অন্য সকল ইবাদতআত্মশুদ্ধিসকল প্রবন্ধ

ইলমে ফিকাহ ও তাসাওউফ আহকামে শরীয়তের পূর্ণ বিধান

ইলমে ফিকাহ ও তাসাওউফ আহকামে শরীয়তের পরিপূর্ণ বিধান

ইলমে ফিকাহ ও তাসাওউফ আহকামে শরীয়তের পরিপূর্ণ বিধান

উম্মতের আলেমগণ সাধারণ মানুষের সুবিধার জন্যে কুরআন ও সুন্নাহের পূর্ণাঙ্গ ব্যবস্থাপনাকে কয়েকটি শাস্ত্রের মধ্যে পৃথক পৃথকভাবে সংকলন করেছেন। বাহ্যিক আমল- নামায, রোযা, হজ্ব, যাকাত, বিয়ে, তালাক এবং সমস্ত মু‘আমালাতকে “ফিকাহশাস্ত্রের” মধ্যে এবং বাতেনী আমলের মধ্য থেকে আক্বীদা-বিশ্বাসকে “ইলমে আকাইদে” এবং আখলাক ও মু‘আশারাতকে “ইলমে তাসাওউফে” সংকলন করেছেন।
কিছু সংখ্যক উলামায়ে রাব্বানী এই তিন প্রকারের ইলমকে একত্রেও লিখেছেন। আল্লামা ইবনুস সুবকী রহ. তার উসূলে ফিকহের বিখ্যাত কিতাব ‘জামউল জাওয়ামে-এর শেষে ‘খাতেমা’ শিরোনাম দিয়ে তাসাওউফ, আখলাক ও বাতেনী আমল সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে লিখেছেন।
ইমাম কুশাইরী রহ. ‘রিসালায়ে কুশাইরিয়া’ হযরত সোহরাওয়ার্দী রহ. ‘আওয়ারিফুল মা‘আরিফ’ এবং ইমাম গাযালী রহ. ‘ইহইয়াউল উলূম’ ইত্যাদি স্বতন্ত্র পুস্তক রচনা করে বাতেনী আমলের সংশোধন এবং তার গুরুত্বের উপর অত্যন্ত বিস্তারিতভাবে আলোকপাত করেছেন।
হযরত শাহ ওয়ালীউল্লাহ রহ. বলেন, ‘তরীকত (তথা তাসাওউফ) বিহীন শরীয়ত একান্তই একটি দর্শন। আর শরীয়ত বিহীন তরীকত ধর্মহীনতা ও খোদাদ্রোহীতা বৈ নয়।’
হযরত শাহ ওয়ালীউল্লাহ রহ. এই একটি বাক্যের মাধ্যমেই ঐ ইলম ও ফুনূনের (জ্ঞান ও বিজ্ঞানের) পূর্ণ হাকীকত স্পষ্ট করে দিয়েছেন।  কেননা বাহ্যিক বিষয়াদি সম্পর্কে ইলমতো অনেক মুনাফিকেরও ছিলো, আজো শতশত ইয়াহুদী, নাসারা ও নাস্তিক এমন আছে, যারা ইসলামী-ইলমের ক্ষেত্রে খুবই গভীর পাণ্ডিত্যের অধিকারী। কিস্তু তাদের কাছে এটা শুধু দর্শন শাস্ত্র। এটা দ্বীন বলে তখনই গণ্য হবে, যখন তার বিধানসমূহ সত্য বলে বিশ্বাস করা হবে এবং শরীর সম্বন্ধীয় ও আত্মা সম্বন্ধীয় আহকামের উপর আমলও করা হবে। এজন্যই কেবল বাহ্যিক ইলম সম্পর্কে অভিজ্ঞ হওয়া এবং গবেষণাধর্মী আলোচনাকে কোন দ্বীনী যোগ্যতা বলা হয় না। তাছাড়া আল্লাহ তা‘আলা ও রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকটও এর কোন মূল্য নেই। তদ্রুপ তরীকত ও তাসাওউফের নাম নিয়ে কেউ যদি শরীয়তের বিধানের খেলাফ চলে, তাহলে এটাকেও কুফুরী, নাস্তিকতা ও  কুরআন-হাদীসের বিকৃতি বলেই আখ্যায়িত করা হবে।
হযরত হাকীমুল উম্মত মুজাদ্দিদুল মিল্লাত মাওলানা আশরাফ আলী থানভী রহ. এ বিষয়বস্তুর উপর লিখিত আততাকাশশুফ, আততাশাররুফ, মাসাইলুস সুলূক, তালীমুদ্দীন, কসদুস সাবীল ইত্যাদি বিস্তারিত আলোচনা করেছেন।
প্রকৃতপক্ষে এ সব কিছুই কুরআন ও হাদীসের ভিন্ন ভিন্ন শাখা। এগুলোর একটিকে অপরটি থেকে পৃথক এ অর্থে বলা যায়, যেমন- হাত পৃথক অঙ্গ, পা পৃথক অঙ্গ, চোখ, কান, নাক, হৃদপি-, কলিজা, পাকস্থলী ইত্যাদি পৃথক পৃথক অঙ্গ। কিন্তু পূর্ণ মানবদেহ এ সবগুলোর সমন্বয়েই গঠিত। যেমনিভাবে এ সকল অঙ্গের কোন একটিকে বাদ দিয়ে মানুষ চলতে পারে না এবং এর কোনটিই অপর অঙ্গের বিরোধী নয়। একটির ক্রিয়া-কর্ম অপরটির ক্রিয়া-কর্মের সাথে সাংঘর্ষিকও নয়, তদ্রুপ ‘ইলমে ফিকাহ ও ইলমে তাসাওউফ’ যদিও পৃথক পৃথক শাস্ত্র, কিন্তু এ সকল বিষয়ের সমষ্টির উপর আমল করার দ্বারাই কামেল মুমিন ও মুসলিম হওয়া যায়।
আমাদের সম্পর্কে জানতে ক্লিক করুন।
সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের YouTube চ্যানেল Rahe Sunnat Media

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button