চারটি সোনালি আমল

চারটি সোনালি আমল । দ্বিতীয় আমল : সবর

আত্মশুদ্ধি ইসলাম প্রতিদিন

চারটি সোনালি আমল : দ্বিতীয় আমল : সবর

এ পর্যন্ত একটি আমল তথা শোকরের আলোচনা হলো। এখন দ্বিতীয় আমল সবর সম্পর্কে কিছু কথা। সবর বলে, যে কাজ মর্জির খেলাফ হবে তার ওপর না-জায়েয পদক্ষেপ গ্রহণ থেকে নিজেকে বিরত রাখা। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত অসংখ্য কাজ যেমন আমাদের মর্জি মোতাবেক হয়, তেমনি অনেক কাজ মর্জির খেলাফও হয়। যেমন বাস স্টেশনে পৌঁছালাম আর বাস চলে গেল । অল্পের জন্য বাসটি পেলাম না। এরকম মর্জির খেলাফ কাজ ছোট হোক বা বড়, সামনে আসলে নিজেকে নিয়ন্ত্রণহীন না করা, আল্লাহর প্রতি দৃষ্টি রাখা-এরই নাম সবর। সবর দিলের অনেক গুরুত্বপূর্ণ আমল ।

সবরের মাধ্যমে আল্লাহ বান্দার ঈমানী শক্তি পরীক্ষা করেন। রাত-দিন এমন কত কিছু ঘটে, যা আমাদের মনঃপূত হয় না; নফসের ওপর ভার হয়। কখনো নিজের অসুস্থতা কিংবা প্রিয়জনের দুঃখদুর্দশা অথবা কারও মৃত্যুবেদনা। আবার কখনো পদ বা সম্পদের ওপর বিপদের ঝাপটা। মোটকথা, যে বিষয়ই হৃদয়-মনের প্রশান্তি ব্যাহত করে, তাতেই সবরের পরীক্ষা হয়। যেহেতু এটা ইচ্ছাধীন নয় তাই তা আল্লাহর পক্ষ থেকে হয়েছে এই বিশ্বাস রাখা ওয়াজিব। কারণ এতে তাঁর অনেক হিকমত ও রহমত নিহিত থাকে।

এসব ক্ষেত্রে আত্মপ্রশান্তির জন্য আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে বড় উপকারী ও কার্যকর ওষুধ দান করেছেন। তা হলো, ‘ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজীউন’ এ পড়বে। এতে মানসিক প্রশান্তি এবং সহ্য করার স্বাভাবিক শক্তি পাওয়া যায়। যা-কিছুই মর্জির বিপরীত হবে, চাই সেটা বড় কোনো আঘাত হোক কিংবা সাধারণ কোনো বিষয়, সর্বক্ষেত্রে ‘ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজীউন’ বলা সবরের সহজ পদ্ধতি। এতে কোনো মেহনত নেই এবং অর্থ ও সময়েরও ব্যয় নেই ।

আমাদের দেশের বিদ্যুতের লোডশেডিং এ আমলটি আরও সহজ করে দিয়েছে। যখনই বিদ্যুৎ চলে যাবে এবং যতবার যাবে, ততবার – বলবে। এবং যখনই বিদ্যুৎ আসবে বলবে। হাদীসে এমনও এসেছে যে, অতীতের কোনো ঘটনা বা পেরেশানী মনে পড়ার পর যদি ‘ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজীউন’ পড়ে, তাহলে সে পরিমাণ সওয়াব পাবে যা ঘটনার সময় পাওয়া যায়। মুসনাদে আহমদ, খণ্ড ৩ পৃ. ২৫৬, হাদীস ১৭৩৪; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস ১৬০০

“ইন্নালিল্লাহ’ শুধু মৃত্যুর সাথে নির্দিষ্ট নয়

আমাদের সমাজে এ ধারণা ব্যাপক যে, ‘ইন্নালিল্লাহ’ শুধু কেউ মারা গেলে পড়বে। আসলে এটা মৃত্যুর সাথে খাছ নয়। হাদীসে আছে, একবার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সামনে একটি বাতি জ্বলতে জ্বলতে নিভে গেল, তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজীউন’ পড়লেন। হযরত আয়েশা রাযি. জিজ্ঞেস করলেন, এটাও কি মুসিবত? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, হ্যাঁ, যা দ্বারাই মুসলমানের কষ্ট হয়, তা-ই মুসিবত। এতে সওয়াবের ওয়াদা আছে। মারাসীলু আবী দাউদ, হাদীস ৪০২

এক হাদীসে আছে, মুসলমানের পায়ে কোনো কাঁটা বিধলেও সওয়াব পাওয়া যায়।” সহীহ বুখারী, হাদীস ৫৬৪১; সহীহ মুসলিম, হাদীস ২৫৭৩

আরেকটি হাদীসে আছে, মুমিন প্রত্যেক অবস্থায় সফল। কেননা কোনো খুশির বিষয় হলে সে শোকর করে। দুঃখের বিষয় হলে সবর করে। আর আল্লাহ তা’আলার কাছে শোকরকারী ও সবরকারী বান্দা অনেক প্রিয়। সহীহ মুসলিম, হাদীস ২৯৯৯

মোল্লা নাসিরুদ্দীনের কথা

প্রসঙ্গক্রমে মোল্লা নাসিরুদ্দীনের একটি কথা মনে পড়ল। তার রসালো কথা অনেক প্রসিদ্ধ। মোল্লাজীর ব্যাপারে বর্ণিত আছে যে, তিনি অনেক সুশ্রী ছিলেন। আর তাঁর স্ত্রী ছিলেন অনেক কুশ্রী। একবার তিনি স্ত্রীকে বললেন, বেগম! তুমিও জান্নাতী, আমিও জান্নাতী। বিবি বললেন, কীভাবে? মোল্লাজী বললেন, যখন তুমি আমাকে দেখবে, আল্লাহর শোকর আদায় করবে, ‘এত সুন্দর স্বামী আল্লাহ আমাকে দান করলেন।আর আমি যখন তোমাকে দেখব সবর করব। আর সবরকারী ও শোকরকারী উভয়ই জান্নাতী।

ধৈর্যধারণকারীর ওপর আল্লাহর রহমত

ছোট হোক বড় হোক যা-কিছুই মনঃপুত হয়না, এমন সব বিষয়ের ওপরই সবর করা উচিত। এবং ‘ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজীউন’ বলা চাই। কেননা সবর দ্বারা আল্লাহর সঙ্গ লাভ হয়। আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন,

إِنَّ اللهَ مَعَ الصُّبِرِينَ

“নিশ্চয় আল্লাহ সবরকারীদের সাথে আছেন।” সূরা বাকারা, আয়াত ১৫৩

যে ব্যক্তি আল্লাহর সঙ্গ লাভ করবে, তার ক্ষতি করতে পারে কে? আর যে ব্যক্তি বিপদ-আপদ ও পেরেশানীর সময় ‘ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজীউন’ পড়বে তার ব্যাপারে কুরআনে ইরশাদ হয়েছে,

أُولَيكَ عَلَيْهِمْ صَلوتٌ مِّنْ رَّبِّهِمْ وَرَحْمَةٌ وَأُولَبِكَ هُمُ الْمُهْتَدُونَ

অর্থাৎ ওই সকল লোকদের (যারা মুসিবতে আক্রান্ত হয়ে ‘ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজীউন’ পড়বে, তাদের) ওপর তাদের প্রতিপালকের সাধারণ রহমত ও বিশেষ রহমত নাযিল হয়। আর এরাই হেদায়েতপ্রাপ্ত। সূরা বাকারা, আয়াত ১৫৭

সারকথা, সবরের সময় এ দোয়া পড়লে স্পষ্ট অনুভব হবে যে, আল্লাহর রহমত সঙ্গে আছে। আমি শপথ করে বলছি, যদি আপনি এ চারটি আমলের অভ্যাস করতে পারেন তাহলে অল্প দিনেই অনুভব করবেন যে, কেউ যেন রহমতের শীতল হাত আপনার অন্তরে রেখেছে। আড়াল থেকে কেউ যেন আপনাকে পাহারা দিচ্ছে। এতে আপনার নিঃসঙ্গ দূর হবে, জীবনে আনন্দ আসবে।

এ আমল দ্বারা জীবনে অবিচলতা, নিয়ন্ত্রণ, সংযম ও সহিষ্ণুতার গুণ অর্জন হয়। দুর্ঘটনা মুকাবিলা করার শক্তি সঞ্চয় হয় এবং আল্লাহর ফায়সালার ওপর রাজি থাকার তাওফীক হয়। যা দাসত্বের অনেক উঁচু মাকাম। সবরকারী কখনো নিজের ব্যক্তিগত বিষয়ে রাগ করে না এবং তার মাঝে প্রতিশোধ স্পৃহা জাগ্রত হয় না; হলেও তাড়াতাড়ি চলে যায়। ফলে আবেগ চরিতার্থ করার কুফল থেকে বেঁচে যায়।

চারটি সোনালি আমল । প্রথম আমল : শোকর

চারটি সোনালি আমল : দ্বিতীয় আমল : সবর

চারটি সোনালি আমল : তৃতীয় আমল ইস্তেগফার

চারটি সোনালি আমল । চতুর্থ আমল : ইস্তে‘আযা

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বরাবর প্রেরীত চি‌ঠির ব্যাখ্যা PDF ডাউনলোড করতে ক্লিক করুন

আল্লাহর আইন শাশ্বত ও চিরন্তন

মহানবী জগতের আদর্শ মহামানব। ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ

মানব জাতির মুক্তি ও কামিয়াবী সুরাতুল আসরের ৪ মূলনীতির আলোকে ব্যবস্থা গ্রহণ করা আবশ্যক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *