعٌ خَيْرٌلَّهُ مِنْ اَرْبَعٍ وَمِنْ اَعْدَادِهِنَّ مِنَ الْاِبِلِ
‘তোমাদের মধ্যে কেউ মসজিদে গিয়ে পবিত্র কুরআনের দুইটি আয়াত কেন শিক্ষা লাভ করে লয় না? পবিত্র কুরআনের দুইটি আয়াত শিক্ষা করা দুইটি উট অপেক্ষা অধিক ভাল। এইরূপে তিনটি আয়াত তিনটি উট অপেক্ষা এবং চারটি আয়াত চারটি উট অপেক্ষা অধিক ভাল। এমনিভাবে যত সংখ্যক আয়াত হবে, তত সংখ্যক উট হতে তা অধিক ভাল।’
কুরআন শরীফের আয়াত উট অপেক্ষা অধিক ভাল, ইহা বুঝতে বেশী কিছু চিন্তার দরকার হয় না। কারণ, উট তো একমাত্র দুনিয়াতেই কাজে আসে, আর কুরআনের আয়াত দুনিয়া ও আখেরাত দু—জাহানে কাজে আসে। এখানে উটকে উদাহরণ স্বরূপ বর্ণনা করা হয়েছে। কেননা, আরব দেশের লোকেরা উটকেই বড় সম্পত্তি মনে করে, নতুবা একটি আয়াতের পরিবর্তে সমগ্র বিশ্বেরও কোনো মূল্য হয় না।
এই হাদীস পাক দ্বারা এই উপদেশ লাভ করা যায় যে, সমস্ত কুরআন শরীফ না পড়তে পারলেও যতটুকু পড়–ক না কেন ততটুকুতেই বড় ফযীলত ও অতি বড় নেয়ামত। হাদীস শরীফে আছে-
اَلْمَاهِرُ بِالْقُرْاٰنِ مَعَ السَّفَرَةِ الْكِرَامِ الْبَرَرَةِ وَالَّذِىْ يَقْرَأُ الْقُرْاٰنَ وَيَتَتَعْتَعُ وَهُوَ عَلَيْهِ شَاقٌّ لَّهٗ اَجْرَانِ
‘যে ব্যক্তি স্পষ্টভাবে অনায়াসে কুরআন শরীফ পড়তে পারে সে ব্যক্তি ঐ সমস্ত ফেরেশতাদের সঙ্গী হবে, যাঁরা বড়ই পবিত্র, বড়ই সম্মানী এবং যারা লোকের আমলনামা লিখেন। আর যে ব্যক্তি কুরআন শরীফ পড়ে, কিন্তু মুখে আটকে আটকে পড়ে এবং বড়ই কঠিন বোধ করে, সে—ও দ্বিগুণ সওয়াব পাবে।’ দ্বিগুণ সওয়াবের কারণ এই যে, শুধু পাঠ করার জন্য এক সওয়াব পাবে, আর পড়ার সময় কষ্টের কারণে যে বিরক্ত হয়ে পড়া ক্ষান্ত না করে পড়তে থাকে, তজ্জন্য আর একটি সওয়াব পাবে। —বুখারী শরীফ
যে ব্যক্তি কুরআন শরীফ ভালমত পাঠ করতে না পারা সত্ত্বেও বিরক্ত হয়ে পাঠ ছেড়ে দেয় না, তার জন্য এই হাদীস কত বড় খোশখবরী (সুসংবাদ) দেওয়া হয়েছে যে, তাকে দ্বিগুণ সওয়াব দেওয়া হবে। অন্য হাদীসে আছে-
اِنَّ الَّذِىْ لَيْسَ فِىْ جَوْفِه شَىْءٌ مِّنَ الْقُرْاٰنَ كَالْبَيْتِ الْخَرِبِ
‘যার সিনার মধ্যে (অন্তরে) একটুও কুরআন নাই, সে যেন একটি বিধ্বস্থ ঘর।’ —তিরমিযী শরীফ
কোনো মুসলমানের অন্তরই কুরআন শূন্য থাকা চাই না। হাদীস শরীফে আছে—
مَنْ قَرَأَ مِنْ كِتَابِ اللهِ فَلَهٗ بِهِ حَسَنَةٌ وَالْحَسَنَةُ بِعَشْرِ اَمْثَالِهَا لَا اَقُوْلُ الۤمۤ حَرْفٌ بَلْ اَلِفٌ حَرْفٌ وَلَامٌ حَرْفٌ وَمِيْمٌ حَرْفٌ
‘যে ব্যক্তি (আল্লাহর কিতাব) কুরআন শরীফের একটি হরফ পড়ে, সে একটি নেকি পায়, আর প্রত্যেক নেকি দশ নেকির সমান (এই হিসাবে প্রত্যেক হরফে দশ নেকি করে পাওয়া যায়)। আমি এ কথা বলি না যে, ‘আলিফ—লাম—মীম’ এক হরফ; বরং ‘আলিফ’ এক হরফ, ‘লাম’ এক হরফ এবং ‘মীম’ এক হরফ।’ —তিরমিযী শরীফ
এর দৃষ্টান্ত এই যে, যদি কেউ ‘আলহামদু’ পড়ে, তবে এর পাঁচটি হরফে পঞ্চাশ নেক পাবে। আল্লাহু আকবার! কত বড় ফযীলত। সুতরাং সামান্য একটু কষ্ট ও পরিশ্রম স্বীকার করে যে এত বড় ফযীলত হাসিল না করবে, তার উপর বড়ই আক্ষেপ।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
مَنْ قَرَأَ الْقُرْاٰنَ وَعَمِلَ بِمَا فِيْهِ اُلْبِسَ وَالِدَاهٗ تَاجًا يَوْمَ الْقِيَامَةِ ضَوْءُهٗ اَحْسَنُ مِنْ ضَوْءِ الشَّمْسِ فِىْ بُيُوْتِ الدُّنْيَا لَوْ كَانَتْ فِيْكُمْ فَمَاظَنُّكُمْ بِالَّذِىْ عَمِلَ بِهٰذَا
‘যে ব্যক্তি কুরআন শরীফ পড়েছে এবং উহার হুকুমের উপর আমল করেছে, তার মাতা—পিতাকে কিয়ামতের দিন এমন একটি তাজ (মুকুট) পরান হবে, যার আলোক সূর্যের আলোক হতে অধিকতর উজ্জ্বল হবে। যে আলোক দুনিয়াতে যে সূর্য যখন তোমাদের মধ্যে আসে, তখন তোমাদের ঘরের মধ্যে হয় অর্থাৎ, সূর্য যখন কাছে আসে, তখন তোমাদের ঘরের মধ্যে কত আলো হয়, সেই তাজের আলো ইহা অপেক্ষাও অধিক হবে। যখন মাতা—পিতার এত বড় মর্তবা হবে, তখন যে ব্যক্তি স্বয়ং কুরআন শরীফ পড়বে ও তদনুযায়ী আমল করবে, তার সম্বন্ধে তোমাদের কি ধারণা? অর্থাৎ, তার মর্তবা অসীম ও অতুলনীয়।’
ছেলে—মেয়েদেরকে যদি সময়াভাবে সম্পূর্ণ কুরআন শরীফ শিক্ষা না—ও দেওয়া যায়, তবে (পারা বা সূরা) যতটুকু হোক না কেন, তাই শিক্ষা দেওয়া নেহায়েত দরকার। যদি হিফয করতে পারে, তবে তো অফুরন্ত ফযীলত।
অনেক মুসলমান নিজের সন্তানকে দ্বীনি শিক্ষার পরিবর্তে জাগতিক শিক্ষা দেওয়াটা অধিক গুরুত্ব ও গৌরবের বিষয় মনে করে। শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে কুরআন সহীহ—শুদ্ধতার প্রতি লক্ষ্য করা হয় না, একই সাথে পবিত্র কুরআনের প্রতি আদবের শিক্ষার বিষয়টিও গুরুত্বহীন।
বর্তমানে মুসলমানদের ঘর ও মসজিদ তিলাওয়াত শূন্য হয়ে গেছে। গুনাহের আসবাব দ্বারা ঘর, দোকান—পাট ভরে গেছে। একসময় মুসলমানদের ঘর—বাড়ি থেকে কুরআন তিলাওয়াতের আওয়াজ আসত। সেখান থেকে এখন আসছে গান—বাদ্যের আওয়াজ। ব্যবসা—বাণিজ্যের উন্নতি ও বরকতের জন্য কুরআন মাজীদের তিলাওয়াত করা হতো। এখন দোকান—পাটে টি.ভি. ও ভি. সি.ডি. এবং বাদ্য—বাজনার মাধ্যমে উন্নতি কামনা করা হয়। মসজিদে কুরআন মাজীদ থাকলে তা তালাবদ্ধ আলমারিতে রাখা হয়। অনেক স্থানে শুধু ব্যবস্থাপনার কারণে তিলাওয়াতের সুযোগ হয় না। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়, মসজিদে বা ঘরে কুরআনকে ধরা ছোঁয়ার কেউ নেই। অথচ মসজিদে কুরআন তিলাওয়াতের ফযীলত সম্পর্কে হযরত উকবা ইবনে আমের রাযি. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা মসজিদে নববীর সুফ্ফায় বসা ছিলাম, এমন সময় নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাশরীফ আনলেন এবং বললেন, তোমাদের মধ্যে কে ইহা পছন্দ কর যে, সকাল বেলা বুতহান বা আকীক নামক বাজারে যেয়ে কোনো রকম গোনাহ ও আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন না করে দু’টি অতি উত্তম উটনী নিয়ে আসবে? সাহাবায়ে কেরাম রাযি. আরয করলেন, ইহা তো আমাদের সকলেই পছন্দ করবে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, মসজিদে গিয়ে দু’টি আয়াত পড়া বা দু’টি আয়াত শিক্ষা দেওয়া দু’টি উটনী হতে এবং তিনটি আয়াত তিনটি উটনী হতে এমনিভাবে চারটি আয়াত চারটি উটনী হতে উত্তম এবং ঐগুলোর সমপরিমাণ উট হতে উত্তম। —মুসলিম, আবু দাউদ
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
مَنْ قَرَأَ الْقُرْاٰنَ فَاسْتَظْهَرَهٗ فَاَحَلَّ حَلَالَهٗ وَحَرَّمَ حَرَامَهٗ اَدْخَلَهُ اللهُ الْجَنَّةَ وَشَفَّعَهُ فِىْ عَشَرَةٍ مِّنْ اَهْلِ بَيْتِهِ كُلُّهُمْ قَدْ وَجَبَتْ لَهٗ النَّارَ
‘যে ব্যক্তি কুরআন শরীফ পড়বে এবং তা হিফয করবে এবং তার হালালকৃতকে হালাল ও হারামকৃতকে হারাম জেনে চলবে, (অর্থাৎ, কুরআনের খেলাফ যেন কোনো আকীদা না হয়। উপরে আমলের কথা বলা হয়েছিল, এখানে আকীদার কথা বলা হলো।) আল্লাহ পাক তাকে বেহেশতে স্থান দিবেন এবং তার আত্মীয়বর্গের মধ্য হতে দশজন লোকের জন্য তার সুপারিশ গ্রহণ করবেন যাদের জন্য দোযখ সাব্যস্ত হয়েছিল।’ —তিরমিযী
এই হাদীসে কুরআন শরীফ হিফয করার ফযীলত আরো বেশী বর্ণনা করা হয়েছে। আর আত্মীয়—স্বজনের মধ্যে সর্বাপেক্ষা নিকটবর্তী মা—বাবা। অতএব, মা বাবার জন্য যে সুপারিশ ও বখশিশ হবে, তাতে কোনোই সন্দেহ নাই। নিজের ছেলেকে হাফেয বানাবে যে কত বড় ফযীলত তা এই হাদীস শরীফ দ্বারা প্রমাণিত হয়।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
