নোবেলবিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দেখতে চায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
ভোর রাত ৪টার কিছু পরে এ ভিডিও বার্তা দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম।
নোবেলবিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দেখতে চায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
মঙ্গলবার ভোর রাত ৪টা ১০ মিনিটে এক ভিডিও বার্তায় এ কথা বলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম। সরকারের বাকিদের বিষয়ে সকালে জানানোর কথা তুলে ধরেন তিনি।
এর আগে রাত সাড়ে ৮টায় সংবাদ সম্মেলনে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের রূপরেখা দিতে ২৪ ঘণ্টা সময়ের কথা বললেও ভোর রাতে এ ভিডিও বার্তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে প্রকাশ করা হয়।
ভিডিও বার্তা পড়ে শোনান অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম। তার পাশে ছিলেন আসিফ মাহমুদ ও আবু বাকের মজুমদার।
নাহিদ বলেন, তাদের প্রস্তাবে শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. ইউনূস রাজি হয়েছেন।
তবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রস্তাবে এই নোবেলজয়ী রাজি হয়েছেন বলে নাহিদ ইসলাম ভিডিও বক্তব্যে তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, “আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে সর্বজন গ্রহণযোগ্য আন্তর্জাতিকভাবে খ্যাতিসম্পন্ন নোবেল পুরষ্কার বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হবে এবং ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সাথেও আমাদের কথা হয়েছে। তিনি ছাত্র জনতার আহ্বানে বাংলাদেশকে রক্ষা করতে এই গুরুদায়িত্ব নিতে সম্মত হয়েছেন।”
তিন মিনিটের বেশি সময়ের এ ভিডিওতে নাহিদ বলেন, “আমরা মুক্তিকামী ছাত্র জনতাকে সজাগ এবং সতর্ক থাকতে আহ্বান জানাচ্ছি। আমাদের যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আমরা সে সরকারের প্রস্তাবনার জন্য ২৪ ঘন্টা সময় নিয়েছিলাম। জরুরি পরিস্থিতি মোতাবেক আমরা এখনই তার একটি রূপরেখা ঘোষণা করছি।
“আমরা সকালের মধ্যেই এই সরকার গঠনের প্রক্রিয়া দেখতে চাই। রাষ্ট্রপতির কাছে আহ্বান থাকবে যে, দ্রুত সময়ের মধ্যে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হোক। এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বাকি সদস্যদের নামও আমরা সকালের মধ্যে ঘোষণা করব৷”
নাহিদ বলেন, “অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন না হওয়া পর্যন্ত মুক্তিকামী ছাত্র জনতাকে রাজপথে থেকে তাদের যে অভ্যুত্থান সে অভ্যুত্থানকে রক্ষা করতে হবে।
“আমরা রক্ত দিয়েছি, শহীদ হয়েছি। আমাদের যে প্রতিশ্রুতি একটি নতুন বাংলাদেশ গঠন করার জন্য সেটিকে আমাদের অবশ্যই বাস্তবায়ন করতে হবে। এবং অবশ্যই ছাত্র জনতার প্রস্তাবিত সরকার বাদে কোনো ধরনের সরকার কিন্তু মেনে নেওয়া হবে না।”
তিনি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি এবং রাষ্ট্রীয় সম্পদ রক্ষার কমিটিকে পাড়ায় পাড়ায় পাহারা দেওয়ার আহ্বান জানান। বলেন, “আমাদের সংখ্যালঘু কমিউনিটিকে আমাদের রক্ষা করতে হবে এবং আমাদের রাষ্ট্রীয় সম্পদ এবং এই দেশকে রক্ষা হবে আমাদের।”
এর আগে রাতে তেজগাঁওয়ের একটি ভবনে সংবাদ সম্মেলনে নানা পক্ষের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে একটি অন্তর্বর্তী জাতীয় সরকারের প্রস্তাবনা বা রূপরেখা ঘোষণা করার কথা জানিয়েছিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম।
শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশত্যাগের পর অন্তর্বর্তী সরকার নিয়ে আলোচনার মধ্যে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “ছাত্র-নাগরিকের সমর্থিত কিংবা প্রস্তাবিত সরকার ছাড়া আমরা কোনো ধরনের সরকারকে সমর্থন করব না। সেটা সেনা সমর্থিত সরকার হতে পারে কিংবা রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার হতে পারে। এমন সরকারকে ছাত্র-জনতা গ্রহণ করবে না।”
এর মধ্যেই সংবাদ সম্মেলনে এসে নাহিদ বলেন, “সবার সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে একটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সেই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে কারা কারা থাকবেন তা আমরা প্রকাশ করব।”
পরে বদলে যাওয়া পরিস্থিতিতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের রূপরেখা নিয়ে জাতির উদ্দেশে ভাষণও দিয়েছেন রাষ্টপ্রতি। তাতে সংবিধান অনুযায়ী সংসদ বিলুপ্ত করে দ্রুত নির্বাচন দেওয়ার ঘোষণা দেন তিনি।
বাংলাদেশের ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান করে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের রূপরেখা সম্প্রতি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে উত্থাপিত হয়েছে। ছাত্র আন্দোলনকারীরা বিশ্বাস করেন যে বর্তমান রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও দুর্নীতির মোকাবিলায় একটি নিরপেক্ষ এবং বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রয়োজন।
এই রূপরেখায় ড. ইউনূসের মতো একজন বিশ্বমানের ব্যক্তিত্বকে প্রধান করা হচ্ছে কারণ তিনি নোবেল পুরস্কারপ্রাপ্ত এবং সামাজিক ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত। ছাত্ররা মনে করেন যে তার নেতৃত্বে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দেশের রাজনৈতিক এবং সামাজিক সমস্যাগুলো সমাধানে কার্যকরী ভূমিকা পালন করতে পারবে।
ছাত্র আন্দোলনের নেতারা আরও উল্লেখ করেছেন যে এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নির্বাচন পরিচালনা এবং নতুন সরকার গঠনের প্রক্রিয়া সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত হবে। তারা বিশ্বাস করেন যে একটি নিরপেক্ষ এবং দক্ষ সরকারের নেতৃত্বে এই প্রক্রিয়া সঠিকভাবে সম্পন্ন হবে এবং দেশের গণতান্ত্রিক ভিত্তি আরও মজবুত হবে।
আমাদের সম্পর্কে জানতে ক্লিক করুন। সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের YouTube চ্যানেল Rahe Sunnat Media