কুরআন ও তাফসীরলেকচারসকল প্রবন্ধ

মহাগ্রন্থ আল-কুরআনে বক্তৃতার নির্দেশিকা

মহাগ্রন্থ আল-কুরআনে বক্তৃতার নির্দেশিকা

মহাগ্রন্থ আল-কুরআনে বক্তৃতার নির্দেশিকা

পবিত্র কুরআনে অনেক সুন্দর ও চমৎকার বক্তৃতার উদ্ধৃতি রয়েছে। সেই সাথে রয়েছে উত্তম বক্তৃতার গাইড লাইন। ইরশাদ হচ্ছে-
اَلرَّحْمٰنُۙ ۝۱ عَلَّمَ الْقُرْاٰنَؕ ۝۲ خَلَقَ الْاِنْسَانَۙ ۝۳ عَلَّمَهُ الْبَیَانَ ۝۴
অর্থ : অসীম দয়াবান আল্লাহ, তিনি কুরআন শিক্ষা দিয়েছেন, মানুষ সৃষ্টি করেছেন, তাকে কথা বলতে শিখিয়েছেন। -সূরা আর-রহমান, আয়াত : ১-৪
পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হচ্ছে-
یٰۤاَیُّهَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوا اتَّقُوا اللّٰهَ وَ قُوْلُوْا قَوْلًا سَدِیْدًاۙ ۝۷۰
অর্থ : হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো, আর কথা বলো সরল সঠিক। -সূরা আহযাব, আয়াত : ৭০
ইরশাদ হচ্ছে-
وَ مَنْ اَحْسَنُ قَوْلًا مِّمَّنْ دَعَاۤ اِلَی اللّٰهِ وَ عَمِلَ صَالِحًا وَّ قَالَ اِنَّنِیْ مِنَ الْمُسْلِمِیْنَ ۝۳۳
অর্থ : কার কথা ঐ ব্যক্তির চেয়ে উত্তম, যে আল্লাহর দিকে ডাকে, নেক কাজ করে আর বলে আমি অনুগত। -সূরা হা-মীম সিজদাহ, আয়াত : ৩৩
ইরশাদ হচ্ছে-
اُدْعُ اِلٰی سَبِیْلِ رَبِّكَ بِالْحِكْمَةِ وَ الْمَوْعِظَةِ الْحَسَنَةِ ۝۱۲۵
অর্থ : বুদ্ধি-প্রভাব এবং মর্মস্পর্শী উপদেশের মাধ্যমে মানুষকে তোমার প্রভুর পথে ডাকো। -সূরা নাহল, আয়াত : ১২৫
ইরশাদ হচ্ছে-
وَ شَدَدْنَا مُلْكَهٗ وَ ا ٰتَیْنٰهُ الْحِكْمَةَ وَ فَصْلَ الْخِطَابِ ۝۲۰
অর্থ : আমি দাউদকে রাষ্ট্র ক্ষমতা মজবুত করে দিয়েছিলাম আর তাকে দান করেছিলাম প্রভাব এবং তাকে দিয়েছিলাম স্পষ্ট ও অকাট্য বক্তব্য রাখার যোগ্যতা। -সূরা সোয়াদ, আয়াত : ২০
ইরশাদ হচ্ছে-
اِذْهَبَاۤ اِلٰی فِرْعَوْنَ اِنَّهٗ طَغٰیۚۖ ۝۴۳ فَقُوْلَا لَهٗ قَوْلًا لَّیِّنًا.
অর্থ : ফেরাউনের কাছে যাও, সে বিদ্রোহ করেছে। তার কাছে বক্তব্য রাখবে কোমলভাবে। -সূরা ত্বহা, আয়াত : ৪৩
وَ مَاۤ اَرْسَلْنَا مِنْ رَّسُوْلٍ اِلَّا بِلِسَانِ قَوْمِهٖ لِیُبَیِّنَ لَهُمْ.
অর্থ : আমি যখনই কোনো রাসূল পাঠিয়েছি, সে স্বজাতীর ভাষায় জনগণকে আমার আহ্বান পৌঁছে দিয়েছে। এ ব্যবস্থা আমি এজন্য করেছি, যাতে করে সে খুব সুন্দরভাবে, পরিষ্কার করে তাদেরকে বুঝাতে পারে।
-সূরা ইবরাহীম, আয়াত : ৪
وَ اَخِیْ هٰرُوْنُ هُوَ اَفْصَحُ مِنِّیْ لِسَانًا فَاَرْسِلْهُ مَعِیَ رِدْاً یُّصَدِّقُنِیْۤ ؗ ۝۳۴
অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আমার ভাই হারুন, সে আমার চেয়ে বিশুদ্ধ ভাষী, অতএব, তাকে আমার সাথে সাহায্যের জন্য প্রেরণ করুন।-সূরা কাসাস, আয়াত : ৩৪
আমরা অত্যন্ত জোরালোভাবে বুঝতে পারলাম, পবিত্র কুরআন সুন্দর বক্তব্য রাখার ব্যাপারে কতটা গুরুত্বারোপ করেছে। আসুন বক্তৃতার ব্যাপার পবিত্র কুরআনের নির্দেশিকাগুলো আমরা পয়েন্ট আকারে বিন্যস্ত করি-
১. বক্তব্য হতে হবে সুন্দর, কল্যাণকর। অসুন্দর কথা কাম্য নয়।
২. সরল বক্তব্য রাখতে হবে। সত্য, সঠিক ও যথার্থ কথা বলতে হবে।
৩. বক্তার মূল লক্ষ্য হবে মহান আল্লাহর দিকে আহ্বান, মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি ও রেজামন্দি অর্জনের জন্য আহ্বান। বক্তব্য হতে হবে আল্লাহ পাক অভিমুখী ও আখেরাতমুখী।
৪. বক্তার নিজের জীবন হওয়া চাই তার বক্তৃতার বাস্তবরূপ।
৫. বক্তৃতা দৃঢ় ও বলিষ্ঠভাবে সত্যের সাক্ষ্য দেবে।
৬. বক্তৃতায় বুদ্ধি, বিবেক, প্রতিভা, কৌশল ও বাস্তবতার প্রতিফলন ঘটাতে হবে।
৭. বক্তৃতা হওয়া চাই মর্মস্পর্শী, হৃদয়গ্রাহী ও প্রভাব বিস্তারকারী।
৮. বক্তব্য হওয়া চাই স্পষ্ট, অকাট্য ও ফয়সালাকারী।
৯. বক্তব্য বলিষ্ঠ হতে হবে, তবে তা অবশ্যই নম্র ভাষায়।
১০. বক্তব্যের ভাষা হওয়া চাই সহজ ও বোধগম্য।
১১. বক্তাকে যথাসম্ভব মাতৃভাষায় বক্তব্য রাখা চাই। এটা মহান আল্লাহর প্রদত্ত সার্বজনীন ও জনপ্রিয় নীতি।
১২. সহজ সরল ও জড়তামুক্ত সাবলীল বক্তব্য রাখার ব্যাপারে মহান আল্লাহর নিকট কায়মনোবাক্যে দোয়া করতে হবে।
এ পদ্ধতিতে নবীগণ আলাইহিস সালাম বক্তৃতা করে গেছেন। রাসূলে আরাবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সমস্ত বক্তব্যই ছিল পবিত্র কুরআনের বাস্তবরূপ। হযরত আবু বকর, হযরত উমর, হযরত উসমান, হযরত আলী ও অন্যান্য বিজ্ঞ সাহাবায়ে কেরাম রাযিয়াল্লাহু আনহুম নিজেদের বক্তৃতায় এ পদ্ধতিই অনুসরণ করতেন।
খলীফায়ে সানী উমর ইবনে আব্দুল আজিজ রহ., ইমামে আজম আবু হানিফা রহ., শাহ ওলিউল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলভী রহ., মুজাদ্দিদে আলফে ছানী, সাইয়েদ আহমদ বেরলভী রহ., মাহমুদুল হাসান দেওবন্দী রহ., হাকীমুল উম্মত মাওলানা আশরাফ আলী থানভী রহ., মাওলানা হুসাইন আহমাদ মাদানী রহ., মুফতী আজম মাওলানা ছিদ্দীক আহমদ সাহেব রহ., খতীব মাওলানা উবায়দুল হক রহ., শাইখুল হাদীস আল্লামা আজিজুল হক, মুফতী ফজলুল হক আমিনী, মাওলানা ফজলুল করিম পীর সাহেব চরমোনাই রহ., তাদের বক্তৃতায় এবং বর্তমানকালে আল্লামা নূরুল ইসলাম ওলিপুরী, মাওলানা মামুনুল হক, মাওলানা খালিদ সাইফুল্লাহ আইয়ূবী, মাওলনা আবদুল বাসেত খান সিরাজগঞ্জী, মুফতি আরিফ বিন হাবীব প্রমুখ উলামায়ে কেরাম ও ইসলামী চিন্তাবিদগণ তাদের বক্তৃতায় পবিত্র কুরআনের এ নির্দেশিকাগুলো অনুসরণ করার চেষ্টা করেন। আসুন, আমরা পবিত্র কুরআন ও যুক্তিসঙ্গত হেদায়েতের আলোকে বক্তৃতা করি এবং হকের আওয়াজ সর্বত্র ছড়িয়ে দেই। আমীন।

আমাদের সম্পর্কে জানতে ক্লিক করুন।
সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের YouTube চ্যানেল Rahe Sunnat Media

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button