মিসওয়াকের ফযীলত
عَنْ اَبِىْ هُرَيْرَةَ ؓ قَالَ رَسُوْل ُا للهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَوْ لَا اَنْ اَشُقَّ عَلٰى اُمَّتِىْ لَاَمَرْتُهُمْ بِتَاخِيْرِ الْعِشَاءِ وَبِا لسِّوَاكِ عِنْدَ كُلِّ صَلٰوةٍ.
১. হযরত আবু হুরায়রা (রাযি.) থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, যদি উম্মতের জন্যে কঠিন হওয়ার আশঙ্কা না হতো, তবে আমি তাদের উপর প্রত্যেক নামাযের জন্যে মিসওয়াক করা ওয়াজিব করে দিতাম। –মিশকাত, ১/৪৪
২. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, মিসওয়াক করা মুখের পবিত্রতার উপায় এবং আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টির কারণ। –সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৯৩৩
৩. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, জিবরাঈল আলাইহিস সালাম যখনই আমার কাছে এসেছেন, তখনই মিসওয়াক করার কথা বলেছেন। এবং বারবার তাকীদ করার কারণে এমন আশঙ্কা হয় যে, আমি আমার মুখের অগ্রভাগ মিসওয়াক করতে করতে ক্ষয় না করে ফেলি। –মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং ২২২৬৯; মুজামে কাবীর, তবারানী, হাদীস নং ৭৮৪৭
৪. আম্মাজান হযরত আয়েশা সিদ্দীকা (রাযি.) বর্ণনা করেন, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অভ্যাস ছিলো দিনে অথবা রাত্রে যখনই তিনি ঘুমাতেন, ঘুম থেকে উঠার পর উযূ করার পূর্বে অবশ্যই মিসওয়াক করতেন। ওফাতের সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সর্বশেষ কাজ ছিলো মিসওয়াক করা। –মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং ২৪৯০০ ; সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং ৫৭; সুনানে কুবরা, বায়হাকী, হাদীস ১৭০
৫. আম্মাজান হযরত আয়েশা সিদ্দীকা (রাযি.) বর্ণনা করেন, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে নামাযের জন্যে মিসওয়াক করা হয়, তা মিসওয়াকবিহীন নামাযের মোকাবেলায় সত্তরগুণ উত্তম। –মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং ২৬৩৪০;সহীহ ইবনে খুযাইমা, হাদীস নং ১৩৭; শুআবুল ঈমান, বায়হাকী, হাদীস নং ২৫১৮; সুনানে কুবরা, বায়হাকী, হাদীস নং ১৬২
৬. সাধারণতঃ মহিলাদেরকে সুন্নাত তরীকায় মিসওয়াক ব্যবহার করতে দেখা যায় না। অথচ মিসওয়াকের গুরুত্ব ও ফযীলত পুরুষ-মহিলা উভয়ের জন্য সমভাবে প্রযোজ্য।
যে যে সময়ে মিসওয়াক করা সুন্নাত
১. ঘুম থেকে উঠার পর। -শামী : ১/২৩৩
২. উযূর পূর্বে। -শামী : ১/২৩৩
৩. কুরআন তিলাওয়াতের পূর্বে। -শামী : ১/২৩৩
৪. হাদীস শরীফ পড়া ও পড়ানোর আগে। -শামী : ১/২৩৩
৫. (অনেক আগে উযূ করে থাকলে) নামাযে দাঁড়ানোর সময়।-শামী : ১/২৩৩
৬. খানায়ে কা‘বা বা হাতীমে কা‘বায় প্রবেশের সময়। -শামী : ১/২৩৩
৭. যিকির করার পূর্বে।
৮. মুখে দুর্গন্ধ হলে। -শামী : ১/২৩৩
৯. কোনো দ্বীনী মজলিসে যাওয়ার আগে।
১০. ঘরে প্রবেশের পরে। -শামী : ১/২৩৩
১১. স্ত্রী সহবাসের পূর্বে। -শামী : ১/২৩৩
১২. ক্ষুধার্ত বা পিপাসিত হলে।
১৩. সফরে যাওয়ার পূর্বে।
১৪. সফর থেকে প্রত্যাবর্তনের পরে।
১৫. খাদ্য গ্রহণের আগে।
১৬. ঘুমানোর পূর্বে।
১৭. সাহরী খাওয়ার সময়।
১৮. মৃত্যুর চিহ্ন ফুটে উঠার পূর্বে। -আত্তারগীব ওয়াত্ তারহীব
মিসওয়াকের ধরন
১. মিসওয়াক নিম, যাইতুন বা যে কোনো তেতো গাছের ডাল হওয়া উত্তম। –শামী : ১/১৩৪
২. মিসওয়াক কনিষ্ঠ আঙ্গুলের মতো মোটা হওয়া উত্তম। –শামী : ১/২৩৪
৩. মিসওয়াক এক বিঘা থেকে অধিক লম্বা না হওয়া ভালো। –শামী : ১/২৩৫
৪. মিসওয়াক নরম হওয়া ভালো। –শামী : ১/২৩৪
৫. মিসওয়াকের ডাল কাঁচা হওয়া উত্তম। –রদ্দুল মুহতার, আলমগীরী -১/৭
মিসওয়াক ধরার পদ্ধতি
১. মিসওয়াক ডান হাতে ধরা মুস্তাহাব। –শামী : ১/২৩৪
২. কনিষ্ঠাঙ্গুলী নিচে, বৃদ্ধাঙ্গুলী অগ্রভাগে এবং বাকী আঙ্গুলগুলো উপরে স্থাপন করে মেসওয়াক ধরা উত্তম। –আলমগীরী : ১/৭
মিসওয়াক করার সুন্নাত তরীকা
১. মিসওয়াক শুরু করার পূর্বে মিসওয়াক ভিজিয়ে নিবে। –শামী : ১/২৩৫
২. বিসমিল্লাহ বলে মিসওয়াক শুরু করবে।
৩. প্রথমে দাঁতের উপরের সারির ডান দিকে ঘষবে তারপর বাম দিকে, এরপর নিচের সারির ডান দিকে তারপর বাম দিকে। অতঃপর দাঁতের ভিতরের দিকে অনুরূপভাবে ঘষবে। –দুররুল মুখতার, শামী : ১/২৩৫
৪. মিসওয়াক জিহ্বার উপরিভাগে ও তালুতেও ঘষা উত্তম।
৫. উপরের নিয়মে তিনবার করে ঘষা উত্তম। প্রতিবারেই নতুন পানি দিয়ে মিসওয়াক ধুয়ে নেয়া মুস্তাহাব।
৬. মিসওয়াক প্রথমে দাঁতের উপর চওড়াভাবে এবং পরে গোড়ার দিক থেকে আগার দিকে ঘষবে। –আলমগীরী : ১/৭
৭. শোয়া অবস্থায় মিসওয়াক করা মাকরূহ। –শামী : ২/২৩৫
আরো জানতে ভিজিট করুন আমাদের ওয়েব সাইট রাহে সুন্নাত ব্লগ