হজ্জের গুরুত্ব ও ফযীলত

হজ্জের গুরুত্ব ও ফযীলত Importance and Benefits of Hajj

ইসলাম প্রতিদিন

হজ্জের গুরুত্ব ও ফযীলত

حَامِدًا وَّمُصَلِّيًا وَمُسَلِّمَا. أَمَّا بَعْدُ! فَقَدْ قَالَ اللهُ تَعَالٰى : وَأَذِّنْ فِي النَّاسِ بِالْحَجِّ يَأْتُوكَ رِجَالًا وَعَلَى كُلِّ ضَامِرٍ يَأْتِينَ مِنْ كُلِّ فَجٍّ عَمِيقٍ . وقال أيضا وَلِلّٰهِ عَلَى النَّاسِ حِجُّ الْبَيْتِ مَنِ اسْتَطَاعَ إِلَيْهِ سَبِيلا وَمَنْ كَفَرَ فَإِنَّ اللَّهَ غَنِيٌّ عَنِ الْعَالَمِينَ

عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ وَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهِ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ حَجَّ لِلّٰهِ فَلَمْ يَرْفُثْ، وَلَمْ يَفْسُقْ، رَجَعَ كَيَوْمٍ وَلَدَتْهُ أُمُّهُ. اَوَ كَمَا قَالَ عَلَيْهِ الصَّلٰوةُ وَالسَّلَامُ

হজ্জ ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ রোকন ও অন্যতম স্তম্ভ । ইসলামের পূর্ণতা এর ওপর সমাপ্ত হয়েছে। এর মাধ্যমে ইসলামের বিশ্বভ্রাতৃত্ব ও আন্তর্জাতিকতার সফল বাস্তবায়ন ঘটে থাকে। বিশ্বের সকল মুসলমানই একটি অখণ্ড উম্মত, হজ্জ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এর বাস্তব প্রমাণ পরিলক্ষিত হয়। পবিত্র মক্কার কাবাগৃহ ইসলামের সকল প্রেরণা এবং ঐক্যের প্রাণকেন্দ্র।

প্রতি বছর বিভিন্ন দেশের অগণিত মুসলমান ইসলামের এই অনুপম ঐক্য ও সংহতির প্রাণ—কেন্দ্রে মিলিত হয়ে ইসলামী ভ্রাতৃত্বের ভাবধারায় উদ্বুদ্ধ হওয়ার সুযোগ লাভ করে এবং এই প্রেরণা নিয়ে আবার পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে। তাই ইসলামী প্রাণ—চাঞ্চল্য বজায় রাখার ব্যাপারে হজ্জের একটি বিরাট ও সুদূরপ্রসারী ভূমিকা রয়েছে। নিম্নে কুরআন হাদীসের আলোকে হজ্জের ফাযায়েল ও আহকাম সম্পর্কে কিঞ্চিত আলোচনা করব ইনশাআল্লাহ।

হজ্জের প্রবর্তন সম্পর্কে আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন-

وَ اَذِّنْ فِی النَّاسِ بِالْحَجِّ یَاْتُوْكَ رِجَالًا وَّ عَلٰی كُلِّ ضَامِرٍ یَّاْتِیْنَ مِنْ كُلِّ فَجٍّ عَمِیْقٍۙ ۝۲۷

অর্থ : মানুষের নিকট হজ্জ ফরয হওয়া সম্পর্কে ঘোষণা দিয়ে দিন, যেন তারা ওই ঘোষণাপত্র পেয়ে আপনার কাছে এসে একত্রিত হয়। তন্মধ্যে কেউ পদব্রজে আসবে, আবার কেউবা উটকে দুর্বল করে দূর—দূরান্ত পথ অতিক্রম করে আসবে। এজন্য যে তারা তথায় নিজেদের ফায়দা দেখতে পাবে। -সূরা হজ, আয়াত—২৭,২৮

হযরত আবু হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-

اَلْحَجُّ الْمَبْرُوْرُ لَيْسَ لَهُ جَزَاءٌ إِلَّا الْجَنَّةَ

অর্থ : হজ্জে মাবরুর (কবুল হজ্জ), জান্নাতই হলো তার একমাত্র পুরস্কার। -সহীহ বুখারি

অন্যত্র ইরশাদ করেছেন- مَنْ حَجَّ لله فَلَمْ يَرْفَثْ وَلَمْ يَفْسُقْ رَجَعَ كَيَوْمٍ وُلِدَتْهُ أُمُّهُ

