কুরআন মাজীদ তিলাওয়াতের প্রতি হাফেজ সাহেবদের যত্নবান হওয়া
সংকলক : অধ্যক্ষ মুহাম্মদ মিজানুর রহমান চৌধুরী
নাযেম, মাদরাসা দাওয়াতুল হক, দেওনা, কাপাসিয়া, গাজীপুর
কুরআন মাজীদ হিফজ করতে পারা আল্লাহ তা’আলার বিশেষ মেহেরবানী ও অশেষ রহমত। আল্লাহ তার নির্বাচিত বান্দাদেরকেই সেই সৌভাগ্য দান করেন। এজন্য হাফেজ সাহেবদের সবসময় আল্লাহ তা’আর কাছে শুকরিয়া আদায় করা অপরিহার্য। সাথে সাথে কুরআনের হক আদায় করার ব্যাপারে সচেষ্ট থাকা।
হাফেজদের কাছে কুরআনের হক হলো বেশি বেশি কুরআন তিলাওয়াত করা। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘কুরআনে পারদর্শী ব্যক্তি ঐ সকল ফেরেশতাদের দলভুক্ত হবে যারা লেখার কাজে নিয়োজিত এবং নেককার।’ কুরআনে পারদর্শী ঐ ব্যক্তিকে বলা হয়, যে ভালোভাবে কুরআন কারীম মুখস্থ করেছে এবং বেশি বেশি তিলাওয়াত করে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন, ‘আমার উম্মতের শ্রেষ্ঠ হলো তারা যারা কুরআনের ধারকবাহক এবং রাতে ইবাদতকারীরা।’ এরচেয়েও বড় কথা এই যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘তোমরা কুরআন শিক্ষা করো এবং তা তিলাওয়াত কর। কেননা, যে ব্যক্তি কুরআন শিক্ষা করে ও তিলাওয়াত করে এবং তাহাজ্জুদ নামাজে পড়তে থাকে তার দৃষ্টান্ত ঐ থলির মতো যা মেশক দ্বারা পরিপূর্ণ এবং তার সুগ্রাণ সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। আর যে ব্যক্তি কুরআন শিক্ষা করল এবং রাতে ঘুমিয়ে কাটিয়ে দিলো তার দৃষ্টান্ত মেশকের ঐ থলির মতো যার মুখ বন্ধ করে রাখা হয়েছে।’
হাফেজরা যত বেশি কুরআন তিলাওয়াত করবে তার হিফজ ততো মজবুত হবে। সাথে সাথে আল্লাহ তা’আলার নৈকট্য অর্জন ও মর্যাদা বৃদ্ধি পাবে। কিন্তু অনেক হাফেজদের দেখা যায়, হিফজ শেষ করার পর তিলাওয়াতের ইহতেমাম করে না। সারা বছর তিলাওয়াতের খবর নাই রমজান মাসের সময় ঘনিয়ে আসলে তারাবী পড়ানোর জন্য তিলাওয়াতে মগ্ন হয়। তখন দেখা যায় অনেক জায়গা ভুলে যায়। তারাবী পড়াতে অনেক কষ্ট হয়। পিছন থেকে লুকমা না দিলে হয় না। এজন্য সারা বছর নিয়মতান্ত্রিকভাবে নির্দিষ্ট পরিমাণ তিলাওয়াতের ইহতেমাম জরুরী। হিফজ বিভাগে পড়াকালীন যে মনযোগ থাকতো সেভাবে মনযোগী হওয়া।
হাফেজ সাহেবদের আরো একটি বিষয়ে খেয়াল করা প্রয়োজন। সেটি হলো, কুরআন তিলাওয়াতের বিনিময় গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকা। উলামায়ে কেরামের ফতোয়া হলো, রমযান মাসে তারাবীর নামায পড়িয়ে বিনিময় গ্রহণ করা সম্পূর্ণ নাজায়েজ। এমনিভাবে সবিনা, মৃত ব্যক্তির ইসালে সওয়াবের উদ্দেশ্যে কুরআন খতমের বিনিময় গ্রহণ করাও নাজায়েজ। আল্লাহ তা’আলা হাফেজদেরকে দুনিয়া ও আখেরাতে যে সম্মান দান করেছেন এর তুলনায় এই টাকাপয়সা কিছুই না। সুতরাং নাজায়েজ পন্থার বিনিময় আদান-প্রদান থেকে বিরত থাকাই মঙ্গল।
কুরআন মাজীদ হিফজ করার ফজিলত
মহান আল্লাহতায়ালার শ্রেষ্ঠদান পবিত্র কুরআন আর এই কুরআন হিফজ করার মর্যাদাও অনেক অনেক বেশি। হাফেজ হওয়ার কারণে তাকে সব সময় কুরআন চর্চা করতে হয়, এতে সে প্রতি হরফে ১০ নেকি করে পেয়ে থাকে। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত।
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, কুরআন মজিদে দক্ষ ব্যক্তি (আখেরাতে) সম্মানিত নেককার লিপিকার ফেরেশতাদের সঙ্গে থাকবে। যে ব্যক্তি ঠেকে ঠেকে কষ্ট করে কুরআন পড়ে সে দুটি পুরস্কার পাবে। (বুখারি)
আবু সাঈদ খুদরী (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, কুরআনের বাহককে জান্নাতে প্রবেশকালে বলা হবে, তুমি পাঠ করতে থাক এবং ওপরে আহরণ করতে থাক। অতঃপর সে পড়তে থাকবে এবং প্রতিটি আয়াত পড়ার সঙ্গে সঙ্গে একটি স্তর অতিক্রম করবে। এভাবে সে তার জ্ঞাত শেষ আয়াতটি পর্যন্ত পড়বে। (আবু দাউদ )
উপরোক্ত হাদিস পর্যালোচনা করলে বোঝা যায়, কুরআনের হাফেজ আখেরাতে ফেরেশতাদের সঙ্গে জান্নাতে বসবাস করবেন। জান্নাতে প্রবেশের পর কুরআন হিফজের বদৌলতে জান্নাতের বিভিন্ন স্তর অতিক্রম করে ওপরে দিকে উঠবেন তার মুখস্থ থাকা শেষ আয়াতটি পড়া পর্যন্ত।
Post Views: 110