দারিদ্র্যবিমোচনে যাকাতের ভূমিকা

দারিদ্র্যবিমোচনে যাকাতের ভূমিকা Role of Zakat in Poverty

ইসলাম প্রতিদিন

দারিদ্র্যবিমোচনে যাকাতের ভূমিকা

نَحْمَدُه وَنُصَلِّى عَلٰى رَسُوْلِهِ الْكَرِيْمِ. أما بعد فَاَعُوْذُ بِاللهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيْمِ. بِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ. وَفِىْ اَمْوَالِهِمْ حَقٌّ لِلسَّائِلِ وَالْمَحْرُوْمِ وَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهِ عَلَيْهِ وَسَلَّمْ اَلزَّكٰوةُ قَنْطَرَةُ الْاِسْلَامِ اَوَ كَمَا قَالَ عَلَيْهِ الصَّلٰوةُ وَالسَّلَامُ

যাকাত সেতো দীনের খুঁটি অগ্নি প্রতিবন্ধক,
সম্পদ হ্রাস করে না কভু সেতো মাল বর্ধক।

দারিদ্র্য ও প্রাচুর্য দু’টি বিপরীতধর্মী শব্দ। কিন্তু মানব জীবনে দু’টিই জড়িয়ে আছে অন্ধকার এবং আলোর মতো। এইতো প্রাচুর্যের ছন্দময় উপস্থিতি আবার কিছু সময় পরই দারিদ্রের অনাকাঙ্ক্ষিত ভয়াল থাবা। কারো কারো জন্য প্রাসাদোপম আলিশান বাড়ি। বিলাসবহুল গাড়িসহ সুখের সব রকম সরঞ্জামাদির বিপুল সমাহার।

আবার কারো কারো ক্ষেত্রে হাড়ভাঙা খাটুনি পরিশ্রমের পরও দু’মুঠো ভাতের নিশ্চয়তা নেই, নেই মাথা গোঁজার একটু ঠাঁই। দু’টি অবস্থাই প্রজ্ঞাময় মহামহিমের সৃষ্টি। সম্ভবত ইবাদতের দু’টি অনুপাত ধারা সৃষ্টিই এর মূল রহস্য। একটি সবর অন্যটি শোকর। দু’টিই আল্লাহ্ তা‘আলার বিশেষ ইবাদত। দু’টির মাধ্যমেই রয়েছে মহামহিম রাব্বুল আলামীনের নৈকট্য অর্জনের উত্তম ব্যবস্থা।

রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘মুমিনের বিষয়টি অতিশয় বিস্ময়কর। তার প্রত্যেকটি বিষয়ই তার জন্যে কল্যাণকর। আর এটি একমাত্র মু’মিনের জন্যেই। যদি তার সুদিন আসে, সমৃদ্ধি অর্জিত হয়, আর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে। এটি তার জন্যে কল্যাণকর। আবার যদি দুর্দিন আসে, দারিদে্র্য আক্রান্ত হয়, আর ধৈর্যধারণ করে এটিও তার জন্যে কল্যাণকর। -মুসলিম : ৭৪২৫

হাদীস শরীফ থেকে সুস্পষ্টরূপে বোঝা যায় যে, দারিদ্র্য ও প্রাচুর্য দু’টিই মহান আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের দু’টি সহজ পন্থা। দরিদ্র ব্যক্তি ধৈর্যধারণ করবে আর ধনবান শুকরিয়া আদায় করবে। মানব জীবনে দু’টি অবস্থাই কারো কারো ক্ষেত্রে আসতে পারে, আবার কেউ এর যে কোনো একটি অবস্থার মুখোমুখি হতে পারে। তবে বুদ্ধিমত্তার পরিচয় হলো যখন যার যে অবস্থা আসে, সে অবস্থায় আল্লাহর ফায়সালার ওপর সন্তুষ্ট থাকা।

এ পর্যায়ে আমরা আলোচনা করব, যিনি শুকরিয়া আদায়ের সুযোগ পেলেন, তিনি কিভাবে তা বাস্তবায়ন করবেন।
প্রথমত আমাদেরকে যে বিষয়টি অনুধাবন করা প্রয়োজন তা হচ্ছে, এই যে ধন—সম্পদ এটি তার নিজের কৃতিত্বের ফসল নয়, বরং তা মহামহিমের দয়া ও ইচ্ছার ফসল। তাই প্রথমেই সর্বান্তকরণে তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞ থাকতে হবে। কোনো অবস্থাতেই তাকে ভুলে যাওয়া চলবে না।

তাঁর বিধিনিষেধের প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শন চলবে না। নিজের ইচ্ছার ওপর তাঁর ইচ্ছাকে প্রাধান্য দিতে হবে। তাঁর দাবির কাছে নিজের ইচ্ছাকে বিলীন করে দিতে হবে। ইরশাদ হচ্ছে, হে ‘মুমিনগণ তোমাদের ধন—সম্পদ ও সন্তান—সন্ততি যেন তোমাদেরকে আল্লাহর স্মরণ থেকে গাফেল না করে। যারা এ কারণে গাফেল হয়, তারাই তো ক্ষতিগ্রস্ত।’ -সূরা মুনাফিকুন—৯

আয়াত থেকে স্পষ্ট বোঝা যায়, সম্পদ মানুষকে আল্লাহ্ বিমুখ করে দেবে এমন আশঙ্কা আছে, তাই মু’মিনদেরকে সদা সর্তক থাকতে হবে। এ সম্পদ যেন কোনোক্রমেই তাকে তার সৃষ্টিকর্তা থেকে বিচ্ছিন্ন করতে না পারে। সম্পদের মোহ যেন আল্লাহর দাবিকে গৌণ করতে না পারে। আর সেটি তখনই সম্ভব যখন সম্পদপ্রাপ্ত ব্যক্তি এ সম্পদকে আল্লাহর অনুগ্রহ বলে জ্ঞান করবে।

দ্বিতীয়ত সম্পদের ব্যাপারে আল্লাহর যে নির্দেশ তা অক্ষরে অক্ষরে পালন করার প্রাণান্তকর চেষ্টা অব্যাহত রেখে খেয়াল রাখতে হবে, প্রাচুর্যের কারণে গতি যেন পাল্টে না যায়। সম্পদ যেন হারাম ও অনৈতিক কাজে ব্যয় না হয়। বরং এ ব্যাপারে আল্লাহর যে নির্দেশ তা যেন ঠিক ঠিক পালন হয়। আল্লাহ্ তা’আলা বলেন, তাদের সম্পদে অধিকার রয়েছে প্রার্থী ও বঞ্চিতদের। -সূরা যারিয়াত—১৯

উক্ত আয়াত সুস্পষ্টভাবে নির্দেশ করছে যে অসহায়, বঞ্চিত ও প্রার্থীদের জন্যে সম্পদ ব্যয় করা আল্লাহর দাবি ও নির্দেশ।

তৃতীয়ত এ পর্যায়ে আল্লাহর নির্দেশ পালনের ক্ষেত্রে যে সব বিষয় সহায়ক হবে, তা গুরুত্বের সাথে অনুধাবন করা। আর তা হচ্ছে সম্পদ ব্যয়ের যে ফযীলত কুরআন ও সুন্নায় বর্ণিত হয়েছে, তা স্মরণে আনা এবং ব্যয় না করে কুক্ষিগত করার মন্দ পরিণতির কথা বিবেচনা করা। আল্লাহ্ তা’আলা বলেন, ‘মুমিনগণ সফলকাম হয়েছে, যারা নিজেদের নামাযে বিনয়—নম্র, যারা অনর্থক কথা—বার্তায় নির্লিপ্ত, যারা যাকাত দান করে থাকে।’ -সূরা মু’মিনুন১-৪

আল্লাহ্ বলেছেন, “এরাই প্রকৃত উত্তরাধিকারী, যারা উত্তরাধিকার লাভ করবে জান্নাতুল ফেরদাউসের, তাতে তারা চিরকাল থাকবে।” -সূরা মু’মিনুন ১০—১১

তাহলে আল্লাহর নির্দেশ মতো সম্পদ ব্যয় করলে পরকালে চিরন্তন জীবনের জন্যে চিরসুখময় জান্নাত প্রাপ্তি নিশ্চিত। অল্প সম্পদ ব্যয় করলে পরপারে তা অনেক বড় করে পাওয়া যাবে। যেমন : রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরাশদ করেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তা‘আলা সদকা (দান) কবুল করেন এবং তা তাঁর ডান হাতে গ্রহণ করে থাকেন। এরপর তাকে লালন পালন করতে থাকেন যেমনিভাবে তোমাদের কেউ স্বীয় জন্তুশাবক লালন পালন করে থাকে। এমনকি এক লোকমা খাবার (তার লালন পালনের কারণে) পাহাড়ের মতো বিশাল হয়ে দেখা দেবে। অতএব তোমরা সাদকা করো।’ -আহমদ—৭৩১৪

পক্ষান্তরে, ব্যয় না করে জমা করে রাখলে সে সম্পদ পরকালের জন্যে বিপদ হয়ে দাঁড়াবে। আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন, ‘আর যারা স্বর্ণ ও রৌপ্য জমা করে রাখে এবং তা আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করে না, তাদের কঠোর আজাবের সুসংবাদ শুনিয়ে দিন, যে দিন জাহান্নামের আগুনে তা উত্তপ্ত করা হবে এবং তা দ্বারা তাদের ললাট, পার্শ্ব ও পৃষ্ঠদেশকে দগ্ধ করা হবে। (এবং বলা হবে) এগুলো যা তোমরা নিজেদের জন্যে পুঞ্জিভূত করে রেখেছিলে। সুতরাং এক্ষণে আস্বাদন করো পুঞ্জিভূত করে রাখার স্বাদ।’ -সূরা তাওবা-৩৫

সম্পদ ব্যয় না করে জমা করে রাখার ভয়াবহতা কত মারাত্মক?

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘আল্লাহ্ যাকে সম্পদ দিলেন, কিন্তু সে তার যাকাত আদায় করল না তার সম্পদ কিয়ামতের দিন বিষধর সাপে রূপান্তরিত করা হবে, যে সাপের দু’পার্শ্বে তিলক থাকবে। ওই সাপ তার দু’চোয়ালে দংশন করবে আর বলবে, আমিই তোমার সম্পদ, আমিই তোমার সঞ্চিত ধন—ভাণ্ডার।’ -বুখারী ও মুসলিম

চতুর্থত : ধনবান ব্যক্তি তার অপর মুসলিম ভাইয়ের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশের সুযোগ সন্ধান করবে, এতে নিজেরই লাভ। রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যারা দয়াশীল, দয়াময় প্রভু তাদের প্রতি দয়া করেন। যারা যমিনে বিচরণ করে তাদের প্রতি দয়া কর। যিনি আকাশে আছেন তিনি তোমাদের প্রতি দয়া করবেন।’ -তিরমিযী : ১৯৪৭

সহানুভূতি প্রকাশের মাধ্যমে আমরা অপরজনের দারিদ্র্যবিমোচন করতে পারি। একজন সাধারণ চিন্তাশীল ব্যক্তি বর্তমান বাস্তব অবস্থার প্রতি দৃষ্টিপাত করলে যে দৃশ্য দেখতে পাবে।

দারিদ্রের মোট জনগোষ্ঠীর একটি বিরাট অংশকে অনাহারে অর্ধাহারে দিনাতিপাত করতে হচ্ছে।

বিনা চিকিৎসায় ধুঁকে ধুঁকে মৃত্যুবরণ করছে একটি উল্লেখযোগ্য অংশ।

যে শিশু বিদ্যানিকেতনের আলোকময় পরিবেশে থেকে নিজেকে আলোকিত মানুষরূপে গড়ে তোলার কথা ছিল, দারিদ্রের কষাঘাতে আজ তাকে দেখা যাচ্ছে হাটে, রাস্তায়, স্টেশনে, শ্রমবিক্রি করতে ব্যস্ত। এদের কেউ কেউ ভিক্ষা করছে আবার অনেককে নর্দমা, ডাস্টবিনে ফেলে দেয়া খাবারও তুলে খেতে বাধ্য হচ্ছে।।

দারিদ্রের কষাঘাতে অশিক্ষিত রয়ে যাচ্ছে সমাজের একটি বিশাল অংশ। যার কারণে দিন দিন বেকারত্ব বেড়েই চলছে। দারিদ্র্য ও বেকারত্বের অমানিশায় পতিত হয়ে হতাশা কাটানোর জন্যে মাদকাসক্তিতে লিপ্ত হচ্ছে। ক্রমান্বয়ে চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি খুনসহ মারাত্মক অপরাধে জড়িয়ে যাচ্ছে অসংখ্য সম্ভাবনাময় নবপ্রজন্ম।

এসব অপরাধ বাড়ার কারণে জনমনে সৃষ্টি হচ্ছে আতঙ্ক। কষ্টসাধ্য হয়ে যাচ্ছে নাগরিক জীবন—যাপন। আইনশৃঙ্খলার অবনতিসহ যাবতীয় উন্নয়ন, অগ্রগতি হচ্ছে বাধাগ্রস্ত। পিছিয়ে যাচ্ছে দেশ। আন্তর্জাতিকভাবে নিন্দিত হচ্ছে জাতি ও জনগণ।

এ দারিদ্রের কারণে, পরম মর্যাদাবান মাতৃ—সমাজকে সতীত্ব বিক্রি করে পতিতাবৃত্তির মতো চরম ঘৃণিত কাজ পেশা হিসাবে বেছে নিচ্ছে একটি উল্লেখযোগ্য অংশ। ফলে চরম নৈতিক অবক্ষয়ের সাথে সাথে বেড়ে চলেছে সিফিলিস, গনরিয়া এইড্সসহ মারাত্মক মারাত্মক মরণব্যাধি।

সুদভিত্তিক দেশি ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার দ্বারস্থ হয়ে, সর্বহারা হতে দেখা যাচ্ছে লক্ষ লক্ষ জনগণকে। সুদের কিস্তি পরিশোধ করতে না পেরে ভিটে—মাটি বিক্রি করে বাস্তুহারার কাতারে শামিল হতেও দেখা যাচ্ছে অনেককে।

আবার কেউ—কেউ ঈমানের বিনিময়ে দায়মুক্তি নিচ্ছে বলেও পত্রিকাতে খবর প্রকাশ পেয়েছে।

এ সুযোগে দারিদ্র্যবিমোচনের নাম করে অনেক আন্তর্জাতিক ফোরাম দেশে বিভিন্ন সংস্থা খুলে সাহায্যের নামে অপসংস্কৃতির বিকাশ ঘটাচ্ছে মহাসমারোহে। ফলে সাংস্কৃতির নামে চর্চা হচ্ছে নগ্নতা, অশ্লীলতা ও বেহায়াপনার। মুক্তসাংস্কৃতির নামে যৌনতা নির্ভর চলচিত্র নির্মাণ, ফ্যাশন শো, কনসার্ট ইত্যাদির মাধ্যমে কেড়ে নিচ্ছে শত বছর থেকে চর্চিত সভ্য সাংস্কৃতির সুস্থ ধারা, শালীনতা ও লজ্জার বাহন পর্দা—প্রথা প্রায় বিলুপ্তির পথে।

দারিদ্র্যবিমোচন সেস্নাগানকে পুঁজি করে ঋণ দেয়ার নাম করে সুদী ব্যবসা বর্তমানে জমজমাট। কিস্তি পরিশোধ করতে করতে দরিদ্র থেকে দরিদ্রতর পর্যায়ক্রমে সর্বস্বান্ত হচ্ছে গরিব জনগণ। আর এ সুযোগে প্রাচুর্যের পাহাড় গড়ছে সুবিধালোভী ফোরাম।

দারিদ্র্যকে পুঁজি করে শিক্ষা সম্প্রসারণের নামে, তাদের ধর্মীয় মতে দীক্ষিত করছে হাজার—হাজার মুসলিম শিশুকে। তাই যে শিশু হওয়ার কথা ছিল মানবতাবোধে উদ্বুদ্ধ, আল্লাহ্প্রেমী, ঈমানদীপ্ত খাঁটি মুসলমান, সে শিশু হচ্ছে আধুনিকতার নামে উগ্র ও মুক্তমনার নামে দিকভ্রান্ত নাস্তিক। ফলে ধর্মীয় দিক থেকে আমাদের দেশে স্থায়ী নিবাস গড়ার একটি বিশাল সুযোগ কাজে লাগাচ্ছে আধিপত্যবাদী শক্তি।

এ ধারা অব্যাহত থাকলে নিকট ভবিষ্যতে দেখা যাবে আমরা মুসলমানরা নিজ দেশে পরবাসী হয়ে পড়েছি। এক কথায় দারিদ্রের কারণে আজ আমাদের ঈমান ও স্বাধীনতা হুমকির সম্মুখীন। আমাদের বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতির দিকে একটু দৃষ্টি দেয়া যাক। দারিদ্রের কারণে, দাতা গোষ্ঠীর বিভিন্ন অন্যায় ও অন্যায্য দাবি মেনে সরকারকে সাহায্য ও ঋণ গ্রহণ করতে হয়। ফলে সরকার জনগণের চাহিদা মোতাবেক স্বাধীনভাবে রাষ্ট্র পরিচালনা করতে পারে না।

একদিকে দাতাদের চাপ, অন্যদিকে জনগণের দাবি, দো—টানায় পড়ে সরকারকে বিব্রত হতে দেখা যায় প্রায়ই। দাতাদের দাবি মেটাতে গিয়ে জনগণের বিপক্ষে পদক্ষেপ নেয়, ফলে জন অসন্তোষ বাড়ে, সরকার জনরায়ের বিপক্ষে সিদ্ধান্ত নেয়, জনগণ প্রতিরোধের সংকল্প করে। ফলে দাঙ্গাহাঙ্গামা সৃষ্টি হয়ে উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হয়। আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটে। দেশের পরিবেশ হয়ে ওঠে অস্থিতিশীল আন্তর্জাতিক সমীক্ষায় দেশ ব্যর্থ—রাষ্ট্র হিসাবে আখ্যায়িত হয়।

শিক্ষার সুব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমেও আমরা দারিদ্র্য দূর করতে পারি। যদি দেশে সুশিক্ষার ব্যবস্থা করা যায়, তাহলে দরিদ্র জনগণ শিক্ষার সুযোগ পাবে। ফলে খুন, রাহাজানি, ধর্ষণ, চুরি, ডাকাতিসহ সকল নেতিবাচক কর্মকাণ্ড পরিহার করে সুস্থ স্বাভাবিক পথে ফিরে আসার রাস্তা খুঁজে পাবে যুব সমাজ। দেশ পাবে শক্তিশালী নীতিবান আলোকিত জনশক্তি। সে নিজে পাবে ঈমানদীপ্ত সম্ভাবনাময় সুন্দর জীবন।

ভিক্ষাবৃত্তি, পতিতাবৃত্তি এবং ঘৃণ্য পেশা থেকে ফিরে এসে সুস্থ ধারার জীবন গড়ার দিশা পাবে আক্রান্ত নারী ও দরিদ্র জনশক্তি।

সুদভিত্তিক সাহায্য প্রতিষ্ঠান, ব্যবসা গুটাতে বাধ্য হবে। ফলে তাদের থেকে নিষ্কৃতি পাবে অসহায় জনগণ এবং সুদের মতো মারাত্মক পাপ থেকে বের হওয়ার রাস্তা পাবে নিরুপায় মুসলিম সমাজ।

অপসংস্কৃতির চর্চা বন্ধ হবে, ফলে চারিত্রিক অবক্ষয় থেকে মুক্তি পাবে যুব—সমাজ ইসলামী মুল্যবোধে বিশ্বাসী জনসাধারণ।

আধিপত্যবাদী সম্প্রদায়ের আধিপত্য বিস্তারের রাস্তা সংকুচিত হয়ে যাবে। ফলে স্বাধীনতা হুমকিমুক্ত থাকবে।

সরকার স্বাধীনভাবে দেশ পরিচালনার নিশ্চয়তা পাবে, জনগণের মতের প্রতিফলন ঘটবে। স্থিতিশীলতা বিরাজমান থাকবে। অন্যায় অসন্তোষ বিলুপ্ত হবে। সুখ—সমৃদ্ধির পথ প্রশস্ত হবে। দেশ এগিয়ে যাবে। নন্দিত হবে বিশ্বময়। স্বাধীন সমৃদ্ধশালী জাতি হিসাবে আমরা পরিচিতি পাবো বিশ্বব্যাপী।

ধর্মীয় মূল্যবোধ, ঈমানী চেতনা নিয়ে মুসলমান মুক্ত স্বাধীন জীবন—যাপন করতে পারবে এবং ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান নির্বিঘ্নে কাজ চালিয়ে যেতে সক্ষম হবে। ফলে জাতি দিন—দিন উপহার পেতে থাকবে ন্যায়নীতি, সৎ, চরিত্রবান, সৃজনশীল উন্নত, আলোকিত প্রেমময় হৃদয়বান কাঙ্ক্ষিত প্রজন্ম।

ধরাতে চর্চা হবে মহামহিমের চাহিদা মোতাবেক শান্তিময় বিধান। সর্বোপরি সৃষ্টিশ্রেষ্ঠ বনী আদম কুফুরি থেকে মুক্ত থাকার পরিবেশ খুঁজে পাবে। কারণ, দারিদ্র্য মানুষকে কুফুরির নিকটবর্তী করে দেয়। এমনিভাবে চেষ্টা করলে সহানুভূতি প্রকাশের হাজারটি দ্বার খুলে যাবে।

নিয়মিত যাকাত আদায় করে সুষ্ঠুভাবে বণ্টন করলে উপরোক্ত সবগুলো ক্ষেত্রে অবদান রাখা যায়। সম্পদের প্রতি মানুষের মোহ প্রকৃতিগত। সম্পদ উপার্জনে মানুষ আগ্রহ বোধ করে কিন্তু ব্যয়ের ব্যাপারে অনুরূপ সাচ্ছন্দ্য অনুভব করে না।

আর সাহায্য সহানুভূতি ও দান খয়রাত রীতিমতো মনের বিরুদ্ধে একটি সংগ্রাম। এক্ষেত্রে যাকাত আদায়েচ্ছু ব্যক্তি যদি যাকাত আদায়ে শরীয়তের বিধান স্মরণে আনে, তাহলে তার জন্য এই কাজে সফল হওয়া সহজ হবে। অর্থাৎ, যাকাত আদায় ইসলামের মূলভিত্তি, এটি ব্যতীত ইসলাম পরিপূর্ণ হয় না।

যাকাত মূলত তার সম্পদ নয়, বরং দারিদ্র্যক্লিষ্ট বঞ্চিত ও প্রার্থীদের সম্পদ; যা তার সম্পদের সাথে যুক্ত হয়ে আছে। আল্লাহ্ বলেন, ‘তাদের সম্পদের রয়েছে প্রার্থী ও বঞ্চিতদের অধিকার।’ (সূরা : যারিয়াত—১৯)
তাহলে যাকাত আদায় না করা প্রকারান্তরে মহান আল্লাহর বিধান লঙ্ঘন করার পাশাপাশি অন্যের অধিকার নষ্ট করা।

যাকাত আদায়ে সম্পদ বৃদ্ধি পায়, কলুষমুক্ত হয়।

যকাত আদায়ে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও জান্নাত নিশ্চিত হয়।

যাকাত না দিলে আল্লাহ্ পাক অসন্তুষ্ট হন। পরকালে জাহান্নামে যেতে হবে। সম্পদ বিষধর সাপে রূপান্তরিত করে গণ্ডদেশে ঝুলিয়ে দেয়া হবে। উক্ত সর্পরূপি সম্পদ তিরস্কারসহ দংশন করে চলবে।

যাকাত আদায়ের মাধ্যমে দারিদ্র্যবিমোচনে অংশগ্রহণ করে একটি অধঃপতিত জাতিকে স্বনির্ভর ও স্বাধীন জাতিতে উন্নত করা যায়।

দারিদ্র্যক্লিষ্ট হয়ে ঈমান হারাতে বসা চরম বিপর্যস্ত একটি গোষ্ঠীকে যাকাত আদায়ের মাধ্যমে এমন বিপদ থেকে রক্ষা করা যায়। বরং উপরোল্লেখিত সকল বিপদ মোকাবেলায় যাকাতের ভূমিকা অপরিসীম। যাকাতের মাধ্যমে সমাজে সংঘটিত অনেক অপরাধ দমন করা সম্ভব।

আমি দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলতে পারি, আজ যদি যাকাত আদায়ের সুষ্ঠু নীতিমালা থাকত! বণ্টনের ইনসাফভিত্তিক ব্যবস্থা থাকত! তাহলে অবস্থা হয়তো এতো করুণ হতো না। যদি দেশের ধনবান ব্যক্তিবর্গ সুস্থ বিবেকে ঠাণ্ডা মাথায় সহানুভূতির সাথে একটু চিন্তা করেন, তাহলে নিশ্চিত করে বলা যায়, দেশি—বিদেশি সুবিধালোভী সুদ ব্যবসায়ী আধিপত্যবাদীরা লেজ গুটাতে বাধ্য হবে।

আমাদের এ আশা কল্পনানির্ভর নয়, বরং যুক্তির নিরিখে একটু হিসাব করি। ধরে নিই, বর্তমানে বাংলাদেশে ৫০০ কোটি মূল্যমান যাকাতযোগ্য সম্পদের মালিকের সংখ্যা এক হাজার, তাহলে তাদের সম্পদের যাকাতের পরিমাণ হবে প্রতি বছর ১২৫০০ কোটি টাকা। (১২৫০০০০০০০০) উক্ত টাকা যদি জনপ্রতি ৫০ হাজার করে বণ্টন করা হয় তাহলে ২৫ লাখ লোকের মধ্যে বণ্টন করা যাবে।

প্রতি বছর যদি ২৫ লাখ লোক দারিদ্র্য মুক্তির সুযোগ পায়, তাহলে গোটা বাংলাদেশকে দারিদ্র্যমুক্ত করে স্বনির্ভর করতে কয়দিন লাগবে? এতো শুধুমাত্র ১০০০ জন লোকের হিসাব। প্রকৃত হিসাব আরো অনেক বেশি।

যাকাত আদায় ও বণ্টনের সুষ্ঠু ও নিয়মতান্ত্রিক ব্যবস্থা থাকলে মুক্তি পেত দেশ, সরকার—জনগণ, শংকামুক্ত থাকত ঈমান—আকিদা, আমল। বৈষম্য দূর হয়ে স¤প্রীতি ও ভালোবাসা থাকত সকলের মাঝে বিরাজমান। গোটা সমাজই হয়ে যেত জান্নাতের বাগিচা।

তাহলে আমরা বলতে পারি যাকাত আদায় যেমনি করে দয়াময় পালনকর্তার শুকরিয়া আদায়ের অন্যতম মাধ্যম, বিনিময়ে সুখময় জান্নাত প্রাপ্তির নিশ্চয়তা। তদ্রƒপ দারিদ্র্যবিমোচনের মাধ্যমে ভাইয়ের প্রতি ভাইয়ের মতত্ববোধ প্রকাশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ পন্থা। পরিশেষে যাকাতের মাধ্যমে দারিদ্র্যবিমোচনে ইসলামের দৃষ্টি ভঙ্গি কী? এ মর্মে হাদীস শরীফের এক বর্ণনায় উল্লেখ করে আলোচনার ইতি টানব।

ইমাম তাবারানী রহ. তার ‘আওসাত ও সাগীর’ গ্রন্থে আলী রাযি. থেকে বর্ণনা করেছেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, “আল্লাহ্ তা‘আলা ধনী মুসলমানদের সম্পদে এ পরিমাণ যাকাত ফরয করেছেন, যা তাদের দরিদ্রদের প্রয়োজন মেটাতে যথেষ্ট।

দরিদ্র মুসলিমরা অভুক্ত ও বিবস্ত্র থাকার যে কষ্ট করে যাচ্ছে। এটি তাদের ধনীদের সৃষ্ট। শোনে রাখো, আল্লাহ্ তা‘আলা তাদের হিসাব কঠিন করে নিবেন এবং যন্ত্রণাদায়ক কঠিন শান্তি দেবেন।” হাদীস দ্বারা পরিষ্কার বুঝা যাচ্ছে সুষ্ঠুভাবে যাকাত আদায় হলে মুসলমানদের মাঝে দারিদ্র্য থাকবে না। দারিদ্র্যবিমোচনে যাকাতের ভূমিকা কতো অপরিসীম এ হাদীস তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ। মহান আল্লাহ্ আমাদের সকলকে নিজ নিজ দায়িত্ব আদায় করার তাওফিক দিন। আমীন।

আরো জানতে ভিজিট করুন আমাদের ওয়েব সাইট রাহে সুন্নাত ব্লগ

যে মহিলা বে-পর্দা চলতে অভ্যস্ত তার জন্যও পর্দা আবশ্যক

বিবাহের পর কনে তুলে নেওয়ার আগে পর্দা রক্ষা করা কি জরুরী?

ডাক্তারের সামনে শরীর উন্মুক্ত করার শরয়ী বিধান কী?

রমযানুল মোবারক : অফুরন্ত কল্যাণের ভাণ্ডার

https://youtu.be/JzUwd-EUYW0

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *