পবিত্র কুরআন ও সন্ত্রাসবাদ (পর্ব-এক)
কুরআন যে যুগে যে সমাজে অবতীর্ণ হয়েছে তখনকার সবচে’ পীড়াদায়ক বিষয় ছিল—নীতিহীনতা, অরাজকতা ও খুনলুণ্ঠন। নীতিহীনতার অনুমান এ থেকে করা যায় যে, তখন পুরো জাযিরাতুল আরবে রীতিমত কোনো শাসক ছিল না। আর আরবের আশপাশে যেসব রাষ্ট্র ছিল সেগুলো ছিল বংশীয় আভিজাত্য ও নীচুতার ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত। যে রাষ্ট্র বংশীয় আভিজাত্য ও নীচুতার ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত, জানা কথা, সেখানে ন্যায়—ইনসাফ কায়েম করা সম্ভব নয়। এমনি পরিবেশে আল্লাহ পাক সর্বশেষ কিতাব নাযিল করেছেন। সে কিতাবে সর্বপ্রথম যে আয়াত নাযিল হয়েছে তাতে জ্ঞান ও কলমের গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। তাতে একথাও বলা হয়েছে, সকল মানুষের সৃষ্টিগত উপাদান এক। তাতে মানবসাম্য ও সমতার দিকে ইঙ্গিত রয়েছে।
জ্ঞান মানুষকে আইনের অধীন করে। আর মানবসাম্যের দৃষ্টিভঙ্গি ন্যায়—নীতি প্রতিষ্ঠা করে এবং মানবতাবোধের বিশ্বাস সুদৃঢ় করে। এমন একটা দেশ যেটা ছিল শান্তি ও নিরাপত্তা থেকে সম্পূর্ণ বঞ্চিত, যেখানে সন্ত্রাসবাদ আইনের মর্যাদা লাভ করেছে, ইসলাম সেটাকে শান্তিময় ও নিরাপদ দেশে পরিণত করেছে। তাদের শিখিয়েছে মানবতাবোধ ও মানব—ভ্রাতৃত্ব। অবশেষে রাসুলের এ ভবিষ্যদ্বাণীও পূর্ণ হয়েছে—একজন নারী একাকী সওয়ার হয়ে সানয়া থেকে সিরিয়া পর্যন্ত সফর করতে পারবে।
ইসলাম নিজের অনুসারীদের জন্য এমন দুটি শব্দ ব্যবহার করে যার অর্থই হলো—শান্তি, নিরাপত্তা ও সন্ধিমৈত্রী। মুমিন অর্থ শান্তি ও নিরাপত্তা—দানকারী। আর মুসলিম মানে—সন্ধি স্থাপনকারী, চুক্তি সম্পাদনকারী। কুরআনের শুরুতে আছে, بسم الله الرحمن الرحيم । তাতে আল্লাহকে অতি দয়ালু ও মেহেরবান আখ্যা দেয়া হয়েছে। কুরআনের প্রথম সুরার প্রথম আয়াতে আল্লাহকে পুরো সৃষ্টিজগতের রব তথা প্রতিপালক বলা হয়েছে। আর রব যিনি হন তিনি অত্যন্ত দয়ালু ও মমতাময় হয়ে থাকেন। আল্লাহকে বিশ্বজগতের রব আখ্যা দিয়ে পুরো জগতকে ভ্রাতৃবন্ধনে আবদ্ধ করা হয়েছে। এর মাধ্যমে এমন সর্বজনীন ধারণা দেয়া হয়েছে যে, বিশ্বমানবতা একই গোত্রভুক্ত, একই পরিবারভুক্ত।
মোটকথা পবিত্র কুরআন শান্তি—নিরাপত্তা, মানব—ভ্রাতৃত্ব ও বিশ্বজনীনতার পতাকাবাহী। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক ব্যাপার হলো, আজ সূর্যের দিকে থুথু নিক্ষপ করা হচ্ছে। কোনো কোনো দুর্মুখ একথা বলারও দুঃসাহস দেখাচ্ছে যে, কুরআনে কিছু ভুলভ্রান্তি আছে, যে কারণে কুরআন—পড়–য়াদের মাঝে সন্ত্রাসবাদের প্রবণতা দেখা যায়। এটা এমন একটা অপবাদ ভাসাভাসা দৃষ্টিতে কুরআন পড়েছে এমন কেউ তা স্বীকার করবে না। এটা তো দিনকে রাত আর বরফকে আগুন বলার নামান্তর।
আরবি ভাষায় সন্ত্রাসবাদকে ارهاب বলা হয়। কুরআন মুসলমানদের এ নির্দেশ দেয় যে, তাদের কাছে এমন শক্তি—সামর্থ থাকা উচিত যা তাদেরকে শত্রুদের জুলুম—নির্যাতন থেকে নিরাপদ রাখবে এবং শত্রুদের ভীত—সন্ত্রস্ত রাখবে। পবিত্র কুরআনে এটাকেقوة مرهبة তথা ভীতিপ্রদর্শক শক্তি বলা হয়েছে। আল্লাহ পাক বলেন—
وَ اَعِدُّوْا لَهُمْ مَّا اسْتَطَعْتُمْ مِّنْ قُوَّۃٍ وَّمِنْ رِّبَاطِ الْخَیْلِ تُرْهِبُوْنَ بِهٖ عَدُوَّ اللهِ وَعَدُوَّكُمْ وَ اٰخَرِیْنَ مِنْ دُوْنِهِمْ ۚ لَا تَعْلَمُوْنَهُمْ ۚ اَللهُ یَعْلَمُهُمْ ؕ
‘তোমরা তাদের মুকাবেলার জন্য যথাসাধ্য শক্তি ও অশ্ববাহিনী প্রস্তুত রাখো। এর মাধ্যমে তোমরা সন্ত্রস্ত রাখবে আল্লাহর শত্রুকে, তোমাদের শত্রুকে এবং এ ছাড়া অন্যদেরকে যাদেরকে তোমরা জান না, আল্লাহ তাদেরকে জানেন।’ [আনফাল : ৬০]
এখানে স্পষ্ট বলা হয়েছে, শক্তি অর্জন মূলত শত্রুদের ভীত—সন্ত্রস্ত রাখার জন্য এবং তাদেরকে জুলুম—নির্যাতন থেকে বিরত রাখার জন্য। নিরপরাধ লোকদের টার্গেট করা বা তাদের ধ্বংসযজ্ঞ ও হত্যাযজ্ঞের জন্য নয়।
চলবে………………………………….
পবিত্র কুরআন ও সন্ত্রাসবাদ (পর্ব-এক)
মহানবী জগতের আদর্শ মহামানব। ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