রাসূলে আরাবি সা. এর বক্তৃতা কেমন ছিল?
রাসূলে আরাবি সা. এর বক্তৃতা কেমন ছিল?
রাসূলে আরাবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বক্তৃতা কেমন ছিল?
পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ বক্তা জনাবে মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বক্তৃতা সবদিক দিয়ে অনন্য। বিশ্ব মানবতার শ্রেষ্ঠ বক্তা হলেন আম্বিয়া আলাইহিমুস সালাম। মানবতাকে সত্যের দিকে আহ্বান, সঠিক পথ প্রদর্শন ও মহান আল্লাহর হেদায়েত মোতাবেক আদর্শ সমাজ কায়েমের জন্যই প্রেরিত হয়েছিলেন তাঁরা। আর এ কাজটি আঞ্জাম দিয়েছিলেন বুঝানোর মাধ্যমে। কারণ, বক্তৃতার মাধ্যমেই অতি অল্প সময়ে অধিকসংখ্যক মানুষের কাছে ইসলামের বাণী পৌঁছে দেয়া এবং তাদেরকে সহজে প্রভাবিত করা সম্ভব হয়। তাই তাদেরকে সারা জীবন বক্তৃতা করতে হয়েছে। তাদের বক্তৃতা ছিল সর্বকালের শ্রেষ্ঠ, মর্যাদাশীল ও প্রভাবশালী।
বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বক্তৃতা ছিল সকল দিক থেকেই হৃদয়গ্রাহী, বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত। তাঁর বক্তৃতা ও ভাষা ছিল সহজ ও সাবলীল। বক্তব্যের প্রতিটি শব্দ ও বাক্য সুস্পষ্ট হতো। একটি শব্দ যথার্থভাবে উচ্চারণ করার পর আরেকটি শব্দ বলতেন। যেন শীতের ভোরে গাছের পাতা থেকে একটির পর একটি স্বচ্ছ শিশির ফোঁটা ঝরে পড়ছে। আম্মাজান হযরত আয়েশা রাযিয়াল্লাহু আনহা বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বক্তব্য এতই স্পষ্ট হতো, কেউ ইচ্ছা করলে তাঁর বক্তব্যের প্রতিটি শব্দ গুণে রাখতে পারত। প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর কথা সবচেয়ে বিশুদ্ধ পদ্ধতিতে উচ্চারণ করতেন। তিনি ইরশাদ করেছেন-
اَنَا اَفْصَحُ الْعَرَبِ بَيْدَ اَنِّىْ مِنْ قُرَيْشٍ.
‘আমি আরবের সর্বপেক্ষা স্পষ্টভাষী। আরবি ভাষায় সকল মাধুর্য দান করে আমাকে পাঠানো হয়েছে।’ অথচ আমি কুরাইশী।
নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বক্তব্যের শব্দ ও বাক্যগুলো হতো ব্যাপক অর্থবহ ও তাৎপর্যপূর্ণ। তাঁর বক্তৃতা শুনে জ্ঞানের দরজা খুলে যেত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতেন, اُوْتِيْتُ جَوَامِعَ الْكَلِمِ আমাকে ব্যাপক অর্থবহ কথা বলার যোগ্যতা দেয়া হয়েছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বক্তৃতা ছিল খুবই আকর্ষণীয়, মর্মস্পশী ও প্রভাব বিস্তারকারী। এ কারণেই বিশ্বের সবচেয়ে অধঃপতিত জাতি হয়েছিল শ্রেষ্ঠ শিক্ষিত, ভদ্র ও সভ্য। রাসূলে আরাবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বক্তব্যের গুরুত্বপূর্ণ অংশগুলো দ্বিতীয়বার আবার কোনোটা তৃতীয়বারও উচ্চারণ করতেন। আরবীতে একটি প্রবাদ আছে-
اِذَا تَكَرَّرَ الْكَلَام ُ فِىْ السَّمْعِ تَقَرَّرَ فِىْ الْقَلْبِ.
যখন কথা বারবার বলা হয়, তখন তা হৃদয়ে গেঁথে যায়। যে কথাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ সেটি কখনও দু’বার কিংবা তিনবার উচ্চারণ করতেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বক্তৃতার মাঝে প্রায়ই প্রশ্ন করতেন এবং তিনি বিষয়টি সম্পর্কে সন্দেহ-সংশয় দূর করার জন্য পরিষ্কার ভাষায় জবাব দিতেন। হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনও শ্রোতাদের মধ্যে কৌতুহল সৃষ্টির জন্য কোনো জরুরি কথা তিনবার বলতেন। ঐ ব্যক্তির মুখমণ্ডল ধূলি মলিন হোক ঐ ব্যক্তির মুখে ছাই পড়ুক। এতে শ্রোতারা দারুণ কৌতুহল বোধ করল এবং বিষয়টি জানার জন্য উদগ্রীব হয়ে উঠল। তখন জবাবে তিনি বললেন! ‘যে ব্যক্তি নিজের পিতা-মাতা উভয়কে অথবা তাদের একজনকে বৃদ্ধ অবস্থায় পেল কিন্তু জান্নাতে যেতে পারল না।’ অনেক সয়ম সতর্ক ভঙ্গিতে বক্তব্য রাখতেন, যেন শত্রুবাহিনী এগিয়ে আসছে তখন বিষয়গুলো সাহাবায়ে কেরামের রাযিয়াল্লাহু আনহুমের সামনে পেশ করতেন। তিনি ঐকান্তিকতা ও কল্যাণকামিতার সাথে কথা বলতেন। দু’তিনটি দীর্ঘ বক্তৃতা ছাড়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবনের সবগুলো বক্তৃতা ছিল অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত ও স্বল্প সময়ের। তিনি মসজিদে ভাষণ দেয়ার সময় তাঁর হাতে একটি ছড়ি রাখতেন, তাঁর সমস্ত বক্তৃতাই ছিল নির্দিষ্ট লক্ষ্যানুসারী। তাঁর প্রতিটি কথায় থাকত হৃদয় নিংড়ানো মহব্বত। তিনি বক্তৃতায় কখনোও কাউকে গালি দিতেন না। কাউকে উপহাস করতে না। হৃদয়গ্রাহী শালীন সুভাষণই ছিল তাঁর বৈশিষ্ট্য। যুগ যুগ ধরে তাঁর বক্তৃতা আমাদের সঠিক পথ প্রদর্শন করবে এমন অনন্য ছিল তাঁর ভাষণ। যেমন বিদায় হজের ভাষণ।
আমাদের সম্পর্কে জানতে ক্লিক করুন। সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের YouTube চ্যানেল Rahe Sunnat Media