ইতিহাস

প্রিয় নবীর জীবন-দর্শন কুরআনুল কারীমের আলোকে।

প্রিয় নবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জীবন দর্শন কুরআনুল কারীমের আলোকে

প্রিয় নবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জীবন-দর্শন কুরআনুল কারীমের আলোকে

দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফ

হযরত মুহাম্মদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ইন্তিকালের পরে একজন উচ্চস্তরের সাহাবী হযরত আয়েশা সিদ্দিকা রাযি.-এর নিকট এসে তাকে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জীবন সম্বন্ধে জ্ঞান দানের জন্য অনুরোধ করেন। তাতে বিস্ময় প্রকাশ করে আম্মাজান আয়েশা সিদ্দিকা রাযি. বলেন, তুমি কি কুরআন পাঠ কর না? আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রতিটি কাজকর্ম হচ্ছে কুরআনের আইনের অনুসরণ। তিনি তাঁর জীবনে আল কুরআনের প্রতিটি বাণী এমন কি অক্ষরগুলোকেও রূপায়িত করার চেষ্টা করেছেন। এজন্য তাঁকে বলা যায় আল কুরআনের জীবন্ত রূপ।

সূফীদের মধ্যে কেউ কেউ মনে করেন- আল কুরআনের অক্ষরগুলো যথা আলিফ, বা, তা, ছা প্রভৃতি থেকেই মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামের বা দেহ গঠিত হয়েছে। তাই আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জীবনকে কুরআনুল কারীমের মানবিক রূপই বলা যায়।

হাদীসে কুদসীতে বলা হয়েছে লাওলাকামা খালাকতুল-আখলাক অর্থাৎ আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে উদ্দেশ্য করে স্বয়ং আল্লাহ্ বলছেন- তোমাকে সৃষ্টি না করলে আমি নভোমণ্ডল সৃষ্টি করতাম না। এতে স্পষ্টই বুঝা যায়, এ মাটির পৃথিবী এবং নভোমণ্ডলের সবকিছুই আল্লাহ্ তাঁর রাসুল হযরত মুহাম্মদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্য সৃষ্টি করেছেন। তাতে আল্লাহর এমন কিছু উদ্দেশ্য ছিল যে, এ বিরাট পৃথিবী এবং চন্দ্র-সূর্য, তারকামণ্ডলী পরিবৃত নভোমণ্ডল সৃষ্টি কেবলমাত্র হযরত রাসূল-ই-আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্যই সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহ স্বয়ং তাঁর এ উদ্দেশ্যও বর্ণনা করেছেন। ইসলামের ইতিহাসে একটা উল্লেখযোগ্য ঘটনা হচ্ছে ২৭ শে রমযানের রাত্রিতে দীর্ঘকাল ধ্যানরত হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট আল্লাহর পক্ষ থেকে বাণী নিয়ে এসে হযরত জিবরাঈল বলেন- ইকরা বিসুমি রাব্বিকাল্লাজি খালাক- পড় সেই রবের নামে যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন। হযরত তাঁর এ বয়সে কোন লোকের কাছে বা কোন বিদ্যালয়ে পাঠ করার সুযোগ পাননি। তাই বললেন- আমি পড়তে জানি না। তখন হযরত জিবরাঈল তাকে আঞ্জা দিয়ে ধরে এমন চাপ দিলেন, যাতে তিনি তাঁর স্পর্শে বাণীর পুনরুক্তি করতে সমর্থ হলেন। হযরত জিবরাঈলের কাছে তিনি প্রথমবারের মতো আল্লাহ্ তা’আলার এই বাণী পেলেন- তিনি তাঁর ৬৩ বৎসরের জীবনের শেষ প্রান্তে উপনীত হয়েও আল্লাহ্ তা’আলার বাণী পেয়েছেন এবং এগুলোর আলোকে তাঁর উম্মতদের শিক্ষা দান করেছেন।

আল্লাহ তাঁকে কুরআনুল কারীমের মাধ্যমে জানিয়ে দিয়েছেন তিনি এ দুনিয়ায় তার বিধান প্রতিষ্ঠা করতে চান- এজন্য তিনি আল কুরআনকে নির্দেশক হিসেবে এ দুনিয়ায় অবতীর্ণ করেছেন। হযরত মুহাম্মদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে শিক্ষক হিসাবে প্রেরণ করেছেন, যাতে তিনি এ দুনিয়ার মানুষকে কুরআনের আলোকে এমন শিক্ষা দান করেন, যাতে তারা প্রকৃত মু’মিন হয়ে আল্লাহর প্রতিনিধি হিসেবে এ দুনিয়ায় তার শাসন প্রতিষ্ঠা করতে পারে। তারা যেন ইনসান-ই-কামিল হয়ে এ কাজ সম্পন্ন করতে পারে। আল্লাহ্ কুরআনের মাধ্যমেই তাঁর নিজের স্বরূপ বর্ণনা প্রসঙ্গে বলেছেন- জাত বা Essence হিসাবে তিনি একক ও অদ্বিতীয়। তবে তাঁর রয়েছে নিরানব্বই গুণ বা attribute । এগুলোই এ দুনিয়ায় বিকাশ লাভ করেছে। যেহেতু মানুষকে আল্লাহ্ তাঁর প্রতিনিধি হিসাবে এ দুনিয়ায় প্রতিষ্ঠিত করতে চান এজন্য মানুষের কর্তব্য হচ্ছে আল্লাহর গুণাবলী যথাসাধ্য আয়ত্ত করে ইনসান-ই-কামিল হওয়া। এ গুণাবলীর মধ্যে রব্ব নামক গুণকে সর্বপ্রধান বা ইসমে আযম বলে গণ্য করা হয়। রব্ব শব্দের ব্যুৎপত্তিগত অর্থ সৃষ্টিকর্তা, পালনকর্তা ও বিবর্তনকারী। যেহেতু আল্লাহ্ সৃষ্টিকর্তা, এজন্য আল্লাহর এ গুণ থেকে আল্লাহর এ সৃষ্টি সুদূর অতীতে আরম্ভ হয়েছিল এবং এখনও চলছে তবে তাতে বিবর্তনের ধারা চলছে। আল্লাহ্ তাঁর সৃষ্টিকে উন্নত থেকে উন্নতর পর্যায়ে নিয়ে যাচ্ছেন। আল্লাহর অপর বিশিষ্ট গুণ হচ্ছে তিনি সার্বভৌম বা এ বিশ্বচরাচরে যা কিছু আছে তার একমাত্র সাধক। এজন্য এ গুণের অনুসারী ইনসান-ই-কামিলকে এ দুনিয়ায় ও গ্রহমণ্ডলে যা কিছু রয়েছে তার একমাত্র মালিক আল্লাহ্ তা’আলাকে গণ্য করে চলতে হবে । এতে মানব সমাজে কালের ধারায় রক্ত, বর্ণ, ভাষা প্রভৃতি থেকে যে পার্থক্য সৃষ্টি হয়েছে এবং তার ফলে যে মারাত্মক জাতীয়তার বিষের দ্বারা মানব-সমাজে যুদ্ধ-বিগ্রহ লেগেই আছে- তার অবসান হবে। আল্লামা ইকবাল তাই গর্ব করে বলেছেন, একদা মানুষের জ্যোতি ফেরেশতাদের চেয়েও উজ্জ্বল হবে। এভাবে কুরআনুল কারীমের আলোকেই আমরা আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে ইনসান-ই-কামিল বা মহামানব তৈরীর এক শিক্ষকরূপে দেখতে পাই। তবে তাঁর জীবনের সঙ্গে বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী লোকদের আদি গুরু বা দার্শনিকদের মতবাদের রয়েছে বিরাট পার্থক্য। দার্শনিকেরা সাধারণত তিনভাবে জ্ঞান লাভের মাধ্যম আবিষ্কার করেছেন।

একদল দার্শনিকের মত হচ্ছে, আমাদের ইন্দ্রিয়গুলো থেকে যে জ্ঞান লাভ হয়, আমাদের তাই একমাত্র জ্ঞান। এর বাইরে যত জ্ঞান লাভ হয় সেগুলোকে জ্ঞান বলে গণ্য করা যায় না। অপর দলের মতবাদ অনুসারে ইন্দ্রিয়লব্ধ জ্ঞানের সীমা অত্যন্ত সংকীর্ণ। একটু দূরে জ্ঞানের বস্তু চলে গেলে তার অস্তিত্বকে খুঁজে পাওয়া যায় না। দুটো জ্ঞানের উপরে স্বজ্ঞা বা Intuition নামক একটা জ্ঞানের পদ্ধতি রয়েছে, যার মাধ্যমে মানুষ এ বিশ্বজাহান সম্বন্ধে অতি সহজেই জ্ঞান লাভ করতে পারে। এ দুনিয়ার দর্শনের ইতিহাসে প্লটিনাস, স্পিনোজা শেলি, বার্গসো, ক্রোটে প্রমুখ দার্শনিকও এ জ্ঞানের উৎকর্ষ স্বীকার করেছেন। এগুলো সম্বন্ধে হযরত মুহাম্মদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মতামত জানা যায়নি। কারণ তিনি আল কুরআনে বর্ণিত জ্ঞানের মধ্যে স্বজ্ঞাও রয়েছে বলে তা পরোক্ষে স্বীকার করেছেন। তবে তাঁর দার্শনিক মতবাদে তিনি জ্ঞানের অঙ্গ হিসাবে বা আবেগকেও গ্রহণ করেছেন।

আমাদের দর্শনশাস্ত্রের পাঠ্যপুস্তকে এখন যেমন মানব মানসকে Sensation… (সংবেদন) Emotion (প্রক্ষোভ) Valition (ইচ্ছা) নামে তিন ভাগে ভাগ করা হয় এবং কেবলমাত্র সংবেদন থেকেই বস্তু সম্বন্ধে আমাদের জ্ঞান লাভ হয়- হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সে বিভাগ স্বীকার করতেন না। বর্তমানকালে যারা দর্শনশাস্ত্রে প্রত্যেক যুক্তিবাদী বা Logical positivists বলে পরিচিত- তারা সংবেদন ব্যতীত অন্য কোন মানসিক বিষয়কে জ্ঞানের অঙ্গ বলে স্বীকার করেননি। হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রক্ষোভ বা ইচ্ছাজাত জ্ঞান সাময়িক হলে সেগুলোকে জ্ঞানের অঙ্গ বলে স্বীকার করতেন। উদাহরণ হিসাবে বলা যায়- প্রক্ষোভ বা emotion যখন দেখা দেয় তখন কোন বস্তুকে কেন্দ্র করে তার উৎপত্তি হয় যখন একটা ফুলের মিষ্টি গন্ধে বিভোর হয়ে তাকে আমরা আমাদের কাছে পেতে চাই, তখন আমাদের জ্ঞানের মধ্যে সংবেদনের (Sensation) কার্যকারিতাও থাকে এবং ইচ্ছাশক্তি বা Will-এর কার্যকারিতাও থাকে। তবে আমরা আমাদের প্রক্ষোভ বা emotion -এর দ্বারা এমনভাবে অভিভূত হই যে অন্য জ্ঞানের অন্যদিকের কথা ভুলে যেয়ে কেবল ফুলের সৌন্দর্য ও সুবাসকেই আমাদের একান্ত কাম্য বিষয় বলে অনুভব করি।

হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর জীবনে আল্লাহ্ সম্বন্ধে যে জ্ঞান লাভ করেছেন, তা কোন কোন সময় ছিল স্বল্পক্ষণস্থায়ী আবার কোন কোন সময় ছিল দীর্ঘস্থায়ী। তবে যেহেতু সে জ্ঞানের সত্যতা সম্বন্ধে তিনি ছিলেন নিঃসন্দেহ, এজন্য সেই জ্ঞানকে সংবেদন-লব্ধ জ্ঞানের মতোই স্বীকার করতেন এবং তা সেই জ্ঞানের বস্তুকে তার অনুগামীদের মধ্যে প্রচার করতেন। প্রক্ষোভ বা emotion-এর মধ্যে একদিকে যেমন পাওয়ার আগ্রহ থাকে তেমনি থাকে কোন বিষয় ত্যাগ করার। তাকে বিনাশ করার প্রচেষ্টাও দেখা দেয়। যখন কোন ব্যক্তি আমাদের স্বার্থের বিরুদ্ধে এমন সব কথা বলতে থাকে, তখন আমরা রাগান্বিত হয়ে তাকে গালিগালাজ করি বা ভীষণভাবে উত্তেজিত হলে তাকে মারতে প্রস্তুত হই।

হযরত সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জীবন আলোচনা করলে দেখা যায়- তিনিও সে প্রক্ষোভ থেকে জ্ঞান লাভ করেছেন। মি’রাজের বিষয় নিয়ে আলোচনা করলে এ বিষয়টি পরিষ্কার হবে।

মি’রাজের অভিজ্ঞতা ছিল সম্পূর্ণভাবেই প্রক্ষোভপূর্ণ। তাতে তিনি অভিভূত হননি বরং তাতে যে জ্ঞান লাভ করেছেন তা তাঁর অনুসারীদের শিক্ষার জন্য রেখে গেছেন। বর্তমান কালে জ্ঞানের মাধ্যম হিসেবে কেবলমাত্র সংবেদনকেই স্বীকার করার ফলে আমাদের জীবনে এক ভীষণ সংকট দেখা দিয়েছে। আমরা আমাদের জীবনে নৈতিক আইন কানূনগুলো ব্যতীত চলতে পারি না এগুলোর কার্যকারিতা ব্যতীত আমাদের জীবন অচল হয়ে পড়ে। অথচ এ নীতি সংক্রান্ত কোন বিধি বা বিধান সংবেদনলব্ধ নয়। এগুলোর উৎপত্তিস্থল আমাদের মানসে ক্রিয়াশলি- স্বজ্ঞা বা Intuition। এই স্বজ্ঞা ব্যতীত প্রক্ষোভ যা আমাদের জীবনে নানা সময় কার্যকরী থাকে, আমরা সেগুলো জেনে শুনে গ্রহণ করি না। সেগুলো থাকে Subconscious বা আমাদের মানসের মধ্যে প্রচ্ছন্ন। এ প্রক্ষোভ বা ইচ্ছা সংক্রান্ত অভিজ্ঞতা কিছু ধর্মীয় জগতে আবহমানকাল থেকেই রয়েছে কার্যকরী।

এতক্ষণের আলোচনায় আমরা দেখতে পেয়েছি যে, হযরত রাসূল-ই-আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জ্ঞানকে সীমাবদ্ধ করেননি। আমরা আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে পঞ্চেন্দ্রিয় ও যুক্তির মাধ্যমে যে জ্ঞান লাভ করি তাতেই আমাদের জ্ঞান সীমাবদ্ধ করাকে তিনি উচিত মনে করেননি। যেহেতু ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য বা যুক্তিসঙ্গত বিষয়গুলোর মতো স্বজ্ঞা বা Intuition জাত জ্ঞানের পক্ষে কোন প্রমাণের অবতারণা সম্ভবপর নয়, এজন্য এ জ্ঞানকে অমূলক বলে ত্যাগ করাকে তিনি অনুমোদন করেননি। তাঁর মতবাদ অনুসারে আমাদের জীবনে জ্ঞানের এমন সব বিষয়বস্তু রয়েছে, যাকে আমরা প্রমাণ করতে পারি না। দর্শনশাস্ত্রের আলোচনা করলে দেখা যায় এ জ্ঞানকে পরোক্ষে দার্শনিকগণও স্বীকার করেছেন। প্লেটো, প্লটিনাস, স্পিনোজা, শেলি, বার্গসোঁ, ক্রোটে প্রমুখ দার্শনিক এ জ্ঞানের কার্যকারিতা স্বীকার করেছেন।

সে জ্ঞানের আলোকেই হযরত রাসূল-ই-আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে জ্ঞান লাভ করেছেন তার আলোচনা পূর্বেই হয়েছে- তবে তার মধ্যে যে জীবন দর্শনের গঠন সম্ভব হয়েছিল সে সম্বন্ধে আলোচনা করলে দেখা যায়, হযরত রাসূল-ই-আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার স্বজ্ঞানের আলোকে বুঝতে পেরেছেন, এ জগতের তথা ভূমণ্ডলের উৎপত্তি এক সজ্ঞান, নিয়ত কর্মশীল, সর্বশক্তিমান, সার্বভৌম সৃষ্টিকর্তা থেকে। তিনি নিয়ত কর্মশীল এবং সর্বব্যাপী হওয়া সত্ত্বেও সর্বগুণাধার, সার্বভৌম। তাঁর রয়েছে একটা জাত বা Essence। তাঁর রয়েছে নিরানব্বই গুণ। এ সকল গুণেরই ফলিত রূপ এ দুনিয়া এ ভূমণ্ডল। তাঁর এ গুণাবলীর মধ্যে রয়েছে রব্ব ও সার্বভৌম প্রধান।

সৃষ্টিকর্তা হিসাবে তিনি তাঁর সৃষ্টির অন্তর্গত সকল জীবকেই আহার দান করেন। এজন্য তাঁকে পালনকর্তা বলা হয়। তবে তিনি বিবর্তনকারী হিসাবে তাঁর সৃষ্টিকে উচ্চ থেকে উচ্চতর পর্যায়ে নিয়ে যাচ্ছেন। এজন্য আমরা মানুষেরা তার সৃষ্ট জীব হিসাবে কেবল নিজের আহারের সংস্থান করলেই আমাদের কর্তব্যের শেষ হয় না। আমাদের পক্ষে আমাদের ও আমাদের মতো জীবকুলের জন্য আহারের সংস্থান করতে হবে। আমরা আল্লাহর সৃষ্ট এ জগতকে উন্নততর পর্যায়ে নিয়ে যেতেও বাধ্য। এ দুনিয়া আল্লাহ্বাই একমাত্র সার্বভৌমত্ব থাকায় আমাদের কোন মালিকানা নেই। আমরা উপার্জন করি বা উৎপাদন করি বটে তবে তাকে যথেচ্ছা ভোগদখল করার কোন অধিকার আমাদের নেই। আমরা আমাদের গ্রাসাচ্ছাদনের জন্য পরিমিত বস্তু সামগ্রী ব্যবহার করবো। অযথা বিলাস-ব্যসনে অপব্যয় করবো না। কারণ আমাদের সব সময় মনে রাখতে হবে এ দুনিয়ার এবং বিশ্ব চরাচরের সবকিছুরই মালিক খোদ আল্লাহ সুবহানাত তা’আলা আল্লাহর এ সৃষ্টির মূল কারণ সম্বন্ধে আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে স্বা লাভ করেছেন- তাতে তিনি স্পষ্ট উপলব্ধি করেছেন আল্লাহ্ এ দুনিয়াতে কুরআন করীম নাযিল করেছেন এক বিশেষ উদ্দেশ্য সিদ্ধি করার জন্য।

মাছ কুরআনুল করীমকে নির্দেশক ও হযরত রাসূল-ই-আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে মানব জাতির শিক্ষক হিসেবে তিনি এ দুনিয়ায় প্রেরণ করেছেন মানুষকে শিক্ষাদানের জন্য। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরআন কারীমের নির্দেশ মত এ দুনিয়ায় মানুষকে শিক্ষাদান করবেন এবং যাতে তারা মর্দে মু’মিন হয়ে সে শিক্ষা গ্রহণ করে ইনসান-ই-কামিল হতে পারে তার ব্যবস্থা করবেন। আল্লাহর উদ্দেশ্য হচ্ছে, তিনি এ দুনিয়ায় তাঁর শাসন প্রতিষ্ঠিত করবেন। এজন্য তাঁর প্রতিনিধি হিসাবে মর্দে মু’মিন বা ইনসান-ই-কামিলকে তাঁর শুণে গুণান্বিত হতে হবে। আল্লাহর সকল গুণে গুণান্বিত হওয়া মানুষের পক্ষে সম্ভবপর নয় তবে তার পক্ষে যথাসাধ্য কোন কোন গুণে গুণান্বিত হওয়া সম্ভব। এ সকল গুণের অধিকারী হলেই মানুষ তার জীবনে আল্লাহর প্রতিনিধি হয়ে এ বিশ্ব চরাচরে তার শাসন প্রতিষ্ঠিত করতে পারবে। তার শাসন প্রতিষ্ঠিত হলেই এ দুনিয়া থেকে মারামারি, কাটাকাটি, হিংসা-বিদ্বেষ, অত্যাচার, অনাচার, ব্যভিচার সবকিছুরই অবসান হবে। মাটির ধূলির দ্বারা গঠিত মানুষের দেহ ফেরেশতাদের দেহ থেকে আরো আলোকিত ও জ্যোতির্ময় হবে।

আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ জ্ঞান লাভ করেছেন স্বজ্ঞার মাধ্যমে তা পূর্বেই বলা হয়েছে। এ স্বজ্ঞা লাভের মাধ্যম হচ্ছে আমাদের কালব এ কালব আপাতদৃষ্টিতে একটি মাংসপিণ্ড হলেও তার মধ্যে ইন্দ্রিয় জ্ঞান লাভের ক্ষমতা রয়েছে। এ কালবের কার্যকারিতার ফলেই এ জগতের বিজ্ঞানবিদ, দার্শনিক, কবি প্রমুখ মনীষী মহাজ্ঞান লাভ করেন। তবে এ সম্বন্ধে তাঁরা নিজেরা অবহিত নন। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ কালবের দ্বারাই স্বজ্ঞালব্ধ জ্ঞান লাভ করেছেন।

আরো জানতে ভিজিট করুন আমাদের ওয়েব সাইট রাহে সুন্নাত

আমাদের সম্পর্কে জানতে ক্লিক করুন।

সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের YouTube চ্যানেল Rahe Sunnat Media

নিজের মুমিন ও মুসলমান হওয়ার বিষয়টি বিশ্বাস করা কি জরুরী

ইসলাম কী?

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button