তাকওয়া মুক্তির পথ (১)
রূমিয়ে যামানা আরিফ বিল্লাহ শাহ হাকীম মুহাম্মদ আখতার সাহেবের অন্যতম খলীফা, পাটলী দারুল উলূম মাদ্রাসা, জগন্নাথপুর, সুনামগঞ্জ-এর প্রতিষ্ঠাতা মুহতামিম মুহিউস্সুন্নাহ শায়খ আসগর হুসাইন দা: বা:এর মূল্যবান বয়ানের সংকলন
সংকলক : আবু তাসনীম উমাইর
তাকওয়া :
اَلْحَمْدُ للهِ نَحْمَدُهُ وَنَسْتَعِيْنُهُ وَنَسْتَغْفِرُهُ وَنَعُوْذُ بِاللهِ مِنْ شُرُوْرِ اَنْفُسِنَا وَمِنْ سَيِّئَاتِ اَعْمَالِنَا مَنْ يَّهْدِهِ اللهُ فَلَا مُضِلَّلَهُ وَمَنْ يُّضْلِلْهُ فَلَا هَادِىَ لَهُ وَنَشْهَدُاَلَّا اِلهَ اِلَّااللهُ وَنَشْهَدُ اَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُوْلُهُ اَمَّا بَعْدُ! فَاَعُوْذُ بِاللهِ مِنْ الشَّيْطَانِ الرَّجِيْمِ. بِسْمِ اللهِ الرَّحْمنِ الرَّحِيْمِ. يَآاَيُّهَا الَّذِيْنَ اَمَنُوْا اتَّقُوْا اللهَ وَكُوْنُوْا مَعَ الصَّادِقِيْنَ. وَقَالَ تَعَالى: اِنَّ اللهَ وَمَلَائِكَتَهُ يُصَلُّوْنَ عَلَى النَّبِىِّ يَآاَيُّهَا الَّذِيْنَ اَمَنُوْا صَلُّوْا عَلَيْهِ وَسَلِّمُوْا تَسْلِيْمًا. اَللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى سَيِّدِنَا وَمَوْلَانَا مُحَمَّدٍ وَعَلَى اَلِهِ وَاَصْحَابِهِ وَسَلِّمْ.
আলহামদুলিল্লাহ! আমি আপনাদের সামনে মুখতাসার একখানা আয়াত তেলাওয়াত করেছি। এর আলোকে মুখতাসার কয়টি কথা গুজারিশ করব।
ইনশাআল্লাহু তায়ালা।
মাওলানা ইশারা করেছেন যে, আমি গত দুইদিন আগে ওমরাহ পালন করে এসেছি। আর গত দুই রাত আমার ঠিকমত ঘুমও হয়নি। সারা রাত ইয়ারপোর্টে ছিলাম। আর আজকে প্রায় আট ঘন্টায় ঢাকা থেকে এসেছি। এবং ভাই মিসবাহ-এর মুহাব্বতে সরাসরি এখানে চলে এসেছি।
ভাই! এই যে মুহাব্বত, এটাই হলো সবচেয়ে বড়। এটাই হলো আসল। হাদীসে কুদসীতে আল্লাহ তায়ালা বলেন যে, وَجَبَتْ مُحَبَّتِىْ لِلْمُتَحَابِّيْنَ فِىَّ
অর্থাৎ যে একজন মানুষকে আল্লাহর ওয়াস্তে মুহাব্বত করে। আর এ মুহাব্বতের মধ্যে দুনিয়ার কোন গরজ না থাকে। এটার কোন বদলা না থাকে । শুধু আল্লাহর ওয়াস্তে, আল্লাহকে রাজী ও খুশী করা উদ্দেশ্য থাকে এভাবে যদি কেউ কাউকে মুহাব্বত করে তাহলে আল্লাহ তায়ালা বলেন:
وَجَبَتْ مُحَبَّتِىْ لِلْمُتَحَابِّيْنَ فِىَّ আমি আল্লাহ তায়ালার জন্য ওয়াজিব হয়ে যায় তাকে মুহাব্বত করা। কাজেই আমরা পরস্পর পরস্পরকে আল্লাহর ওয়াস্তেই মুহাব্বত করব। আল্লাহ ওয়ালাগনও আল্লাহর ওয়াস্তেই মুহাব্বত করে থাকেন।
আমি যখন ফ্রান্স সফরে গিয়েছিলাম তখন আমার ভাই মিসবাহ আমাকে দাওয়াত দিয়েছিলেন। লন্ডন আসার পরও দাওয়াত দিয়েছেন। বাংলাদেশে আসার পর বারবার যোগাযোগ করেছেন। টেলিফোন করেছেন। একজন মানুষ মুহাব্বত করে বারবার রিকোয়েস্ট করছেন। এ হিসাবে শত কষ্ট হলেও মুহাব্বতের টানে, মুহাব্বতের দাবীদার হিসাবে উপস্থিত হওয়া কর্তব্য। এ কারনে কষ্টের দিকে লক্ষ না করে সরাসরি আপনাদের মাহফিলে এসে উপস্থিত হয়েছি। আল্লাহ তায়ালা আমাদের আসা ও বসাকে কবুল করুন। আমীন।
প্রিয় উপস্থিতি! আপনাদের খেদমতে সুরায়ে তাওবার মুখতাসার একখানা আয়াত তেলাওয়াত করেছি, যদি আল্লাহ তায়ালা তাওফিক দান করেন তাহলে উক্ত আয়াতের আলোকে দু’একটি কথা বলার চেষ্টা করব। ইনশাআল্লাহ। তেলাওয়াত কৃত আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন:
يَآاَيُّهَا الَّذِيْنَ اَمَنُوْا اتَّقُوْا اللهَ وَكُوْنُوْا مَعَ الصَّادِقِيْنَ
অর্থাৎ হে ঈমানদারগন তোমরা আল্লাহ তায়ালাকে ভয় কর এবং সত্যবাদী লোকদের সাথে থাক। এই আয়াতে আল্লাহ তায়ালা আপনাকে আমাকে সরাসরি সম্ভোধন করেছেন। হযরত আদম আঃ থেকে নিয়ে হযরত ঈসা আঃ পযর্ন্ত লক্ষাধিক আম্বিয়ায়ে কেরাম দুনিয়ায় আগমন করেছেন। আল্লাহ তায়ালা তাদের কোন উম্মতকেই সরাসরি সম্ভোধন করে আহবান করেননি। একমাত্র আল্লাহর হাবীব আমাদের নবী মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যার খাতিরে আল্লাহ তায়ালা এই কায়েনাত, বিশ^^জগত সৃষ্টি করেছেন তাঁর উম্মতকেই সরাসরি يَآاَيُّهَا الَّذِيْنَ اَمَنُوْا বলে সম্ভোধন করেছেন। আপনি আমি কতবড় সৌভাগ্যবান যে, আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে সরাসরি ‘হে ঈমানদারগন’ বলে ডাক দিয়েছেন।
ঈমান কোন জিনিসের নাম ? ঈমান বলতে কি বুঝায় একথার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে আমার বর্তমান শায়খ হযরত মাওলানা মাজহার সাহেব দা. বা. বলেন: ভাই! ঈমান হলো বেহেশতের চাবির নাম। আর হে ঈমানদারগন! এর অর্থ হলো আমি তোমাদেরকে বেহেশতের চাবি দিয়ে দিলাম।
ভাই! ঈমান ছাড়া কোন দিন কোন মানুষের জন্য বেহেশতে যাওয়া সম্ভব হবে না। বেহেশতে তারাই যাবে যাদের ঈমান নামক দৌলত আছে।
আল্লাহ তায়ালা يَآاَيُّهَا النَّاسُ বা يَآاَيُّهَا الْاِنْسَانُ বলে সম্ভোধন না করে يَآاَيُّهَا الَّذِيْنَ اَمَنُوْا বলে সম্ভোধন কেন করেছেন? এর কারন হলো: দৌলতে ঈমানের মূল্য এবং তার ওজন সম্পর্কে উম্মতকে হেদায়াত করা। যাতে উম্মত ঈমানের কদর বুঝতে পারে। আর কোন বস্তুর মূল্য জানা থাকলে তার কদর করা সহজ হয়। তাহলে ঈমানের কি পরিমান মূল্য রয়েছে?
বলা হয়:- যদি দৌলতে ঈমানের মূল্য ও ওযন একদিকে রাখা হয় আর অপর দিকে আসমান-জমিনকে, আসমান-জমিনের মধ্যে যা কিছু রয়েছে তার ওযন, এবং দুনিয়ার সকল স্বর্ণ-রূপ্য, হীরা-মুক্তা, জওহর এর যে মূল্য রয়েছে, তার থেকে আরো হাজার হাজার গুণ বৃদ্ধি করে যদি অপর দিকে রাখা হয় তাহলে একজন মানুষের কাছে যে দৌলতে ঈমান রয়েছে তার সমান হবে না। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে ঈমান নামক দৌলত মুফ্ত দান করেছেন। যা আমরা এমনি, এমনিই পেয়েছি। কারো কাছ থেকে খরিদ করিনি। বরং আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে দান করেছেন। ঈমান নামক দৌলতকে আল্লাহ তায়ালা স্বয়ং নিজের হাতে রেখেছেন। কোন ফকির, দরবেশ, গৌছ, কুতুব এমনকি কোন নবী ও রাসূলের হাতে পযর্ন্ত রাখেননি। এই জন্য তিনি যাকে ইচ্ছা তাকেই দান করেন। আর যাকে চান না তাকে দান করেন না। ঈমান নামক দৌলত আল্লাহ তায়ালা তাকেই দান করেন যাকে তিনি মুহব্বত করেন। যেমন দেখা যায় যে, নবী যার ঘরে জন্ম গ্রহন করেছেন সে ঈমান থেকে মাহরূম হয়েছে। যে নবীকে কুলে পিঠে করে বড় করেছে, মায়া মুহাব্বত করেছে, আদর যতœ করেছে সেও ঈমান থেকে বঞ্চিত হয়েছে। আবু জাহেল, আবু লাহাব মাহরূম, এমনকি নবীজির চাচা খাজা আবু তালেব পযর্ন্ত ঈমান গ্রহন করা থেকে মাহরূম। অথচ আবু তালেব নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে অনেক সাহায্য-সহযোগীতা করেছেন। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর দিলের মধ্যে খাহেশ ছিল যে, আমার চাচা আবু তালেব আমাকে এত মুহাব্বত করেন, মায়া করেন যা অন্য কেউ করে না। যদি আমার চাচা ঈমান আনতেন! এই আকাংখা সবসময় তিনি করতেন। যখন আবু তালেবের মৃত্যুর সময় ঘনিয়ে আসল তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম চাচার নিকট হাজির হয়ে বললেন। চাচা! আপনি আমাকে সব ধরনের সাহায্য-সহযোগীতাই করেছেন। কতইনা মুহাব্বত করেছেন। আমি তো আপনার জন্য কিছুই করতে পারলাম না। এই মূহুর্তে আপনি যদি মাত্র একবার বলেন:-
لَاْ اِلَهَ اِلَّا اللهُ مُحَمَّدُ رَّسُوْلُ اللهِ (صلى الله عليه وسلم)
তাহলে আমি আপনাকে বেহেশতে নিয়ে যাবই যাব। কিন্তু আসল জিনিস হলো নসীব। খাজা আবু তালিব কালিমা পড়ে ঈমান আনার নিয়ত করেই ফেলেছিলেন। কিন্তু এমন সময় আবু জাহেল এসে বলতে লাগল যে, ভাই আবু তালেব! সারা যিন্দেগী ভাতিজার কালিমা পড়নি। এখন শেষ মূহুর্তে জাহান্নামের আযাবের ভয়ে তুমি কি কালিমা পড়ে নিবে?
ভাই! তুমি তো কালিমা পড়ে মারা যাবে। কিন্তু কলঙ্ক তো কিয়ামত পযর্ন্ত থেকেই যাবে। আবু জাহেলের বক্তব্য শুনে খাজা আবু তালেব নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে লক্ষ করে বলল।
فَاخْتَرْتُ النَّارَعَلَى الْعَارِ
ভাতিজা! আমি জাহান্নামের আগুন গ্রহন করলাম। দরকার হলে জাহান্নামের আগুন বরদাশত করে নিব কিন্তু দুনিয়ায় কলঙ্ক রেখে মৃত্যু বরণ করবনা। আবু তালেব ঈমানহারা হয়ে মারা যাওয়ায় নবীজি খুবই দুঃখিত হলেন।
তখন আল্লাহ তায়ালা নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে উদ্দেশ্য করে আয়াত নাযিল করেছেন।
আল্লাহ তায়ালা বলেন:- اِنَّكَ لَاتَهْدِىْ مَنْ اَحْبَبْتَ
হে নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! নিশ্চয় আপনি যাকে মুহাব্বত করেন তাকে হেদায়াত করতে পারবেন না। কেননা ঈমান তো আমার হাতে। আপনার কাজ হলো শুধুমাত্র তাবলীগ করা, পৌছে দেওয়া। হেদায়াত করা বা ঈমানদার বানানো আপনার কাজ নয়। কাজেই আপনি যাকে ইচ্ছা করবেন তাকে হেদায়াত করবেন। এটা কোন সময়ই হতে পারে না। বরং ঈমানের কর্তৃত্ব আমার হাতে। আমি যাকে মুহাব্বত করি তাকেই ঈমান দান করি। যাকে মুহাব্বত করি না তাকে ঈমানও দান করি না। কাজেই ‘ঈমানদার হওয়া’ এর অর্থ হলো আল্লাহ তায়ালার মুহাব্বত তার সাথে শামিল থাকা।
ঈমানের সাথে তাকওয়া জরূরী
আল্লাহ তায়ালা বলেন:- يَآاَيُّهَا الَّذِيْنَ اَمَنُوْا
হে আমার ঈমানদার বান্দাগন! আমার মাহবুব বান্দাগন! তোমাদের জন্য শুধু ঈমানই যতেষ্ট না। ঈমান আনার পর তোমাদের জন্য বিরাট একটা দায়িত্ব রয়েছে। আর তা হলো اتَّقُوْا اللهَ অর্থাৎ তোমরা আল্লাহকে ভয় কর। ঈমান আনার পর যদি অন্তরে আল্লাহর ভয় না থাকে। আল্লাহ নির্দেশ মোতবেক জীবন পরিচালনা করা না হয়। তাহলে ঈমান কমজুর ও দূর্বল হয়ে যাবে। একটি দূর্বল লাইট বা বাতি জ¦ালানোর পর হালকা বাতাস বা তীব্র বাতাস আঘাত হানার দ্বারা যেমনিভাবে লাইট বা বাতিটা নিভে যায় ঠিক তেমনিভাবে ঈমানের সাথে যদি তাকওয়া না থাকে, খোদাভীতি না থাকে, আল্লাহর এশ্ক ও মুহাব্বত না থাকে তাহলে “জিধার কা হাওয়া উধার কা রুখ” যে দিক থেকে বাতাস আসবে সে দিকে চলে যাবে। যদি ঈমান মজবুত করতে চাও, ঈমান স্টং করতে চাও, মরনের সময় ঈমান সাথে নিয়ে যেতে চাও তাহলে তাকওয়া এখতিয়ার কর। তবেই এধরনের ঈমান নিয়ে আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামিনের দরবারে উপস্থিত হওয়া যাবে। এবং ঈমানদার হিসাবে পরিচয় দেওয়া যাবে।
তাকওয়া বা আল্লাহর ভয় সবচেয়ে বড় ইবাদত
তাকওয়া বা আল্লাহর ভয় কিভাবে আসবে? তাকওয়া বা আল্লাহর ভয় আমাদের মাঝে এসেছে তা আমরা কিভাবে বুঝব? তাকওয়া বা আল্লাহর ভয় অর্জন হয়েছে কি না? তা আমরা এভাবে বুঝতে পারি যে, আমাদের প্রতিটি কাজ, প্রতিটি বিষয় সবসময় আল্লাহ তায়ালা দেখতেছেন কোন কিছুই তার নিকট গোপন নয়। আল্লাহ তায়ালা বলেন:-
اَلَمْ تَعْلَمْ بِاَنَّ اللهَ يَرَى
হে নবী! আপনি কি জানেন না? আল্লাহ তায়ালা সব কিছু দেখেন। অন্য আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন:-
وَهُوَ مَعَكُمْ اَيْنَمَا كُنْتُمْ
তোমরা যেখানেই থাকনা কেন আল্লাহ তায়ালা তোমাদের সাথে রয়েছেন। কাজেই যদি অন্তরে তাকওয়া বা আল্লাহর ভয় থাকে তাহলে সে কোন সময় আল্লাহর নাফরমানী করতে পারবেনা। সাধারনত দুনিয়ার রীতি-নীতি অনুসারে দেখা যায় যে, যদি কোন মুরিদ মনে করে আমার শায়খ আমার সাথে রয়েছেন। তখন সে স্বীয় শায়খের ভয়ে সিগেরেট খাবে না। যদি চোর মনে করে পুলিশ আমাকে দেখতেছে। তাহলে সে কোন সময় চুরি করবেনা। এমনিভাবে যদি ছেলে মনে করে আমার বাবা আমার সাথে রয়েছেন। তাহলে সে কোন সময় যিনা-ব্যবিচার করবে না। কাজেই মুরিদ যদি শায়খের ভয়ে সিগেরেট না খায়, চোর যদি পুলিশের ভয়ে চুরি না করে এবং ছেলে যদি বাবার ভয়ে যিনা-ব্যবিচারে লিপ্ত না হয়। তাহলে যার মধ্যে তাকওয়া বা আল্লাহর ভয় থাকবে সে কোন সময়, কোন অবস্থাতে আল্লাহর নাফরমানী করতে পারেনা। সূতরাং আল্লাহর নাফরমানী থেকে বাঁচা গোনাহর কাজ থেকে বিরত থাকাই হলো সবচেয়ে বড় ইবাদত।
আল্লামা রূমী রহ. বলেন:
آدميت لحم وشحم پوست نيست ٭ آدميت جز رضائےدوست نيست
হাড্ডী, চামড়া, হাত, পা, চোখ, মুখ ইত্যাদি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দ্বারা গঠিত বস্তুকে প্রকৃতপক্ষে মানুষ বলা হয়না। প্রকৃতপক্ষে তাকেই মানুষ বলা হয় যার উপর তার পরম বন্ধু মহান আল্লাহ তায়ালা সন্তুষ্ট। আর যে তাকওয়া এখতিয়ার করে, গোনাহর কাজ করেনা এবং আল্লাহর নাফরমানি থেকে বেঁচে থাকে। তাকেই তিনি ভালবাসেন, তার উপরই তিনি সন্তুষ্ট থাকেন।
আল্লাহর ভয় আল্লাহর সাথে বন্ধুত্বের সম্পর্ক স্থাপন করে
আল্লাহ তায়ালা বলেন:
اِنْ اَوْلِيَائُهُ اِلَّا الْمُتَّقُوْنَ
অর্থাৎ আল্লাহর ওলী তারাই যারা মুত্তাকী। যখন মানুষ গোনাহ ছেড়ে দেয়। তখন তারা সাধারণ মানুষ থাকে না। তারা ভি.আই.পি. হয়ে যায়। আল্লাহ তায়ালার দোস্ত হয়ে যায়। আল্লাহর দোস্ত ঐ সকল মানুষ যারা আল্লাহর নাফরমানী ছেড়ে দেয়। আল্লাহর নাফরমানী করে করে কোন দিন কোন মানুষ আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামিনের দোস্ত হতে পারবে না। প্রকৃতপক্ষে আল্লাহর নাফরমানী ছেড়ে দিয়েই আল্লাহর দোস্ত হওয়া যায়। ভাই! আপনার কোন বন্ধু যদি সবসময় আপনার মুখালিফ আচারণ করে। আপনার বিরোধিতা করে তাহলে সে কোনদিন আপনার মুখলিস ফ্রেন্ড বা বন্ধু হতে পারবে না। আপনার আসল ও মুখলিস বন্ধু তো সেই ব্যক্তি যে আপনার কথামত চলে। আপনার মর্জি মোতাবেক চলে। আর আল্লাহ তায়ালারও মুখলিস ফ্রেন্ড, একনিষ্ঠ বন্ধু সেই ব্যক্তি যে তাঁর নির্দেশ মত জীবন পরিচালনা করে।
আল্লাহ তায়ালা দয়ার সূরতে, মায়ার সূরতে, মুহাব্বত ও ভালবাসা দেখিয়ে বলতেছেন:
يَآاَيُّهَا الَّذِيْنَ اَمَنُوْا اتَّقُوْا اللهَ
হে আমার প্রতি বিশ^াসীগন! হে আমার মুমিন বান্দাগন! তোমরা একমাত্র আমাকেই ভয় কর। তোমরা তাকওয়া এখতিয়ার কর।
ভাই! আল্লাহর ভয়ই হলো আল্লাহর সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন করার আসল মাধ্যম। আর তাকওয়া এমন একটা বস্তু যা প্রত্যেক বালেগ নারী-পুরুষের উপর সবসময় ফরজ। তাকওয়া চব্বিশ ঘন্টা ফরজ। নামাজ, রোজা, হজ¦, যাকাত আরো অন্যান্ন হুকুম-আহকাম চব্বিশ ঘন্টা ফরজ নয়। কিন্তু আল্লাহর ভয়, আল্লাহর খওফ চব্বিশ ঘন্টাই ফরজ। এক সেকেন্ডের জন্যও তাকওয়া বাদ দেওয়া যাবেনা। মসজিদের মধ্যে তাকওয়া এখতিয়ার করতে হবে। বাজারে গেলে তাকওয়া এখতিয়ার করতে হবে। দোকানে গেলে তাকওয়া এখতিয়ার করতে হবে। যেখানে থাকুক, যে অবস্থাতে থাকুক না কেন সবসময় তাকওয়া থাকতে হবে। এই কারনেই বলা হয় তাকওয়া সবসময় ফরজ।
ভাই! তাকওয়ার মাধ্যমে মানুষ, মানুষ বনে। ইনসান, ইনসান বনে। তাকওয়ার মাধ্যমে মানুষের দুনিয়ার জীবন ও সুন্দর হয়। আবার আখেরাতের জীবন ও সফল হয়। যারা তাকওয়া ওয়ালা জীবন পরিচালনা করে আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে উদ্দেশ্য করে বলেন:
وَمَنْ يَّتَّقِ اللهَ يَجْعَلْ لَّهُ مَخْرَجاً
অর্থাৎ যারা তাকওয়া তথা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা কে ভয় করবে তার জন্য দুনিয়ার সকল ব্যস্ততা ও পেরেশানির মধ্যেও শান্তির আশ্রয়স্থলে আশ্রয় দান করবেন।
ভাই! দুনিয়ার খনস্থায়ী জীবনে সুখ-শান্তি ও আরাম-আয়েশের জন্য মানুষ কত কিছুইনা করে। সুন্দর বাড়ী নির্মাণ করে। গরম থেকে বাঁচার জন্য এয়ারকন্ডিশন লাগায়। ভ্রমন করার জন্য শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত গাড়ী খরিদ করে। মোটকথা একজন মানুষ সুখে-শান্তিতে বসবাস করার জন্য যা যা দরকার সব কিছুরই ব্যবস্থা সে করে। আর এগুলো দ্বারা সে তার শরীরের জাহেরী অংশ অর্থাৎ শরীরের চামরাকে আরাম দিতে পারে। কিন্তু দিলের মধ্যে যে অশান্তি রয়েছে, অস্থিরতা রয়েছে। তা এয়ারকন্ডিশন দ্বারা দূর হয় না। বিলাস বহুল বাড়ী বা গাড়ী দ্বারা দূর হয় না। বরং দিন দিন বাড়তে থাকে। তাহলে দিলের অশান্তি ও অস্থিরতা কোন জিনিসের দ্বারা দূর হবে? কোন কাজ করলে দিলের অশান্তি ও অস্থিরতা চলে যাব?
আল্লাহ তায়ালা তা বলে দিয়েছেন:
وَمَنْ يَّتَّقِ اللهَ يَجْعَلْ لَّهُ مَخْرَجًا
যে সকল মানুষ আমি আল্লাহর নাফরমানী ছেড়ে দিবে, আমার হুকুম-আহকাম মেনে আমার মর্জি মোতাবেক জীবন পরিচালনা করবে আমি আল্লাহ তার দিলের সকল অশান্তি ও পেরেশানি দূর করে শান্তি ও রহমত দ্বারা তার অন্তরকে ভরপুর করে দিব। কাজেই বুঝা গেল আল্লাহর ভয়ই মানুষের শরীরের জাহেরী ও বাতেনী অংশকে শান্তির ছায়া দ্বারা শীতল করে দিতে পারে।
হযরত মুসা আ. ও আফলাতুনের ঘটনা ঃ
হযরত হাকীমুল উম্মত হযরত মাওলানা আশরাফ আলী থানভী রহ. লিখেন যে, হযরত মুসা আ. এর যমানায় একজন সাইন্টিস ছিল। যার নাম ছিল আফলাতুন। তিনি এমন একজন সাইন্টিস ছিলেন যে, যদি তাঁর সামনে কোন মানুষের নাম নেওয়া হতো, অথবা কোন মানুষের ছবি পেশ করা হতো তাহলে সে ঐ নামের উপর বা ছবির উপর রিচার্জ করে, গবেষনা করে বুঝতে পারত যে, লোকটির স্বভাব-চরিত্র কেমন? তার আচার-ব্যবহার কি রকম?
মোটকথা তার জীবন-চরিত্রের হিষ্টরি/ইতিহাস সে বুঝে ফেলত। আশ্চর্য বিষয় হলো হযরত মুসা আ. আফলাতুনের কথা শুনেছেন কিন্তু তার সাথে কোনদিন স্বাক্ষাত হয়নি। আবার আফলাতুন ও মুসা আ. এর কথা শুনেছেন তিনি যে আল্লাহর নবী একথাও তিনি জানেন কিন্তু কোনদিন তাদের দেখা হয়নি। ঘটনাক্রমে তাদের পরস্পর পরস্পরের সাথে একদিন স্বাক্ষাত হয়। আফলাতুন নবী মুসা আ. কে দেখার সাথে সাথে চিনে ফেললেন। কারন সে তো একজন সাইন্টিস। হযরত মুসা আ. ও আফলাতুনকে দেখার সাথে সাথেই চিনে ফেলেন। তিনি তাকে কিভাবে চিনলেন? তিনি কি সাইন্টিস ছিলেন?
এধরনের প্রশ্নের উত্তরে বলা হবে যে, আল্লাহ তায়ালা প্রত্যেক নবী-রাসূলকে স্বজাতীর মধ্যে সবচেয়ে বেশী জ্ঞানের অধিকারী বানিয়ে প্রেরণ করে থাকেন। এ হিসাবে হযরত মুসা আ. আফলাতুন থেকে বড় সাইন্টিস ছিলেন। কাজেই একজন অন্য জনকে দেখেই পরিচয় করে ফেললেন। পরিচয় করতে কোন অসুবিধা হয়নি।
যাই হোক পরিচয় পর্ব শেষ হওয়ার পর আফলাতুন হযরত মুসা আ. কে জিজ্ঞেস করল:- হযরত মুসা আ.! আমার একটা প্রশ্ন রয়েছে যার সঠিক উত্তর কোথাও পাচ্ছি না। মুসা আ. বললেন:- কি প্রশ্ন? আফলাতুন বলল:- প্রশ্ন হলো যে, সারা পৃথিবী যদি ধনুক হয়, দুনিয়ার সকল মসিবত যদি গুলি বা তীর হয় আর নিক্ষেপকারী যদি স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা হন তাহলে বাঁচার কি কোন উপায় রয়েছে? মুসা আ. উত্তরে বললেন:-
ভাই আফলাতুন! সারা পৃথিবী যদি ধনুক হয়, দুনিয়ার সকল মসিবত যদি গুলি বা তীর হয় আর নিক্ষেপকারী যদি স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা হন তাহলে বাঁচাতো একেবারে সহজ। এ কথা শুনে ও তার এত বড় প্রশ্নের সমাধান পেয়ে আফলাতুন হয়রান ও পেরেশান হয়ে গেলো। এবং বলতে লাগলো কিভাবে বাঁচা সহজ? মুসা আ. বলেন: সারা পৃথিবী যদি ধনুক হয়, দুনিয়ার সকল মসিবত যদি গুলি বা তীর হয় আর নিক্ষেপকারী যদি স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা হন আর লোকটি যদি আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামিনের আশ্রয়ে চলে যায় তাহলে তো আর শরীরে গুলি লাগার কথা না। কারন গুলিতো সামানের দিকে যায় আর লোকটি তো আল্লাহ তায়ালার আশ্রয়েই আছে। এ বিষয়টাকেই আল্লাহ তায়ালা নিজের ভাষায় ব্যক্ত করেছেন:-
وَمَنْ يَّتَّقِ اللهَ يَجْعَلْ لَّهُ مَخْرَجا
অর্থাৎ যে সকল মানুষ আল্লাহর নাফরমানী ছেড়ে দিবে, তার হুকুম-আহকাম মেনে তার মর্জি মোতাবেক জীবন পরিচালনা করবে আল্লাহ তায়ালা তাকে নিজের আশ্রয়স্থলে আশ্রয় দান করবেন।
সারা পৃথিবী যদি মসিবত আর মসিবত, পেরেশানী আর পেরেশানী হয়। আর কোন মানুষ যদি স্বয়ং আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামিনের আশ্রয় গ্রহন করে তাহলে সারা বিশে^র মানুষ মসিবতে থাকলেও এই মানুষটা কোন মসিবতে থাকবেনা। কারন আল্লাহ তায়ালা বলেন: তোমরা যদি তাকওয়া এখতিয়ার কর তাহলে আমি আল্লাহ তায়ালা তোমার জীবনটাকে মসিবত মুক্ত, পেরেশান মুক্ত করে দিব।
ভাই! আসল কথা হলো যে, যারা তাকওয়া এখতিয়ার করবে তার যিন্দেগীতে কোন মসিবত থাকবে না। কোন পেরেশানী থাকবে না। তার জীবনে কোন অশান্তি থাকবে না। সে অশান্তির মধ্যেও শান্তিতে বসবাস করবে। কারন প্রত্যেক মানুষের দুটি হালত রয়েছে। একটি হলো শান্তির হালত আর অপরটি হলো অশান্তির হালত। আল্লাহ তায়ালা তাকওয়া ওয়ালা মানুষের জন্য অশান্তি হালতকে শান্তির হালতে পরিবর্তন করে দেন।
আমার শায়খ শায়খুল আরব ওয়াল আজম আরিফ বিল্লাহ শাহ হাকীম মুহাম্মদ আখতার সাহেব রহ. একটি মিছাল পেশ করেন। তিনি বলেন: যেমনিভাবে ওয়াটার প্রেুাপ ঘড়ির মধ্যে কোন সময়ই পানি প্রবেশ করে না। যদিও তার চতুরপাশের্^ পানি থাকে।
ঠিক তেমনিভাবে যে সকল মানুষের দিলের মধ্যে তাকওয়া থাকবে আল্লাহ তায়ালা তার দিলকে ওয়াটার প্রেুাপ ঘড়ির মত সকল প্রকার অশান্তি, মসিবত ও পেরেশান থেকে হেফাজত করবেন। অর্থাৎ তার দিলের মধ্যে কোন ধরনের অশান্তি, মসিবত ও পেরেশানী কোন সময়ই প্রবেশ করবে না। স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা তার দিলকে হেফাজত করবেন। এক কথায় আল্লাহ তায়ালা তার দিলকে ওয়াটার প্রেুাপ ঘড়ির মত বানিয়ে দিবেন। কাজেই ব্যক্তিগত তাকওয়া এখতিয়ার করলে ব্যক্তিগতভাবে শান্তি অনুভব করবে। সামগ্রিকভাবে তাকওয়া এখতিয়ার করলে সামগ্রিকভাবে শান্তি অনুভব করবে।
এর পর আল্লাহ তায়ালা বলেন: وَيَرْزُقُهُ مِنْ حَيْثُ لَا يَحْتَسِبْ
অর্থাৎ যদি তাকওয়া এখতিয়ার কর, গোনাহ ছেড়ে দাও তাহলে আমি আল্লাহ তায়ালা ওয়াদা দিলাম যে, তোমরা এমন স্থান থেকে খাবার খাবে, রুষ্ট খাবে, কুড়মা-পোলাও খাবে আর এগুলো এমন স্থান থেকে আসবে যা তোমরা কোন সময় কল্পনাও করতে পারবে না।
ভাই! আসল দৌলত হলো তাকওয়া। আমরা তো সকলেই নামাজ পড়ি, রোজা রাখি, হজ¦ ও ওমরাহ পালন করি, যাকাত প্রদান করি। আলহামদুলিল্লাহ; আমাদের ইবাদতের কোন কমতি নাই। কিন্তু আসল ইবাদত কি? এটা আমরা জানি না। যার কারনে সকল ইবাদত পালন করার পরও অশান্তি আর অশান্তি।
ভাই! আসল ইবাদত হলো আল্লাহ তায়ালার নাফরমানী থেকে বেঁচে থাকা। গোনাহ ছেড়ে দেওয়া। একজন মানুষ নামাজ পড়ে, রোজা রাখে, ওমরাহ করে, হজ¦ও পালন করে এগুলোর সাথে সাথে সে গোনাহর কাজও করে। তাহলে গোনাহর নহুসতের কারনে তার নামাজের যে এ্যাকশন ছিল তা নষ্ট হয়ে যাবে। রোজার এ্যাকশন নষ্ট হয়ে যাবে। হজ¦ ও ওমরাহ-এর এ্যাকশন নষ্ট হয়ে যাবে। যেমন একটি পাত্রের তলায় যদি ছিদ্র্র থাকে তাহলে উপর দিয়ে যতই পানি ঢালা হোক না কেন এই পাত্র কোন সময় ভরার আশা করা যায় না।
ঠিক তেমনিভাবে ইবাদতের সাথে যদি গোনাহ থাকে তাহলে এই ইবাদতের দ্বারা কোন লাভের আশা করা যায় না। এই জন্য আসল জিনিস হলো গোনাহ পরিত্যাগ করতে হবে। গোনাহ ছাড়তে হবে।
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
اِتَّقِ الْمَحَارِمَ تَكُنْ اَعْبُدَ النَّاسِ
অর্থাৎ তুমি সকল পাপ কাজ থেকে বেঁচে থাক, তাহলে তুমিই হবে সবচেয়ে বড় ইবাদতগুজার বান্দা।
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন যে, তোমরা মাহারিম গুলো ছেড়ে দাও। مَحَارِمْ এর অর্থ কি? مَحَارِمْ এর অর্থ হলো যে গুলো আল্লাহ তায়ালা হারাম করেছেন, নিষেধ করেছেন। যদি নিষিদ্ধ বস্তু সমূহ পরিহার করা হয় তাহলেই প্রকৃতপক্ষে মুত্তাকি হওয়া যাবে, আল্লাহ ওয়ালা হওয়া যাবে।
আমরা যদি আল্লাহ তায়ালার নাফরমানী থেকে বাঁচতে পারি তাহলে এটা আমাদের জন্যই ফায়দা হবে। আমরাই লাভবান হবো। এই বিষয়টাকেই নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ভাষায় বর্ণনা করা হয়েছে।
اِنْ اَحْسَنْتُمْ اَحْسَنْتُمْ لِاَنْفُسِكُمْ وَاِنْ اَسَئْتُمْ فَلَهَا
অর্থাৎ যদি তোমরা ভাল কাজ কর তাহলে এর ফল তোমরাই উপভোগ করবে। আর যদি খারাপ কাজ কর তাহলে খারাপের ফল তোমাকেই উপভোগ করতে হবে। অন্য কারো হবে না। যখন মানুষ গোনাহ করে তখন তার গোনাহর এ্যাকশন অবশ্যই রয়েছে। তা হলো এই যে, গোনাহর কারনে তার মূল্যবান যিন্দেগীটা একেবারে বরবাদ হয়ে যায়। এমনকি গোনাহর কারনে ঈমানহারা হয়ে দুনিয়া থেকে বিদায় গ্রহন করতে হয়। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সব সময় আল্লাহ তায়ালার দরবারে দোয়া করতেন:-
اَللَّهُمَّ لَا تُشْقِيْنِىْ بِمَعْصِيَتِكَ
হে আল্লাহ তুমি আমাকে আমার গোনাহর কারনে শক্বী বানিওনা। شَقِىْ এর অর্থ হলো: দূর্ভাগা বা বদবখত। হাদীসে উল্লেখিত شَقِىْ এর দ্বারা উদ্দেশ্য কি? শক্বী বলতে আমরা কি বুঝি?
شقى শব্দের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে হাকীমুল উম্মত আশরাফ আলী থানভী রহ. বলেন:- شقى এমন মানুষকে বলা হয় যার মৃত্যু ঈমানের সাথে হয়না। একজন মানুষ যদি ঈমান হারা হয়ে দুনিয়া থেকে বিদায় গ্রহন করে এর চেয়ে বড় শক্বী, বড় দূর্ভাগা আর কেউ হতে পারে না। বুঝা গেল গোনাহ মানুষকে বদবখত, কমবখত ও শক্বী বানায়। তার যিন্দেগী নষ্ট করে। তার শান্তি নষ্ট করে। তার আল ও আউলাদ নষ্ট করে। তার সারাটা জীবনে অশান্তি আর অশান্তি সৃষ্টি হয়। সর্বপরি মৃত্যুর সময় তার কালিমা নসীব হয়না। ঈমান হারা হয়ে দুনিয়া থেকে বিদায় গ্রহন করে। কাজেই সবচেয়ে বড় দায়িত্ব হলো গোনাহ ছেড়ে দেওয়া। আল্লাহর নাফরমানী ছেড়ে দেওয়া। এবং আল্লাহ তায়ালা যে দৌলতে ঈমান মুফ্ত দান করেছেন তার সঠিক হেফাজত করা। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে তাওফিক দান করুন। আমীন।
আল্লাহ তায়ালা বলেন:
يَآاَيُّهَا الَّذِيْنَ اَمَنُوْا اتَّقُوْا اللهَ
হে ঈমানদারগন! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর।
এখন কথা হলো যে, আমরা কিভাবে আল্লাহর ভয় হাসিল করব? কিভাবে আল্লাহর নাফরমানী থেকে বাঁচাব? কোন কাজ করলে আমরা আল্লাহর নাফরমানী থেকে বেঁচে আল্লাহ তায়ালার সঠিক বন্ধু হতে পারব? আর আমাদের প্রত্যেকের জন্য এসবগুলো বিষয় জানা আবশ্যক। আলহামদুলিল্লাহ! আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামিন আমাদেরকে এসবগুলো বিষয়ের উত্তর দিয়ে দিয়েছেন।
তিনি বলেন:- وَكُوْنُوْا مَعَ الصَّادِقِيْنَ
অর্থাৎ তোমরা সাদেকীনদের সাথী হয়ে যাও। তোমরা আল্লাহ ওয়ালার সহবত গ্রহন কর। যখন আল্লাহ ওয়ালার সহবতে বসবে। তাদের সংস্পর্শ লাভ করবে। তখন তাদের সহবত ও সংস্পর্শের কারনে তোমরাও তাদের মত আল্লাহ ওয়ালা হয়ে যাবে।
আমার হযরত বলেন:- আমি পুরা দুনিয়াকে চ্যালেঞ্জ করি যে, তোমরা আমাকে এমন একজন ডাক্তার দেখাও যে অন্য একজন ডাক্তারের সংস্পর্শ ছাড়া ডাক্তার হয়েছে। এমন একজন ড্রাইভার দেখাও যে অন্য ড্রাইভারের সংস্পর্শ ছাড়া ড্রাইভার হয়েছে। একজন ইঞ্জিনিয়ার দেখাও যে অন্য ইঞ্জিনিয়ারের সংস্পর্শ ছাড়া ইঞ্জিনিয়ার হয়েছে। এমনিভাবে একজন আল্লাহ ওয়ালা দেখাও যে অন্য আরেকজন আল্লাহ ওয়ালার সংস্পর্শে না গিয়ে আল্লাহ ওয়ালা হয়েছেন। অবশ্যই এমন নজীর দুনিয়ার কেউই দেখাতে পারবে না। কাজেই আল্লাহ ওয়ালা হতে চাইলে আল্লাহ ওয়ালার সহবত এখতিয়ার করতে হবে।
ভাই! যেমনিভাবে জিসিমের ওজুদ, শরীরের কন্ডিশন অস্তিত্বে আসার জন্য মা-বাবার সহবত বা মিলন শর্ত। ঠিক তেমনিভাবে আল্লাহ ওয়ালা হওয়ার জন্য আল্লাহ ওয়ালার সহবত এখতিয়ার করা শর্ত। কেননা মানুষের জিসিম বনে মা-বাবার সহবতে। আর মানুষ আল্লাহ ওয়ালা হয়, তার রূহ গঠন ও পরিশুদ্ধ হয় আল্লাহ ওয়ালার সহবতে। কাজেই বুঝা গেল যে, আল্লাহ ওয়ালার সহবত হলো সবচেয়ে বড় দৌলত। সবচেয়ে বড় সম্পদ।
আমার শায়খ শাহ হাকীম মুহাম্মদ আখতার সাহেব রহ. বলেন:-
دودھ دودھ والوں سےملتا ہے كپڑا كپڑا والوں سےملتا ہىں عطر عطر والوں سے ملتا ہيں اور الله الله والوں سےملتا ہىں
অর্থাৎ দুধ, দুধ ওয়ালার কাছে পাওয়া যায়, কাপড়, কাপড় ওয়ালার কাছে পাওয়া যায়, আতর, আতর ওয়ালার কাছে পাওয়া যায় আর আল্লাহ, আল্লাহ ওয়ালার কাছে পাওয়া যায়।
ভাই! আল্লাহ পযর্ন্ত পৌছার একটি মাত্র রাস্তা। তাহলো, আল্লাহ ওয়ালার সহবতে বসা। এবং তাদের সংস্পর্শ লাভ করা। যখন আল্লাহ ওয়ালার হাতে হাত রাখবে, তাদের সহবতে উঠা-বসা করবে। ইনশাআল্লাহ; আল্লাহ ওয়ালার হাতে হাত রাখার বরকতে, আল্লাহ তায়ালা দুনিয়া থেকে আল্লাহর ওয়ালা বানিয়েই মৃত্যু দান করবেন।
এ কথাটাই আল্লাহ তায়ালা বলেন:- وَكُوْنُوْا مَعَ الصَّادِقِيْنَ
হে ঈমানদানগন! তোমরা সাদীকদের সাথে থাকলে সাদীক হবে। মুত্তাকীদের সাথে থাকলে মুত্তাকী হবে। আল্লাহ তায়ালা মুত্তাকীদের মধ্যে এক প্রকার ‘পাওয়ার’ রেখেছেন যা তাদের সহবতে থাকার মাধ্যমে অর্জন করা যায়। যেমন:- আগুনের মধ্যে গরমের ‘পাওয়ার’ রয়েছে। বরফের মধ্যে ঠান্ডার ‘পাওয়ার’ রয়েছে। আর মুত্তাকীদের মধ্যে আল্লাহ ওয়ালা বানানোর ‘পাওয়ার’ রয়েছে।
সূতরাং যেমনিভাবে আগুনের কাছে গরমের ‘পাওয়ার’ লাভ করা যায়। বরফের কাছে ঠান্ডার ‘পাওয়ার’ লাভ করা যায়। ঠিক তেমনিভাবে মুত্তাকীদের কাছে আল্লাহ ওয়ালা হওয়ার ‘পাওয়ার’ লাভ করা যায়। তাদের ‘পাওয়ার’-এর বদৌলতে আল্লাহ তায়ালা অবশ্যই আল্লাহ ওয়ালা বানিয়ে দিবেন।
গোনাহ ছাড়ার সহজ পথ
আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে দয়া করে, মায়া করে এবং মুহাব্বত করে মুফ্ত দৌলতে ঈমান দান করেছেন। এখন আমাদের সবচেয়ে বড় দায়িত্ব হলো যে, ঈমানের হেফাজত করা। আর ঈমানের হেফাজত করা যায় গোনাহ ছাড়ার মাধ্যমে। আল্লাহ তায়ালার নাফরমানী ছাড়ার মাধ্যমে। আল্লাহ তায়ালার নাফরমানী ছাড়ার সহজ-সরল ব্যবস্থা হলো:- আল্লাহ ওয়ালার দরবারে আসা। তাদের সহবত ও সংস্পর্শ এখতিয়ার করা।
যদি আল্লাহ ওয়ালার নজর একবার আমাদের উপর পড়ে তাহলেই আমাদের জীবন স্বার্থক ও সফল। কেননা তাদের নজরের ‘পাওয়ার’ রয়েছে। তাদের নজরের আছর বা প্রতিক্রিয়া রয়েছে।
আসহাবে কাহাফের ঘটনা।
আসহাবে কাহাফের সাত জন সাথীদের সাথে একটি কুকুর ছিল। যার নাম হলো কিতমীর। কিতমীর নামক কুকুরটি তাদের সহবতে থাকার কারনে, এবং তাদের দৃষ্টি তার প্রতি পড়ার কারনে আল্লাহ তায়ালা এই কুকুরকে মানুষের সূরত দান করে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। আর এটাই হলো আল্লাহ ওয়ালার নজরের আছর বা প্রতিক্রিয়া।
হযরত শাহ আব্দুল কাদীর রহ.-এর ঘটনা
একদিন হযরত শাহ আব্দুল কাদীর রহ. মসজিদে বসে আল্লাহ, আল্লাহ, আল্লাহ যিকির করছিলেন। যখন যিকির শেষ করে মসজিদ থেকে বের হলেন তখন হঠাৎ এক কুকুরের উপর তাঁর নজর পড়ল। এই কুকুরের উপর নজর পড়ার পর থেকে যখনই অন্নান্য কুকুর এই কুকুরকে দেখত তখনই তার সামনে নত হয়ে যেত। লেজ গুটিয়ে নিত। তার সামনে দাঁড়াতে সাহস পেত না। হাকীমুল উম্মত আশরাফ আলী থানভী রহ. বলেন: এই কুকুরের উপর হযরত শাহ আব্দুল কাদীর রহ.-এর নজর পড়ার কারনে সে সকল কুকুরের লিডার বা নেতা হয়ে গিয়েছিল।
হযরত সায়্যিদ আহমদ বেরলভী রহ.-এর ঘটনা
একদা হযরত সায়্যিদ বেরলভী রহ. জিহাদে যাওয়ার জন্য বের হলেন। পথিমধ্যে কোন একজন মানুষের উপর তাঁর নজর পড়ল। আল্লাহর ওলীর নজর পড়ার পর যখন লোকটি মসজিদে প্রবেশ করল সাথে সাথে পুরো মসজিদ তার চেহারার আলো দ্বারা আলোকিত হয়ে গেল। ঐ সময় মসজিদের মিম্বারে বসা ছিলেন শাহ রফি উদ্দীন রহ.।
এ অবস্থা দেখে তিনি বললেন:- দেখত কে মসজিদে প্রবেশ করল? খোজ নিয়ে দেখা গেল একজন সাধারন মুসুল্লী প্রবেশ করেছে। তার চেহারার আলো সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলো। কিসের বদৌলতে ইহা অর্জন করেছো? উত্তরে সে বলল:- আমি মসজিদে আসার সময় আমার প্রতি হযরত সায়্যিদ আহমদ বেরলভী রহ. মাত্র একবার তাকিয়ে ছিলেন। তখন থেকেই আমি এ আলো অনুভব করতে থাকি।
তখন রফি উদ্দীন রহ. বলেন: হযরত বেরলভী রহ.-এর নেক নজরের বদৌলতেই তোমার চেহারার মধ্যে এধরনের আলো প্রকাশ পেয়েছে।
ভাই! আল্লাহ ওয়ালার সহবতই হলো দুনিয়ার মধ্যে সবচেয়ে বড় নেয়ামত। এর দ্বারাই আল্লাহর নাফরমানী থেকে বাঁচা যায়।
আমার হযরত বলেন:- ‘সহবত’ এমন একটা শব্দ যা কোরআন, হাদীস ও পূর্ণ শরীয়তের খুলাসা বা সারমর্ম। আল্লামা রূমী রহঃ বলেন:-
ايك زمانےصحبتت بااولياء ٭ بہتر از صد سالہ طاعت بے ريا
অর্থাৎ আল্লাহ ওয়ালার সহবতে কিছু সময় বসা, একশত বৎসর বে-রিয়া ইবাদত করার চেয়েও উত্তম।
আল্লামা মুফতি শফী সাহেব রহ. এর নজরে যখন এই শে’র পড়ল। তখন তিনি কনফিউজ হয়ে গেলেন। হয়রান-পেরেশান হয়ে গেলেন যে, আল্লামা রূমী রহ. এটা কেমন কথা বললেন? শত শত বছর ইবাদত বন্দেগী করে যে পরিমান অগ্রসর হওয়া যায়না আল্লাহ ওয়ালার সহবতে কিছু সময় বসার দ্বারা তার চেয়ে অনেক বেশী অগ্রসর হওয়া যায়। তখন তিনি এ প্রশ্ন নিয়ে হযরত থানভী রহ.-এর কাছে গেলেন। এবং বললেন:- হযরত! এই শে’র-এর মানে কি? আল্লামা রূমী রহ.-এর কথাটা কি সঠিক?
হযরত থানভী রহ. বললেন:-
بهائ علامہ رومى نے صحبت اولياء كو چهوٹا كرديا
আল্লামা রূমী রহঃ তো কম বলেছেন। আমি তো মনে করি কিছু সময় আল্লাহ ওয়ালার সহবতে বসা এক লক্ষ বছর বে-রিয়া ইবাদত বন্দেগীর চেয়েও উত্তম।
ভাই! ইবাদতের মাধ্যমে দু’টি জিনিস পাওয়া যায়। একটা হলো:- জান্নাত। দ্বিতীয়টা হলো:- সওয়াব। কিন্তু সহবতে আওলিয়া তার চেয়ে অনেক গুন আগে। কারন, সহবতে আওলিয়া দ্বারা জান্নাতের কোন প্রশ্ন নাই, সওয়াবের কোন প্রশ্ন নাই। বরং আল্লাহ ওয়ালার সহবতের দ্বারা স্বয়ং আল্লাহকে পাওয়া যায়। জান্নাত হলো মাখলুক, আল্লাহ হলেন খালিক। ইবাদতের মাধ্যমে মাখলূক জান্নাত পাওয়া যায়। আর সহবতে আওলিয়ার মাধ্যমে মালিকে জান্নাত, খালিকে জান্নাত, আল্লাহ পাওয়া যায়। কাজেই যারা আল্লাহ ওয়ালার সহবত এখতিয়ার করে তারা কোন কিছু থেকে মাহরূম হয়না।
যদি সে কোন কারনে বে-আমলও হয়ে যায় তাহলে ইনশাআল্লাহ একদিন না একদিন সহবতের বদৌলতে আমলের দিকে ফিরে আসবেই আসবে।
হযতর শাহ জালাল মুর্জারাদে ইয়ামনি রহ.-এর সাথে ৩৬০ জন আওলিয়া ছিলেন। ইয়ামনি রহ.-এর সহবতের কারনে ৩৬০ জনের প্রত্যেকটা ইনসান আল্লাহর ওলী হয়ে দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছেন। কাজেই গোনাহ ছেড়ে দিয়ে আল্লাহর ওলী হতে চাইলে, আল্লাহর নাফরমানী থেকে বাঁচতে হলে। সহবতে আওলিয়া এখতিয়ার করতে হবে। তাদের সান্নিধ্যে আসতে হবে। তাহলেই দুনিয়াতে আসবে শান্তি। আর আখেরাত হবে সফল।
এখন প্রশ্ন হলো যে, আল্লাহ ওয়ালা কোথায় পাব ? হযরত মুফতি শফী রহ. এর পুত্র জকী। যিনি লাহুর থাকতেন। একদিন মুফতি সাহেব রহ. ছেলেকে চিঠি লিখলেন যে, বেটা জকী! তুমি সবসময় আল্লাহ ওয়ালার সহবতে থেকো।
জকী উত্তরে লিখলেন যে, আব্বাজান! ‘ইধার কুঈ আল্লাহ ওয়ালা নেহী হেঁ’ এখানে তো কোন আল্লাহ ওয়ালা নাই। মুফতি সাহেব রহঃ আবার চিঠি লিখলেন যে, তোমার এখানে কোন মসজিদ নেই? কোন মুয়াজ্জিন নেই? কেউ কি আজান দেয়না? বেটা! যিনি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়েন তিনিই আল্লাহ ওয়ালা। তুমি আব্দুল কাদীর জিলানী রহ.-এর চিন্তা করোনা। তুমি মঈনুদ্দীন চিশতী রহ.-এর চিন্তা করোনা। বরং তুমি যাকে আল্লাহ ওয়ালা মনে কর তিনিই হলেন প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ ওয়ালা কাজেই তুমি তারাই সহবত এখতিয়ার কর। তাঁর সান্নিধ্য লাভ কর। তাহলে তুমিও ইনশাআল্লাহ আল্লাহ ওয়ালা হয়ে যাবে।
ভাই! আমি আপনাদের খেদমতে তিনটা কথা গুজারিশ করেছি। তা হলো:-
১. আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে যে দৌলতে ঈমান দান করেছেন, তার শুকরিয়া আদায় করা। শুকরিয়া আদায়ের মাধ্যমে নেয়ামত বৃদ্ধি পায়। কেননা আল্লাহ তায়ালা বলেন:-
لَئِنْ شَكَرْتُمْ لَأَزِيْدَنَّكُمْ وَلَئِنْ كَفَرْتُمْ اِنَّ عَذَابِىْ لَشَدِيْدٌ
অর্থাৎ:- যদি তোমরা আমার নেয়ামত পেয়ে তার শুকরিয়া আদায় কর তাহলে অবশ্যই আমি নেয়ামত বৃদ্ধি করে দিব। আর যদি তোমরা অস্বিকার কর তাহলে নিশ্চয় আমার শাস্তি বড় কঠিন।
ভাই! উক্ত আয়াতে আল্লাহ তায়ালা নেয়ামত বৃদ্ধি করার বিষয়টিকে দু’টি তাকিদ দ্বারা ব্যক্ত করেছেন। একটা হলো ‘লাম তাকিদ’ আরেকটা হলো ‘নূন তাকিদ’। কাজেই আয়াতের অর্থ হবে যে, অবশ্যই, অবশ্যই আমি উক্ত নেয়ামতকে বাড়িয়ে দেব।
শুকরিয়া দুই প্রকার:-
১. যবানী শুকর ২. আমলী শুকর।
যে শুকর যবান দ্বারা আদায় করা হয় তাকে যবানী শুকর বলা হয়। আর আমল করে করে যে শুকর আদায় করা হয় তাকে আমলী শুকর বলা হয়।
যেমন আল্লাহ তায়ালা বলেন:-
فَاتَّقُوْا اللهَ لَعَلَّكُمْ تَشْكُرُوْنَ
অর্থাৎ তোমরা আল্লাহ তায়ালাকে ভয় কর তাহলে তোমরা শুকরগুজার বান্দা হয়ে যাবে। কাজেই এখন যদি আমরা ঈমানের শুকরিয়া আদায় করি তাহলে আমাদের ঈমান বাড়তে থাকবে। আর যখন আমাদের ঈমান বাড়তে থাকবে তাহলে ইনশাআল্লাহ! আমাদের মওত হবে ঈমানের হালতে। সূতরাং বুঝা গেল যে, ঈমানের শুকরিয়া আদায় করলে ঈমানের অবস্থায় খাতেমা বিল-খায়ের হয় । আর যার খাতেমা ঈমানের উপর হবে তার দুনিয়ার জীবন সফল আখেরাতের জীবনও সফল।
২. তাকওয়া এখতিয়ার করা। আল্লাহ তায়ালার নাফরমানী ছেড়ে দেওয়া। গোনাহর কাজ থেকে সবসময় বিরত থাকা। তাকওয়ার মাধ্যমে আমলী শুকরিয়া আদায় করা হয়। তাকওয়া কাকে বলে? তাকওয়া বলা হয়:- كَفُّ النَّفْسِ عَنِ الْهَوَىْ
নফসকে মনের চাহিদা থেকে বিরত রাখা। মন চাইবে গোনাহ করতে, গোনাহ না করা। মন চাইবে আল্লাহ তায়ালার নাফরমানী করতে, নাফরমানী না করা। মোটকথা খাহেশাতে নফসানীকে ছেড়ে দেওয়া। আর যখন এগুলো পরিত্যগ করা হবে তখন ইনশাআল্লাহ! মুত্তাকী হওয়া যাবে। আল্লাহ ওয়ালা হওয়া যাবে।
৩. তাকওয়া কিভাবে হাসিল হয় ? কিভাবে আল্লাহ ওয়ালা হওয়া যায় ? ‘তাকওয়া’ আল্লাহ ওয়ালার সহবতের মাধ্যমে হাসিল হয়। কিতাবাদী মুতালাআ করে, বই পড়ে পড়ে, রিচার্জ ও গবেষনা করে আল্লাহ ওয়ালা হওয়া যায়না।
আমার হযরত বলেন:-
بهائ! اڑھنے کی كتاب پڑھ كر اڑھ نہيں سكتا، تيرنے کی كتاب پڑھ کر تير نہيں سکتا اورالله والوں كى صحبت کےبغير الله والا نہيں ہوسكتا.
বই পড়ে পড়ে পাইলট হওয়া যায়না। বই পড়ে পড়ে সাতার কাটা শিখা যায়না। এবং আল্লাহ ওয়ালার সহবত ছাড়া আল্লাহ ওয়ালা হওয়া যায়না। কাজেই যেমনিভাবে পাইলট হতে চাইলে পাইলটের কাছে যেতে হবে। সাঁতার কাটা শিখতে চাইলে সাঁতারীর কাছে যেতে হবে। ঠিক তেমনিভাবে আল্লাহ ওয়ালা হতে চাইলে আল্লাহ ওয়ালার সহবতে যেতে হবে। তাদের সান্নিধ্যে উঠা-বসা করতে হবে।
একারনেই তো আল্লাহ তায়ালা বলেন:- وَكُوْنُوْا مَعَ الصَّادِقِيْنَ অত্র আয়াতে আল্লাহ তায়ালা كُوْنُوْا আমরের ছীগাহ উল্লেখ করেছেন। যার মধ্যে দু’টি যমানা বা সময় রয়েছে। একটা হলো ‘হাল’ বর্তমান কাল আরেকটা হলো ‘এস্তেকবাল’ ভবিষ্যত কাল। এ হিসাবে আয়াতের অর্থ হলো যে, তোমরা বর্তমানে আল্লাহ ওয়ালাদের সাথে এবং ভবিষ্যতেও তথা মৃত্যু পযর্ন্ত আল্লাহ ওয়ালাদের সাথে থাক। যদি আমরা বর্তমান এবং ভবিষ্যত দুনু যমানাই আল্লাহ ওয়ালার সহবত এখতিয়ার করি। তাদের সান্নিধ্য লাভ করি। তাহলে আমরা দৌলতে ঈমান নিয়ে, দৌলতে ইখলাস নিয়ে এবং দৌলতে তাকওয়া নিয়ে আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামিনের দরবারে হাজির হতে পারব। যার মাধ্যমে ইহকাল ও পরকাল সফল হয়ে যাবে।
আল্লাহ তায়ালা আমাকে এবং আপনাদের সকলকে এই মূখতাসার কয়েকটি কথার উপর আমল করার তাওফিক দান করুন। আমীন।
وما علينا الا البلاغ. استغفر الله الذى لااله الاهو الحى القيوم واتوب اليه ولا حول ولاقوة الا بالله العلى العظيم.
আরো নতুন নতুন ইসলামিক প্রবন্ধ পড়তে চোখ রাখুন আমাদের ওয়েব সাইট “রাহে সুন্নাত ব্লগ”
কুরআনুল কারিমের কথা পড়তে ক্লিক করুন
আরো জানতে ভিজিট করুন >>>>>>>> www.rahesunnat.com