দুরূদ শরীফের ফযীলত

দুরূদ শরীফের ফযীলত

ইসলাম প্রতিদিন সংস্কৃতি
দুরূদ শরীফের ফযীলত : (এক)

দুরূদ শরীফের সব থেকে বড় ফযীলত হল আল্লাহ তা‘আলা দুরূদ এর সম্বন্ধ নিজের দিকে এবং ফেরেশতাদের দিকে করেছেন। তিনি বলেন ঃ  إِنَّ اللهَ وَمَلَائِكَتَهٗ يُصَلُّوْنَ عَلَى النَّبِىِّ.

হাদীস শরীফে আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি জুমআর দিন আমার উপর দুরূদ পাঠ করে তা আমার নিকট পেশ করা হয়।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যখন কোন ব্যক্তি আমার উপর সালাম প্রেরণ করে তখন আল্লাহ তা‘আলা  আমাকে আমার রূহ ফিরিয়ে দেন, ফলে আমি তার সালামের উত্তর প্রদান করি।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, কিয়ামতের দিন ঐ ব্যক্তি সব থেকে বেশী আমার নিকটে থাকবে যে আমার উপর বেশী বেশী দুরূদ পাঠ করত।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ তা‘আলার অনেক ফেরেশতা এই কাজেই নির্ধারিত রয়েছেন যে, তারা ভ্রমন করতে থাকে এবং আমার উম্মতের যে ব্যক্তি আমার উপর দুরূদ পাঠ করে তা আমার নিকট পৌঁছে দেয়।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে, একদা হযরত জিবরাঈল (আ.)-এর সাথে আমার সাক্ষাত হল, তখন তিনি আমাকে সুসংবাদ প্রদান করলেন যে, আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন যে ব্যক্তি আপনার উপর দুরূদ পাঠ করবে আমি (আল্লাহ) তার উপর রহমত বর্ষণ করব, আর যে ব্যক্তি আপনার উপর সালাম পাঠাবে আমি (আল্লাহ) তার উপর শান্তি অবতীর্ণ করব, আমি ইহা শুনে সিজদায়ে শুক্র আদায় করেছি।

হযরত উবাই ইবনে কা’ব (রা.) থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেন, আমি আরয করলাম ইয়া রাসূলাল্লাহ! (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমি আপনার উপর বেশী বেশী দুরূদ পাঠ করে থাকি। আমি কী পরিমাণ দুরূদ পাঠের আমল করব? তিনি বললেন, তোমার মন যে পরিমাণ চায়। আমি বললাম, এক চতুর্থাংশ অর্থাৎ তিন ভাগ অন্য অযীফা আর একভাগ দুরূদ শরীফ। উত্তরে তিনি বললেন, তোমার মন যে পরিমাণ চায়, তবে যদি বাড়িয়ে দাও তাহলে তোমার জন্য বেশী ভালো। আমি বললাম অর্ধেক। তিনি বললেন, তুমি যে পরিমাণ চাও, তবে যদি বাড়িয়ে দাও তাহলে তোমার জন্য আরো ভালো হয়। আমি বললাম, তাহলে আমি শুধু দুরূদের অযীফা-ই করব। তিনি বললেন, তাহলে তোমার সকল ফিকিরের জন্য যথেষ্ট হয়ে যাবে এবং তোমার গুনাহ মাফ হয়ে যাবে।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি আমার উপর একবার দুরূদ পাঠ করবে আল্লাহ তা‘আলা তার উপর দশটি রহমত নাযিল করবেন, তার দশটি গুনাহ মাফ হবে, তার দশটি স্তর বৃদ্ধি পাবে এবং দশটি নেকী তার আমল নামায় লেখা হবে।

এক বর্ণনায় আছে, দুরূদ শরীফ পাঠ কারীর উপর আল্লাহ তা‘আলা সত্তরটি রহমত নাযিল করেন এবং ফেরেশতাগণ তার জন্য সত্তর বার দু‘আ করেন।

হযরত কা‘বে আহবার রা. থেকে বর্ণিত আছে, আল্লাহ তা‘আলা হযরত মূসা (আ.)-এর নিকট ওহী পাঠালেন যে, তুমি কি চাও যে, কিয়ামতের দিন তোমার পিপাসা না লাগুক? তিনি বললেন হ্যা, তখন বলা হলঃ তাহলে মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর উপর বেশী বেশী দুরূদ পাঠ কর।

দুরূদ শরীফের ফযীলত : (দুই)

হযরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি আমার উপর বেশী বেশী দুরূদ পড়বে সে আরশের ছায়ায় থাকবে।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি আমার কবরের পাশে আমার উপর দুরূদ পাঠ করে তা স্বয়ং আমি শুনি, আর যে দুর থেকে আমার উপর দুরূদ পড়ে তা আমার নিকট ফেরেশতার মাধ্যমে পৌঁছে দেয়া হয়।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি আমার উপর দুরূদ পড়ে এবং তা কবুল হয়, তার আশি বছরের গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি আমার উপর দুরূদ পাঠ করে ফেরেশতা তার দুরূদ আমার নিকট পৌঁছে দেয় এবং তার নাম নিয়ে বলে যে, অমুক ব্যক্তি এভাবে দুরূদ পাঠ করেছে।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমার উপর অধিক পরিমাণে দুরূদ পাঠ কর, নিশ্চয় তা তোমাদের জন্য পবিত্রতা, অর্থাৎ দুরূদ এর দ্বারা গুনাহ থেকে পবিত্রতা এবং সর্বপ্রকার বাহ্যিক ও আত্মিক পরিচ্ছন্নতা অর্জন হয়।

ইমাম আহমাদ এবং ইবনে মাজাহ রহ. বর্ণনা করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি আমার উপর দুরূদ পাঠ করে ফেরেশতা  তার উপর দুরূদ পড়ে, অর্থাৎ যতক্ষণ সে আমার উপর দুরূদ পড়ে, ততক্ষণ ফেরেশতা তার জন্য রহমতের দু‘আ করতে থাকে, এখন তোমার ইচ্ছা, আমার উপর দুরূদ কম পড় বা বেশী পড়, এর দ্বারা উদ্দেশ্য হল দুরূদ বেশী পড়া উচিত।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন যে ব্যক্তি কোন কিতাবে আমার উপর দুরূদ পাঠ করে যতক্ষণ ঐ কিতাবে আমার নাম থাকে ততক্ষণ ফেরেশতা ঐ ব্যক্তির জন্য রহমতের দু‘আ করতে থাকে।

ইমাম মুসতাগফিরী রহ. বর্ণনা করেছেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি প্রতিদিন একশত বার দুরূদ পাঠ করে তার একশত প্রয়োজন পূরণ করা হয়। ৩০টি দূনিয়ার আর অবশিষ্টগুলো আখিরাতের।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি সকালে দশ বার এবং সন্ধায় দশ বার আমার উপর দুরূদ পাঠ করে, কিয়ামতের দিন তার জন্য আমার শাফা‘আত হবে।

আবু হাফস ইবনে শাহীন রহ. হযরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি আমার উপর এক হাজার বার দুরূদ পাঠ করবে সে জান্নাতে নিজ স্থান না দেখে মৃত্যুবরণ করবে না।

হযরত আনাস (রা.) বর্ণনা করেছেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন যে, কিয়ামতের ভয়াবহতা থেকে ঐ ব্যক্তি বেশী মুক্তি পাবে যে পৃথিবীতে আমার উপর বেশী বেশী দুরূদ পাঠ করবে।

দুরূদ শরীফের ফযীলত সম্পর্কে আরো জানতে চাইলে হযরত মাওলানা আশরাফ আলী থানভী রহ. সংকলিত যাদুস সাঈদ কিতাবটি মুতালাআ করতে পারেন।


মাহে জিলহজ্ব ও কুরবানীর ফযীলত করণীয় ও বর্জনীয় || রাহে সুন্নাত ব্লগ

উলামায়ে কেরাম : মর্যাদা, দা‌য়িত্ব ও কর্তব্য

কুরআনুল কারিমের কথা প্রবন্ধটি পড়তে ক্লিক করুন
আরো জানতে ভিজিট করুন আমাদের ওয়েব সাইট রাহে সুন্নাত ব্লগ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *