তাওবার হাকীকত ও তরীকা

তাওবার হাকীকত ও তরীকা

ইসলাম প্রতিদিন

 

 

 

 

 

তাওবার হাকীকত ও তরীকা

শুধু মুখে ‘তাওবা’ ‘তাওবা’ বলা বা ইস্তিগফারের শব্দ উচ্চারণ করার দ্বারা তাওবা হয় না। বরং প্রকৃত তাওবা হওয়ার জন্য তিনটি মৌলিক বিষয় থাকা জরুরী।

এক. অতীতে কৃত গুনাহসমূহের উপর অনুশোচনা ও আক্ষেপ এবং অন্তরে ব্যথা-বেদনা ও জ্বালা সৃষ্টি হতে হবে।

দুই. তাৎক্ষণিকভাবে সমস্ত গুনাহ পরিত্যাগ করতে হবে।

তিন. অন্তরে পাকাপোক্ত সংকল্প করতে হবে যে, ভবিষ্যতে ঐ সমস্ত গুনাহর কোনো একটির কাছেও যাবো না।

তাওবার হাকীকত -১

তাওবার প্রথম মৌলিক বিষয়, অর্থাৎ অতীতে কৃত গুনাহসমূহের উপর লজ্জা, অনুশোচনা এবং অন্তরে ব্যথা-বেদনা সৃষ্টি হওয়ার জন্য এ বিষয়ের সঠিক ইলম অর্জন করা ছাড়া অন্য কোনো উপায় নেই। প্রথমত মানুষের একথা জানা থাকতে হবে যে, কোনো কোনো কাজ কবীরা বা সগীরা গুনাহ। দ্বিতীয়ত একথা জানা থাকতে হবে যে, দুনিয়া ও আখেরাতে এ সমস্ত গুনাহর কারণে কি কি বিপদ-মুসীবত আসে। এ সমস্ত বিষয় ‘গুনাহে বে-লয্যত’ পুস্তিকা থেকে জানা সম্ভব। এবং বুজুর্গদের অন্যান্য কিতাব যেমন, বেহেশতী যেওর, জাযাউল আমাল, তালীমুদ্দীন, হায়াতুল মুসলিমীন, তাবলীগে দ্বীন ইত্যাদি থেকেও এগুলো জানা সম্ভব। এ সমস্ত কিতাব নিয়মিত অধ্যয়ন করলে ইনশাআল্লাহ অন্তরে নিজের গুনাহসমূহের উপর লজ্জা, অনুশোচনা এবং ব্যথা-বেদনার সৃষ্টি হবে।

তাওবার হাকীকত -২

তাওবার দ্বিতীয় মৌলিক বিষয়, সমস্ত গুনাহর কাজকে অবিলম্বে পরিত্যাগ করা। এ কাজ হিম্মত করা ছাড়া সম্ভব নয়। আর এই হিম্মত করার তরীকা বুজুর্গ ও নেক লোকদের সাহচর্য গ্রহণ এবং তাদের জীবনী ও ঘটনাবলি পাঠ ও শ্রবণ করা ছাড়া আর কিছু নয়। তাওবার তৃতীয় মৌলিক বিষয় হলো, ভবিষ্যতের জন্য গুনাহর কাছে না যাওয়ার দৃঢ় সংকল্প করা। আর এ কাজটি মানুষের এখতিয়ারভুক্ত। মানুষ যে কোনো সময় ইচ্ছা করলে এটা করতে পারে। সব কাজেই যেমন হিম্মত করা জরুরী, তেমনি এ ব্যাপারেও দৃঢ় সংকল্প করতে হবে যে, আল্লাহ ও রাসূলের হুকুম মানতে আমার যতো কষ্টই হোক না কেনো, জানমালের যতো বড় ক্ষতিই হোক না কেনো, দুনিয়ার যতো স্বার্থই হাতছাড়া হোক না কেনো এবং যতো মানুষই তিরস্কার করুক না কেনো, সব সহ্য করবো, কিন্তু আল্লাহ ও রাসূলের ফরমাবরদারী করা ছাড়বো না। এতোটুকু সাহস যদি না থাকে, তাহলে বাস্তবে সে আল্লাহকে পেতে চায় না।

পূর্বের আলোচনায় একথা প্রমাণিত হয়েছে যে, তাসাওউফ ও তরীকতের প্রকৃত স্বরূপ এটাই যে, শরীয়তের যাহেরী ও বাতেনী সমস্ত বিধানের উপর পরিপূর্ণরূপে আমল করতে হবে। আর একথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, শরীয়তের সমস্ত বিধানের উপর আমল করা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য ফরয, ওয়াজিব ও জরুরী। তাই এ ব্যাপারে কোনোরূপ গাফলতী বা শৈথিল্য প্রদর্শন না করা প্রত্যেক মুসলমানের অবশ্য কর্তব্য। আরো কর্তব্য এই সিরাতে মুস্তাকীমের উপর চলার ব্যাপারে পরিপূর্ণ সাহসিকতার পরিচয় দেওয়া। যে ব্যক্তি এ পথে চলার সংকল্প করবে, তার সর্বপ্রথম কাজ হলো, অতীতে কৃত সমস্ত গুনাহ থেকে পরিপূর্ণরূপে তাওবা করা। তাওবা করার তরীকা সংক্রান্ত বিস্তারিত বিবরণ পরবর্তীতে আলোচনা করা হবে ইনশাআল্লাহ। তবে এখানে মনে রাখতে হবে যে, তাওবার জন্য আল্লাহ তা’আলার যে সমস্ত হক আদায় করা হয়নি, সেগুলোর মধ্যে যেগুলো আদায়যোগ্য, সেগুলো আদায় করতে হবে। বিশেষ করে বান্দার যে সমস্ত হক নিজ দায়িত্বে রয়েছে তা ‘আর্থিক হক’ হোক, যেমন, কারো সম্পদ অন্যায়ভাবে আত্মসাৎ করেছে, বা ‘শারীরিক হক’ হোক, যেমন, কাউকে হাত বা মুখ দ্বারা কষ্ট দিয়েছে। এ সমস্ত হক পরিশোধ করা বা পাওনাদারের নিকট থেকে মাফ নিয়ে নেওয়া তাওবার জন্য শর্ত। যে পর্যন্ত কোনো মানুষ এ সমস্ত হক থেকে মুক্তি লাভ না করবে, সে যদি সারাজীবনও ইবাদত-বন্দেগীতে কষ্ট-সাধনা করতে থাকে, তবুও কস্মিনকালেও আল্লাহ পর্যন্ত পৌঁছতে পারবে না।

==============================================================================

মাহে জিলহজ্ব ও কুরবানীর ফযীলত করণীয় ও বর্জনীয় || রাহে সুন্নাত ব্লগ

উলামায়ে কেরাম : মর্যাদা, দা‌য়িত্ব ও কর্তব্য

কুরআনুল কারিমের কথা প্রবন্ধটি পড়তে ক্লিক করুন
আরো জানতে ভিজিট করুন আমাদের ওয়েব সাইট রাহে সুন্নাত ব্লগ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *