নবীজীর সুমহান চরিত্র

নবীজীর সুমহান চরিত্র | The noble character of the Prophet | Rahe Sunnat

ইতিহাস ও জীবনী ইসলাম প্রতিদিন নবীদের কাহিনী

নবীজীর সুমহান চারিত্রনবীজীর সুমহান চরিত্র

জাহিলিয়াতের যুগে যখন মানুষের চারিত্রিক অধঃপতন বর্ণনাতীত পর্যায়ে পৌঁছে যায় তখন সমাজ পুনঃনির্মাণের গুরুদায়িত্ব দিয়ে আল্লাহ তায়ালা প্রেরণ করেন অত্যন্ত উন্নত চরিত্রের মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে। কোনো মানুষ তার চারিত্রিক গুণাবলীর সমকক্ষ হওয়া তো দূরের কথা; কোনো একটি গুণের সমপর্যায়ে পৌঁছাও সম্ভব না। কারণ, স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা তাঁকে শিষ্টাচার শিক্ষা দিয়েছেন। শুধু নবুওয়াত লাভের পরে নয়, বরং নবুওয়াতপ্রাপ্তির পূর্বেই তিনি ছিলেন সর্বজন স্বীকৃত সুমহান চরিত্রের অধিকারী। কুরআনে কারীমে আল্লাহ তায়ালা বলেন, নিশ্চয় আপনি সুমহান চরিত্রের অধিকারী। -সুরা আল ক্বালাম-৪

মানবিক গুণাবলী ও চারিত্রিক বিপর্যয়ের চরম মুহূর্তে নবীজীর সুমহান চরিত্র ও চারিত্রিক মাধুর্যতা এবং কুরআনের শিক্ষায় বিশ্বমানবতাকে দিয়েছিলেন আলোকিত ব্যক্তি ও সমাজের ঐশী পয়গাম। এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, বিশ্বমানবতার মুক্তিদূত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জীবনচরিত হলো কুরআনুল কারীমের বাস্তব রূপ। হযরত আয়শা সিদ্দিকা রা. কে জিজ্ঞাসা করা হলো রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর চরিত্র কেমন ছিলো? প্রশ্নকারী সাঈদ বিন হিশামকে তিনি বললেন, তুমি কি কুরআন পড়ো নি? উত্তরে সাঈদ রা. বললেন, হ্যাঁ অবশ্যই পড়েছি। আয়শা রা. নবীজীর সুমহান চরিত্র সম্পর্কে বললেন, পবিত্র কুরআনই হচ্ছে তাঁর চরিত্র। অর্থাৎ, কুরআনের যাবতীয় বিধান ও মানবিক-চারিত্রিক সকল সৌন্দর্যের সমাহার ও নিখুঁত বাস্তব রূপ ছিলেন মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।

রাসুল সা. এর অনুপম চরিত্র ও গুণাবলীর পূর্ণ বিবরণ এই ক্ষুদ্র প্রয়াসে সম্ভব নয়। আমরা বিশেষ কিছু গুণাবলী সংক্ষেপে উল্লেখ করবো।

১. সংস্কার

সামাজিক অবকাঠামো ও মানুষের চারিত্রিক মূল্যবোধ যখন মুখথুবড়ে আর্তনাদ করছিলো। তখন আলোকিত দিগন্ত ও শাশ্বত শান্তির পয়গামে জগতবাসীকে মুক্তি আনন্দে ভাসিয়েছিলেন মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। তমসাচ্ছন্ন সমাজে বুক পেতে দাঁড়িয়ে গেয়েছেন অধিকার ও সাম্যের গান। জীর্ণশীর্ণ প্রতিষ্ঠানকে পুনঃনির্মাণের মতোই সমাজকে করেছেন সংস্কার। অশান্তি, অনাচার, নৈরাজ্য ও নির্যাতিত সমাজে তিনি করেছেন বিপ্লব ও সংস্কারের সফল ও সার্থক বাস্তবায়ন। এ জন্য পৃথিবীর সবচে’ বড়ো ও সফল সংস্কারক হলেন মুহাম্মাদ সা.।

২. বিনয়।

সকল উন্নত গুণাবলীর আধার হওয়া সত্ত্বেও তাঁর কথাবার্তা ও চলাফেরায় ছিলো বিনয়। শামাঈলে তিরমিজিতে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাঁটাচলা সম্পর্কে বর্ণনা করা হয়েছে যে, তিনি অত্যন্ত বিনয়ের সাথে হাঁটতেন। চলার সময় মনে হতো তিনি নিম্ন ভূমির দিকে অবতরণ করছেন। সবসময় দৃষ্টি অবনত রাখতেন। দম্ভভরে কথা বলা কিংবা চলাফেরা করা স্বভাবের মধ্যে ছিলো না। সমাজের গরিব লোকের সাথেও একেবারে বিনয়ের আচরণ করতেন। কাউকে কখনই তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য বা হেয় প্রতিপন্ন করতেন না। প্রত্যেককে তার প্রাপ্য সম্মান দিয়ে কথা বলতেন।

৩. দুনিয়াবিমুখতা।

দু’জাহানের বাদশাহ হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবনধারণ ছিলো একেবারে সাদামাটা। অনাড়ম্বর জীবন-যাপনের জন্য আল্লাহ তায়ালার কাছে দুআ করতেন। হযরত আয়শা রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমরা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পরিবারবর্গ এক মাস এভাবে কাটিয়ে দিতাম যে আমাদের চুলায় আগুন জ্বলতো না। শুধু খেজুর ও পানি খেয়ে কাটিয়ে দিতাম।’ হাদীসের কিতাবাদিতে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কষ্টের জীবনযাপন সম্পর্কে বহু হাদিস বর্ণিত আছে। ক্ষুধার যন্ত্রণায় পেটে পাথর পর্যন্ত বেঁধে রেখেছেন। অথচ আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে হযরত জিবরাইল আ. উহুদ পাহাড়কে স্বর্ণে রূপান্তরিত করে দেওয়ার কথা বলেছিলেন। কিন্তু রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়াসাল্লাম বিনয়ের সাথে প্রস্তাব ফিরিয়ে দিলেন। চরম কষ্ট করে জীবন পরিচালনা করেছেন কিন্তু দুনিয়ার প্রতি সামান্য আগ্রহ দেখান নি।

৪. অধীনস্থদের সাথে সদাচারণ।

অধীনস্থদের সাথে রাসুল সাল্লামের আচরণ কেমন ছিলো? এ সম্পর্কে হযরত আনাস রা. বলেন, আমি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দশ বছর খেদমত করলাম; কিন্তু রাসুল আমাকে কোনো দিন বলেন নি আনস এ কাজ কেনো করেছো কিংবা কেনো এ কাজ করো নি? কী মহান চরিত্র দশ বছরের মধ্যে মারধর কিংবা অন্য কোনো অসদাচারণ তো দূরের কথা একটা ধমক পর্যন্ত দেন নি।

৫. ছোটদের প্রতি স্নেহশীল বড়দের প্রতি শ্রদ্ধাশীল।

ছোটদের প্রতি স্নেহশীল হওয়া তাঁর অন্যতম একটি গুণ। হযরত হাসান ও হোসাইন রা. এর প্রতি তো বটেই অন্যান্য শিশুর প্রতিও ছিলো তার অগাধ স্নেহমাখা আচরণ। ছোটদের পরম আদর করতেন। তাদের আবদার পুরা করতেন। এমনকি সময়ে তাদের সাথে খেলাধুলা ও খুনসুটি করতেন। ছোট্ট সাহাবী হযরত উমাইর রা. এর পোষা পাখিটি মারা যাওয়ার পর তিনি বিষন্ন হয়ে গেলে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সাথে খুনসুটি করে বলেছিলেন, ইয়া আবা উমাইর! মা ফায়ালান নুগাইর! অর্থাৎ, হে আবু উমাইর, তোমার ছোট পাখির কী হেয়েছে?

৬। বড়দের প্রতি তাঁর ছিলো অগাধ শ্রদ্ধা

হাদীস শরীফে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি ছোটদের স্নেহ ও বড়দের সম্মান করে না সে আমার দলভুক্ত নয়।

বিশ্বমানবতার মুক্তিদূত রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের গুণাবলী বর্ণনা করে শেষ করা যাবে না। সংক্ষেপে আমরা একটি নমুনা পেশ করলাম। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি প্রগাঢ় শ্রদ্ধা, অশেষ ভক্তি ও হৃদয়ের উষ্ণ ভালোবাসা পোষণ করা ও তাঁর মহান আদর্শ-গুণাবলী নিজের জীবনে প্রতিফলিত করার চেষ্টা করি। আল্লাহ আমাদের সহায় হোন।

আবু তাহের মিনহাজ

 
স্বামী স্ত্রীর হক | Husband-Wife Rights | হুকুকুল ইসলাম | রাহে সুন্নাত ব্লগ
আল্লাহর ভয় | Taqwa or Fear of Allah | Abu Tasnim Umaire
আত্মশুদ্ধির বিষয়ে মারাত্মক উদাসীনতা Severe indifference to self-purification

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *