কুরবানীর ফাযায়েল ও মাসায়েল
মহান রাব্বুল আলামীন স্বীয় হাবীব মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উদ্দেশ্যে বলেন, অতএব আপনার পালন কর্তার উদ্দেশ্যে নামায পড়ুন এবং কুরবানী করুন।
কুরবানী কি? ও কি তার ফযীলত? :
কুরবানী এমন বস্তুকে বলা হয় যা আল্লাহ তা’য়ালার নৈকট্য লাভের মাধ্যম বা উছিলা হয়। মূলত প্রত্যেক নেক আমল যা দ্বারা আল্লাহ পাকের নৈকট্য ও রহমত লাভ করা যায় চাই তা জন্তু জবাই করার মাধ্যমে হউক বা দান সদকা দ্বারা হউক কিংবা অন্য কোন নেক কাজের মাধ্যমে হউকতাকেই কুরবানী বলা হয়। আর শরীয়তের ভাষায় কুরবানী ঐ জন্তুকে বলে যাকে মহান আল্লাহ তা’য়ালার নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট ব্যক্তি জবেহ করে। হযরত যায়েদ ইবনে আরকম রা: থেকে বর্ণিত যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট সাহাবায়ে কেরাম আরজ করলেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! এই কুরবানী কি? জবাবে তিনি বললেন তোমাদের পিতা হযরত ইবরাহীম আ: এর সুন্নত বা আদর্শ। হযরত সাহাবায়ে কেরাম জানতে চাইলেন, হে আল্লাহর রাসুল! এর মধ্যে আমাদের কি কল্যান নিহিত রয়েছে? হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন, কুরবানীর প্রানীর প্রত্যেক পশমের বিনিময়ে একটি করে নেকী প্রদান করা হবে। সূতরাং তোমরা মোটা-তাজা জন্তু কুরবানী কর, আর কুরবানীর জন্তু হবে তোমাদের পুলছিরাতের বাহন। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো এরশাদ করেন কুরবানীর দিন কুরবানী করার চেয়ে প্রিয় ইবাদত আল্লাহ তা’য়ালার নিকট আর নেই। কুরবানীর দিনে এটিই সর্বশ্রেষ্ঠ সওয়াবের কাজ। আর কুরবানী করার মূহুর্তে রক্তের ফোটা মাটিতে পরার পূর্বেই আল্লাহ তা’য়ালার নিকট কুরবানী কবুল হয়ে যায়। তাই প্রান খুলে তোমরা কুরবানী কর। এর চেয়ে বড় সওয়াব আর কি হতে পারে? এক কুরবানী দ্বারাই লাখ লাখ সওয়াব মিলে যায়। যদি কেবল ভেড়ার পশমও সকাল থেকে সন্ধা পর্যন্ত গননা করে, তাহলেও সে ব্যর্থ হবে। সূতরাং এদিকে চিন্তা করলে বুঝা যায় যে, কুরবানীর ফযীলত কত বেশী। তাই সবাইকে আল্লাহ পাক প্রান খুলে কুরবানী করার তৌফিক দান করুন।
কুরবানীর ফযীলত সর্ম্পকে বহু হাদীস বিভিন্ন গ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে। সব গুলি বর্ণনা করা এথানে সম্ভব নয়। আর এসমস্ত ফযীলত ঐ সময়ই পাবে যখন কুরবানী শুদ্ধভাবে শরীয়তের বিধানানুসারে সম্পন্ন হবে। সূতরাং এ অগনিত সওয়াব ও ফযীলত সঠিকভাবে হাসিল করার জন্য এর আহকাম ও মাসায়েল জানা একান্ত প্রয়োজন। তাই নিম্নে কিছু মাসায়েল উল্লেখ করা হল।
মাসআলা :১। যে স্বাধীন মুকীম মুসলমানের নিকট ঈদুল আযহার দিন গুলোতে সাড়ে বায়ান্ন তুলা রূপা অথবা তার মূল্যের সম্পদ প্রকৃতি প্রয়োজনের অতিরিক্ত থাকবে, তার উপর কুরবানী করা ওয়াজিব। এই মালের উপর এক বৎসর অতিবাহিত হওয়া শর্ত নয়। (শামী)
মাসআলা : ২। গরীব ব্যক্তি যদি কুরবানীর দিন গুলোর মধ্যে কুরবানীর নিয়তে কুরবানীর কোন পশু ক্রয় করে, তাহলে তার উপর কুরবানী ওয়াজিব হয়ে যাবে। কেননা তার ক্রয় করাটাই মান্নতের পর্যায়ে পড়ে, যা আদায় করা ওয়াজিব। (হিন্দিয়া, শামী)
মাসআলা : ৩। কুরবানীর জন্তু হল গরু, মহিষ, উট, ছাগল, ভেড়া ও দুম্বা। গরু ও মহিষের পূর্ণ দুই বৎসর হওয়া শর্ত। উটের পাঁচ বৎসর হওয়া জরুরী। এবং এগুলোর একটিতে সাতজন শরীক হতে পারবে, তবে শর্ত হল সকলের সওয়াবের নিয়ত হতে হবে। (শামী)
মাসআলা :৪। ছাগল, ভেড়া ও দুম্বা দিয়ে একজন কুরবানী করবে। এবং এগুলোর এক বৎসর পূর্ণ হওয়া জরুরী। কিন্তু ছয় মাসের দুম্বা, ভেড়া এরূপ মোটা তাজা হয় যে, দেখতে এক বৎসরের মনে হয়, তাহলে এরূপ ছয় মাসের দুম্বা ভেড়া দ্বারা কুরবানী করা যায়েয। কিন্তু বকরী পূর্ণ এক বৎসরের হওয়া জরুরী। (হিন্দিয়া, শামী)
মাসআলা :৫। যে জন্তুর মোটেই দাঁত নেই অথবা অধিকাংশ দাঁত পড়ে গেছে, তাহলে এমন জন্তু দ্বারা কুরবানী যায়েয হবে না। (হিন্দিয়া, শামী)
মাসআলা : ৬। জন্ম থেকে যে জন্তুর শিং নেই অথবা শিং ছিল কিন্তু পরে ভেঙ্গে গেছে তাহলে তা দ্বারা কুরবানী করা যায়েয। কিন্তু শিং যদি একেবারে মূল সহ উঠে যায় তাহলে এমন পশু দ্বারা কুরবানী করা যায়েয নেই। (হিন্দিয়া)
মাসআলা : ৭। কুরবানীর পশু রাতেও জবেহ করা যায়েয। কিন্তু মাকরূহে তানযীহী। অর্থাৎ ভাল নয়। (হেদায়া)
মাসআলা : ৮। গরীব ব্যক্তি যার উপর কুরবানী ওয়াজীব নয়, ঈদুল আযহার দিন তার জন্য মোরগ বা মুরগী জবেহ করা মাকরূহ। (আলমগীরী, শামী)
মাসআলা : ৯। জিলহজ্ব মাসের নয় তারিখ ফজর থেকে তের তারিখ আছর পর্যন্ত প্রত্যেক ফরয নামাযের পর একবার উচ্চস্বরে তাকবীর বলা ওয়াজিব। আর সুন্নত মনে করে একাধিকবার বলা খেলাফে সুন্নত। (তাহতাবী)
মাসআলা :১০। ঐ নামায চাই জামাতে আদায় করা হউক অথবা পৃথক ভাবে পড়–ক, ওয়াক্তিয়া বা কাযা, নামাযী মুকীম হউক বা মুসাফির, শহরের লোক হউক অথবা গ্রামের, পুরুষ, মহিলা সবার উপরই তাকবীরে তাশরীক বলা ওয়াজীব। (বাহরুর রায়েক)
মাসআলা : ১১। মাসবুকের (যার কিছু নামায জামাতে ছুটে গেছে) উপরেও তাকবীর পাঠ করা ওয়াজিব। অতএব সে তার বাকী নামায আদায় করার পর জোরে তাকবীর বলবে। যদি ভুল ক্রমে ইমামের সাথে তাকবীর বলে ফেলে তাহলে তার নামায ফাসেদ হবে না। (তাহতাবী)
মাসআলা : ১২। মেয়ে লোক আস্তে আস্তে তাকবীর পড়বে। পুরুষ যদি লজ্জা অথবা অলসতার কারনে আস্তে আস্তে তাকবীর পাঠ করে তাহলে ওয়াজিব আদায় হবে না।
সংহগ্রহে : আবু তাসনীম উমাইর
আরো জানতে ভিজিট করুন আমাদের ওয়েব সাইট রাহে সুন্নাত ব্লগ