কুরআন শরীফ শিক্ষা করা শ্রেষ্ঠতম রহমত

কুরআন শরীফ শিক্ষা করা শ্রেষ্ঠতম রহমত

ইসলাম প্রতিদিন কুরআন ও সুন্নাহ সংস্কৃতি

কুরআন শরীফ শিক্ষা শ্রেষ্ঠতম রহমত

কুরআন শরীফ শিক্ষা করা মানুষের প্রতি আল্লাহ তা‘আলার শ্রেষ্ঠতম রহমত এতে বিন্দু পরিমাণ সন্দেহ নেই। এ শিক্ষা মানুষকে আল্লাহর পরিচয় দান করে, মানুষকে আল্লাহ-প্রাপ্তির পথ দেখায় এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি-অসন্তষ্টি সম্পর্কে অবগত করে। এ শিক্ষায় মানুষের অর্ন্তদৃষ্টি খুলে যায় ও তার জ্ঞান-গবেষণায় উৎসাহ যোগায়। এ শিক্ষা মানুষের অন্তরে পা-পুণ্যের বোধ জাগ্রত করে ও ন্যায়-অন্যায় বিচারের প্রেরণা দেয়। কুরআনের শিক্ষাই একমাত্র শিক্ষা, যা মানুষের ইহজীবনকে স্বস্তিকর করে তোলে। এর দ্বারা পিতা-মাতা, সন্তান-সন্ততি, ভাই-বোন, স্বামী-স্ত্রী, আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশীসহ সর্বস্তরের মানুষের অধিকার জানা যায় এবং এ শিক্ষা মানুষকে সে অধিকার আদায়ে সচেতনতা দান করে। তা মানুষের অন্তরে এই বিশ্বাস বদ্ধমূল করে দেয় যে, অন্যের অধিকার আদায় সম্পর্কে প্রত্যেককে কিয়ামতের দিন জবাবদিহিতার সম্মুখীন হতে হবে।

কিয়ামতের বিভীষিকা, জাহান্নামের শাস্তি ও জান্নাতের সুখ-শান্তিতে বিশ্বাসী মানুষ কখনওই সে জবাবদিহিরতার ধারণাকে লঘু দৃষ্টিতে নিতে পারে না। সে সম্পূর্ণরূপে কর্তব্যনিষ্ঠ হয়ে যায়। আর এখান থেকে খুলে যায় শান্তি ও স্বস্তির পথ। পরিবার হয়ে ওঠে শান্তিময়। দেশ ও সমাজ হয়ে যায় শান্তিপূর্ণ। শান্তিপূর্ণ পরিবেশে মানুষ দিন যাপনের সুযোগ পায়। তাতে সুকুমারবৃত্তি চর্চার সুযোগ হয়। মানুষ স্বার্থপরতার পরিবর্তে নিঃস্বার্থ জীবনে আনন্দ বোধ করে। পাপকর্মের বদলে পুণ্যের কাজ তার জন্য সুখকর। প্রাণ-চেতনা কেবল পুণ্যেরই পথ দেখায়, পুণ্যের পথে চলতে আহবান জানায়। ফলে পুণ্যার্জন প্রতিযোগিতার বিষয়ে পরিণত হয়। আর এভাবে পাওয়ার বদলে দেওয়ার মানসিকতাই সর্বত্র কুসুমিত হয়। কে আমার জন্য কী করল তা নয়, আমি কার জন্য কতটুকু কী করতে পারলাম সেটাই হয় একমাত্র বিবেচ্য বিষয়। যে পরিবেশ-পরিমণ্ডল এ রকম বিবেচনাবোধ দ্বারা চালিত হয়, তা কখনো অশান্ত-অসুখী হতে পারে না। বরং তা সর্বক্ষণ আসমানী রহমতে শান্ত থাকে এবং তা থাকতে বাধ্য। কুরআনী হিদায়াত ও ওহীর শিক্ষা যেখানে চর্চিত থাকবে, সেই পরিমÐল রহমত দ্বারা সিঞ্চিত হবেই। হিদায়াত ও রহমত পরস্পর অবিচ্ছেদ্য। তাই কুরআন তার বহু আয়াতে নিজ পরিচয় দান করতে গিয়ে হিদায়াতের পরপরই রহমতের কথা উল্লেখ করেছে। যেমন-

فَقَدْ جَاءَكُمْ بَيِّنَةٌ مِّنْ رَّبِّكُمْ وَّ رَحْمَةٌ

‘কাজেই তোমাদের কাছে তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষ হতে এক উজ্জ্বল প্রমাণ এবং হিদায়াত ও রহমত এসে গেছে।’ সূরা আন’আম-১৫৭

অন্যত্র ইরশাদ-  هَذَا بَصَائِرُ مِنْ رَّبِّكُمْ وَ هُدًى وَّ رَحْمَةٌ لِّقَوْمٍ يُّوْمِنُوْنَ

‘এ কুরআন তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষ হতে জ্ঞান-তত্তে¡র সমষ্টি এবং যারা ঈমান আনে তাদের জন্য হিদায়াত ও রহমত।’ -সূরা আ‘রাফ-২০৩

আমরা আগেই জেনেছি কুরআনের হিদায়াত পূর্ণাঙ্গ। সে জীবনের সকল ক্ষেত্রে শান্তি ও মুক্তির পথ দেখায়। ফলে এর অনুসরণ দ্বারা ব্যক্তি-জীবন থেকে সমাজ-জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আল্লাহর পক্ষ হতে রহমতপ্রাপ্তি নিশ্চিত হয়ে যায়। কুরআন বলছে-

وَ هَذَا كِتَابٌ اَنْزَلْنَاهُ مُبٰرَكٌ فَاتَّبِعُوْهُ وَاتَّقُوْا لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُوْنَ

‘(এমনিভাবে) এটা এক বরকতপূর্ণ কিতাব, যা আমি নাযিল করেছি। সুতরাং এর অনুসরণ কর ও তাকওয়া অবলম্বন কর, যাতে তোমাদের প্রতি রহমত বর্ষণ হয়।’ – সূরা আন’আম-১৫৫

অর্থাৎ কুরআন যখন এসে গেছে, তখন আল্লাহর রহমত লাভের জন্য তোমাদের অন্য কোনও দিকে ফিরে তাকানোর প্রয়োজন নেই। দুনিয়া ও আখিরাতে রহমতপ্রাপ্তির নিশ্চয়তা আর কেউ নয়; কেবল রহমান-রাহীম আল্লাহই দিতে পারেন আর কুরআনের মাধ্যমে তিনি তা দিয়ে দিয়েছেন। তোমরা এ নিয়েই খুশি থাক, এতেই আস্থাশীল থাক এবং সবকিছু থেকে মুখ ফিরিয়ে কেবল এরই অভিমুখী হয়ে থাক। কুরআন ডেকে বলছে-

يَاۤأَيُّهَا النَّاسُ قَدْ جَاءَتْكُمْ مَوْعِظَةٌ مِّنْ رَّبِّكُمْ وَشِفَاءٌ لِّمَا فِىْ الصُّدُوْرِ() وَلَا هُدًى وَّرَحْمَةٌ لِّلْمُؤْمِنِيْنَ ـ قُلْ بِفَضْلِ اللهِ وَبِرَحْمَتِه فَبِذٰلِكَ فَلْيَفْرَحُوْاؕ هُوَ خَيْرٌمِّمَّا يَجْمَعُوْنَ()  

‘হে মানুষ! তোমাদের কাছে তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে এসেছে এক উপদেশ, অন্তরের রোগ-ব্যাধির উপশম এবং মুমিনদের পক্ষে হিদায়াত ও রহমত। (হে নবী!) বল, এসব আল্লাহর অনুগ্রহ ও তাঁর রহমতেই হয়েছে। সুতরাং এতে তাদের আনন্দিত হওয়া উচিত। তারা যা-কিছু পুঞ্জিভূত করে, তা অপেক্ষা এটা শ্রেয়।’ সূরা ইউনূস, -৫৭-৫৮

কুরআন শরীফ সকলের জন্য শিক্ষার ব্যবস্থা গ্রহণ করা

শাইখুল হিন্দ মাহমুদ হাসান দেওবন্দী রহ. মাল্টার চার বছর বন্দীজীবন থেকে মুক্তি লাভের পর দারুল উলূম দেওবন্দের এক উলামা সামাবেশে বলেছিলেন “আমি তো মাল্টাজীবনে মাত্র দু’টি সবক শিখেছি”। সুদীর্ঘ কাল শিক্ষকতার পর শেষ বয়সে এই প্রতিথযশা আলেম যা শিখেছেন তা কী? সবার মধ্যে কৌতুহল জন্ম নিল। তিনি বললেন “জেলের একাকীত্বে মুসলমানদের বর্তমান ধর্মীয় ও জাগতিক প্রত্যেক বিষয়ে অবক্ষয় ও অধঃপতনের কারণ অনুসন্ধানের পর আমার কাছে এর দু’টি কারণ প্রতীয়মান হল। এক. কুরআন ছেড়ে দেওয়া দুই. পারস্পরিক অনৈক্য ও গৃহযুদ্ধ। এজন্য আমি সেখান থেকেই প্রতিজ্ঞা করেছি যে, নিজের বাকী জীবন কুরআনের শাব্দিক ও আর্থিক প্রচার-প্রসারে নিয়োজিত রাখবো।  প্রত্যেক এলাকায় ছোটদের জন্য মক্তব প্রতিষ্ঠা ও বড়দের জন্য উন্মুক্ত দরসে কুরআন । যার মাধ্যমে শিক্ষার পাশাপাশি আমলের ব্যাপারে উৎসাহিত করা হবে।”

হতভাগা জাতির যে ব্যাধি উম্মতের বিজ্ঞ চিকিৎসক নিরুপন করেছিলেন, অসুস্থতা-দুর্বলতা ও ব্যস্ততা-কর্মলিপ্ততা সত্তে¡ও তা বাস্তবায়নে নিরন্তর সাধনা করেছেন। নিজেই দরসে কুরআন শুরু করে দিলেন। জনসাধরণ, শহরের আলেমদের পাশাপাশি মাও. হুসাইন আহমদ মাদানী রহ., মাও. শিব্বির আহমদ উসমানী রহ.-এর মত উলামায়ে কেরামও শরীক হতেন। কিন্তু এরপর হযরত অল্প কয়েক দিন বেঁচে ছিলেন।

আজো মুসলমানরা যে সব সংকটে লিপ্ত, দুর্যোগ-দুর্বিপাকে ছিন্নবিচ্ছিন্ন; যদি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা যায়, তাহলে এ সবের মূলে ঐ দু’টি কারণ চিহ্নিত হবে- কুরআন ও সুন্নাহ থেকে বিমুখ হওয়া। কুরআন-সুন্নাহর উপর যদি কিছুও আমল হতো তাহলে জাতীয় এ বিপর্যয় ঘটতো না। হযরত রাসূলে মাকবুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উম্মতের ধ্বংস ও বরবাদি থেকে একমাত্র রক্ষাকবচ সাব্যস্ত করে গেছেন কুরআন ও সুন্নাহকে মজবুতির সাথে আঁকড়িয়ে ধরা। আজ যদি হিসেব করা হয় তাহলে দেখা যাবে প্রায় এক তৃতীয়াংশ মুসলমান কুরআন শরীফ পড়তেই জানে না। বাকি দুই তৃতীয়াংশের এক অংশ কোনো মতে পড়তে জানলেও তা অশুদ্ধ। অবশিষ্ট এক তৃতীয়াংশ মুসলমান সহীহ করে তিলাওয়াত করতে জানলেও নিয়মিত তিলাওয়াতকারীর সংখ্যা কম। এমতাবস্থায় উলামায়ে কেরামের দায়িত্ব হলো, জনসাধারণকে কুরআন শিক্ষার গুরুত্ব ও ফজিলত সম্পর্কে ওয়াকিবহাল করে কুরআন শিক্ষার প্রতি উদ্বুদ্ধ করা। প্রতিটা এলাকায় শিশুদের জন্য ফুরকানীয়া/সাবাহি মকতব গড়ে তোলা। বয়ষ্কদের জন্য কুরআন শিক্ষার ব্যবস্থা করা। মহিলাদের জন্যও আলাদা হালকা তৈরি করা অত্যন্ত জরুরী। কারণ আমাদের মা-বোনদের মধ্যে এমন অনেকেই আছেন যারা কুরআন শিক্ষার প্রতি আগ্রহী।

আজকাল কিন্ডার গার্ডেন ও বিভিন্ন বেসরকারি স্কুলসমূহের ক্লাসের সময় একেবারে সকাল থেকেই নির্ধারণ করা হয়। ফলে স্কুলপড়ুয়া মুসলমান ছেলেমেয়েরা সাবাহি মক্তবে অংশগ্রহণ করতে পারে না। এক্ষেত্রে অভিভাবকদের দায়িত্ব হলো, নিজেদের সন্তানদেরকে অন্য সময় কুরআন শরীফ শিক্ষার ব্যবস্থা করা। কারণ মুসলমানের সন্তান যদি কুরআন শরীফ না পড়ে তাহলে তার মুসলমানিত্বই প্রশ্নের সম্মুখিন হয়ে পড়ে। তাছাড়া দুনিয়ার সামান্য টাকাপয়সার জন্য যদি সন্তানদেরকে ফরজ পরিমাণ দ্বীনি ইলম শিক্ষা না দেওয়া হয় তাহলে অভিভাবকদেরকে আল্লাহ তা’আলার দরবারে জবাবদিহি করতে হবে। অভিভাবকদের গাফলতি ও উদাসীনতার কারণে যদি সন্তান বিপথগামী হয় তাহলে শাস্তির অংশীদার তারাও হবেন।

উপরোক্ত কথাগুলো শাব্দিক কুরআন শরীফ শিক্ষার ব্যাপারে। একজন মুসলমানকে শুধু কুরআনের শব্দ উচ্চারণ জানাকে যথেষ্ট মনে করলে হবে না; আয়াতের অর্থ ও তাফসীর-ব্যাখ্যা সম্পর্কেও ধারণা রাখা উচিত। কারণ কুরআনে কারীমের আয়াতের অর্থও কুরআনের অন্তভুক্ত। এজন্যই শাইখুল হিন্দ রহ. দরসে কুরআনের কর্মসূচি গ্রহণ করেছিলেন। ফলে যারা অর্থ ও তাফসীর সরাসরি কিতাবাদি থেকে পড়তে পারে না, তারা উলামায়ে কেরামের মুখ থেকে শুনে শিখতে পারবে।

আমাদের দেশে প্রচলিত ওয়াজ মাহফিলের প্রতি লোকজনের আগ্রহ। কিন্তু মসজিদভিত্তিক দরসে কুরআনের প্রতি আগ্রহ নেই; তেমন একটা ইন্তেজামও হয় না। তাফসীরুল কুরআন মাহফিলের নামে আয়োজন হয়। কিন্তু এক্ষেত্রে দেখা যায়, যারা তাফসীর করেন তাদের অধিকাংশই তাফসীরকারীর মানদন্ডে উত্তীর্ণ নন। নাহু-সরফ, বালাগাত ও  আরবী লুগাতসহ অত্যাবশ্যকীয় ইলমে পারদর্শী নয়। অনেকে আরবী ইবারতও পড়তে পারে না; কিন্তু ‘প্রখ্যাত মুফাসসির’। অথচ মুলধারার প্রায় সব তাফসীরগন্থই আরবী ভাষায় রচিত। এজন্য তাফসীর মাহফিলের মুফাসসির নির্ধারণে যাচাই-বাচাই করা আবশ্যক। আহলে হক উলামায়ে কেরামের মাধ্যমে তাফসীর করানো উচিত। অতিরিক্ত আয়োজন ও টাকাপয়সা খরচ করা ছাড়াও মসজিদভিত্তিক ‘দরসে কুরআন’ বা ‘তাফসীর মাহফিল’-এর ব্যবস্থা করা যেতে পারে। পতনমুখ মুসলমান জাতির সময়ের চাহিদার আলোকে নিম্নোক্ত কর্মসূচি গ্রহণ করা।

১. উম্মতের প্রকৃত সমস্যা বুঝতে হবে। উম্মতের সকল স্তরের সদস্য নারী-পুরুষ, শিশু-কিশোর, যুবক-যুবতী ও বৃদ্ধ-বৃদ্ধাসহ সকল পেশার কুরআন বঞ্চিতদের নিয়ে বাস্তবমুখী কুরআন শিক্ষার ব্যবস্থা গ্রহণ করা সময়ের দাবী।

২. প্রতিটি মসজিদে বয়স্ক কুরআন শিক্ষা চালু করা।

৩. প্রতিটি দ্বীনি মাদরাসাকে কেন্দ্র করে মাদরাসার এলাকায় ছাত্র-শিক্ষকগণের সমন্বয়ে কুরআন শিক্ষার ব্যবস্থা গ্রহণ ও এ বিষয়ে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা।

কুরআন শরীফ হিফজ করার পর কুরআনের খেদমত করার বিষয়ে অনিহার কারণ :

১. কুরআন শিক্ষার্থীদের অন্তরে কালামে পাকের আজমদ-মুহাব্বত ও আদবের কমতি।

২. কুরআনে কারীমের খেদমত করাকে নিচু মানের মনে করা।

৩. শিক্ষকের মর্যাদার দিক থেকে কুরআনের শিক্ষককে অবমূল্যায়ন করা।

৪. বেতন ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার ক্ষেত্রে কুরআনের শিক্ষকের তুলনায় বেতন-ভাতা কম প্রদান করা হয়।

৫. বুযূর্গানে দ্বীনের সোহবত ও নিসবত না থাকা।

কুরআন মাজীদের শিক্ষক নিয়োগের বিবেচ্য বিষয়

১. কুরআনে পাকের সহিহ তিলাওয়াত ও তাজবীদের জ্ঞান সম্পন্ন হওয়া।

২. সুন্নাতের পাবন্দ হওয়া।

৩. তাকওয়া ও খেদমতের জযবা থাকা।

৪. কোন খাছ দ্বীনি মুরুব্বীর সাথে সম্পর্কদারী হওয়া।

রিংটোন ও ওয়েলকামটোন হিসেবে আযান, কুরআন শরীফ তিলাওয়াত ইত্যাদির ব্যবহার

মোবাইলের রিংটোন ও ওয়েলকামটোন হিসেবে অনেকেই গানের বাজনা, গান ইত্যাদি ব্যবহার করে থাকেন। এটা যে নিন্দনীয় তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। এর বিপরীতে কিছু ভাই আযান, কুরআনের তিলাওয়াত ইত্যাদি রিংটোন ও ওয়েলকামটোন হিসেবে ব্যবহার করে থাকেন। তাদের নিয়ত অবশ্যই ভালো। কিন্তু এ কাজটি ঠিক নয়।

কুরআন আল্লাহর কালাম। কুরআন শরীফ তিলাওয়াত অনেক বড় সওয়াব ও ফযীলতের আমল। কুরআন তিলাওয়াত শোনাও অনেক সওয়াবের কাজ। তেমনি আযান আল্লাহ তা‘আলার বড়ত্ব ও তাসবীহ সম্বলিত কিছু বাক্যের সমষ্টি, যা শরীয়তের গুরুত্বপূর্ণ প্রতীক তথা ‘শিআর’; এগুলো নিজেদের কাজে ব্যবহারের জন্য নয়।

মোবাইলে কল এসেছে- এ খবর দেওয়ার জন্য আল্লাহর পবিত্র কালাম-ওহী বা আযান- এর ব্যবহারের দ্বারা আল্লাহর কালামকে নিজের কাজে ব্যবহার করা হয়, যা আল্লাহর কালামের সাথে বেআদবী ও নিন্দনীয় কাজ। তাছাড়া রিং আসলে মানুষ কল ধরা নিয়েই ব্যস্ত হয়- তিলাওয়াতের দিকে মনোযোগ দেয় না। অনেক সময় আয়াত ও শব্দের মাঝখানে কল রিসিভ করা হলে আয়াতের শব্দ কেটে যায়। এমতাবস্থায় শব্দের অপূর্ণ উচ্চারণের কারণে অর্থ বিকৃত হয়ে যায়। আর মোবাইল নিয়ে টয়লেটে প্রবেশের পর ফোন এলে অপবিত্র স্থানে আল্লাহর নাম, তাসবীহ বা আল্লাহর কালামের ধ্বনি বেজে ওঠে। এতে যে চরমভাবে এর মর্যাদা ক্ষুণ্য হয়- এ কথা কে না বুঝে। সুতারাং রিংটোন ও ওয়েলকামটোন হিসেবে এগুলো ব্যবহার থেকে বিরত থাকা কর্তব্য।

হ্যাঁ, যে রিংটোনে গানের সুর বা বিশেষ কোনো তাল নেই তা ব্যবহারে দোষের কিছু নেই। যেমন অনেক মোবাইলে ল্যান্ডফোনের আওয়াযের মত বা সাইকেলের বেলের মত রিংটোন থাকে- এ ধরনের রিংটোন ব্যবহারে দোষ নেই।

কুরআন শরীফের আয়াতের ক্যালিগ্রাফি

ক্যালিগ্রাফির মাধ্যমে আকর্ষণীয় পদ্ধতিতে বিভিন্ন বিষয় লেখা হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে অনেকেই কুরআনের আয়াতকে ক্যালিগ্রাফি আকারে লিখে। এতে করে অধিকাংশ ক্ষেত্রে কুরআনের আয়াত দুর্বোদ্ধ হয়ে ওঠে। কারণ, ক্যালিগ্রাফি সুন্দর করার মানসে আয়াতের অক্ষরকে দুর্লভ সিস্টেমে লেখা হয়। তখন সহজে আয়াত পড়া ও অনুমান করা যায় না। অনেক সময় না বুঝার কারণে আয়াত ভুল পড়তে হয়। তাছাড়া এই ক্যালিগ্রাফি বিভিন্ন ক্যালেন্ডার, পোস্টার ও বইয়ের প্রচ্ছদে দেওয়া থাকে। তখন ওজুবিহীন  আয়াতে হাত লাগে। যা জায়েজ নেই। এজন্য ক্যালিগ্রাফি করার সময় সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত, যাতে করে সুন্দর করার কারণে কুরআনের আয়াত অস্পষ্ট কিংবা দুর্বোদ্ধ না হয়।

বর্তমান প্রেক্ষাপটে একটি জরুরী পরামর্শ

বর্তমানে গুনাহের উপকরণাদি অতি সহজলভ্য হওয়ার কারণে বাড়ী-ঘরে অবাধে ডিস এন্টিনার সংযোগকৃত টি.ভি, টাচ্ মোবাইল ফোনে সকল প্রকার অপকর্ম অশ্লীল, অশালীন পর্ণগ্রাফি দেখার সুযোগে ছোট ছোট বাচ্চাদের উপর এর অশুভ প্রভাব পড়েছে। তাই দেখা যায় প্রায় প্রতি বৎসরই কিছু ছাত্র সমকামীতাসহ অন্যান্য যৌন অপরাধ করে থাকে এধরনের বাচ্চাদের প্রতি সকলের একটা সুধারনা থাকে যে এরা এখনো অনেক ছোট, নাবালেগ, স্বপ্নদোষ বা এধরনের যৌন অপরাধ করে নাপাকের কাজ গোসল ফরজ হতে পারে এটা ধারণাও থাকে না। কাজেই অসময়ে গোসল করা তাদের জন্য পাবন্দি থাকে এমতাবস্থায় যে সকল অল্প বয়স্ক ছাত্র এধরনের কুকর্ম করে গোসল না করেই থেকে যায়। কতদিন যে নাপাকি অবস্থায় নামাজ, কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করে থাকে। অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে বহুদিন পরে যখন ধরা পরে তখন অনেক ক্ষতি হয়ে যায়। কাজেই বাস্তবতার আলোকে শিক্ষকগণের সতকর্তা জরুরী।

“আল কুরআনের আদব” বিষয়ে পড়তে ক্লিক করুন
“কুরআনুল কারিমের কথা” প্রবন্ধটি পড়তে ক্লিক করুন
আরো জানতে ভিজিট করুন আমাদের ওয়েব সাইট রাহে সুন্নাত ব্লগ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *