অন্য সকল ইবাদতইবাদত

ঈমানী মৃত্যু নসীব হওয়ার কুরআন ও হাদীসে বর্ণিত নয়টি আমল

ঈমানের উপর টিকে থাকা এবং ঈমানী মৃত্যু নসীব হওয়ার কুরআন ও হাদীসে বর্ণিক নয়টি আমল

ঈমানী মৃত্যু নসীব হওয়ার কুরআন ও হাদীসে বর্ণিত নয়টি আমল

ঈমানী মৃত্যু নসীব হওয়ার ১ম আমল : প্রত্যেক ফরজ নামাযের পরে এই দুআ পড়া

رَبَّنَا لَا تُزِغْ قُلُوْبَنَا بَعْدَ اِذْ هَدَيْتَنَا وَهَبْ لَنَا مِنْ لَّدُنْكَ رَحْمَةً اِنَّكَ اَنْتَ الْوَهَّابُ

তাফসিরে রুহুল মা’আনীতে লিখেন-

اَلْمُرَادُ بِهٰذِهِ الرَّحْمَةِ اَلتَّوْفِيْقُ لِلثُّبَاتِ عَلٰى الْحَقِّ

অর্থাৎ আয়াতে বর্ণিত রহমত দ্বারা দীনের উপর অটল-অবিচল থাকার তাওফিক পাওয়া হলো উদ্দেশ্য। রুহুল মা’আনী-৯০/২

ঈমানী মৃত্যু নসীব হওয়ার ২য় আমল : নিচে বর্ণিত দুআটি বেশি বেশি করে পাঠ করা।

يَا حَىُّ يَا قَيُّوْمُ بِرَحْمَتِكَ اَسْتَغِيْثُ

হে চিরস্থায়ী চিরঞ্জীব আল্লাহ! তোমার রহমতের সাহায্য কামনা করছি।

বি. দ্র. : রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পেরেশানির সময় এই দুআটি পড়তেন। -জামে তিরমিযী, হাদীস নং-৩৫২৪, মুসতাদরাকে হাকেম, হাদীস নং-১/৫০৯

নুকতা : আল্লাহ তায়ালার রহমত ব্যতীত নফসের খারাবী থেকে এক সেকেন্ডও বেঁচে থাকা সম্ভব নয়। যেমন আল্লাহ তায়ালা বলেন,

اِنَّ النَّفْسَ لَاَمَّارَةٌ بِالسُّوْءِ اِلَّا مَا رَحِمَ رَبِّىْ ــ

এ জন্য এ দুআতে রহমতের অছিলা গ্রহণ করা হয়েছে।

ঈমানী মৃত্যু নসীব হওয়ার ৩য় আমল : মেসওয়াক করা।
হাদীস :

عَنْ عَائِشَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهَا أَنَّ النَّبِىَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : اَلسِّوَاكُ مُطَهِّرَةٌ لِلْفَمِ وَمَرْضَاةٌ لِّلرَّبِّ ـ

অর্থ : মেসওয়াক মুখের পবিত্রতা ও আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের মাধ্যম। -সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৪/১৫৮, নাসায়ী, হাদীস নং-১/১০, ইবনে খুযাইমা, হাদীস নং-১/৭০,

فَضْلُ الصَلَاةِ بِالسِّوَاكِ عَلَى الصَّلَاةِ بِغَيْرِ سِوَاكٍ سَبْعِيْنَ ضَعْفًا : حديث ضعيف

মেসওয়াকের সাথে ওযু দ্বারা নামায মেসওয়াক ছাড়া ওযু দ্বারা নামাযের চেয়ে সত্তর গুণ বেশি সাওয়াব। -মুসনাদে আহমদ, হাদীস নং-৬/২৭২

২নং ফায়দা : মউতের সময় কালিমা নসীব হবে।

وَ مِنْ مَنَافِعِه تَذْكِيْرُ الشَّهَادَةِ عِنْدَ الْمَوْتِ ـ

মেসওয়াক ধরার নিয়ম :

কনিষ্ঠা আঙ্গুল মেসওয়াকের নিচে থাকবে এবং বৃদ্ধা আঙ্গুলী মেসওয়াকের উপরের অংশের নিচে থাকবে। বাকী আঙ্গুলগুলো মেসওয়াকের উপরে থাকবে। ডান দিক থেকে শুরু করবে।

ঈমানী মৃত্যু নসীব হওয়ার ৪র্থ আমল : প্রত্যেক দিন ঈমানের উপর শোকর আদায় করা। ইয়া আল্লাহ! তুমি আমাকে ঈমানের উপর রেখেছ, এ জন্য আমি বারবার শোকর আদায় করছি। আল্লাহ তায়ালা বলেন,

لَئِنْ شَكَرْتُمْ لَاَزِيْدَنَّكُمْ

ঈমানী মৃত্যু নসীব হওয়ার ৫ম আমল : অপাত্রে নজর থেকে চক্ষুকে হেফাজতের উপর ঈমানের স্বাদ পাওয়ার আল্লাহ পাকের পক্ষ থেকে ওয়াদা রয়েছে। ঈমানের স্বাদ একবার দিলে নসীব হলে, তা কখনো ফেরত নেয়া হয় না। এ জন্য এ আমলের উপর ঈমানের সাথে মৃত্যুর সুসংবাদ দেওয়া হয়েছে।

حَدِيْثٌ : اِنَّ النَّظْرَةَ سَهْمٌ مِنْ سِهَامِ اِبْلِيْسَ مَسْمُوْمٌ مَّنْ تَرَكَهَا مَخَافَتِىْ اَبْدَلْتُهٗ اِيْمَانًا يَجِدُ حَلَاوَتَهٗ فِىْ قَلْبِه ـ المعجم الكبير للطبرانى

অর্থ : বদ নজর ইবলিসের তীরসমূহ থেকে একটি তীর। যে ব্যক্তি আমি আল্লাহর ভয়ে তা বর্জন করবে, আমি তাকে এমন ঈমান দান করব, যার দ্বারা সে কলবের মধ্যে ঈমানের স্বাদ অনুভব করবে।
আল-মুজামুল কাবীর, হাদীস নং-১০৩৬২ আত-তারগীব, হাদীস নং-৭৮৭৫

ঈমানী মৃত্যু নসীব হওয়ার ৬ষ্ট আমল : আযানের জবাব দেওয়ার পর দরুদ শরীফ পড়বে। -সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-৩৮৪,

এর পর দুআয়ে অসিলা পাঠ করবে। -সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৬১৪

أَللّٰهُمَّ رَبَّ هٰذِهِ الدَّعْوَةِ التَّامَّةِ وَ الصَّلٰوةِ الْقَائِمَةِ، أٰتِ مُحَمَّدَنِ الْوَسِيْلَةَ وَ الْفَضِيْلَةَ وَابْعَثْهُ مَقَامًا مَّحْمُوْدَنِ الَّذِىْ وَعَدتَّهُ

আর সুনানে বায়হাকীতে إِنَّكَ لَا تُخْلِفُ الْمِيْعَادَ-অতিরিক্ত আছে। হাদীস নং-৪১০/১

যে এ দুআ পাঠ করে তার ব্যাপারে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, حَلَّتْ لَهٗ شَفَاعَتِىْ অর্থাৎ তার জন্য আমার সুপারিশ ওয়াজিব হবে। -সহীহ বুখারী-৬১৪

মোল্লা আলী কারী (রহ.) বলেন,

فَفِيْهِ اِشَارَةٌ اِلٰى بَشَارَةِ حُسْنِ الْخَاتِمَةِ

অর্থাৎ তার মৃত্যু ঈমানের উপর হওয়ার সুসংবাদের ইশারা পাওয়া যায়। কেননা রাসূলের সুপারিশ কাফেরের জন্য হবে না।

ঈমানী মৃত্যু নসীব হওয়ার ৭ম আমল : আল্লাহওয়ালাদের সোহবত এখতেয়ার করা এবং তাদের সাথে শুধু আল্লাহর জন্য ভালোবাসা রাখা।

বুখারী শরীফের রেওয়াতের মধ্যে থেকে একটি রেওয়াত নেককার ও আল্লাহওয়ালাদের শানে বর্ণিত। এক ব্যক্তি চলার পথে নেককারদের মজলিসে সামান্য সময় বসেছিল। আল্লাহ ঐ সময় ফেরেশতাদের সামনে যাকেরীন শাকেরীনদের ক্ষমার ঘোষণা দিলেন। তখন একজন ফেরেশতা আল্লাহ পাককে বলল, ইয়া আল্লাহ! অমুক ব্যক্তি তো একজন গুনাহগার। অন্য উদ্দেশ্যে যাওয়ার পথে সে মজলিসে কিছু সময়ের জন্য বসেছে। তখন আল্লাহ পাক বললেন, هُمُ الْقَوْمُ لَا يَشْقٰى بِهِمْ جَلِيْسُهُمْ মকবুল বান্দাদের সাথে বসনেওয়ালাকে মাহরুম করা হবে না। আমি তাকেও মাফ করে দিলাম। -বুখারী-৬৪০৮, মুসলিম-২৬৮৯

ইমাম ইবনে হাজর আসকালানী (রহ.) তার কিতাব ফতহুল বারীতে উল্লেখ করেন,

اِنَّ جَلِيْسَهُمْ يَنْدَرِجُ مَعَهُمْ فِىْ جَمِيْعِ مَا يَتَفَضَّلُ اللهُ تَعَالٰى بِه عَلَيْهِمْ كَرَامًا لَّهُمْ

-ফতহুলবারী-১৯/৪৫৬-৬৪০৮

নিশ্চয় আল্লাহওয়ালাদের সাথে বসনেওয়ালা তাদের সাথেই গণ্য হয়ে যায় এবং আল্লাহওয়ালাদের উপর আল্লাহ তায়ালার যে রহম ও ফজল হয়, তাদেরকেও তার মধ্যে শরীক করা হয়। যেমনিভাবে সম্মানিত মেহমানের সাথে খাদেমকেও শরীক করা হয়। -ফতহুল বারী-১৯/৪৫৬

দ্বিতীয় নম্বর বুখারী ও মুসলিমের মধ্যে তিনটি বৈশিষ্ট্যের কথা বলা হয়েছে, যার বরকতে ঈমানের স্বাদ পাওয়া যায়।
১। যার অন্তরে আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সমস্ত সৃষ্টিজীব থেকে প্রিয় হয়।
২। যে কাউকে মুহাব্বত করে আল্লাহ পাকের সন্তুষ্টির জন্য।
৩। ঈমান অবস্থায় কুফরীতে যাওয়া এমন অপছন্দ করে যেমন আগুনে যাওয়াকে অপছন্দ করে। -সহীহ বুখারী, হাদীস নং-১৬, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-৬৭

ঈমানের উপর মৃত্যু হওয়ার জন্য কোনো আল্লাহওয়ালাদের মুহাব্বত করা একটি বড় মাধ্যম। প্রকাশ থাকে যে, এ মুহাব্বত আল্লাহওয়ালাদের সাথে হওয়া সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব রাখে। মোল্লা আলী কারী (রহ.) উল্লেখ করেন, ঈমানের স্বাদ যাকে একবার দেওয়া হয় তা কখনো ফেরত নেওয়া হয় না। অতএব আল্লাহওয়ালাদেরকে মুহাব্বত করার কারণে ঈমানের স্বাদ এবং খাতেমা বিল খায়ের হওয়াটা স্পষ্ট বিষয়।

এই জন্য আল্লাহওয়ালারা বলেন,

ايك زمانه صحبت با اولياء + بهتر از صد ساله طاعت بے ريا

একটা সময় আল্লাহওয়ালাদের সুহবতে থাকা, ইখলাসের সাথে একশ বছর ইবাদত থেকেও উত্তম।

ঈমানী মৃত্যু নসীব হওয়ার ৮ম আমল : হালাল মাল থেকে সদকা করা।
হাদীস :

الصَّدَقَةُ لَتُطْفِىُ غَضَبَ الرَّبِّ وَتَدْفَعُ مِيْتَةَ السُّوْءِ

সদকা আল্লাহ পাকের রাগ মিটিয়ে দেয় এবং খারাপ মৃত্যুকে দূর করে। -সহীহ ইবনে হিব্বান-৩৩০৯

ঈমানী মৃত্যু নসীব হওয়ার ৯ম আমল : নিচের দুআটি বেশি বেশি পড়া।

اَللّٰهُمَّ اِنِّىْۤ اَسْأَلُكَ حُبَّكَ وَحُبَّ مَنْ يُّحِبُّكَ وَالْعَمَلَ الَّذِىْ يُبَلِّغُنِىْ حُبَّكَ

ইয়া আল্লাহ! আমি আপনার নিকট আপনার মুহাব্বত চাই এবং যারা আপনাকে ভালোবাসে তাদের মুহাব্বত চাই এবং যেই আমল আমাকে আপনার সাথে সম্পর্ক করাবে সে আমলের ভালোবাসা চাই।

যে ব্যক্তি এই দুআটা বেশি বেশি পাঠ করে, তাকে আল্লাহ তায়ালা বিনয় দান করেন। -সুনানে তিরমিযী-৩৪৯০

আমাদের সম্পর্কে জানতে ক্লিক করুন।
সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের YouTube চ্যানেল Rahe Sunnat Media

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button