অর্থ : যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য হজ্জ করে এবং হজ্জের প্রাক্কালে অশ্লীল কথা ও কাজ এবং পাপ থেকে বিরত থাকে, সে মায়ের পেট থেকে জন্মগ্রহণের দিনের ন্যায় নিষ্পাপ হয়ে ফিরে আসে। -বুখারি ও মুসলিম

আরো ইরশাদ করেন-

تَابَعُوْا بَيْنَ الْحَجِّ وَالْعُمْرَةِ فَإِنَّهُمَا يَنْفِيَانِ الْفَقْرَ وَالذُّنُوْبَ كَمَا يَنْفِي الْكِيْرُ خُبْثَ الْحَدِدِ

অর্থ : একাধারে হজ্জ ও উমরা করতে থাক, এটা পাপ ও দারিদ্র্যকে এমনভাবে মিটিয়ে দেয়, যেমন আগুন লোহার ময়লা দূর করে দেয়। -তিরমিযী ও নাসায়ি

হযরত আয়েশা রাযি. বর্ণিত হাদীসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন- جِهَادُكُنَّ الْحَجَّ
তোমাদের জিহাদ হলো হজ্জ করা। -বুখারি ও মুসলিম

কাদের ওপর হজ্জ ফরয :
এ প্রসঙ্গে আল্লাহ্ তাআলার ইরশাদ-

وَ لِلّٰهِ عَلَی النَّاسِ حِجُّ الْبَیْتِ مَنِ اسْتَطَاعَ اِلَیْهِ سَبِیْلًا ؕ وَ مَنْ كَفَرَ فَاِنَّ اللّٰهَ غَنِیٌّ عَنِ الْعٰلَمِیْنَ ۝۹۷

অর্থাৎ মানুষের ওপর আল্লাহর এই অধিকার রয়েছে যে যারা তার ঘর (বায়তুল্লাহ) পর্যন্ত পেঁৗছার সামর্থ্য রাখে তারা যেন আল্লাহর ঘরের হজ্জ সমাপন করে। বস্তুত যারা এই নির্দেশ পালন করতে অস্বীকার করবে (তাদের জেনে রাখা উচিত) নিশ্চিয়ই আল্লাহ্ সমগ্র সৃষ্ট জগতের কারো মুখাপেক্ষী নন। -সূরা আল ইমরান, আয়াত—৯৭

শারীরিকভাবে সুস্থ এরূপ প্রাপ্তবয়স্ক জ্ঞানী মুসলমান যার কাছে মক্কা শরীফ যাতায়াতের মোটামুটি খরচ পরিমাণ অর্থ থাকে তার ওপর হজ্জ ফরয। ব্যবসায়িক পণ্য এবং প্রয়োজনের অতিরিক্ত জমি ও বাড়ির মূল্য এ অর্থের হিসাবে গণ্য করতে হবে।

কিন্তু মেয়েদের বেলায় নিজ স্বামী বা কোনো বিশ্বস্ত দীনদার মাহরাম পুরুষ ব্যতীত হজ্জে যাওয়া দুরস্ত নয়। শুধু মাহরাম মহিলা সাথে থাকলে যথেষ্ট নয়, যদিও সেই মাহরাম মহিলার সাথে তার মাহরাম পুরুষ থাকে।

অন্ধের ওপর হজ্জ ফরয নয়, যতই ধন তার থাকুক না কেন।

নাবালেগের ওপর হজ্জ ফরয হয় না। নাবালেগ অবস্থায় হজ্জ করলেও বালেগ হওয়ার পর সম্বল হলে পুনরায় হজ্জ করতে হবে।

হজ্জ ফরয হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সেই বছর হজ্জ করা ওয়াজিব। বিনা ওজরে দেরি করা পাপ।

অনেকে মনে করে থাকেন ছেলে—মেয়ে বিবাহের উপযুক্ত হয়ে গেছে, তাদেরকে বিবাহ না দিয়ে হজ্জ করা যায় না। এভাবে হজ্জ করতে বিলম্ব করেন। অনেকে বাড়ি—ঘর তৈরি করার জন্য এবং অনেকে চাকরি থেকে অবসর গ্রহণের অপেক্ষায় থাকেন এবং হজ্জ করতে বিলম্ব করেন।

অথচ ছেলে—মেয়ের বিবাহ—শাদি দেয়া, বাড়ি—ঘর তৈরি করার, চাকরি থেকে অবসর গ্রহণ করা, ফরয হজ্জ আদায়ে বিলম্ব করা জন্য গ্রহণযোগ্য কোন ওজর নয়। শেষ বয়সে হজ্জ করব এরূপ চিন্তাও ভুল। বরং সুস্থ—সবল থাকতে হজ্জ করলেই হজ্জের কার্যাবলি ভালোভাবে আদায় করা সহজ হয়।

হজ্জ ফরয হওয়ার পর আলসেমি করে বিলম্ব করলে এবং পরে গরিব বা শক্তিহীন হয়ে গেলেও ওই ফরয তার জিম্মায় থেকে যাবে, মাফ হবে না। যেকোনো উপায়ে তাকে হজ্জ করতে হবে বা মৃত্যুর পূর্বে বদলি হজ্জের ওছিয়ত করে যেতে হবে।

মাতা—পিতার হজ্জের পূর্বে সন্তান হজ্জ করতে পারবে না, এই ধারণা ভুল। অতএব এ ধারণার বশবর্তী হয়ে হজ্জে বিলম্ব গ্রহণযোগ্য ওজর নয়।

হজ্জ ফরয হওয়া সত্ত্বেও যে ব্যক্তি হজ্জ না করে মৃত্যুবরণ করে তার জন্য ভীষণ আযাবের সংবাদ দেয়া হয়েছে। এরূপ লোক সম্পর্কে হাদীসে বলা হয়েছে, সে ইহুদি হয়ে বা নাসারা হয়ে মারা যাক (আল্লাহর সাথে তার কোনো সম্পর্ক নেই।)

হযরত আবু উমামা রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-

مَنْ لَمْ يَمْنَعْهُ مِنَ الْحَجِّ حَاجَةٌ ظَاهِرَةٌ أَوْ سُلْطَانٌ جَائِرٌ أَوْ مَرَضٌ حَابِسٌ فَمَاتَ وَلَمْ يَحُجَّ فَلْيَمُتْ إِنْ شَاءَ يَهُودِيًّا وَإِنْ شَاءَ نَصْرَانِيًّا

কোনো জরুরি প্রয়োজন, জালেম শাসকের বাধা বা কঠিন রোগ—ব্যাধির কারণ ছাড়াই যদি কেউ (হজ্জ ফরয হওয়া সত্ত্বেও) হজ্জ না করে মৃত্যুবরণ করে, তাহলে সে যেন ইহুদি বা খ্রিস্টান হয়ে মৃত্যুবরণ করে। -দারেমী

এ পর্যায়ে আমি হজ্জের শিক্ষা নিয়ে দুটি কথা বলতে চাই। মহান আল্লাহ্ তা’আলা বলেন-

وَاعْتَصِمُوْا بِحَبْلِ اللهِ جَمِيْعًا وَّلَا تَفَرَّقُوْا

অর্থাৎ তোমরা সবাই আল্লাহর রজ্জুকে আঁকড়ে ধরো, তোমরা পরস্পর বিছিন্ন হয়ো না। -সূরা আলে—ইমরান

এই আয়াতের ঐক্যের শিক্ষা হজ্জের মধ্যে রয়েছে। হজ্জের তাৎপর্য হলো اِنَّمَا الْمُؤْمِنُوْنَ إِخْوَة নিশ্চয়ই সমস্ত মুমিন একে অপরের ভাই।

হজ্জের নসিহত তো ছিল اَلْمُسْلِمُوْنَ كَجَسَدٍ وَاحِدٍ সব মুসলমান এক দেহের ন্যায়। এর অনুপম আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে সকল নাস্তিক্যবাদী শক্তিসমূহের মোকাবিলায় সিসাঢালা প্রাচীরের ন্যায় প্লাটফর্ম তৈরি। হজ্জে প্রকৃত উদ্দেশ্য তো ছিল জাতি, গোত্র, বংশ, বর্ণ, মর্যাদা পায়ে দলে, এক আল্লাহর বান্দা ও এক রাসূলের উম্মত হিসাবে ইসলামী খেলাফতের ঝাণ্ডাকে সমুন্নত করা।

সুতরাং আসুন আমরা হজ্জের প্রকৃত শিক্ষায় অনুপ্রাণিত হয়ে সকল তাগুতি শক্তির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তুলি।

আরো জানতে ভিজিট করুন আমাদের ওয়েব সাইট রাহে সুন্নাত ব্লগ

যে মহিলা বে-পর্দা চলতে অভ্যস্ত তার জন্যও পর্দা আবশ্যক

বিবাহের পর কনে তুলে নেওয়ার আগে পর্দা রক্ষা করা কি জরুরী?

ডাক্তারের সামনে শরীর উন্মুক্ত করার শরয়ী বিধান কী?

রমযানুল মোবারক : অফুরন্ত কল্যাণের ভাণ্ডার

https://youtu.be/JzUwd-EUYW0

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *