কুরআন শিক্ষা শ্রেষ্ঠতম রহমত
সন্দেহ নেই কুরআনের শিক্ষা মানুষের প্রতি আল্লাহ তা‘আলার শ্রেষ্ঠতম রহমত। এ শিক্ষা মানুষকে আল্লাহর পরিচয় দান করে, মানুষকে আল্লাহ—প্রাপ্তির পথ দেখায় এবং আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টি—অসন্তুষ্টি সম্পর্কে অবগত করে। এ শিক্ষায় মানুষের অন্তর্দৃষ্টি খুলে যায় ও তার জ্ঞান—গবেষণায় উৎসাহ যোগায়। এ শিক্ষা মানুষের অন্তরে পাপপুণ্যের বোধ জাগ্রত করে ও ন্যায়—অন্যায় বিচারের প্রেরণা দেয়। পবিত্র কুরআনের শিক্ষাই একমাত্র শিক্ষা, যা মানুষের ইহজীবনকে স্বস্তিকর করে তোলে। এর দ্বারা পিতা—মাতা, সন্তান—সন্ততি, ভাই—বোন, স্বামী—স্ত্রী, আত্মীয়—স্বজন ও প্রতিবেশীসহ সর্বস্তরের মানুষের অধিকার জানা যায় এবং এ শিক্ষা মানুষকে সে অধিকার আদায়ে সচেতনতা দান করে। তা মানুষের অন্তরে এই বিশ্বাস বদ্ধমূল করে দেয় যে, অন্যের অধিকার আদায় সম্পর্কে প্রত্যেককে কিয়ামতের দিন জবাবদিহিতার সম্মুখীন হতে হবে। কিয়ামতের বিভীষিকা, জাহান্নামের শাস্তি ও জান্নাতের সুখ—শান্তিতে বিশ্বাসী মানুষ কখনোই সে জবাবদিহিরতার ধারণাকে লঘু দৃষ্টিতে নিতে পারে না। সে সম্পূর্ণরূপে কর্তব্যনিষ্ঠ হয়ে যায়। আর এখান থেকে খুলে যায় শান্তি ও স্বস্তির পথ। পরিবার হয়ে ওঠে শান্তিময়। দেশ ও সমাজ হয়ে যায় শান্তিপূর্ণ। শান্তিপূর্ণ পরিবেশে মানুষ দিন যাপনের সুযোগ পায়। তাতে সুকুমারবৃত্তি চর্চার সুযোগ হয়। মানুষ স্বার্থপরতার পরিবর্তে নিঃস্বার্থ জীবনে আনন্দ বোধ করে। গুনাহের কাজের বদলে সওয়াবের কাজ তার জন্য সুখকর। প্রাণ—চেতনা কেবল পুণ্যেরই পথ দেখায়, পুণ্যের পথে চলতে আহবান জানায়। ফলে পুণ্যার্জন প্রতিযোগিতার বিষয়ে পরিণত হয়। আর এভাবে পাওয়ার বদলে দেওয়ার মানসিকতাই সর্বত্র কুসুমিত হয়। কে আমার জন্য কী করল তা নয়, আমি কার জন্য কতটুকু কী করতে পারলাম সেটাই হয় একমাত্র বিবেচ্য বিষয়। যে পরিবেশ—পরিমণ্ডল এ রকম বিবেচনাবোধ দ্বারা চালিত হয়, তা কখনো অশান্ত—অসুখী হতে পারে না। বরং তা সর্বক্ষণ আসমানী রহমতে শিক্ত থাকে এবং তা থাকতে বাধ্য। কুরআনী হিদায়াত ও ওহীর শিক্ষা যেখানে চর্চিত থাকবে, সেই পরিমণ্ডল রহমত দ্বারা সিঞ্চিত হবেই। হিদায়াত ও রহমত পরস্পর অবিচ্ছেদ্য। তাই কুরআন তার বহু আয়াতে নিজ পরিচয় দান করতে গিয়ে হিদায়াতের পরপরই রহমতের কথা উল্লেখ করেছে। যেমন-
فَقَدْ جَاءَكُمْ بَيِّنَةٌ مِّنْ رَّبِّكُمْ وَّ رَحْمَةٌ
‘কাজেই তোমাদের কাছে তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষ হতে এক উজ্জ্বল প্রমাণ এবং হিদায়াত ও রহমত এসে গেছে।’ —সূরা আন’আম, আয়াত : ১৫৭
অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে-
هَذَا بَصَائِرُ مِنْ رَّبِّكُمْ وَ هُدًى وَّ رَحْمَةٌ لِّقَوْمٍ يُّوْمِنُوْنَ
‘এ কুরআন তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষ হতে জ্ঞান—তত্ত্বের সমষ্টি এবং যারা ঈমান আনে তাদের জন্য হিদায়াত ও রহমত।’ —সূরা আ‘রাফ, আয়াত : ২০৩
আমরা আগেই জেনেছি কুরআনের হিদায়াত পূর্ণাঙ্গ। সে জীবনের সকল ক্ষেত্রে শান্তি ও মুক্তির পথ দেখায়। ফলে এর অনুসরণ দ্বারা ব্যক্তি—জীবন থেকে সমাজ—জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে মহান আল্লাহর পক্ষ হতে রহমতপ্রাপ্তি নিশ্চিত হয়ে যায়। পবিত্র কুরআন বলছে-
وَ هَذَا كِتَابٌ اَنْزَلْنَاهُ مُبٰرَكٌ فَاتَّبِعُوْهُ وَاتَّقُوْا لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُوْنَ
‘(এমনিভাবে) এটা এক বরকতপূর্ণ কিতাব, যা আমি নাযিল করেছি। সুতরাং এর অনুসরণ কর ও তাকওয়া অবলম্বন কর, যাতে তোমাদের প্রতি রহমত বর্ষণ হয়।’ —সূরা আন‘আম, আয়াত : ১৫৫
অর্থাৎ কুরআন শরীফ যখন এসে গেছে, তখন মহান আল্লাহর রহমত লাভের জন্য তোমাদের অন্য কোনোও দিকে ফিরে তাকানোর প্রয়োজন নেই। দুনিয়া ও আখিরাতে রহমতপ্রাপ্তির নিশ্চয়তা আর কেউ নয়; কেবল রহমান—রাহীম আল্লাহই দিতে পারেন আর কুরআনের মাধ্যমে তিনি তা দিয়ে দিয়েছেন। তোমরা এ নিয়েই খুশি থাক, এতেই আস্থাশীল থাক এবং সবকিছু থেকে মুখ ফিরিয়ে কেবল এরই অভিমুখী হয়ে থাক। কুরআনে কারীম ডেকে বলছে-
يَاۤأَيُّهَا النَّاسُ قَدْ جَاءَتْكُمْ مَوْعِظَةٌ مِّنْ رَّبِّكُمْ وَشِفَاءٌ لِّمَا فِىْ الصُّدُوْرِ() وَلَا هُدًى وَّرَحْمَةٌ لِّلْمُؤْمِنِيْنَ ـ قُلْ بِفَضْلِ اللهِ وَبِرَحْمَتِه فَبِذٰلِكَ فَلْيَفْرَحُوْاؕ هُوَ خَيْرٌمِّمَّا يَجْمَعُوْنَ
‘হে মানুষ! তোমাদের কাছে তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে এসেছে এক উপদেশ, অন্তরের রোগ—ব্যাধির উপশম এবং মুমিনদের পক্ষে হিদায়াত ও রহমত। (হে নবী!) বল, এসব আল্লাহর অনুগ্রহ ও তাঁর রহমতেই হয়েছে। সুতরাং এতে তাদের আনন্দিত হওয়া উচিত। তারা যা—কিছু পুঞ্জিভূত করে, তা অপেক্ষা এটা শ্রেয়।’ —সূরা ইউনূস, আয়াত : ৫৭—৫৮
পদমর্যাদার মাপকাঠি হলো পবিত্র কুরআন
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বরাবর প্রেরীত চিঠির ব্যাখ্যা PDF ডাউনলোড করতে ক্লিক করুন
মহানবী জগতের আদর্শ মহামানব। ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ
মানব জাতির মুক্তি ও কামিয়াবী সুরাতুল আসরের ৪ মূলনীতির আলোকে ব্যবস্থা গ্রহণ করা আবশ্যক