সন্তান মূলত কার? মাতার না পিতার? আবু তাসনীম উমাইর
সন্তান মূলত কার? মা না কি বাবার? স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার পর।
সন্তান মূলত কার? মাতার না পিতার?
وَ الۡوَالِدٰتُ یُرۡضِعۡنَ اَوۡلَادَهُنَّ حَوۡلَیۡنِ كَامِلَیۡنِ لِمَنۡ اَرَادَ اَنۡ یُّتِمَّ الرَّضَاعَۃَ ؕ وَ عَلَی الۡمَوۡلُوۡدِ لَهٗ رِزۡقُهُنَّ وَ كِسۡوَتُهُنَّ بِالۡمَعۡرُوۡفِ ؕ لَا تُكَلَّفُ نَفۡسٌ اِلَّا وُسۡعَهَا ۚ لَا تُضَآرَّ وَالِدَۃٌۢ بِوَلَدِهَا وَ لَا مَوۡلُوۡدٌ لَّهٗ بِوَلَدِهٖ ٭ وَ عَلَی الۡوَارِثِ مِثۡلُ ذٰلِكَ ۚ فَاِنۡ اَرَادَا فِصَالًا عَنۡ تَرَاضٍ مِّنۡهُمَا وَ تَشَاوُرٍ فَلَا جُنَاحَ عَلَیۡهِمَا ؕ وَ اِنۡ اَرَدۡتُّمۡ اَنۡ تَسۡتَرۡضِعُوۡۤا اَوۡلَادَكُمۡ فَلَا جُنَاحَ عَلَیۡكُمۡ اِذَا سَلَّمۡتُمۡ مَّاۤ اٰتَیۡتُمۡ بِالۡمَعۡرُوۡفِ ؕ وَ اتَّقُوا اللّٰهَ وَ اعۡلَمُوۡۤا اَنَّ اللّٰهَ بِمَا تَعۡمَلُوۡنَ بَصِیۡرٌ ﴿۲۳۳﴾
আর মায়েরা তাদের সন্তানদেরকে পূর্ণ দু’বছর দুধ পান করাবে, (এটা) তার জন্য যে দুধ পান করাবার সময় পূর্ণ করতে চায়। আর পিতার উপর কর্তব্য, বিধি মোতাবেক মাদেরকে খাবার ও পোশাক প্রদান করা। সাধ্যের অতিরিক্ত কোন ব্যক্তিকে দায়িত্ব প্রদান করা হয় না। কষ্ট দেয়া যাবে না কোন মাকে তার সন্তানের জন্য, কিংবা কোন বাবাকে তার সন্তানের জন্য। আর ওয়ারিশের উপর রয়েছে অনুরূপ দায়িত্ব। অতঃপর তারা যদি পরস্পর সম্মতি ও পরামর্শের মাধ্যমে দুধ ছাড়াতে চায়, তাহলে তাদের কোন পাপ হবে না। আর যদি তোমরা তোমাদের সন্তানদেরকে অন্য কারো থেকে দুধ পান করাতে চাও, তাহলেও তোমাদের উপর কোন পাপ নেই, যদি তোমরা বিধি মোতাবেক তাদেরকে যা দেবার তা দিয়ে দাও। আর তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং জেনে রাখ, নিশ্চয় আল্লাহ তোমরা যা কর, সে সম্পর্কে সম্যক দ্রষ্টা।
এ আয়াতের দ্বারা এ কথাও বোঝা যাচ্ছে যে, শিশুকে স্তন্যদান করা মাতার দায়িত্ব, আর মাতার ভরণ-পোষণ ও জীবনধারণের অন্যান্য যাবতীয় খরচ বহন করা পিতার দায়িত্ব। এ দায়িত্ব ততক্ষণ পর্যন্ত বলবৎ থাকে যতক্ষণ পর্যন্ত শিশুর মাতা স্বামীর বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ বা তালাক পরবর্তী ইদ্দতের মধ্যে থাকে। তালাক ও ইদ্দত অতিক্রান্ত হয়ে গেলে স্ত্রী হিসেবে ভরণ-পোষণের দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় সত্য, কিন্তু শিশুকে স্তন্যদানের পরিবর্তে মাতাকে পারিশ্রমিক দিতে হবে। [কুরতুবী]
সন্তান মূলত কার? মাতার না পিতার?
মা-বাবার বিচ্ছেদ হয়ে গেলে মায়ের শিশু-সন্তান প্রতিপালনের অধিকার রাখে একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত। তবে এই সন্তানের মাহরাম নয় এমন কারো সঙ্গে মায়ের বিয়ে হলে, সন্তান লালন-পালনের অধিকার আর মায়ের থাকবে না। মায়ের পর নানী ও তার অবর্তমানে দাদী পর্যায়ক্রমে এ অধিকার লাভ করবেন।
আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত, এক নারী নবী (সা.)-কে বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমার এই ছেলেকে আমি গর্ভে ধারণ করেছি, তাকে স্তন্যদান করেছি, এখনো আমার কোল-ই তার আশ্রয়; অথচ তার বাবা আমাকে তালাক দিয়েছে। আর এখন চাইছে, তাকে আমার কাছ থেকে ছিনিয়ে নিতে! তখন রাসুল (সা.) তাকে বললেন, যতদিন তুমি বিয়ে না করো ততদিন তুমিই তার বেশি হকদার। (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস: ২২৭০; নাসবুর রায়াহ: ৩/২৬৫)
আবদুর রহমান ইবনে আবিজ জিনাদের বর্ণনায় এসেছে, আবু বকর সিদ্দিক (রা.) উমর (রা.)-এর সন্তান আছেম ইবনে উমরের লালন-পালনের ব্যাপারে উমর (রা.)-এর বিপক্ষে ও আছেমের নানীর পক্ষে এই মর্মে রায় দেন যে, ‘আছেম বালেগ হওয়া পর্যন্ত সে তার কাছেই থাকবে। ’ সে সময় উম্মে আছেম জীবিত ছিলেন। অন্যত্র তার বিয়ে হয়েছে। (সুনানে কুবরা, বাইহাকি: ৮/৫)
এখন আপনার বোনের যদি কোথাও বিয়ে হয় (এমন পুরুষের সঙ্গে যে শিশুটির মাহরাম নয়), তাহলে তিনি আর শিশুটির লালন-পালনের অধিকার রাখেন না। এক্ষেত্রে শিশুটির লালন-পালনের জন্য শরিয়তের পক্ষ থেকে নির্ধারিত অন্যান্য নারীরা অগ্রাধিকার পাবেন।
সূত্র: ফাতাওয়া তাতারখানিয়া: ৫/২৭৩; মুখতারাতুন নাওয়াযিল: ২/১৮৮) বাদায়েউস সানায়ে: ৩/৪৫৬; আদ্দুররুল মুখতার: ৩/৫৬৫; আল-বাহরুর রায়েক: ৪/১৬৭; খুলাসাতুল ফাতাওয়া: ২/৭২;
সন্তান মূলত কার? মাতার না পিতার?
সন্তান মূলতঃ পিতার। তবে শৈশবে তার লালন-পালনের অধিকারী হলেন মা। কিন্তু মা অন্যত্র বিবাহ করলে তার এ অধিকার আর থাকে না। তখন সন্তান পিতার পূর্ণ দায়িত্বে থাকবে। আমর তাঁর পিতা শু‘আইব হ’তে, তিনি তাঁর পিতা আব্দুল্লাহ এবং তিনি তার পিতা আমর ইবনুল আছ (রাঃ) হ’তে বর্ণনা করেন যে, জনৈক স্ত্রীলোক বলল, হে আল্লাহর রাসূল! এটি আমার ছেলে। আমার পেট ছিল তার পাত্র, আমার স্তন ছিল তার মশক এবং আমার কোল ছিল তার দোলনা। তার পিতা আমাকে তালাক দিয়েছে। সে এখন আমার ছেলে নিয়ে টানাটানি করছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘যতক্ষণ তুমি অন্যত্র বিবাহ না করবে, ততক্ষণ তুমিই তার অধিক হকদার’ (আহমাদ, আবুদাঊদ; মিশকাত হা/৩৩৭৮)।
তবে জ্ঞান-বুদ্ধি হওয়ার পর সন্তান যার নিকটে ইচ্ছা থাকতে পারে। আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট জনৈকা স্ত্রীলোক এসে বলল, আমার স্বামী আমার ছেলে নিয়ে যেতে চায়। অথচ ছেলে আমার উপকার করে। সে আমাকে কূয়া থেকে পানি এনে দেয়। এসময় তার পিতা এলে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছেলেকে বললেন, ইনি তোমার পিতা আর ইনি তোমার মাতা- যাকে ইচ্ছা তুমি তার হাত ধর। ছেলে তার মায়ের হাত ধরল। অতঃপর মা তাকে নিয়ে চলে গেল’ (আবুদাঊদ, নাসাঈ; মিশকাত হা/৩৩৮০, সনদ ছহীহ)।
ইমাম শাওকানী বলেন, ‘হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, ছেলে হউক বা মেয়ে হউক, সন্তানের ভাল-মন্দ বুঝার জ্ঞান হওয়ার পর যদি পিতা-মাতা সন্তান গ্রহণের ক্ষেত্রে মতভেদ করেন, তাহলে সন্তানকে এখতিয়ার দেওয়াই শরী‘আত সম্মত’ (নায়লুল আওত্বার ৮/১৬০ পৃঃ, ‘সন্তান পালনের অধিক হকদার কে?’ অনুচ্ছেদ)।
তবে মা কাফির হয়ে গেলে, মুসলিম সন্তানের উপরে তার কোন হক থাকবে না। আল্লাহ বলেন, আল্লাহ কাফিরদের জন্য মুমিনদের উপরে কোন অধিকার রাখেননি’ (নিসা ৪/১৪১)। ইবনুল ক্বাইয়িম বলেন, সন্তানকে এখতিয়ার দেওয়ার পূর্বে তার অধিকতর কল্যাণ বিবেচনা করা কর্তব্য। কেননা আল্লাহ বলেন, তোমরা নিজেদেরকে ও তোমাদের পরিবারকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচাও (তাহরীম ৬)। তিনি তাঁর উস্তাদ ইবনু তায়মিয়াহ (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, জনৈক সন্তান তার পিতার নিকটে যেতে চাইলে তার কারণ হিসাবে বলে যে, মা আমাকে মাদরাসায় পাঠায়, আর উস্তাদ আমাকে মারেন। কিন্তু আববা আমাকে খেলতে দেন। একথা শুনে বিচারক তাকে তার মায়ের কাছে পাঠাবার নির্দেশ দেন’ (নায়লুল আওত্বার ৮/১৬২)।
আমাদের সম্পর্কে জানতে ক্লিক করুন। সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের YouTube চ্যানেল Rahe Sunnat Media