اِنَّ هٰذِهِ الْقُلُوْبَ تَصْدَءُ كَمَا يَصْدَءُ الْحَدِيْدُ اِذَا اَصَابَهُ الْمَاءُ قِيْلَ يَا رَسُوْلَ اللهِ! وَمَا جِلَائُهَا؟ قَالَ كَثْرَةُ ذِكْرِ الْمَوْتِ وَتِلَاوَةِ الْقُرْاٰنِ
‘পানি লাগলে লোহায় যেরূপ মরিচা ধরে, সেই রকম মানুষের দিলেও মরিচা ধরে। (মজলিস হতে) আরয করা হলো, হে আল্লাহর রাসূল! সেই জিনিস কি যা দ্বারা দিলকে সাফ করা যায়? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উত্তর দিলেন, মৃত্যুকে বেশী স্মরণ করলে এবং কুরআন শরীফ পড়তে থাকলে। (দিল সাফ থাকে, মরিচা ধরে না)।’ —বায়হাকী
وَعَنْ جَابِرٍ قَالَ خَرَجَ عَلَيْنَا رَسُوْلُ اللهِ ﷺ وَنَحْنُ نَقْرَأُ الْقُرْاٰنَ وَفِيْنَا الْعَرَبِىُّ وَالْعَجَمِىُّ فَقَالَ اقْرَؤُوْا فَكُلٌّ حَسَنٌ
‘হযরত জাবের রাযি. হতে বর্ণিত আছে যে, একবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের নিকট এমতাবস্থায় তাশরীফ আনলেন, যখন আমরা কুরআন শরীফ পাঠ করছিলাম, তখন আমাদের মধ্যে পাড়াগাঁয়ের লোকও ছিল। (আমাদের মধ্যে কেউ কেউ আরবী লোক ছিল, তারা কুরআন শরীফ শুদ্ধভাবে পড়তে পারত, আর কয়েকজন পাড়াগাঁয়ের লোকও ছিল, যারা শুদ্ধভাবে কুরআন শরীফ পড়তে পারত না।) হযরত সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, পড়তে থাক, সবই ভাল।’ —সুনানে আবু দাউদ, বায়হাকী
অর্থাৎ চেষ্টা করতে থাক যদি তা সত্ত্বেও ভালো পড়তে না পার তাতে মন ছোট করো না, আর যারা ভালো পড়তে পারে, তারা যেন তোমাদেরকে ঘৃণা না করে। (আল্লাহ তা‘আলা দিল দেখেন।) একথা দ্বারা বুঝা গেল যে, ‘জবান (মুখ) সাফ নয় বা বয়স বেশি হয়ে গিয়েছে, এমতাবস্থায় সহীহ করে (শুদ্ধ করে) পড়তে পারা যাবে না, সুতরাং সওয়াব কি হবে? বরং গোনাহ হওয়ার সম্ভাবনা আছে।’ এমন মনে করা উচিত নয়। বরং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সকলকে সান্তনা দিয়ে পড়তে উৎসাহিত করলেন।
মিশকাত শরীফে আছে-
مَنِ اسْتَمَعَ اِلٰى اٰيَةٍ مِنْ كِتَابِ اللهِ كَتَبَتْ لَهٗ حَسَنَةٌ مُّضَاعَفَةٌ وَمَنْ تَلَاهَا كَانَتْ لَهٗ نُوْرًا يَّوْمَ الْقِيَامَةِ
‘যে ব্যক্তি কুরআন শরীফের একটি আয়াত শুনার জন্যও কান লাগাবে অর্থাৎ মনোযোগের সাথে শুনবে, তাকে এমন একটি নেকি (পুণ্য) দেওয়া হবে, যা সর্বদা বৃদ্ধি পেতে থাকবে। (কতদূর যে বাড়বে তার কোনো সীমা নির্দেশ করেন নাই। অতএব, আল্লাহ তা‘আলার রহমতের দরবারে আশা করা যায় যে, ইহা ধারণাতীত বাড়বে।) আর যে ব্যক্তি সে আয়াতটি পাঠ করবে, তার জন্য সেই আয়াতটি কিয়ামতের দিবসে একটি উজ্জ্বল নূর হবে।’ —আহমদ
কুরআন শরীফ কত বরকতের জিনিস। যদি নিজে পড়তে না পারে, তবে কোনো কুরআন পাঠকের পড়ার দিকে কান লাগিয়ে শুনলেও বিশেষ সওয়াব পাওয়া যায়। হে আল্লাহর বান্দা! ইহা তো কিছুই কঠিন নয়। (এখনও জাগ, আখেরাতের জন্য একটু চিন্তা কর, অলস নিদ্রা পরিত্যাগ কর, আর ঘুমে বিভোর থেকো না।)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন—
اِقْرَؤُوْا الْقُرْاٰنَ فَاِنَّهٗ يَأْتِىْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ شَفِيْعًا لِّاَصْحَابِه
‘(হে আমার উম্মতগণ!) তোমরা কুরআন শরীফ সর্বদা তিলাওয়াত করতে থাক; কেননা যারা কুরআন শরীফ সর্বদা তিলাওয়াত করবে, কিয়ামতের দিন কুরআন শরীফ তাদের জন্য সুপারিশ করবে (তাদেরকে দোযখ হতে বাঁচিয়ে দিবে)।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেছেন-
يَجِيْئُ صَاحِبُ الْقُرْاٰنِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فَيَقُوْلُ الْقُرْاٰنُ يَارَبِّ حَلِّه فَيُلْبَسُ تَاجُ الْكَرَامَةِ ثُمَّ يَقُوْلُ يَا رَبِّ زِدْهُ فَيُلْبَسُ حُلَّةُ الْكَرَامَةِ ثُمَّ يَقُوْلُ يَارَبِّ اِرْضَ عَنْهٗ فَيُرْضٰى عَنْهُ فَيُقَالُ اِقْرَأْ وَارْقَ وَيَزْدَادُ بِكُلِّ اٰيَةٍ حَسَنَةٌ
কুরআন শরীফ পাঠকারীগণ কিয়ামতের দিবসে যখন আল্লাহর দরবারে আসবে, তখন কুরআন শরীফ বলবে, ‘হে আল্লাহ! তাদেরকে সম্মানের লেবাস পরিধান করান। অতঃপর তাদেরকে বড় সম্মানের তাজ পরান হবে। অতঃপর কুরআন শরীফ পুনরায় বলবে, ‘হে আল্লাহ! তাদেরকে আরো দিন।’ তখন তাদেরকে আরো সম্মানের লেবাস পরান হবে। পুনরায় কুরআন শরীফ বলবে, ‘হে আল্লাহ! আপনি তাদের উপর চিরকালের জন্য সন্তুষ্ট হয়ে যান।’ অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা তাদের উপর চিরকালের জন্য সন্তুষ্ট হয়ে যাবেন এবং বলবেন : ‘কুরআন শরীফের এক একটি আয়াত পাঠ করো এবং এক একটি উচ্চ দর্জায় আরোহণ করতে থাক।’ —তিরমিযী শরীফ
অন্য এক হাদীসে এই পড়া এবং উপরের দর্জায় চড়ার বিস্তৃত বর্ণনা এসেছে। যা এরূপ : ‘যে ভাবে দুনিয়াতে তারতীলের সাথে পড়তে সেই রকম পড়তে ও চড়তে থাকো; যে আয়াতে গিয়ে তোমার পড়া শেষ হবে সেখানেই তোমার থাকার স্থান।’
হে মুসলমানগণ! এই সকল হাদীস খুব চিন্তার সাথে পাঠ করুন। কুরআন শরীফ অমূল্য রত্ন, যত্নের সাথে শিক্ষা লাভ করুন এবং নিজের ছেলে—মেয়েদেরকেও শিক্ষা দিতে চেষ্টা করুন। যদি সহীহ করে পড়তে না পারা যায়, তবে ঘাবরানোর কোনো কারণ নাই। চেষ্টা করতে থাকলেও বহু সওয়াব পাওয়া যাবে। যদি হিফয (কণ্ঠস্থ) না হয়, তবে দেখে দেখে পড়তে ও পড়াতে থাকবে। তাতে অনেক ফযীলত হাসিল হবে। যদি সম্পূর্ণ কুরআন শরীফ পাঠ শিক্ষা লাভ করার সময় ও সুযোগ না ঘটে, তবে যারা সম্পূর্ণ কুরআন শিক্ষা লাভ করেছেন তাদের কাছে বসে তাদের তিলাওয়াত শুনলেও অনেক সওয়াব পাওয়া যাবে।
সকলেরই জানা আছে, যে সকল কাজ অত্যন্ত দরকারী তা করাতে সওয়াব পাওয়া যায়, অথচ তা হাসিল করার উপায়গুলি অর্জন করা যেমন জরুরী বা দরকারী, তেমন তাতে অফুরন্ত সওয়াবও নিহিত আছে।
অতএব, কুরআন শরীফ শিক্ষার বন্দোবস্ত করাও নেহায়েত জরুরী এবং তাতে অশেষ সওয়াব আছে। প্রতি গ্রামে মুসলমান ভাইগণ মিলিতভাবে চেষ্টা করবেন, যাতে গ্রামে গ্রামে, মহল্লায় মহল্লায় কুরআন শরীফ শিক্ষার জন্য মক্তব স্থাপিত হয়। সেই মক্তবে ছেলে—মেয়েদের প্রাথমিক শিক্ষার বন্দোবস্ত করা একান্ত দরকার।
বয়স্কদেরও কুরআন শরীফ শিক্ষার জন্য কিছু সময় বের করতে হবে। দুনিয়ার সমস্ত কাজ—কর্মের জন্য সময় মিলে, আর আল্লাহর কালাম কুরআন শরীফ শিক্ষার জন্য সময় মিলবে না?
শিক্ষক যদি বিনা বেতনে পাওয়া যায়, তবে ভালই। নতুবা সকলে মিলে চাঁদা করে শিক্ষকের জীবিকা নির্বাহের যোগ্য কিছু সম্বল সংগ্রহ করে দেওয়া দরকার। যে সমস্ত ছেলেরা দারিদ্রতার কারণে সম্পূর্ণ কুরআন শরীফ পড়তে পারে না, তাদের খাওয়া—পরার ব্যবস্থা করে দেওয়া আবশ্যক। এই প্রথা বাংলাদেশ ব্যতীত অন্যান্য ইসলামী দেশে এখনও প্রচলিত আছে, যেমন— দেওবন্দ, সাহারানপুর, থানাভবন এবং অন্যান্য মাদরাসায় ছাত্রগণ নিশ্চিন্ত হয়ে সম্পূর্ণ কুরআন শরীফ শিক্ষা করতে পারে। আর ছেলেরা মক্তবে যতটুকু শিক্ষা করবে, ততটুকু তারা বাড়ীর মেয়েদেরকে শিক্ষা দিলে স্ত্রী—পুরুষ সকলেই কুরআন শরীফ শিক্ষা করতে পারে। যদি কেউ আমপাড়া দেখে পড়তে না পারে, তবে অন্ততপক্ষে কিছু সংখ্যক সূরা মুখস্থ পড়ে নেওয়া আবশ্যক।
পদমর্যাদার মাপকাঠি হলো পবিত্র কুরআন
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বরাবর প্রেরীত চিঠির ব্যাখ্যা PDF ডাউনলোড করতে ক্লিক করুন
মহানবী জগতের আদর্শ মহামানব। ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ
মানব জাতির মুক্তি ও কামিয়াবী সুরাতুল আসরের ৪ মূলনীতির আলোকে ব্যবস্থা গ্রহণ করা আবশ্যক