চারটি সোনালি আমল

চারটি সোনালি আমল । প্রথম আমল : শোকর

আত্মশুদ্ধি ইবাদত ইসলাম প্রতিদিন

চারটি সোনালি আমল

একবার হযরত (ডাক্তার আবদুল হাই আরেফী রহ.) বলেন, আগের যুগে আত্মশুদ্ধির জন্য কঠোর-কঠিন মুজাহাদা করতে হতো। এখন মানুষের সেরকম মুজাহাদার হিম্মত নেই। আমি আপনাকে একটি সহজ ফর্মুলা বাতলে দেব, যা অনেক সংক্ষিপ্ত, তবে খুব দ্রুত কাজ করে। তা হলো চারটি আমল। এ চারটি আমল শরীয়ত ও তরীকত উভয়ের প্রাণ। আবার তা এত সহজ যে, জান-মাল ও সময় কিছুই ব্যয় হয় না। মানুষ যদি এ কাজগুলোয় অভ্যস্ত হয় তাহলে আল্লাহর সাথে তাঁর বিশেষ সম্পর্ক সৃষ্টি হয়, যার আনন্দ জীবনে অনুভূত হয় এবং দিলের হালত ইসলাহের উপযুক্ত হয়। এরপর ধীরে ধীরে ওই মাকাম হাছিল হয় যে, মানুষ চাইলেও গুনাহ করতে পারে না।

আমল চারটি হলো- ১. শোকর ২ সবর ৩. ইস্তেগফার ৪. ইস্তে’আযা (আশ্রয় প্রার্থনা)

এক্ষেত্রে হযরত আরেফী রহ. যা-কিছু বলেছেন, আমার ভাই মুফতী মুহাম্মাদ তাকী উসমানী ছাহেব তা লিপিবদ্ধ করেছেন।

প্রথম আমল : শোকর

প্রথম বিষয় হলো শোকর। সর্বপ্রথম এই অভ্যাস করা উচিত যে, সকালে ঘুম থেকে উঠে এবং রাতে ঘুমানোর পূর্বে নিজের প্রতি এবং নিজের চারপাশের প্রতি হালকা দৃষ্টি দেবেন এবং আল্লাহর দেওয়া দীন-দুনিয়ার নেয়ামত স্মরণ করে সংক্ষিপ্ত শোকর আদায় করবেন। বিশেষ করে ঈমান ও সুস্থতার শোকর করবেন এবং এ নেয়ামতগুলোর সঠিক ব্যবহারের প্রতিজ্ঞা রাখবেন। এ ছাড়া যে-যে নেয়ামতই স্মরণ হবে মনে মনে তার শোকর আদায় করে নেবেন। যখনই মর্জি মোতাবেক কোনো কাজ হবে, যদ্বারা দিল খুশি হয় ও অন্তর শান্তি পায়, তখন বলে ফেলুন । আলহামদুলিল্লাহ।

শোকরের ক্ষেত্র অনেক

সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত অসংখ্য কাজ মানুষের মর্জি মোতাবেক হয়। সকালে চোখ খুললাম, শরীর পূর্ণ সুস্থ, তো বলব, আলহামদুলিল্লাহ। নামাযে গিয়ে জামাত পেয়ে গেলাম, বলব, আলহামদুলিল্লাহ। সকালে নাস্তার ব্যবস্থা হলো, আলহামদুলিল্লাহ। কাজে যাচ্ছি, ভয় হচ্ছে, না জানি দেরি হয়ে যায়। কিন্তু সঠিক সময়ে পৌঁছে গেলাম, আলহামদুলিল্লাহ। বাসে যাব, বাস পেতেও পারি, নাও পেতে পারি, পেয়ে গেলাম, আলহামদুলিল্লাহ। বাসে উঠলাম, জানি না আসন পাব কি পাব না, পেয়ে গেলাম, আলহামদুলিল্লাহ। ফিরে এসে ঘরওয়ালাদেরকে হাসিখুশি দেখলাম, আলহামদুলিল্লাহ। গরমের মধ্যে শীতল বায়ুর ঝাপটা লাগল, আলহামদুলিল্লাহ। ছোট হোক বড় হোক যে কাজই মর্জি মোতাবেক হয়ে যাবে, যেমন কোনো দোয়া কবুল হলো, কোনো কথা দ্বারা দিল খুশি হলো, অন্তর শান্তি পেল, কোনো ভালো কাজের তাওফীক হলো। সবকিছুর জন্য দিল ও যবান দ্বারা শোকর আদায় করার অভ্যাস করুন। এতে না সময় ব্যয় হয়, না সম্পদ খরচ হয়, না কোনো মেহনত করতে হয় অসংখ্য নেয়ামত আমরা পেয়েছি।

বরং আল্লাহ না করুন, যদি কোনো মুসিবত ও পেরেশানী আসে তাহলে প্রতিকারের পূর্বে চিন্তা করব যে, আল্লাহ তা’আলা যোগ্যতা ছাড়া কত নেয়ামত দিয়ে রেখেছেন। সারাক্ষণ তার নেয়ামতের মধ্যে ডুবে আছি। এ নেয়ামত দ্বারা আমার দিল শক্তিশালী হয়। এ নেয়ামত না থাকলে আমার পেরেশানীর কী অবস্থা হতো! এ সব ধ্যান করলে মানসিক শাস্তি পাবেন ইনশাআল্লাহ। যদিও স্বভাবজাত পেরেশানীর কিছু আছর বাকি থাকবে। এভাবে ভাবলে ও চিন্তা করলে সবগুলোর না হলেও কিছু না কিছু নেয়ামতের শোকর আদায় হবে। এবং শোকর অভ্যাসে পরিণত হবে। ফলে সকল ভালো কাজের শোকর মনে মনে আদায় হতে থাকবে। কেউ জানবেও না, একটি মহান ইবাদত হয়ে যাচ্ছে! যাতে কোনো লৌকিকতাও নেই। এতে মর্তবা এত উঁচু হবে যে, আপনি ভাবতেও পারবেন না।

মোটকথা, মানুষকে এমন হতে হবে যে, সর্বাবস্থায় শোকর আদায় করতে থাকবে। প্রথম দিকে একটু কষ্ট হবে। কিন্তু খেয়াল করলে এবং মশক জারি রাখলে অভ্যাস হয়ে যাবে।

শোকর করলে নেয়ামত বাড়ে এবং আযাব থেকে মুক্তি মিলে

আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন- مَا يَفْعَلُ اللهُ بِعَذَابِكُمْ إِنْ شَكَرْتُمْ وَآمَنْتُمْ

অর্থ : যদি তোমরা কৃতজ্ঞ হয়ে যাও এবং (সত্যিকারভাবে) ঈমান আন তবে আল্লাহ তোমাদেরকে শাস্তি দিয়ে কী করবেন? সূরা নিসা, আয়াত ১৪৭

বুঝা গেল, ঈমানদার যদি শোকরগুয়ার হয় তাহলে আযাব থেকে মুক্তি পাবে।

অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে- لين شَكَرْتُمْ لَأَزِيدَنَّكُمْ

অর্থ : যদি তোমরা শোকর কর তাহলে আমি তোমাদের নেয়ামত বাড়িয়ে দেব। সূরা ইবরাহিম, আয়াত ৭

এ থেকে প্রতীয়মান হয়, যে নেয়ামতেরই শোকর আদায় করা হবে তা ক্রমশ বাড়তে থাকবে। দুনিয়ার জীবন সহজ হয়ে যাবে। বিশ্বাস না হলে যাচাই করে দেখুন। যে-ই এ কাজ করবে, স্পষ্ট অনুভব করবে, তার জীবনে চমৎকার পরিবর্তন এসেছে।

এটি আল্লাহর অনেক পছন্দনীয় ইবাদত। এটি কত পছন্দনীয় তা এভাবে অনুধাবন করুন—যত কিতাব আল্লাহ তা’আলা নাযিল করেছেন, সবচেয়ে প্রিয় ও মহান কিতাব হলো কুরআনুল কারীম। সে কিতাব আল্লাহ শুরু করেছেন সূরা ফাতিহা দিয়ে। এবং সূরা ফাতিহা শুরু করেছেন আলহামদুলিল্লাহ দিয়ে। পুরো কুরআন মাজীদের সারবস্তু সূরা ফাতিহায় আছে। সূরা ফাতিহার প্রথম শব্দই হচ্ছে ‘আলহামদুলিল্লাহ’। তাহলে এখানে কোনো রহস্য তো অবশ্যই আছে যে, শোকরকে এত গুরুত্ব দিয়ে বয়ান করা হচ্ছে!

আরও লক্ষ করুন, আল্লাহ তা’আলা প্রত্যেক নামাযে বরং প্রত্যেক রাকাতে এই সূরা পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন। এর একটি কারণ এও যে, এতে আল্লাহর প্রশংসা ও গুণকীর্তন আছে। আর আল্লাহর কাছে নিজের প্রশংসা অনেক পছন্দনীয়।

এই ইবাদত জান্নাতেও চলবে

বেহেশতে কোনো ইবাদত থাকবে না। নামায, রোযা, হজ্জ, যাকাত সবই শেষ। শুধু ফূর্তি ও আনন্দ। কিন্তু একটি ইবাদত সেখানেও থাকবে। তা হলো শোকর। হাদীস শরীফে এসেছে, জান্নাতীদের মুখে সর্বদা হাম্দ ও প্রশংসা জারি থাকবে। দুনিয়াতে নিঃশ্বাস যেমন কোনো কষ্ট ছাড়াই জারি থাকে; ইচ্ছার প্রয়োজন হয় না, তেমনি জান্নাতেও হাম্দ জারি থাকবে। সহীহ মুসলিম, হাদীস ২৮৩৫

সারকথা, যখন এই অভ্যাস হয়ে যাবে যে, ছোট-বড় সকল নেয়ামতের শোকর আদায় করতে থাকবে, তখন আল্লাহ আযাব থেকে মুক্তি দেবেন এবং নেয়ামত বৃদ্ধি করে দেবেন।

এ আমল দ্বারা আল্লাহর মহব্বত সৃষ্টি হয়। আল্লাহর সাথে সম্পর্ক মজবুত হয়। নৈকট্য বাড়ে এবং জীবনে সুন্দর পরিবর্তন আসে। নিজের মধ্যে অল্পেতুষ্টির মজা অনুভব হয় এবং জীবন হয় পুণ্যময়। )

শোকর দ্বারা সবর ও তাকওয়া অর্জন হয়
আল্লাহর ‘শোকর’ এমন সম্পদ, যা দ্বারা অফুরন্ত নেয়ামত ও আত্মিক প্রশান্তি লাভ হয়। মানুষ যখন সর্বদা শোকর করবে তখন সবরের জযবাও সৃষ্টি হবে এবং কষ্টক্লেশের জন্য অভিযোগ ও শেকায়েত করবে না।

এটাও এই আমলের বরকত যে, শোকরগুয়ার বান্দা থেকে গুনাহ অনেক কম প্রকাশ পায়। সে গুনাহ করতে লজ্জাবোধ করবে। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত যাঁর শোকর আদায় করি তাঁর নাফরমানী করি কীভাবে? এবং হিংসা, লোভ, লালসা, অপচয় ও কৃপণতা ইত্যাদি ধ্বংসাত্মক ব্যাধি থেকেও মুক্তি পাবে।
অহংকার দূর হয়

শোকরের আরেকটি বড় ফায়দা হলো, শোকর দ্বারা মানুষ অহংকারমুক্ত হতে পারে। কেননা শোকরকারী বান্দা যত নেয়ামতই অর্জন করুক, তাকে নিজের কৃতিত্ব মনে করে না। আর যখন নিজের কৃতিত্বের ওপর দৃষ্টি থাকল না, বরং সবকিছুকে সে আল্লাহর দিকে সম্বন্ধ করে তাহলে গর্ব ও অহংকার হবে কিসের ওপর? অহংকার এমন ভয়ানক গুনাহ যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন,

لَا يَدْخُلُ الْجَنَّةَ مَنْ كَانَ فِي قَلْبِهِ مِثْقَالُ ذَرَّةٍ مِنْ كَبْرٍ.

“ওই ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে না, যার অন্তরে অণু পরিমাণও অহংকার থাকবে।” সহীহ মুসলিম, হাদীস ৯১

চারটি সোনালি আমল । প্রথম আমল : শোকর

চারটি সোনালি আমল : দ্বিতীয় আমল : সবর

চারটি সোনালি আমল : তৃতীয় আমল ইস্তেগফার

চারটি সোনালি আমল । চতুর্থ আমল : ইস্তে‘আযা

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বরাবর প্রেরীত চি‌ঠির ব্যাখ্যা PDF ডাউনলোড করতে ক্লিক করুন

আল্লাহর আইন শাশ্বত ও চিরন্তন

মহানবী জগতের আদর্শ মহামানব। ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ

মানব জাতির মুক্তি ও কামিয়াবী সুরাতুল আসরের ৪ মূলনীতির আলোকে ব্যবস্থা গ্রহণ করা আবশ্যক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *