তরীকুস সুলুক

তরীকুস সুলুক ৪র্থ পর্ব

আত্মশুদ্ধি ইসলাম প্রতিদিন

তরীকুস সুলুক ৪র্থ পর্ব

ওয়াজিব হকসমূহ পরিশোধ করা

উপরোল্লেখিত কিতাবসমূহে যখন আপনি গুনাহর বিস্তারিত বিবরণ দেখবেন, তখন জানতে পারবেন যে, এ সমস্ত গুনাহর মধ্যে কিছু গুনাহ তো এমন রয়েছে, যেগুলোর দ্বারা শুধুমাত্র আল্লাহ তা’আলার হক নষ্ট করা হয়েছে। কোনো মানুষ এর দ্বারা কষ্ট পায়নি। আর কিছু গুনাহ রয়েছে যার দ্বারা কোনো একজন মানুষ বা অনেক মানুষ কষ্ট পেয়েছে। প্রথম প্রকারের হককে ‘হুক‚কুুল্লাহ বা আল্লাহর হক’ বলে। আর দ্বিতীয় প্রকারের হককে ‘হুক‚কুল ইবাদ বা বান্দার হক’ বলে।

আল্লাহর হকের মধ্যে কিছু হক রয়েছে এমন, যেগুলোর কাযা করা বা কাফফারা দেওয়া সম্ভব। যেমন, নামাজ বা রোজা ছুটে গিয়ে থাকলে সেগুলোর ‘কাযা’ করা ওয়াজিব বা বিগত সময়ে যাকাত না দিয়ে থাকলে এখন তা প্রদান করা জরুরী। এমনিভাবে হজ্জ ফরয হওয়া সত্তে¡ও না করে থাকলে এখন হজ্জ করতে হবে বা শপথ করে তা ভাঙ্গা সত্তে¡ও তার কাফফারা প্রদান না করে থাকলে তা প্রদান করা জরুরী।

আল্লাহর হকের দ্বিতীয় প্রকার এমন, যেগুলোর শরীয়তে কোনো কাফফারা নির্ধারিত নেই। যেমন, মিথ্যা বলা বা কুপ্রবৃত্তির শিকার হয়ে শরীয়তবিরোধী কাজে লিপ্ত হওয়া ইত্যাদি। এই দ্বিতীয় প্রকারের গুনাহর তাওবা শুধুমাত্র এই যে, কায়œাকাটি করে আল্লাহ তা’আলার নিকট নিজের গুনাহর ক্ষমা ভিক্ষা চাইবে এবং সবসময় ইস্তিগফার করতে থাকবে। আল্লাহর হকের প্রথম প্রকার যেগুলোর কাযা বা কাফফারা শরীয়তে নির্ধারিত আছে সে সমস্ত হক ‘কাযা’ বা ‘কাফফারা’র মাধ্যমে পরিশোধ করা আবশ্যক। যেমন, ভালোভাবে চিন্তা করে হিসাব করবে যে, সারাজীবনে কতগুলো নামাজ ছুটে গেছে, কতগুলো রোজা রাখেনি, এখন তার সবগুলো ‘কাযা’ করবে। যদি ছুটে যাওয়া নামাজ পরিমাণে বেশি হয়, তাহলে শক্তি-সাহস ও সময়-সুযোগ মতো কিছু কিছু করে কাযা আদায় করতে আরম্ভ করবে। ছুটে যাওয়া নামাজের সবগুলো পূর্ণ হওয়া পর্যন্ত এভাবে আদায় করতে থাকবে। এমনিভাবে অতীতে সম্পদের যাকাত না দিয়ে থাকলে অনুমানের ভিত্তিতে হিসাব করে যাকাতের পরিমাণ নির্ধারণ করে সম্ভব হলে পুরোটা একবারে, না হয় অল্প অল্প করে তা পরিশোধ করতে থাকবে।  একইভাবে সদকায়ে ফিতর বা কুরবানি ওয়াজিব হওয়া সত্তে¡ও সেগুলো না দিয়ে থাকলে এখন তা দেওয়া এবং কুরবানির মূল্য দান করা জরুরী, তাই তা দান করবে। এমনিভাবে কসম (শপথ) ভেঙ্গে থাকলে তার কাফফারা দেওয়া ওয়াজিব। তাও আদায় করবে। কেউ রোজা রেখে স্বেচ্ছায় ভেঙ্গে থাকলে তার কাফফারা ওয়াজিব, তাই তার কাফফারাও আদায় করবে।

এভাবে আল্লাহর হকসমূহের মধ্য থেকে যে সমস্ত হকের ‘কাযা’ করা সম্ভব সেগুলোর ‘কাযা’ করবে এবং যেগুলোর কাফফারা দেওয়া সম্ভব সেগুলোর কাফফারা আদায় করবে। এ ধরনের ছুটে যাওয়া সমস্ত ইবাদতের ‘কাযা’ ও ‘কাফফারা’ থেকে মুক্ত না হলে নিছক মৌখিক তাওবা মোটেই যথেষ্ট নয়।

সংকলক : মাওলানা খালিদ সাইফুল্লাহ আইয়ুবী

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *