নবীজী নূর হয়েই তাশরিফ এনেছেন
হাদীস নং—৭ :
عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُتَعَالٰى عَنْهَا قَالَتْ كُنْتُ أَخِيْطُ فِي السَّحْرِ فَسَقَطَتْ مِنِّيْ الْاِبْرَةُ فَطَلَبْتُهَا فَلَمْ أَقْدِرْ عَلَيْهَا فَدَخَلَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَتَبَيَّنَتِ الْإِبْرَةُ بِشَعَاعِ نُوْرِ وَجْهِه
বাংলা অনুবাদ : উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা সিদ্দীকা (রাদ্বিয়াল্লাহু তাআলা আনহা) বলেন, আমি শেষ রাতে সাহরীর সময় (একটি প্রদীপের সামনে) কাপড় সেলাই করছিলাম। হঠাৎ (প্রদীপটি নিভে যাওয়ায়) আমার হাত থেকে সুঁইটি মাটিতে পড়ে গেল। অনেক খেঁাজাখুঁজির পরও পাওয়া গেল না। অতঃপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আগমন করলেন। ফলে তাঁর চেহারা মোবারকের নূরের আলোতে সঁুইটি দৃষ্টিগোচর হলো।
১. ইমাম সুয়ুতী, খাসায়েসুল কুবরা, ১ম খণ্ড, ১১১ পৃষ্ঠা, হাদীস নং—২৮৭। ২. ইমাম হায়তামী, আন—নিয়ামাতুল কুবরা, ৪১ পৃষ্ঠা।
হাদীস নং—৮ :
عَنْ أَبِي إِسْحَاقَ، قَالَ: سُئِلَ البَرَاءُ بْنُ عَاذِبٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ أَكَانَ وَجْهُ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، مِثْلَ السَّيْفِ؟ قَالَ: لاَ بَلْ مِثْلَ القَمَرِ.
বাংলা অনুবাদ : হযরত আবু ইসহাকরহ. বলেন, এক ব্যক্তি হযরত রাবা ইবনে আজেব রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে জিজ্ঞাসা করলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চেহারা মোবারক কি তরবারিত মতো ছিল? তিনি বললেন না; বরং চাদের মতো সুন্দর ছিল।
১. বুখারী শরীফ, হাদীস নং—৩৫৫২। ২. সুনান দারেমী, ১ম খণ্ড, ৩৩ পৃষ্ঠা, হাদীস নং—৬৪। ৩. ইমাম বায়হাকী, দালায়েলুন নবুওয়াত, ১ম খণ্ড, ১৫৮ পৃষ্ঠা, হাদীস নং—১০৯/১১০, ৪. কাজী আয়াজ, কিতাবুশ শিফা, ১ম খণ্ড, ২য় পরিচ্ছেদ, ৬১ পৃষ্ঠ। ৫.তিরমিজি, ২য় খণ্ড, শামায়েল, পৃষ্ঠা—২ হাদীস নং—১১
হাদীস নং—৯ :
عَنِ ابْنِعَبَّاسٍرَضِيَ اللهُتَعَالٰى عَنْهُ قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَفْلَجَ الثَّنِيَّتَيْنِ إِذَا تَكَلَّمَ رُئِيَ كَالنُّورِ يَخْرُجُ مِنْ بَيْنِ ثَنَايَاهُ .
বাংলা অনুবাদ : হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাদ্বিয়াল্লাহু তাআলা আনহুমা) বলেন, যখন আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কথা বলতেন, তখন উনার সামনের দুই দাঁতের ফাঁক দিয়ে নূর বের হতো।
১. তিরমিজি শরীফ, শামায়েল, ২য় খণ্ড, পৃষ্ঠা ২, হাদীস নং—১৪। ২. সুনান দারেমী, ১ম খণ্ড, ৩১ পৃষ্ঠা, হাদীস নং—৫৮। ৩. ইমাম বায়হাকী, দালায়েলুন নবুওয়াত, ১ম খণ্ড, ১৭৪ পৃষ্ঠা, হাদীস নং—১৪২। ৪. ইমাম সুয়ূতী, খাসায়েসুল কুবরা, ১ম খণ্ড, ১১১ পৃষ্ঠা, হাদীস নং—২৮৪। ৫. কাজী আয়াজ, কিতাবুশ শিফা, ১ম খণ্ড, ২য় পরিচ্ছেদ, ৬০ পৃষ্ঠা।
হাদীস নং—১০ :
عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُمَا قَالَ : لَمْ يَكُنْ لِرَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ظِلٌّ، وَلَمْ يَقُمْ مَعَ شَمْسٍ قَطُّ اِلَّا غَلَبَ ضَوْئُهٗ ضَوْءَ الشَّمْسِ، وَلَمْ يَقُمْ مَعَ سِرَاجِ قَطُّ اِلَّا غَلَبَ ضَوْئُهُ ضَوْءَ السِّرَاجِ .
বাংলা অনুবাদ : হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কোনো ছায়া ছিল না। সূর্যের আলোতে উনার ছায়া পড়তনা। বরং তাঁর নূরের ঝলক সূর্যের আলোর উপর প্রভাব বিস্তার করত। কোনো প্রদীপের সামনে দাঁড়ালেও প্রদীপের আলোর উপর তাঁর নূরের আলো বিস্তার করত।
১. মুসান্নাফ ইবনে আবদুর রাজ্জাক, ১ম খণ্ড, ৫৬ পৃষ্ঠা। ২. ইমাম সুয়ূতী, খাসায়েসুল কুবরা, ১ম খণ্ড, ১২২ পৃষ্ঠা, হাদীস নং—৩২৮। ৩. কাজী আয়াজ, কিতাবুশ শিফা, ১ম খণ্ড, ৩৩৮ পৃষ্ঠা।
উপরোক্ত হাদীসসমূহ পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, নবী কারীমসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে মহান আল্লাহ তাআলা নূর হিসেবে সমস্ত কিছুর পূর্বে সৃষ্টি করেছেন। আর সেই নূর থেকেই সমস্ত কিছু সৃষ্টি করেছেন। বুখারী শরীফ, ১ম খণ্ড, ২৬৪ পৃষ্ঠায় হাদীস এসেছে, নবী কারীমসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, কে আছো আমার মতো, আমি তোমাদের মতো মানুষ নই। তদুপরি বিভিন্ন হাদীস থেকে জানা যায় যে, নবী কারীমসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সৃষ্টিগতভাবে তো নন—ই কোনো দিক দিয়ে—ই আমাদের মতো নন। আল্লাহ আ’লামু ওয়া রাসূলুহু।
মহান আল্লাহ তায়ালা কুরআনে বলেন,
قَدْ جَآءَكُمْ مِّنَ اللّٰهِ نُوْرٌ وَّ كِتٰبٌ مُّبِیْنٌۙ۱۵
অর্থ : অবশ্যই আল্লাহর পক্ষ থেকে তোমাদের কাছে এসেছে নূর এবং সুস্পষ্ট কিতাব। -সূরা মায়েদা, আয়াত—১৫
১। উপরোক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতী রাহ. লিখেন-
[قَدْ جَآءَكُمْ مِّنَ اللّٰهِ نُوْرٌ] هُوَ النَّبِىُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ [ وَكِتَابُ] قُرْاٰنُ [مُّبِيْنْ]
অর্থ : অবশ্যই আল্লাহর কাছ থেকে তোমাদের কাছে এসেছে নূর- তিনি হলেন, নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আর কিতাব হলো সু—স্পষ্ট কুরআন। (তাফসীরে জালাইন, সূরা মায়েদা ১৫ নং আয়াতের তাফসীর)
উক্ত ইবারত দ্বারা প্রমাণীত হয়, নূর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো হযরত নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যিনি স্বয়ং আল্লাহর পক্ষ থেকে এসেছেন। মানব জাতির (পথপ্রদর্শক) হেদায়াতের জন্য।
২। এই নূরের ব্যাখ্যায় রইসুল মুফাসসিরীন, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহ আনহুমা লিখেন-
[قَدْ جَآءَكُمْ مِّنَ اللّٰهِ نُوْرٌ] رَسُوْلُ يَعْنِىْ مُحَمَّدً [ وَكِتَابٌ مُّبِيْنْ] بِالْحَلَالِ وَالْحَرَامِ
অর্থ : আল্লাহ পাক থেকে তোমাদের নিকট এসেছে নূর, তিনি রাসূল অর্থাৎ মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। আর সু—স্পষ্ট কিতাব হলো, হালাল ও হারাম।
(তানভীরুল মিকবাস মিন তাফসীর ইবনে আব্বাস, সূরা মায়েদা ১৫ নং আয়াতের তাফসীর)
৩। হানাফী মাযহাবের আরেকটি নির্ভরযোগ্য কিতাব তাফসীরে রুহুল মায়ানীতে আল্লামা মাহমুদ আলুসী লিখেন-
]قَدْ جَآءَكُمْ مِّنَ اللّٰهِ نُوْرٌ[ عَظِيْمٌ وَهُوَ نُوْرُ الْاَنْوَارِ وَالنَّبِىُّ الْمُخْتَارُ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ .
অর্থ : নিশ্চয়ই আল্লাহর তরফ থেকে তোমাদের কাছে এসেছে ‘নূর’ তিনি সবচেয়ে বড় নূর এবং তিনি সকল নূরের নূর, তিনি নবীউল মুখতার, সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।
(তাফসীরে রুহুল মায়ানী, সূরা মায়েদা ১৫ নং আয়াতের তাফসীর)
উপরোক্ত আযাতের তাফসীর দ্বারা স্পষ্ট বুঝা যায় যে, পবিত্র কুরআনে নবী পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নূর বলা হয়েছে। বলা হয়েছে নূর এসেছে। সুতরাং আল্লাহর নবী হলেন নূর। সবচেয়ে বড় নূর (নূরুল আনওয়ার) সকল নূরের নূর। সুবহানাল্লাহ!
(১) আল্লাহওয়ালা বুযূর্গানে দ্বীনের সোহবত (২) ইহতিসাব (দ্বীনের প্রাণবস্তু) (৩) মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বরাবর প্রেরীত চিঠির ব্যাখ্যা PDF (৪) আল্লাহর আইন শাশ্বত ও চিরন্তন (৫) মহানবী জগতের আদর্শ মহামানব। ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ (৬) মানব জাতির মুক্তি ও কামিয়াবী সুরাতুল আসরের ৪